بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
সূরাঃ ৪২/ আশ-শূরা | Ash-Shura | سورة الشورى আয়াতঃ ৫৩ মাক্কী
৪২:১ حٰمٓ ۚ﴿۱﴾
حمٓ ﴿۱﴾

হা-মীম। আল-বায়ান

হা-মীম। তাইসিরুল

হা, মীম। মুজিবুর রহমান

Ha, Meem. Sahih International

১. হা-মীম।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(১) হা-মীম।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৪২:২ عٓسٓقٓ ﴿۲﴾
عٓسٓقٓ ﴿۲﴾

‘আইন-সীন-কাফ। আল-বায়ান

‘আইন-সীন-ক্বাফ। তাইসিরুল

আইন, সীন, কাফ। মুজিবুর রহমান

'Ayn, Seen, Qaf. Sahih International

২. আইন-সীন-কাফ।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(২) আইন-সীন-ক্বাফ।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৪২:৩ كَذٰلِكَ یُوۡحِیۡۤ اِلَیۡكَ وَ اِلَی الَّذِیۡنَ مِنۡ قَبۡلِكَ ۙ اللّٰهُ الۡعَزِیۡزُ الۡحَكِیۡمُ ﴿۳﴾
كذلك یوحی الیك و الی الذین من قبلك الله العزیز الحكیم ﴿۳﴾

এমনিভাবে মহাপরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময় আল্লাহ তোমার কাছে ওহী প্রেরণ করেন এবং তোমার পূর্ববর্তীদের কাছেও। আল-বায়ান

এভাবেই মহাপরাক্রমশালী মহাজ্ঞানী আল্লাহ তোমার প্রতি এবং তোমার পূর্বে যারা ছিল তাদের প্রতি ওয়াহী নাযিল করেন। তাইসিরুল

পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময় আল্লাহ এভাবেই তোমার পূর্ববর্তীদের মতই তোমার প্রতি প্রত্যাদেশ করেন। মুজিবুর রহমান

Thus has He revealed to you, [O Muhammad], and to those before you - Allah, the Exalted in Might, the Wise. Sahih International

৩. এভাবেই আপনার প্রতি এবং আপনার পূৰ্ববতীদের প্রতি ওহী করেন পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময় আল্লাহ।(১)

(১) অহীর আভিধানিক অর্থ হচ্ছে, দ্রুত ইংগিত এবং গোপন ইংগিত। [ইবন হাজারী: ফাতহুল বারী: ১/২০৪]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৩) পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময় আল্লাহ এভাবে তোমার প্রতি এবং তোমার পূর্ববর্তীদের প্রতি প্রত্যাদেশ করে থাকেন।[1]

[1] অর্থাৎ, যেভাবে এই কুরআন তোমার প্রতি অবতীর্ণ করা হয়েছে, অনুরূপ তোমার পূর্বের নবীদের প্রতিও সহীফা ও গ্রন্থ অবতীর্ণ করা হয়েছে। ‘অহী’ হল আল্লাহর সেই বাণী, যা তিনি ফিরিশতার মাধ্যমে পয়গম্বরদের কাছে পাঠিয়েছেন। একজন সাহাবী রসূল (সাঃ)-এর কাছে অহীর ধরন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, কোন সময় এটা আমার কাছে ঘণ্টার শব্দের মত আসে; আর এই অবস্থা আমার কাছে অতীব কঠিন হয়। যখন এই অবস্থা শেষ হয়ে যায়, তখন আমার সব কিছু মুখস্থ হয়ে যায়। আবার কখনও ফিরিশতা মানুষের রূপ ধরে আসেন এবং আমার সাথে কথা বলেন। তিনি যা বলেন আমি তা মুখস্থ করে নিই। আয়েশা (রাঃ)  বলেন, আমি লক্ষ্য করেছি যে, অহীর অবতরণের ভাব কেটে গেলে তিনি কঠিন ঠান্ডার দিনেও ঘামে ভিজে যেতেন এবং তাঁর কপাল থেকে ঘামের ফোঁটা পড়তে থাকত। (বুখারীঃ অহী পরিচ্ছেদ)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৪২:৪ لَهٗ مَا فِی السَّمٰوٰتِ وَ مَا فِی الۡاَرۡضِ ؕ وَ هُوَ الۡعَلِیُّ الۡعَظِیۡمُ ﴿۴﴾
لهٗ ما فی السموت و ما فی الارض و هو العلی العظیم ﴿۴﴾

