আল্লাহ আর-রাহমান (পরম দয়াময়) বিষয়ক আয়াতসমূহ ৬৩ টি
আল-ফাতিহা
১:৩ الرَّحۡمٰنِ الرَّحِیۡمِ ۙ﴿۳﴾

দয়াময়, পরম দয়ালু, পরম করুণাময়, অতি দয়ালু। আল-বায়ান

যিনি পরম করুণাময় অতি দয়ালু। তাইসিরুল

যিনি পরম দয়ালু, অতিশয় করুণাময়। মুজিবুর রহমান

The Entirely Merciful, the Especially Merciful, Sahih International

৩. দয়াময়, পরম দয়ালু।(১)

(১) ‘রহমান-রাহীম’ শব্দদ্বয়ের কারণে মূল আয়াতের অর্থ এই দাঁড়ায় যে, আল্লাহ্ তা'আলাই সমস্ত এবং সকল প্রকার প্রশংসার একচ্ছত্র অধিকারী কেবল এই জন্য নয় যে তিনি রব্বুল আলামীন, বরং এই জন্যও যে, তিনি “আর-রাহমান” ও “আর-রাহীম”। বিশ্বের সর্বত্র আল্লাহ তা'আলার অপার অসীম দয়া ও অনুগ্রহ প্রতিনিয়ত পরিবেশিত হচ্ছে। প্রাকৃতিক জগতে এই যে নিঃসীম শান্তি শৃংখলা ও সামঞ্জস্য-সুবিন্যাস বিরাজিত রয়েছে, এর একমাত্র কারণ এই যে, আল্লাহর রহমত সাধারণভাবে সব কিছুর উপর অজস্র ধারায় বর্ষিত হয়েছে। সকল শ্রেণীর সৃষ্টিই আল্লাহর অনুগ্রহ লাভ করেছে। কাফির, মুশরিক, আল্লাহ্‌দ্রোহী, নাস্তিক, মুনাফিক, কাউকেও আল্লাহ্‌ তাঁর রহমত হতে জীবন-জীবিকা ও সাধারণ নিয়মে বৈষয়িক উন্নতি কোন কিছু থেকেই– বঞ্চিত করেন নি। এমন কি, আল্লাহর অবাধ্যতা এবং তার বিরোধিতা করতে চাইলেও আল্লাহ নিজ হতে কাউকেও বাধা প্রদান করেন নি; বরং তিনি মানুষকে একটি সীমার মধ্যে যা ইচ্ছে তা করারই সুযোগ দিয়েছেন। এই জড় দুনিয়ার ব্যাপারে এটাই আল্লাহর নিয়ম। এই জন্যই আল্লাহ তা'আলা ঘোষণা করেছেন, “আর আমার রহমত সব কিছুকেই ব্যাপ্ত করে আছে।” [সূরা আল-আরাফ: ১৫৬]

কিন্তু এই জড় জগত চূড়ান্তভাবে শেষ হয়ে যাবার পর যে নূতন জগত স্থাপিত হবে, তা হবে নৈতিক নিয়মের বুনিয়াদে স্থাপিত এক আলাদা জগত। সেখানে আল্লাহর দয়া অনুকম্পা আজকের মত সর্বসাধারণের প্রাপ্য হবে না। তখন আল্লাহর রহমত পাবে কেবলমাত্র তারাই যারা দুনিয়ায় আখেরাতের রহমত পাওয়ার জন্য নির্দিষ্ট সঠিক কর্মপন্থা গ্রহণ করেছে। ‘রাব্বুল আলামীন’ বলার পর ‘আর-রাহমান’ ও ‘আর-রাহিম’ শব্দদ্বয় উল্লেখ করায় এই কথাই সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, এ বিশ্ব-লোকের লালন পালন, রক্ষণাবেক্ষন ও ক্রমবিকাশ দানের যে সুষ্ঠু ও নিখুত ব্যবস্থা আল্লাহ তা'আলা করেছেন, তার মূল কারণ সৃষ্টির প্রতি তার অপরিসীম দয়া ও অনুগ্রহ ছাড়া আর কিছুই নয়। অনুরূপভাবে ‘রাহমান’ এর পর ‘রাহীম’ উল্লেখ করে আল্লাহ তা'আলা এই কথাই বলতে চান যে, দুনিয়াতে আল্লাহর নিরপেক্ষ ও সাধারণ রহমত লাভ করে কেউ যেন অতিরিক্ত মাত্রায় মেতে না যায় এবং আল্লাহ ও তার দেয়া দ্বীনকে ভুলে না বসে। কেননা দুনিয়ার জীবনের পর আরও একটি জগত, আরও একটি জীবন নিশ্চিতরূপে রয়েছে, যখন আল্লাহর রহমত নির্বিশেষে আনুগত্যশীল বান্দাদের জন্যই নির্দিষ্ট হবে। আর প্রকৃতপক্ষে তাদের জীবনই হবে সর্বোতভাবে সাফল্যমণ্ডিত।

