সুস্পষ্ট কিতাবের কসম! আল-বায়ান
সুস্পষ্ট কিতাবের কসম! তাইসিরুল
শপথ সুস্পষ্ট কিতাবের। মুজিবুর রহমান
By the clear Book, Sahih International
২. শপথ সুস্পষ্ট কিতাবের।(১)
(১) ‘সুস্পষ্ট কিতাব' বলে কুরআনকে বোঝানো হয়েছে। [সা'দী, মুয়াস্সার, জালালাইন]
তাফসীরে জাকারিয়া(২) সুস্পষ্ট গ্রন্থের শপথ!
-
তাফসীরে আহসানুল বায়াননিশ্চয় আমি এটি নাযিল করেছি বরকতময় রাতে; নিশ্চয় আমি সতর্ককারী। আল-বায়ান
আমি একে অবতীর্ণ করেছি এক বরকতময় রাতে, (কেননা) আমি (মানুষকে) সতর্ককারী। তাইসিরুল
আমি ইহা অবতীর্ণ করেছি এক মুবারাক রাতে, আমিতো সতর্ককারী। মুজিবুর রহমান
Indeed, We sent it down during a blessed night. Indeed, We were to warn [mankind]. Sahih International
৩. নিশ্চয় আমরা এটা নাযিল করেছি এক মুবারক রাতে(১); নিশ্চয় আমরা সতর্ককারী।
(১) গ্ৰহণযোগ্য তাফসীরবিদদের মতে এখানে কদরের রাত্ৰি বোঝানো হয়েছে, যা রমযান মাসের শেষ দশকে হয়। সূরা কদরে স্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে যে, পবিত্র কুরআন শবে-কদরে নাযিল হয়েছে। এতে বোঝা গেল যে, এখানেও বরকতের রাত্রি বলে শবে-কদরই বোঝানো হয়েছে। এ রাত্রিকে “মোবারক” বলার কারণ এই যে, এ রাত্ৰিতে আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে অসংখ্য কল্যাণ ও বরকত নাযিল হয়। এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেন, দুনিয়ার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আল্লাহ তা'আলা পয়গম্বরগণের প্রতি যত কিতাব নাযিল করেছেন, তা সবই রমযান মাসেরই বিভিন্ন তারিখে নাযিল হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, ইবরাহীম আলাইহিস সালাম-এর সহীফাসমূহ রমযানের প্রথম তারিখে, তাওরাত ছয় তারিখে, যাবুর বার তারিখে, ইঞ্জল আঠার তারিখে এবং কুরআন চব্বিশ তারিখ অতিবাহিত হওয়ার পর (পঁচিশের রাত্ৰিতে) অবতীর্ণ হয়েছে। [মুসনাদে আহমাদ: ৪/১০৭]
তাফসীরে জাকারিয়া(৩) নিশ্চয় আমি এ (কুরআন) অবতীর্ণ করেছি এক বরকতময় (আশিসপূত শবেকদর) রাতে;[1] নিশ্চয় আমি সতর্ককারী। [2]