আসমানসমূহে যা কিছু আছে এবং যমীনে যা কিছু আছে সব তাঁরই। তিনিই সমুন্নত, সুমহান। আল-বায়ান

আকাশ ও যমীনে যা কিছু আছে সবই তাঁর, তিনি সর্বোচ্চ, মহান। তাইসিরুল

আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে তা তাঁরই। তিনি সমুন্নত, মহান। মুজিবুর রহমান

To Him belongs whatever is in the heavens and whatever is in the earth, and He is the Most High, the Most Great. Sahih International

৪. আসমানসমূহে যা আছে ও যমীনে যা আছে তা তারই। তিনি সুউচ্চ, সুমহান।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(৪) আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে তা তাঁরই। তিনি সমুন্নত, সুমহান।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৪২:৫ تَكَادُ السَّمٰوٰتُ یَتَفَطَّرۡنَ مِنۡ فَوۡقِهِنَّ وَ الۡمَلٰٓئِكَۃُ یُسَبِّحُوۡنَ بِحَمۡدِ رَبِّهِمۡ وَ یَسۡتَغۡفِرُوۡنَ لِمَنۡ فِی الۡاَرۡضِ ؕ اَلَاۤ اِنَّ اللّٰهَ هُوَ الۡغَفُوۡرُ الرَّحِیۡمُ ﴿۵﴾
تكاد السموت یتفطرن من فوقهن و الملٓئكۃ یسبحون بحمد ربهم و یستغفرون لمن فی الارض الا ان الله هو الغفور الرحیم ﴿۵﴾

উপর থেকে আসমান ফেটে পড়ার উপক্রম হয়; আর ফেরেশতারা তাদের রবের প্রশংসায় তাসবীহ পাঠ করে এবং পৃথিবীতে যারা আছে তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে; জেনে রেখ, আল্লাহ, তিনি তো অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। আল-বায়ান

আকাশ উপর থেকে ফেটে পড়ার উপক্রম হয় (সুমহান আল্লাহর প্রতি শ্রদ্ধাপূর্ণ ভয়ভীতিতে) আর ফেরেশতারা তাদের প্রতিপালকের প্রশংসা ও মহিমা ঘোষণা করে এবং যারা পৃথিবীতে আছে তাদের জন্য (আল্লাহর নিকট) ক্ষমা প্রার্থনা করে। জেনে রেখ, আল্লাহ, তিনি বড়ই ক্ষমাশীল, অতি দয়ালু। তাইসিরুল

আকাশমন্ডলী উর্ধ্বদেশ হতে ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয় এবং মালাইকা/ফেরেশতারা তাদের রবের সপ্রশংস পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে এবং মর্তবাসীদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। জেনে রেখ, আল্লাহতো ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। মুজিবুর রহমান

The heavens almost break from above them, and the angels exalt [Allah] with praise of their Lord and ask forgiveness for those on earth. Unquestionably, it is Allah who is the Forgiving, the Merciful. Sahih International

৫. আসমানসমূহ উপর থেকে ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয়, আর ফেরেশতাগণ তাদের রবের সপ্রশংস পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে এবং যমীনে যারা আছে তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। জেনে রাখুন, নিশ্চয় আল্লাহ, তিনিই ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(৫) আকাশমন্ডলী ঊর্ধ্বদেশ হতে ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়[1] এবং ফিরিশতা তাদের প্রতিপালকের সপ্রশংস পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে এবং পৃথিবীর বাসিন্দার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে।[2] জেনে রাখ যে, নিশ্চয় আল্লাহ, তিনিই চরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।[3]