তাফসীরে জাকারিয়া

(৩) যিনি অনন্ত করুণাময়, পরম দয়ালু।

 رَحما  শব্দটি فَعلان এর ওজনে। আর رَحِيم শব্দটি فَعِيل এর ওজনে। দু’টোই মুবালাগার স্বীগা (অতিরিক্ততাবোধক বাচ্য)। যার মধ্যে আধিক্য ও স্থায়িত্বের অর্থ পাওয়া যায়। অর্থাৎ, মহান আল্লাহ অতীব দয়াময় এবং তাঁর এ গুণ অন্যান্য গুণসমূহের মত চিরন্তন। কোন কোন আলেমগণ বলেছেন ‘রাহীম’-এর তুলনায় ‘রাহমান’-এর মধ্যে মুবালাগা (অতিরিক্ততাঃ রহমত বা দয়ার ভাগ) বেশী আছে। আর এই জন্যই বলা হয়, ‘রাহমানাদ্দুনিয়া অল-আখিরাহ’ (দুনিয়া ও আখেরাতে রহমকারী)। দুনিয়াতে তাঁর রহমত ব্যাপক; বিনা পার্থক্যে কাফের ও মু’মিন সকলেই তা দ্বারা উপকৃত হচ্ছে। তবে আখেরাতে তিনি কেবল ‘রাহীম’ হবেন। অর্থাৎ, তাঁর রহমত কেবল মু’মিনদের জন্য নির্দিষ্ট হবে। اللَّهُمَّ! اجْعَلْنَا مِنْهُمْ (আল্লাহ আমাদেরকে তাঁদেরই অন্তর্ভুক্ত কর!) (আ-মীন)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
আল-বাকারা
২:১৬৩ وَ اِلٰـهُکُمۡ اِلٰهٌ وَّاحِدٌ ۚ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ الرَّحۡمٰنُ الرَّحِیۡمُ ﴿۱۶۳﴾

আর তোমাদের ইলাহ এক ইলাহ। তিনি ছাড়া কোন (সত্য) ইলাহ নেই। তিনি অতি দয়াময়, পরম দয়ালু। আল-বায়ান

তোমাদের উপাস্য হচ্ছেন এক আল্লাহ, তিনি ছাড়া সত্যিকারের কোন উপাস্য নেই। তিনি পরম করুনাময়, অতি দয়ালু। তাইসিরুল

এবং তোমাদের ইলাহ একমাত্র আল্লাহ; সেই সর্বদাতা করুণাময় ব্যতীত অন্য কেহ উপাস্য নেই। মুজিবুর রহমান

And your god is one God. There is no deity [worthy of worship] except Him, the Entirely Merciful, the Especially Merciful. Sahih International

১৬৩. আর তোমাদের ইলাহ এক ইলাহ, দয়াময়, অতি দয়ালু তিনি ছাড়া অন্য কোন সত্য ইলাহ নেই।(১)

(১) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “আল্লাহর ইসমে আযাম' এ দুটি আয়াতের মধ্যে রয়েছে।” তারপর তিনি এ আয়াত ও সূরা আলে ইমরানের প্রথম আয়াতটি তেলাওয়াত করলেন। [তিরমিযী: ৩৪৭৮, আবু দাউদ: ১৪৯৬, ইবনে মাজাহ: ৩৮৫৫]