[1] (لَيْلَةٌ مُبَارَكَةٌ) বরকতময় বা আশিসপূত রাত বলতে (لَيْلَةُ الْقَدْرِ) কদরের রাত (শবেক্বদরকে) বুঝানো হয়েছে। যেমন, অন্যত্র পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে, {اِنَّا أَنْزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةِ الْقَدْرِ} অর্থাৎ, আমি এ কুরআন শবেক্বদরে (মহিয়সী রাতে) অবতীর্ণ করেছি। (সূরা কদর) আর এই শবেক্বদর রমযানের শেষ দশকের বিজোড় রাতগুলোর মধ্যে কোন একটি রাত; যেমন হাদীসে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে। সুতরাং কুরআন অবতীর্ণ হয় রমযান মাসে। যেমন মহান আল্লাহ বলেন, {شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِيْ أُنْزِلَ فِيْهِ الْقُرْآنُ} অর্থাৎ, রমযান মাসে কুরআন অবতীর্ণ করা হয়েছে। (সূরা বাক্বারাহ ১৮৫) এই আয়াতে কদরের এই রাতকে বরকতময় রাত গণ্য করা হয়েছে। আর এই বরকতময় হওয়াতে সন্দেহই বা কি? প্রথমতঃ এ রাতে কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে। দ্বিতীয়তঃ এ রাতে বহু ফিরিশতা সহ জিবরীল আমীনও অবতরণ করেন। তৃতীয়তঃ সারা বছরে সংঘটিত হবে এমন ঘটনাবলীর ফায়সালা করা হয়। (যে কথা পরে আসছে।) চতুর্থতঃ এই রাতের ইবাদত হাজার মাস (৮৩ বছর ৪ মাস) এর ইবাদতের থেকেও উত্তম। শবেকদর বা বরকতময় রাতে কুরআন অবতীর্ণ হওয়ার অর্থ হল, এই রাত থেকে নবী (সাঃ)-এর উপর কুরআন অবতীর্ণ হওয়া আরম্ভ হয়। অর্থাৎ, সর্বপ্রথম এই রাতেই তাঁর উপর কুরআন অবতীর্ণ হয়। অথবা অর্থ হল, এই রাতে ‘লাওহে মাহফুয’ থেকে কুরআনকে ‘বায়তুল ইয্যাহ’তে অবতীর্ণ করা হয়, যা নিকটতম আসমানে অবস্থিত। অতঃপর সেখান থেকে প্রয়োজন ও ঘটনাঘটনের চাহিদা অনুযায়ী ২৩ বছরের বিভিন্ন সময়ে নবী করীম (সাঃ)-এর উপর অবতীর্ণ করা হয়। কেউ কেউ لَيلَة مُبارَكَة ‘বরকতময় রাত’ বলতে শা’বান মাসের ১৫ তারীখের রাত (শবেবরাত)-কে বুঝিয়েছেন। কিন্তু এ কথা সঠিক নয়। যখন কুরআনের স্পষ্ট উক্তি দ্বারা এ কথা সুসাব্যস্ত যে, কুরআন শবেক্বদরে অবতীর্ণ হয়েছে, তখন এ থেকে শবেবরাত অর্থ নেওয়া কোনভাবেই ঠিক নয়। তাছাড়া শবেবরাত (শা’বান মাসের ১৫ তারীখের রাত) এর ব্যাপারে যতগুলো বর্ণনা এসেছে, যাতে এ রাতের মাহাত্ম্য ও ফযীলতের কথা বর্ণিত হয়েছে অথবা যাতে এ রাতকে ভাগ্য নির্ধারণের রাত বলা হয়েছে, সে সমস্ত বর্ণনাগুলো সনদের দিক দিয়ে জাল অথবা দুর্বল। অতএব সে (বর্ণনা)গুলো কুরআনের সুস্পষ্ট বর্ণনার মোকাবেলা কিভাবে করতে পারে?