[1] আল্লাহর মহত্ত্ব ও তাঁর প্রতাপের কারণে।

[2] এ বিষয়টি সূরা মুমিনের ৭নং আয়াতে আলোচিত হয়েছে।

[3] তাঁর বন্ধুদের এবং তাঁর অনুগতদের অথবা তাঁর সকল বান্দাদের জন্য। কেননা, কাফের ও অবাধ্যজনদেরকে সত্বর পাকড়াও না করে এক নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত তাদেরকে অবকাশ দেওয়াটাও তাঁর এক প্রকার দয়া ও ক্ষমা।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৪২:৬ وَ الَّذِیۡنَ اتَّخَذُوۡا مِنۡ دُوۡنِهٖۤ اَوۡلِیَآءَ اللّٰهُ حَفِیۡظٌ عَلَیۡهِمۡ ۫ۖ وَ مَاۤ اَنۡتَ عَلَیۡهِمۡ بِوَكِیۡلٍ ﴿۶﴾
و الذین اتخذوا من دونهٖ اولیآء الله حفیظ علیهم و ما انت علیهم بوكیل ﴿۶﴾

আর যারা তাঁর পরিবর্তে অন্যদেরকে অভিভাবকরূপে গ্রহণ করে, আল্লাহ তাদের প্রতি সম্যক দৃষ্টিদাতা এবং তুমি তাদের কর্মবিধায়ক নও। আল-বায়ান

যারা আল্লাহর পরিবর্তে অন্যদেরকে অভিভাবকরূপে গ্রহণ করে, আল্লাহ তাদের প্রতি নযর রাখছেন, তাদের (কাজের) দায়-দায়িত্ব তোমার উপর নেই। তাইসিরুল

যারা আল্লাহর পরিবর্তে অপরদেরকে অভিভাবক রূপে গ্রহণ করে, আল্লাহ তাদের প্রতি কঠোর দৃষ্টি রাখেন। তুমি তাদের কর্মবিধায়ক নও। মুজিবুর রহমান

And those who take as allies other than Him - Allah is [yet] Guardian over them; and you, [O Muhammad], are not over them a manager. Sahih International

৬. আর যারা তাঁর পরিবর্তে অন্যদেরকে অভিভাবকরূপে(১) গ্ৰহণ করে, আল্লাহ্ তাদের প্রতি সম্যক দৃষ্টিদাতা। আর আপনি তো তাদের উপর কর্মবিধায়ক নন।

(১) মূল আয়াতে أَوْلِيَاءَ শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। আরবী ভাষায় যার অর্থ অত্যন্ত ব্যাপক। বাতিল উপাস্যদের সম্পর্কে পথভ্রষ্ট মানুষদের বিভিন্ন আকীদা-বিশ্বাস এবং ভিন্ন ভিন্ন অনেক কর্মপদ্ধতি আছে। কুরআন মজীদে এগুলোকেই “আল্লাহ ছাড়া অন্যদের ওলী বা অভিভাবক বানানো” বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। কুরআন মজীদে অনুসন্ধান করলে ‘ওলী’ শব্দটির কয়েকটি অর্থ জানা যায়। একঃ মানুষ যার কথামত কাজ করে, যার নির্দেশনা মেনে চলে এবং যার রচিত নিয়ম-পস্থা, রীতিনীতি এবং আইনকানুন অনুসরণ করে [সূরা আন নিসা: ১১৮–১২০; সূরা আল-আ’রাফ: ৩, ২৭–৩০] দুইঃ যার দিকনির্দেশনার ওপর মানুষ আস্থা স্থাপন করে এবং মনে করে সে তাকে সঠিক রাস্তা প্রদর্শনকারী এবং ভ্রান্তি থেকে রক্ষাকারী। [সূরা আল বাকারাহ: ২৫৭; সূরা আল-ইসরা: ৯৭; সূরা আল-কাহাফ: ১৭, ও সূরা আল-জাসিয়া: ১৯] তিনঃ যার সম্পর্কে মানুষ মনে করে, আমি পৃথিবীতে যাই করি না কেন সে আমাকে তার কুফল থেকে রক্ষা করবে।