তাফসীরে জাকারিয়া

(১৬৩) আর তোমাদের উপাস্য একমাত্র উপাস্য (আল্লাহ)। তিনি ব্যতীত আর কোন (সত্যিকার) উপাস্য নেই, [1] তিনি চরম করুণাময়, পরম দয়ালু।

[1] এই আয়াতে আবারও তাওহীদের দাওয়াত দেওয়া হয়েছে। তাওহীদের এই দাওয়াত মক্কার মুশরিকদের জন্য বোধগম্য ছিল না। তারা বলল, {أَجَعَلَ الْآلِهَةَ إِلَهًا وَاحِدًا إِنَّ هَذَا لَشَيْءٌ عُجَابٌ} সে কি এতগুলো উপাস্যের পরিবর্তে একটি মাত্র উপাস্য সাব্যস্ত করেছে। নিশ্চয় এটা এক বিস্ময়কর ব্যাপার। (সূরা স্বা-দঃ ৫ আয়াত) এই জন্যই পরের আয়াতে এই তাওহীদের প্রমাণাদি পেশ করা হচ্ছে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৩ আর-রাদ
১৩:৩০ کَذٰلِکَ اَرۡسَلۡنٰکَ فِیۡۤ اُمَّۃٍ قَدۡ خَلَتۡ مِنۡ قَبۡلِهَاۤ اُمَمٌ لِّتَتۡلُوَا۠ عَلَیۡهِمُ الَّذِیۡۤ اَوۡحَیۡنَاۤ اِلَیۡکَ وَ هُمۡ یَکۡفُرُوۡنَ بِالرَّحۡمٰنِ ؕ قُلۡ هُوَ رَبِّیۡ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ ۚ عَلَیۡهِ تَوَکَّلۡتُ وَ اِلَیۡهِ مَتَابِ ﴿۳۰﴾

এমনিভাবে আমি তোমাকে পাঠিয়েছি এমন এক জাতির নিকট, যার পূর্বে অনেক জাতি গত হয়েছে, যেন আমি তোমার প্রতি যে ওহী প্রেরণ করেছি, তা তাদের নিকট তিলাওয়াত কর। অথচ তারা রহমানকে অস্বীকার করে। বল, ‘তিনি আমার রব, তিনি ছাড়া আর কোন (সত্য) ইলাহ নেই, তাঁরই উপর আমি তাওয়াক্কুল করেছি এবং তাঁরই দিকে আমার প্রত্যাবর্তন’। আল-বায়ান

(পূর্বে যেমন পাঠিয়েছিলাম) এভাবেই আমি তোমাকে এমন এক সম্প্রদায়ের কাছে পাঠিয়েছি যার পূর্বে অনেক সম্প্রদায় গত হয়ে গেছে, যাতে তুমি তাদের কাছে তেলাওয়াত কর যা আমি তোমার প্রতি ওয়াহী করি, তবুও তারা দয়াময় আল্লাহকে অস্বীকার করে। বল, ‘তিনি আমার প্রতিপালক, তিনি ছাড়া সত্যিকারের কোন ইলাহ নেই, আমি তাঁর উপরই নির্ভর করি আর তিনিই প্রত্যাবর্তনস্থল।’ তাইসিরুল

এভাবে আমি তোমাকে পাঠিয়েছি এক জাতির প্রতি, যার পূর্বে বহু জাতি গত হয়েছে, তাদের নিকট আবৃত্তি করার জন্য, যা আমি তোমার প্রতি প্রত্যাদেশ করেছি; তথাপি তারা দয়াময়কে অস্বীকার করে। তুমি বলঃ তিনিই আমার রাব্ব! তিনি ছাড়া অন্য কোন মা‘বূদ নেই, তাঁরই উপর আমি নির্ভর করি এবং আমার প্রত্যাবর্তন তাঁরই কাছে। মুজিবুর রহমান

Thus have We sent you to a community before which [other] communities have passed on so you might recite to them that which We revealed to you, while they disbelieve in the Most Merciful. Say, "He is my Lord; there is no deity except Him. Upon Him I rely, and to Him is my return." Sahih International