[2] অর্থাৎ, কুরআন অবতীর্ণ হওয়ার উদ্দেশ্য হল, মানুষকে শরয়ী উপকার-অপকার সম্পর্কে অবহিত ও সতর্ক করা, যাতে তাদের উপর হুজ্জত কায়েম হয়ে যায়।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানসে রাতে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত অনুমোদিত হয়, আল-বায়ান
এ রাতে প্রতিটি প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয় স্থির করা হয় তাইসিরুল
এ রাতে প্রত্যেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় স্থিরীকৃত হয় – মুজিবুর রহমান
On that night is made distinct every precise matter - Sahih International
৪. সে রাতে প্রত্যেক চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত স্থিরকৃত হয়(১),
(১) ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, এর অর্থ কুরআন অবতরণের রাত্রি অর্থাৎ, শবে-কদরে সৃষ্টি সম্পর্কিত সকল গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ফয়সালা স্থির করা হয়, যা পরবর্তী শবে-কদর পর্যন্ত এক বছরে সংঘটিত হবে। অর্থাৎ, এ বছর কারা কারা জন্মগ্রহণ করবে, কে কে মারা যাবে এবং এ বছর কি পরিমাণ রিযিক দেয়া হবে। মাহদভী বলেন এর অর্থ এই যে, আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত তকদীরে পূর্বাহ্নে, স্থিরীকৃত সকল ফয়সালা এ রাত্ৰিতে সংশ্লিষ্ট ফেরেশতাগণের কাছে অৰ্পণ করা হয়। কেননা, কুরআন ও হাদীসের অন্যান্য বর্ণনা সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ তা'আলা এসব ফয়সালা মানুষের জন্মের পূর্বেই সৃষ্টিলগ্নে লিখে দিয়েছেন। অতএব, এ রাত্রিতে এগুলোর স্থির করার অর্থ এই যে, যে ফেরেশতাগণের মাধ্যমে ফয়সালা ও তাকদীর প্রয়োগ করা হয়, এ রাত্ৰিতে সারা বছরের বিধানাবলী তাদের কাছে অৰ্পণ করা হয়। ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, তুমি কোন মানুষকে বাজারে হাঁটাচলা করতে দেখবে অথচ তার নাম মৃতদের তালিকায়। তারপর তিনি এ আয়াত তিলাওয়াত করে বললেন, প্রতি বছরই এ বিষয়গুলো নির্ধারিত হয়ে যায়। [মুস্তাদরাকে হাকিম: ২/৪৪৮-৪৪৯]
তাফসীরে জাকারিয়া(৪) এ রাতে প্রত্যেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় স্থিরীকৃত হয়। [1]
[1] يُفْرَقُ، يُفَصَلُ وَيُبَيَّنُ ফায়সালা করা হয় এবং এ কাজকে এ ব্যাপারে দায়িত্বশীল ফিরিশতাকে সোপর্দ করে দেওয়া হয়। حَكِيْمٍ হিকমতে পরিপূর্ণ, গুরুত্বপূর্ণ। আল্লাহর প্রতিটি কাজই হিকমতে পরিপূর্ণ হয়। অথবা অর্থ, مُحْكَمٍ (মজবুত, পাকাপোক্ত) যাতে কোন পরিবর্তন সাধন সম্ভব নয়। সাহাবা ও তাবেঈন থেকে এর ব্যাখ্যায় বর্ণিত হয়েছে যে, এই রাতে আগামী বছরের জীবন-মরণ ও জীবিকার উপায়-উপকরণের ফায়সালা লাওহে মাহফূয থেকে অবতীর্ণ করে ফিরিশতাদেরকে সোপর্দ করা হয়। (ইবনে কাসীর)
তাফসীরে আহসানুল বায়ানআমার নির্দেশে। নিশ্চয় আমি রাসূল প্রেরণকারী। আল-বায়ান
আমার আদেশক্রমে, আমিই প্রেরণকারী, তাইসিরুল