এমনকি যদি আল্লাহ থাকেন এবং আখেরাত সংঘটিত হয় তাহলে তার আযাব থেকেও রক্ষা করবেন [সূরা আন- নিসা: ১২৩–১৭৩; সূরা আল-আন’আম: ৫১; সূরা আর-রাদ: ৩৭; সূরা আল-আনকাবুত: ২২; সূরা আল-আহযাব: ৬৫; সূরা আয-যুমার: ৩] চারঃ যার সম্পর্কে মানুষ মনে করে, পৃথিবীতে তিনি অতি প্রাকৃতিক উপায়ে তাকে সাহায্য করেন, বিপদাপদে তাকে রক্ষা করেন। রুজি-রোজগার দান করেন, সন্তান দান করেন, ইচ্ছা পূরণ করেন এবং অন্যান্য সব রকম প্রয়োজন পূরণ করেন [সূরা হূদ: ২০; সূরা আর-রা’দ-১৬, সূরা আল-আনকাবূত: ৪১]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৬) যারা আল্লাহর পরিবর্তে অপরকে অভিভাবকরূপে গ্রহণ করে, আল্লাহ তাদের কার্যকলাপের প্রতি দৃষ্টি রাখেন।[1] আর তুমি তাদের কর্মবিধায়ক নও। [2]

[1] অর্থাৎ, তাদের আমলগুলো পর্যবেক্ষণ করে সুরক্ষিত করে রাখেন, যাতে তাদেরকে তার প্রতিফল দান করেন।

[2] অর্থাৎ, তোমার এ দায়িত্ব নয় যে, তুমি তাদেরকে সৎপথে পৌঁছে দেবে অথবা তাদের পাপের কারণে তাদেরকে পাকড়াও করবে। বরং এ কাজ কেবল আমার। তোমার কাজ শুধু পৌঁছে দেওয়া।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৪২:৭ وَ كَذٰلِكَ اَوۡحَیۡنَاۤ اِلَیۡكَ قُرۡاٰنًا عَرَبِیًّا لِّتُنۡذِرَ اُمَّ الۡقُرٰی وَ مَنۡ حَوۡلَهَا وَ تُنۡذِرَ یَوۡمَ الۡجَمۡعِ لَا رَیۡبَ فِیۡهِ ؕ فَرِیۡقٌ فِی الۡجَنَّۃِ وَ فَرِیۡقٌ فِی السَّعِیۡرِ ﴿۷﴾
و كذلك اوحینا الیك قرانا عربیا لتنذر ام القری و من حولها و تنذر یوم الجمع لا ریب فیه فریق فی الجنۃ و فریق فی السعیر ﴿۷﴾

আর এভাবেই আমি তোমার ওপর আরবী ভাষায় কুরআন নাযিল করেছি যাতে তুমি মূল জনপদ ও তার আশপাশের বাসিন্দাদেরকে সতর্ক করতে পার, আর যাতে ‘একত্রিত হওয়ার দিন’ এর ব্যাপারে সতর্ক করতে পার, যাতে কোন সন্দেহ নেই, একদল থাকবে জান্নাতে আরেক দল জ্বলন্ত আগুনে। আল-বায়ান