৩০. এভাবে আমরা আপনাকে পাঠিয়েছি এমন এক জাতির প্রতি যাদের আগে বহু জাতি গত হয়েছে, যাতে আমরা আপনার প্রতি যা ওহী করেছি, তা তাদের কাছে তিলাওয়াত করেন। তথাপি তারা রহমানকে অস্বীকার করে।(১) বলুন, তিনিই আমার রব; তিনি ছাড়া অন্য কোন হক্ক ইলাহ নেই। তারই উপর আমি নির্ভর করি এবং তারই কাছে আমার ফিরে যাওয়া।

(১) অর্থাৎ তাঁর বন্দেগী থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে আছে। তাঁর গুণাবলী, ক্ষমতা ও অধিকারে অন্যদেরকে তাঁর সাথে শরীক করছে। তাঁর দানের জন্য অন্যদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছে। তারা নতুন কিছু করছে না, তাদের পূর্বেও আমরা অনেক রাসুল প্রেরণ করেছি। তারা যেভাবে দয়াময় প্রভুকে ভুলে শাস্তির অধিকারী হয়েছে তেমনিভাবে আপনার জাতির কাফেররাও রহমান তথা দয়াময় প্রভুকে অস্বীকার করছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে তাদের শাস্তি অনিবার্য। [এ সংক্রান্ত আরো আয়াত দেখুন, সূরা আন-নাহলঃ ৬৩, সূরা আল-আনআমঃ ৩৪]

আয়াতে বলা হয়েছে, যে তারা “রাহমান”কে অস্বীকার করছে। এখানে মূলতঃ তারা আল্লাহ তা'আলাকে “রাহমান” বা অত্যন্ত দয়ালু এ গুণে গুণান্বিত করতে অস্বীকার করছিল। এটা ছিল আল্লাহর নাম ও গুণের সাথে শির্ক করা। কুরআনের অন্যত্র স্পষ্টভাবে এসেছে যে, তারা এ নামটি অস্বীকার করত। যেমন, “যখনই তাদেরকে বলা হয়, সিজদাবনত হও রহমান এর প্রতি, তখন তারা বলে, রহমান আবার কে? তুমি কাউকেও সিজদা করতে বললেই কি আমরা তাকে সিজদা করব? এতে তাদের বিমুখতাই বৃদ্ধি পায়।” [সূরা আল-ফুরকানঃ ৬০] হুদায়বিয়ার সন্ধির সময়ও কাফেররা আল্লাহর এ গুণটি লিখা নিয়ে আপত্তি করেছিল এবং বলেছিলঃ আমরা রহমানকে চিনি না। [বুখারীঃ ২৭৩১-২৭৩২]

অথচ এ নামটি এমন এক নাম যে নাম একমাত্র তাঁর জন্যই ব্যবহার হতে পারে। আর কাউকে কোনভাবেই রহমান নাম বা গুণ হিসেবে ডাকা যাবে না। আর এজন্যই আল্লাহ তা'আলা তাঁর রাসূলকে বলছেন যে, তারা যদিও গোয়ার্তুমি করে এ নামটি অস্বীকার করছে আপনি তাদেরকে এ নামটি যে আমার তা অত্যন্ত দৃঢ়ভাবে তুলে ধরুন এবং বলুনঃ তিনিই আমার রব; তিনি ছাড়া অন্য কোন হক্ক ইলাহ নেই। তারই উপর আমি নির্ভর করি এবং তারই কাছে আমার ফিরে যাওয়া। তোমাদের অস্বীকার তার এ নামকে তার জন্য সাব্যস্ত করতে কোন ভাবেই ব্যাহত করতে পারবে না।