আমার আদেশক্রমে; আমি রাসূল প্রেরণ করে থাকি – মুজিবুর রহমান
[Every] matter [proceeding] from Us. Indeed, We were to send [a messenger] Sahih International
৫. আমাদের পক্ষ থেকে আদেশক্রমে, নিশ্চয় আমরা রাসূল প্রেরণকারী
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৫) আমার আদেশক্রমে, [1] আমি তো রসূল প্রেরণ করে থাকি।
[1] অর্থাৎ, সমস্ত ফায়সালা আমার নির্দেশ, অনুমতি এবং আমার নির্ধারিত ভাগ্য ও ইচ্ছা অনুসারে হয়।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানতোমার রবের কাছ থেকে রহমত হিসেবে; নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ। আল-বায়ান
তোমার প্রতিপালকের অনুগ্রহ স্বরূপ তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ। তাইসিরুল
তোমার রবের অনুগ্রহ স্বরূপ, তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ – মুজিবুর রহমান
As mercy from your Lord. Indeed, He is the Hearing, the Knowing. Sahih International
৬. আপনার রবের রহমতস্বরূপ: নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ—
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৬) এ তোমার প্রতিপালকের নিকট হতে করুণা;[1] নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।
[1] অর্থাৎ, গ্রন্থসমূহ অবতীর্ণ করার সাথে সাথে রসূলগণকে প্রেরণ করা আমার করুণা ও রহমতেরই একটি অংশ। যাতে তারা আমার অবতীর্ণকৃত গ্রন্থগুলো সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করে এবং আমার যাবতীয় বিধি-বিধান মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়। এইভাবে মানুষের আধিভৌতিক প্রয়োজন পূরণের ব্যবস্থা করার সাথে সাথে আমি আমার রহমতে মানুষের আধ্যাত্মিক প্রয়োজন পূরণ হওয়ারও সুব্যবস্থা করেছি।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানযিনি আসমানসমূহ, যমীন ও এ দু‘য়ের মধ্যবর্তী সবকিছুর রব; যদি তোমরা দৃঢ় বিশ্বাস পোষণকারী হও। আল-বায়ান
আকাশ ও পৃথিবী এবং এ দু’য়ের মাঝে যা কিছু আছে সব কিছুর যিনি প্রতিপালক, (তাঁর মর্যাদা যে কত মহান এ কথা উপলব্ধি করে নাও) যদি তোমরা সত্যিকারই বিশ্বাসী হয়ে থাক। তাইসিরুল
যিনি আকাশমন্ডলী, পৃথিবী এবং ওগুলির মধ্যস্থিত সব কিছুর রাব্ব - যদি তোমরা নিশ্চিত বিশ্বাসী হও। মুজিবুর রহমান
Lord of the heavens and the earth and that between them, if you would be certain. Sahih International
৭. আসমানসমূহ, যমীন ও এ দুয়ের মধ্যবর্তী সমস্ত কিছুর রব, যদি তোমরা নিশ্চিত বিশ্বাসী হও।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৭) আকাশমন্ডলী, পৃথিবী ও ওদের মধ্যবর্তী সমস্ত কিছুর প্রতিপালকের নিকট হতে। যদি তোমরা নিশ্চিত বিশ্বাসী হও।
-
তাফসীরে আহসানুল বায়ানতিনি ছাড়া কোন (সত্য) ইলাহ নেই; তিনিই জীবন দান করেন এবং তিনিই মৃত্যু দেন। তিনি তোমাদের রব এবং তোমাদের পিতৃপুরুষদের রব। আল-বায়ান