এভাবে আমি তোমার প্রতি কুরআন আরবী ভাষায় নাযিল করেছি যাতে তুমি উম্মুল কুরা (মক্কা শহর) ও তার চার পাশে যারা আছে তাদেরকে সতর্ক করতে পার, আর সতর্ক কর একত্রিত হওয়ার দিন সম্পর্কে যে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। (একত্রিত হওয়ার পর) এক দল যাবে জান্নাতে, আরেক দল যাবে জাহান্নামে। তাইসিরুল

এভাবে আমি তোমার প্রতি কুরআন অবতীর্ণ করেছি আরাবী ভাষায় যাতে তুমি সতর্ক করতে পার মাক্কা এবং ওর চতুর্দিকের জনগণকে এবং সতর্ক করতে পার কিয়ামাতের দিন সম্পর্কে, যাতে কোন সন্দেহ নেই। সেদিন একদল জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং একদল জাহান্নামে প্রবেশ করবে। মুজিবুর রহমান

And thus We have revealed to you an Arabic Qur'an that you may warn the Mother of Cities [Makkah] and those around it and warn of the Day of Assembly, about which there is no doubt. A party will be in Paradise and a party in the Blaze. Sahih International

৭. আর এভাবে আমরা আপনার প্রতি কুরআন নাযিল করেছি আরবী ভাষায়, যাতে আপনি মক্কা ও তার চারদিকের জনগণকে(১) সতর্ক করতে পারেন এবং সতর্ক করতে পারেন কিয়ামতের দিন সম্পর্কে, যাতে কোন সন্দেহ নেই। একদল থাকবে জান্নাতে আরেক দল জলন্ত আগুনে।

(১) এর অর্থ সকল জনপদ ও শহরের মূল ও ভিত্তি। এখানে মক্কা মোকাররমা বোঝানো হয়েছে। এই নামকরণের হেতু এই যে, এ শহরটি সমগ্ৰ বিশ্বের শহর-জনপদ এমনকি ভূ-পৃষ্ঠ অপেক্ষা আল্লাহ তা'আলার কাছে অধিক সম্মানিত ও শ্রেষ্ঠ। [তাবারী, ইবনে কাসীর]। হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কা থেকে হিজরত করার সময় মক্কাকে সম্বোধন করে বলেছিলেন: অবশ্যই তুমি আমার কাছে আল্লাহর সমগ্র পৃথিবী থেকে শ্রেষ্ঠ এবং সমগ্ৰ পৃথিবী অপেক্ষা অধিক প্রিয়। যদি আমাকে তোমার থেকে বহিস্কার করা না হত, তবে আমি কখনও স্বেচ্ছায় তোমাকে ত্যাগ করতাম না। [তিরমিযী: ৩৯২৬]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৭) এভাবে আমি তোমার প্রতি আরবী ভাষায় কুরআন অহী করেছি;[1] যাতে তুমি সতর্ক করতে পার মক্কাবাসীদেরকে এবং ওর আশেপাশের বাসিন্দাকে,[2] আর সতর্ক করতে পার জমায়েত হওয়ার দিন (কিয়ামত) সম্পর্কে, যাতে কোন সন্দেহ নেই;[3] সেদিন একদল জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং একদল প্রবেশ করবে জাহান্নামে। [4]

[1] অর্থাৎ, যেমন প্রত্যেক নবীকে তাঁর জাতির ভাষাভাষী করে প্রেরণ করেছি, অনুরূপ আমি তোমার প্রতি আরবী ভাষায় কুরআন অবতীর্ণ করেছি। কারণ, তোমার জাতি এই ভাষাতেই কথা বলে ও বুঝে।

