অর্থঃ জবাব-দানকারী, সাড়া দানকারী, উত্তরদাতা, দো‘আ কবুলকারী
- The One who answers the one in need if he asks Him and rescues the yearner if he calls upon Him.
- The Responder.
- The respondent, one who answers.
আল-মুজীব (সাড়া দানকারী, উত্তরদাতা, দো‘আ কবুলকারী)[1]
আল্লাহর সুন্দরতম নামসমূহের মধ্যে আরেকটি নাম হলো আল-মুজীব তথা তাঁকে আহ্বানকারীর ডাকে সাড়া দানকারী, তাঁর কাছে প্রার্থনাকারী প্রার্থনা কবুলকারী এবং তাঁর বান্দার ইবাদত কবুলকারী। আল্লাহর সাড়াদান করা দুধরণের:
সাধারণ দো‘আ কবুল করা: তাঁকে যে কেহ ডাকে; ইবাদতে বা প্রার্থনায়- তিনি প্রত্যেকের দো‘আ কবুল করেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿وَقَالَ رَبُّكُمُ ٱدۡعُونِيٓ أَسۡتَجِبۡ لَكُمۡ٦٠ ﴾ [غافر: ٦٠]
“আর তোমাদের রব বলেছেন, ‘তোমরা আমাকে ডাক, আমি তোমাদের জন্য সাড়া দেব।” [সূরা গাফের, আয়াত: ৬০] অত:এব, বান্দার কোন কিছু চাওয়ার দো‘আ হলো, হে আল্লাহ আমাকে অমুক জিনিসটি দান করুন অথবা হে আল্লাহ আমার থেকে অমুক বিপদ দূর করুন। এ ধরণের দো‘আ আল্লাহর বাধ্য ও অবাধ্য সকল বান্দার থেকেই হয়ে থাকে এবং তিনি তাদের চাহিদা মোতাবেক ও তাঁর হিকমত অনুসারে সকলের দো‘আ কবুল করেন। এভাবে দো‘আ কবুল করা পাপী ও পূণ্যবান সকলের জন্য আল্লাহর ব্যাপক দয়া ও সর্বব্যাপ্তি ইহসানের প্রমাণ। শুধু দো‘আকারী উত্তম অবস্থার উপর ভিত্তি করে দো‘আ কবুল হওয়া প্রমাণ করে না; বরং দো‘আটি ব্যক্তির সত্যতা ও সত্যকাজে সহায়ক হওয়া অত্যাবশ্যকীয়। যেমন আল্লাহ নবীদের দো‘আ, তাদের জাতির জন্য দো‘আ ও জাতির বিরুদ্ধে বদদো‘আ কবুল করেছেন। কেননা এতে তাদের আনিত যাবতীয় সংবাদের সত্যতা ও তাদের বরের কাছে তাদের সম্মান-মর্যাদা প্রমাণ করে। এ কারণেই রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে সব দো‘আ করেছেন তা মুসলিমগণ ও অন্যরা কবুল হওয়া প্রত্যক্ষ করেছেন। আর এটি তার নবুওয়াত ও তার সত্যতার প্রমাণ। এছাড়া অনেক অলীদের দো‘আ কবুল হওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়ে থাকে, এটি তাদের কারামত।
আর বিশেষ দো‘আ কবুল[2] হওয়ার জন্য রয়েছে বেশ কিছু উপায়। সেগুলোর মধ্য অন্যতম হলো, একান্ত অসহয় অভাবী মানুষের দো‘আ যখন সে কঠিন বিপদ ও বালা-মুসিবতে পতিত হয়, তখন সে দো‘আ করলে আল্লাহ তা কবুল করেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿أَمَّنْ يُجِيبُ الْمُضْطَرَّ إِذَا دَعَاهُ ﴾ [النمل: 62]
“বরং তিনি, যিনি নিরুপায়ের আহ্বানে সাড়া দেন।” [সূরা আন-নামাল, আয়াত: ৬২] এ ধরণের লোকদের দো‘আ কবুল হওয়ার কারণ হলো আল্লাহর কাছে তাদের অসহয়ত্ব, নিরুপায়ত্ব, তাঁর কাছে ভেঙ্গে পড়া ও সৃষ্টিকুলের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করে তাঁর কাছেই চাওয়া ইত্যাদি। যেহেতু সৃষ্টিকুলের প্রতি তাদের অভাব অনুযায়ী আল্লাহর রহমত ব্যাপক, তাহলে যে ব্যক্তি তাঁর কাছে নিরুপায় হয়ে দো‘আ করে তার অবস্থা কেমন হবে? (অর্থাৎ তার দো‘আ কবুল হওয়া অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত)। দো‘আ কবুলের আরো কারণ হচ্ছে, দীর্ঘ সফল করা, আল্লাহর প্রিয় নামসমূহ, সিফাতসমূহ ও তাঁর গুণাবলীর উসিলায় তাঁর কাছে দো‘আ করা। এমনিভাবে অসুস্থ ব্যক্তির দো‘আ, মাযলুমের দো‘আ, সায়িমের দো‘আ, সন্তানের জন্য পিতামাতার দো‘আ অথবা দো‘আ কবুল হওয়ার আরো কিছু নির্দিষ্ট সময় ও অবস্থা রয়েছে, যে সময় ও অবস্থায় দো‘আ করলে আল্লাহ তাদের দো‘আ কবুল করেন।[3]
[1] আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
﴿إِنَّ رَبِّي قَرِيبٞ مُّجِيبٞ٦١﴾ [هود: ٦١]
“নিশ্চয় আমার রব নিকটে, সাড়াদানকারী।” [সূরা হূদ, আয়াত: ৬১]
[2] এটি দ্বিতীয় প্রকারের দো‘আ কবুল হওয়া, যা গ্রন্থকার তার কিতাবে উল্লেখ করেছেন।
[3] আল-হাক্কুল ওয়াদিহ আল-মুবীন, পৃ. ৬৫-৬৬; তাওদীহুল কাফিয়া আশ-শাফিয়া, পৃ. ১২৪; আত-তাফসীর, ৩/৪৩৭ ও ৫/৬৩০।