তিনি ছাড়া সত্যিকারের কোন ইলাহ নেই, তিনিই জীবিত করেন ও মৃত্যু ঘটান। তিনিই তোমাদের প্রতিপালক এবং তোমাদের পূর্ববর্তী তোমাদের পিতৃপুরুষদেরও প্রতিপালক। তাইসিরুল
তিনি ব্যতীত কোন মা‘বূদ নেই, তিনি জীবন দান করেন এবং তিনিই মৃত্যু ঘটান; তিনিই তোমাদের এবং তোমাদের পূর্ব-পুরুষদেরও রাব্ব। মুজিবুর রহমান
There is no deity except Him; He gives life and causes death. [He is] your Lord and the Lord of your first forefathers. Sahih International
৮. তিনি ছাড়া কোন সত্য ইলাহ নেই, তিনি জীবন দান করেন এবং তিনিই মৃত্যু ঘটান; তিনি তোমাদের রব এবং তোমাদের পিতৃপুরুষদেরও রব।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৮) তিনি ব্যতীত কোন (সত্য) উপাস্য নেই, তিনি জীবন দান করেন এবং তিনিই মৃত্যু ঘটান। তিনি তোমাদের প্রতিপালক এবং তোমাদের পূর্বপুরুষদের প্রতিপালক। [1]
[1] এই আয়াতগুলোও সূরা আ’রাফের ১৫৮নং আয়াতের মত {قُلْ يَاأَيُّهَا النَّاسُ اِنِّي رَسُوْلُ اللهِ اِلَيْكُمْ جَمِيْعًا الَّذِي لَهُ مُلْكُ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ لاَ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ يُحْيِ وَيُمِيْتُ}
তাফসীরে আহসানুল বায়ানতারা বরং সন্দেহের বশবর্তী হয়ে খেলতামাশা করছে। আল-বায়ান
কিন্তু তারা সংশয়ের মাঝে খেলায় মত্ত। তাইসিরুল
বস্তুতঃ তারা সন্দেহের বশবর্তী হয়ে হাসি ঠাট্টা করছে। মুজিবুর রহমান
But they are in doubt, amusing themselves. Sahih International
৯. বরং তারা সন্দেহের বশবর্তী হয়ে খেল–তামাসা করছে।
-
তাফসীরে জাকারিয়া(৯) বস্তুতঃ ওরা সন্দেহের বশবর্তী হয়ে খেল-তামাশা করছে। [1]
[1] অর্থাৎ, সত্য ও তার দলীলসমূহ তাদের কাছে এসে গেছে, কিন্তু তারা তার উপর ঈমান আনার পরিবর্তে সন্দেহে পড়ে রয়েছে এবং এই সন্দেহের সাথে সাথে বিদ্রূপ করায় ও খেল-তামাশায় মত্ত রয়েছে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ানঅতএব অপেক্ষা কর সেদিনের যেদিন স্পষ্ট ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হবে আকাশ। আল-বায়ান
অতএব তুমি অপেক্ষা কর সে দিনের যেদিন আকাশ ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হবে যা সুস্পষ্ট (ভাবে দেখা যাবে)। তাইসিরুল
অতএব তুমি অপেক্ষা কর সেই দিনের যেদিন স্পষ্ট ধুম্রাচ্ছন্ন হবে আকাশ। মুজিবুর রহমান
Then watch for the Day when the sky will bring a visible smoke. Sahih International
১০. অতএব আপনি অপেক্ষা করুন সে দিনের যেদিন স্পষ্ট ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হবে আকাশ(১),