[2] أُمُّ الْقُرَى (সমস্ত নগরের জননী) মক্কার অপর একটি নাম। এ নামকরণ এই জন্য হয়েছে যে, এটা হল আরবের অতীব পুরাতন বসতি। অর্থাৎ, যেন এটা সমস্ত গ্রাম-শহরের মা। অন্যান্য গ্রাম-শহরগুলো এর থেকেই জন্মলাভ করেছে। আর এ থেকে মক্কাবাসীদের বুঝানো হয়েছে। وَمَنْ حَوْلَهَا এর মধ্যে মক্কার পার্শ্বস্থ সমস্ত অঞ্চল শামিল। এদেরকে সতর্ক কর যে, এরা যদি কুফরী ও শিরক থেকে তওবা না করে, তাহলে আল্লাহ কর্তৃক শাস্তি পাওয়ার যোগ্য বিবেচিত হবে।

[3] কিয়ামতের দিনকে জমায়েত বা একত্রিত হওয়ার দিন এই জন্য বলা হয়েছে যে, সেদিন পূর্বাপর সকল মানুষ একত্রিত হবে। অনুরূপ অত্যাচারী, অত্যাচারিত এবং মু’মিন ও কাফের সকলে জমা হবে। আর সকলেই নিজের নিজের আমল অনুযায়ী প্রতিদান ও শাস্তি লাভ করবে।

[4] যে আল্লাহর নির্দেশাবলী পালন করবে, তাঁর যাবতীয় নিষিদ্ধ ও হারাম বস্তুসমূহ থেকে দূরে থাকবে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। পক্ষান্তরে তাঁর অবাধ্যজন এবং হারাম কার্যাদি সম্পাদনকারী জাহান্নামে প্রবেশ করবে। এই দুটো দলই হবে; তৃতীয় আর কোন দল হবে না।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৪২:৮ وَ لَوۡ شَآءَ اللّٰهُ لَجَعَلَهُمۡ اُمَّۃً وَّاحِدَۃً وَّ لٰكِنۡ یُّدۡخِلُ مَنۡ یَّشَآءُ فِیۡ رَحۡمَتِهٖ ؕ وَ الظّٰلِمُوۡنَ مَا لَهُمۡ مِّنۡ وَّلِیٍّ وَّ لَا نَصِیۡرٍ ﴿۸﴾
و لو شآء الله لجعلهم امۃ واحدۃ و لكن یدخل من یشآء فی رحمتهٖ و الظلمون ما لهم من ولی و لا نصیر ﴿۸﴾

আল্লাহ ইচ্ছা করলে তাদেরকে এক জাতিভুক্ত করতে পারতেন; কিন্তু তিনি যাকে চান তাঁর রহমতে প্রবেশ করান আর যালিমদের জন্য কোন অভিভাবক নেই, সাহায্যকারীও নেই। আল-বায়ান

আল্লাহ ইচ্ছে করলে তাদেরকে একই উম্মত করতেন, কিন্তু তিনি যাকে ইচ্ছে তাঁর রহমাতের মধ্যে দাখিল করেন, আর যালিমদের জন্য নেই কোন অভিভাবক, নেই কোন সাহায্যকারী। তাইসিরুল

আল্লাহ ইচ্ছা করলে মানুষকে একই উম্মাত করতে পারতেন। বস্তুতঃ তিনি যাকে ইচ্ছা তাকে স্বীয় অনুগ্রহের অধিকারী করেন। যালিমদের কোন অভিভাবক নেই, কোন সাহায্যকারীও নেই। মুজিবুর রহমান

And if Allah willed, He could have made them [of] one religion, but He admits whom He wills into His mercy. And the wrongdoers have not any protector or helper. Sahih International

৮. আর আল্লাহ ইচ্ছে করলে তাদেরকে একই উম্মত করতে পারতেন; কিন্তু তিনি যাকে ইচ্ছে তাকে স্বীয় অনুগ্রহে প্ৰবেশ করান। আর যালিমরা, তাদের কোন অভিভাবক নেই, কোন সাহায্যকারীও নেই।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(৮) আল্লাহ ইচ্ছা করলে মানুষকে একই জাতিভুক্ত (একই মতাদর্শের অনুসারী) করতে পারতেন;[1] কিন্তু তিনি যাকে ইচ্ছা তাকে স্বীয় অনুগ্রহের অধিকারী করে থাকেন। আর সীমালংঘনকারীদের কোন অভিভাবক নেই, কোন সাহায্যকারীও নেই।