(১) আলোচ্য আয়াতসমূহে উল্লেখিত ধোঁয়া সম্পর্কে সাহাবী ও তাবেয়ীগণের তিন প্রকার উক্তি বর্ণিত আছে। প্রথম উক্তি এই যে, এটা কেয়ামতের অন্যতম আলামত বা কেয়ামতের সন্নিকটবর্তী সময়ে সংঘটিত হবে। এই উক্তি আলী, ইবন আব্বাস, ইবন ওমর, আবু হুরায়রা, রাদিয়াল্লাহু আনহুম ও হাসান বসরী রাহেমাহুল্লাহ প্রমুখ থেকে বর্ণিত আছে। দ্বিতীয় উক্তি এই যে, এ ভবিষ্যদ্বানী অতীতে পূর্ণ হয়ে গেছে। এবং এতে মক্কার সে দুর্ভিক্ষ বোঝানো হয়েছে, যা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দো আর ফলে মক্কাবাসীদের উপর অর্পিত হয়েছিল। তারা ক্ষুধার্তা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছিল এবং মৃত জন্তু পর্যন্ত খেতে বাধ্য হয়েছিল। আকাশে বৃষ্টি ও মেঘের পরিবর্তে ধুম্র দৃষ্টিগোচর হত। এ উক্তি আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু প্রমুখের। তৃতীয় উক্তি এই যে, এখানে মক্কা বিজয়ের দিন মক্কার আকাশে উত্থিত ধূলিকণাকে ধুম্র বলা হয়েছে। এ উক্তি আবদুর রহমান আ'রাজ প্রমুখের। প্রথমোক্ত উক্তিদ্বয়ই সমধিক প্রসিদ্ধ। তৃতীয় উক্তি ইবনে-কাসীরের মতে অগ্রাহ্য। সহীহ হাদীসসমূহে দ্বিতীয় উক্তিই অবলম্বিত হয়েছে। প্রথমোক্ত উক্তিদ্বয়ের বর্ণনাসমূহ নিম্নরূপ:
হুযায়ফা ইবনে আসীদ বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের প্রতি দৃষ্টিপাত করলেন। আমরা তখন পরস্পর কেয়ামতের সম্পর্কে আলোচনা করছিলাম। তিনি বললেন, যত দিন তোমরা দশটি আলামত না দেখ, ততদিন কেয়ামত হবে না-(১) পশ্চিম দিক থেকে সূর্যোদয়, (২) দোখান তথা ধুম্র, (৩) দাব্বা (বা বিচিত্র ধরণের প্রাণী), (৪) ইয়াজুজ-মাজুজের আবির্ভাব, (৫) ঈসা আলাইহিস সালাম-এর অবতরণ, (৬) দাজ্জালের আবির্ভাব, (৭) পূর্বে ভূমিধ্বস, (৮) পশ্চিমে ভূমিধ্বস (৯) আরব উপদ্বীপে ভূমিধ্বস, (১০) আদন থেকে এক অগ্নি বের হবে এবং মানুষকে হাঁকিয়ে নিয়ে যাবে। মানুষ যেখানে রাত্রিযাপন করতে আসবে, অগ্নিও থেমে যাবে, যেখানে দুপুরে বিশ্রামের জন্যে আসবে, সেখানে অগ্নিও থেমে যাবে। [মুসলিম: ২৯০১] এছাড়া কিছু সহীহ ও হাসান হাদীসও একথা প্রমাণ করে যে, ‘দোখান’ ধুম্র কেয়ামতের ভবিষ্যৎ আলামতসমূহের অন্যতম। কুরআনের বাহ্যিক ভাষাও এর সাক্ষ্য দেয়।
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, কাফেররা যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর দাওয়াত কবুল করতে অস্বীকার করল এবং কুফরীকেই আঁকড়ে রইল, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের উপর দোআ করলেন যে, হে আল্লাহ! এদের উপর ইউসুফ আলাইহিস সালাম-এর আমলের দুর্ভিক্ষের ন্যায় দুর্ভিক্ষ চাপিয়ে দিন। ফলে কাফেররা ভয়ংকর দুর্ভিক্ষে পতিত হল। এমনকি, তারা অস্থি এবং মৃত জন্তুও ভক্ষণ করতে লাগল। তারা আকাশের দিকে তাকালে ধুম্র ব্যতীত কিছুই দৃষ্টিগোচর হত না। এক বর্ণনায় আছে, তাদের কেউ আকাশের দিকে তাকালে ক্ষুধার তীব্রতায় সে কেবল ধুম্রের মত দেখত। অতঃপর আবদুল্লাহ ইবনে মসউদ তার বক্তব্যের প্রমাণ স্বরূপ এ আয়াতখানি তেলাওয়াত করলেন। দুর্ভিক্ষ প্ৰপীড়িত জনগণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর কাছে আবেদন করল, আপনি আপনার মুদার গোত্রের জন্য আল্লাহর কাছে বৃষ্টির দোআ করুন।
নতুবা আমরা সবাই ধ্বংস হয়ে যাব। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম দো'আ করলে, বৃষ্টি হল। তখন (إِنَّا كَاشِفُو الْعَذَابِ قَلِيلًا) আয়াত নাযিল হল। অর্থাৎ, আমরা কিছুদিনের জন্যে তোমাদের থেকে আযাব প্রত্যাহার করে নিচ্ছি। কিন্তু তোমরা বিপদমুক্ত হয়ে গেলে আবার কুফরের দিকে ফিরে যাবে। বাস্তবে তাই হল, তারা তাদের পূর্বাবস্থায় ফিরে গেল। তখন আল্লাহ তা'আলা (يَوْمَ نَبْطِشُ الْبَطْشَةَ الْكُبْرَىٰ إِنَّا مُنتَقِمُونَ) আয়াত নাযিল করলেন। অর্থাৎ যেদিন আমরা প্রবলভাবে পাকড়াও করব, সেদিনের ভয় কর। অতঃপর ইবনে-মসউদ বললেন, এই প্রবল পাকড়াও বদর যুদ্ধে হয়ে গেছে। এই ঘটনা বর্ণনা করার পর তিনি আরও বললেন, পাঁচটি বিষয় অতিক্রান্ত হয়ে গেছে। অর্থাৎ, দোখান তথা ধুম্র, রোম (এর পারসিকদের উপর জয়লাভ), চাঁদ (দ্বিখণ্ডিত হওয়া), পাকড়াও (যা বদরের প্রান্তরে সংঘটিত হয়েছিল) ও লেযাম (বা স্থায়ী আযাব)। [বুখারী: ৪৮০৯, মুসলিম: ২৭৯৮]
তাফসীরে জাকারিয়া(১০) অতএব তুমি অপেক্ষা কর সে দিনের, যেদিন আকাশ স্পষ্ট ধূমাচ্ছন্ন হবে। [1]
[1] এতে কাফেরদেরকে ধমক দিয়ে বলা হচ্ছে যে, ঠিক আছে (হে নবী) তুমি ঐ দিনের অপেক্ষা কর, যখন আকাশে ধোঁয়ার আবির্ভাব ঘটবে। এ আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার কারণ সম্পর্কে বলা হয় যে, মক্কাবাসীদের বিদ্বেষমূলক আচরণে বিরক্ত হয়ে নবী করীম (সাঃ) তাদের উপর অনাবৃষ্টির বদ্দুআ করলেন। যার ফলে তাদের উপর অনাবৃষ্টির শাস্তি নেমে এল। এমন কি খাদ্যাভাবে তারা হাড়, চামড়া এবং মৃত ইত্যাদি খেতে বাধ্য হয়ে পড়ল। আকাশের দিকে তাকালে কঠিন ক্ষুধা ও দুর্বলতার কারণে তারা কেবল ধোঁয়া দেখত। পরিশেষে অতিষ্ঠ হয়ে তারা নবী করীম (সাঃ)-এর নিকট উপস্থিত হয়ে আযাব দূরীভূত হলে ঈমান আনার অঙ্গীকার করে। কিন্তু এই অবস্থা দূর হয়ে গেলে তারা পুনরায় কুফরী ও অবাধ্যতায় ফিরে আসে। তাই তো বদর যুদ্ধে তাদেরকে আবার কঠোরভাবে পাকড়াও করা হয়। (বুখারীঃ তাফসীর অধ্যায়) কেউ কেউ বলেন, কিয়ামত নিকটবর্তী হওয়ার দশটি বড় বড় নিদর্শনাবলীর একটি নিদর্শন ধোঁয়াও।
চল্লিশ দিন যাবৎ এ ধোঁয়া বিদ্যমান থেকে কাফেরদের শ্বাসরোধ করবে। আর মু’মিনদের অবস্থা সর্দি লাগার মত হবে। আয়াতে এই ধোঁয়ার কথাই বলা হয়েছে। এই ব্যাখ্যার ভিত্তিতে এই নিদর্শন কিয়ামতের নিকটতম পূর্ব সময়ে প্রকাশ হবে। আর প্রথম ব্যাখার ভিত্তিতে এটা প্রকাশ হয়ে গেছে। ইমাম শাওকানী বলেন, উভয় ব্যাখ্যাই স্ব-স্ব স্থানে সঠিক। আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার কারণ হিসাবে এ ঘটনা ঘটে গেছে, যা সঠিক সূত্রে প্রমাণিত। এ দিকে কিয়ামতের নিদর্শনসমূহের যে তালিকা বহু সহীহ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, তাতেও এই ধোঁয়ার কথা উল্লেখ আছে। কাজেই ওটাও এর পরিপন্থী নয়, বরং তখনও তার আবির্ভাব ঘটবে।