[1] এই অবস্থায় কিয়ামতের দিন কেবল একটাই দল হত। অর্থাৎ, ঈমানদার জান্নাতীদের। কিন্তু আল্লাহর সুকৌশল ও ইচ্ছা এই বাধ্যকরণকে পছন্দ করেনি। বরং মানুষদেরকে পরীক্ষা করার জন্য তিনি তাদেরকে (করা না করার) ইচ্ছা ও এখতিয়ারের স্বাধীনতা দান করেছেন। যে এই স্বাধীনতার সঠিক ব্যবহার করে, সে আল্লাহর রহমতের অধিকারী হয়ে যায়। আর যে তার অপব্যবহার করে, সে প্রকৃতপক্ষে অন্যায়ভাবে আল্লাহর দেওয়া স্বাধীনতা ও এখতিয়ারকে আল্লাহরই অবাধ্যতায় ব্যবহার করে। সুতরাং কিয়ামতের দিন এ রকম অন্যায়কারী যালেমদের কোন সাহায্যকারী হবে না।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৪২:৯ اَمِ اتَّخَذُوۡا مِنۡ دُوۡنِهٖۤ اَوۡلِیَآءَ ۚ فَاللّٰهُ هُوَ الۡوَلِیُّ وَ هُوَ یُحۡیِ الۡمَوۡتٰی ۫ وَ هُوَ عَلٰی كُلِّ شَیۡءٍ قَدِیۡرٌ ﴿۹﴾
ام اتخذوا من دونهٖ اولیآء فالله هو الولی و هو یحی الموتی و هو علی كل شیء قدیر ﴿۹﴾

তারা কি তাঁকে বাদ দিয়ে বহু অভিভাবক গ্রহণ করেছে? কিন্তু আল্লাহ, তিনিই হলেন প্রকৃত অভিভাবক; তিনিই মৃতকে জীবিত করেন আর তিনি সকল বিষয়ে সর্বক্ষমতাবান। আল-বায়ান

কী! তারা কি আল্লাহর পরিবর্তে অন্যদেরকে অভিভাবক গ্রহণ করে নিয়েছে? আল্লাহই তো একমাত্র অভিভাবক, তিনিই মৃতকে জীবিত করেন আর তিনি সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান। তাইসিরুল

তারা কি আল্লাহর পরিবর্তে অপরকে অভিভাবক রূপে গ্রহণ করেছে? কিন্তু আল্লাহ! অভিভাবকতো তিনিই এবং তিনি মৃতকে জীবিত করেন। তিনি সর্ব বিষয়ে সর্বশক্তিমান। মুজিবুর রহমান

Or have they taken protectors [or allies] besides him? But Allah - He is the Protector, and He gives life to the dead, and He is over all things competent. Sahih International

৯. তারা কি আল্লাহ্‌র পরিবর্তে অন্যকে অভিভাবকরূপে গ্রহন করেছে, কিন্তু আল্লাহ্‌, অভিভাবক তো তিনিই এবং তিনি মৃতকে জীবিত করেন। আর তিনি সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(৯) ওরা কি আল্লাহর পরিবর্তে অপরকে অভিভাবকরূপে গ্রহণ করেছে? কিন্তু আল্লাহ, অভিভাবক তো তিনিই এবং তিনি মৃতকে জীবিত করেন। তিনি সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান। [1]

[1] ব্যাপার যখন এ রকমই, তখন মহান আল্লাহই এই অধিকার রাখেন যে, তাঁকেই ওলী, অভিভাবক, মদদগার ও সাহায্যকারী মনে করা হোক; তাদেরকে নয়, যাদের হাতে কোন এখতিয়ার নেই এবং যারা না কিছু শোনার ও উত্তর দেওয়ার ক্ষমতা রাখে, আর না উপকার ও অপকার করার কোন যোগ্যতা রাখে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
৪২:১০ وَ مَا اخۡتَلَفۡتُمۡ فِیۡهِ مِنۡ شَیۡءٍ فَحُكۡمُهٗۤ اِلَی اللّٰهِ ؕ ذٰلِكُمُ اللّٰهُ رَبِّیۡ عَلَیۡهِ تَوَكَّلۡتُ ٭ۖ وَ اِلَیۡهِ اُنِیۡبُ ﴿۱۰﴾
و ما اختلفتم فیه من شیء فحكمهٗ الی الله ذلكم الله ربی علیه توكلت ٭ و الیه انیب ﴿۱۰﴾

আর যে কোন বিষয়েই তোমরা মতবিরোধ কর, তার ফয়সালা আল্লাহর কাছে; তিনিই আল্লাহ, আমার রব; তাঁরই উপর আমি তাওয়াক্কুল করেছি এবং আমি তাঁরই অভিমুখী হই। আল-বায়ান

তোমরা যে সব বিষয়ে মতভেদ কর তার মীমাংসা আল্লাহর উপর সোপর্দ. সেই আল্লাহই আমার প্রতিপালক, আমি তাঁর উপরই নির্ভর করি, আর তাঁরই অভিমুখী হই। তাইসিরুল

তোমরা যে বিষয়েই মতভেদ কর না কেন, ওর মীমাংসাতো আল্লাহরই নিকট। বলঃ তিনিই আল্লাহ! আমার রাব্ব। আমি নির্ভর করি তাঁর উপর এবং আমি তাঁরই অভিমুখী! মুজিবুর রহমান

And in anything over which you disagree - its ruling is [to be referred] to Allah. [Say], "That is Allah, my Lord; upon Him I have relied, and to Him I turn back." Sahih International

১০. আর তোমরা যে বিষয়েই মতভেদ করা না কেন—তার ফয়সালা তো আল্লাহরই কাছে। তিনিই আল্লাহ — আমার রব; তাঁরই উপর আমি নির্ভর করেছি এবং আমি তাঁরই অভিমুখী হই।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(১০) তোমরা যে বিষয়েই মতভেদ কর না কেন -- ওর মীমাংসা তো আল্লাহরই নিকট।[1] বল, ‘তিনিই আল্লাহ -- আমার প্রতিপালক; আমি ভরসা রাখি তাঁরই ওপর এবং আমি তাঁরই অভিমুখী।’

[1] এখানে ‘মতভেদ’ বলতে দ্বীনের মতভেদ বুঝানো হয়েছে। যেভাবে ইয়াহুদী, খ্রীষ্টান, ইসলাম ইত্যাদি ধর্মের মধ্যে পরস্পর বহু বিরোধ রয়েছে এবং সকল ধর্মের অনুসারীরা দাবী করে যে, তাদের ধর্মই সত্য। অথচ সমস্ত ধর্ম একই সময়ে সত্য হতে পারে না। সত্য ধর্ম তো কেবল একটা এবং একটাই হতে পারে। দুনিয়াতে সত্য দ্বীন এবং সত্য পথ চেনার জন্য মহান আল্লাহর বাণী কুরআন বিদ্যমান। কিন্তু দুনিয়াতে মানুষ আল্লাহর সেই বাণীকে নিজের বিচারক এবং সালিস মানতে প্রস্তুত নয়। তাই পরিশেষে কিয়ামতের দিনই থেকে যায়, যেদিনে মহান আল্লাহ যাবতীয় মতবিরোধের ফায়সালা করবেন এবং সত্যাশ্রয়ীদেরকে জান্নাতে ও অন্যদেরকে জাহান্নামে প্রবেশ করাবেন।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ১০ পর্যন্ত, সর্বমোট ৫৩ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ 1 2 3 4 5 6 পরের পাতা »