অন্যত্র বলা হয়েছে, “বলুন, তোমরা আল্লাহ নামে ডাক বা রাহমান নামে ডাক, তোমরা যে নামেই ডাক সকল সুন্দর নামই তো তাঁর। তোমরা সালাতে স্বর উচ্চ করো না এবং খুব ক্ষীণও করো না; দুয়ের মধ্যপথ অবলম্বন করো। [সূরা আল-ইসরাঃ ১১০] আল্লাহ আরো বলেনঃ বলুন, তিনিই দয়াময়, আমরা তার প্রতি বিশ্বাস করি ও তারই উপর নির্ভর করি। [সূরা আল-মুলকঃ ২৯] আর এ নামটি সবচেয়ে বেশী মহিমান্বিত নাম হওয়াতে আল্লাহর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘোষণা করেছেন যে, “আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় নাম হচ্ছে 'আবদুল্লাহ ও আব্দুররাহমান।” [মুসলিমঃ ২১৩২]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৩০) এইভাবে আমি তোমাকে পাঠিয়েছি এমন এক জাতির প্রতি যার পূর্বে বহু জাতি গত হয়েছে;[1] যাতে আমি তোমার প্রতি যা প্রত্যাদেশ করেছি তাদের নিকট তা আবৃত্তি কর। তারা পরম দয়াময়কে অস্বীকার করে।[2] তুমি বল, ‘তিনিই আমার প্রতিপালক; তিনি ছাড়া অন্য কোন (সত্য) উপাস্য নেই।[3] তাঁরই উপর আমি নির্ভর করি এবং আমার প্রত্যাবর্তন তাঁরই কাছে।’

[1] যেমন আমি তোমাকে আমার বার্তা পৌঁছানোর জন্য প্রেরণ করেছি, অনুরূপ তোমার পূর্ববর্তী উম্মতদের মাঝেও রসূল প্রেরণ করেছিলাম, তাদেরকেও তেমনই মিথ্যাজ্ঞান করা হয়েছিল যেমন তোমাকে করা হয়েছে এবং যেমন উক্ত সম্প্রদায়ের লোকেরা মিথ্যাজ্ঞান করার কারণে আযাবগ্রস্ত হয়েছিল, এদেরও সেই পরিণাম থেকে নিশ্চিন্ত থাকা উচিত নয়।

[2] মক্কার মুশরিকরা ‘রাহমান’ শব্দে চরম চকিত হত। হুদাইবিয়া সন্ধির সময় যখন ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম’ এর শব্দাবলী লেখা হয়েছিল, তখন তারা বলেছিল, ‘রাহমান রাহীম’ কি আমরা জানি না। (ইবনে কাসীর)

[3] অর্থাৎ, ‘রাহমান’ আমার সেই প্রতিপালক, যিনি ব্যতীত কোন মাবূদ নেই।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৭ আল-ইসরা (বনী-ইসরাঈল)
১৭:১১০ قُلِ ادۡعُوا اللّٰهَ اَوِ ادۡعُوا الرَّحۡمٰنَ ؕ اَیًّامَّا تَدۡعُوۡا فَلَهُ الۡاَسۡمَآءُ الۡحُسۡنٰی ۚ وَ لَا تَجۡهَرۡ بِصَلَاتِکَ وَ لَا تُخَافِتۡ بِهَا وَ ابۡتَغِ بَیۡنَ ذٰلِکَ سَبِیۡلًا ﴿۱۱۰﴾

বল, ‘তোমরা (তোমাদের রবকে) ‘আল্লাহ’ নামে ডাক অথবা ‘রাহমান’ নামে ডাক, যে নামেই তোমরা ডাক না কেন, তাঁর জন্যই তো রয়েছে সুন্দর নামসমূহ। তুমি তোমার সালাতে স্বর উঁচু করো না এবং তাতে মৃদুও করো না; বরং এর মাঝামাঝি পথ অবলম্বন কর। আল-বায়ান

বল, ‘তোমরা আল্লাহ নামে ডাকো বা রহমান নামে ডাকো, যে নামেই তাঁকে ডাকো না কেন (সবই ভাল) কেননা সকল সুন্দর নামই তো তাঁর।’ তোমার সলাতে স্বর উচ্চ করো না, আর তা খুব নীচুও করো না, এ দু’য়ের মধ্যবর্তী পথ অবলম্বন কর। তাইসিরুল

বলঃ তোমরা ‘আল্লাহ’ নামে আহবান কর অথবা ‘রাহমান’ নামে আহবান কর, তোমরা যে নামেই আহবান করনা কেন, সব সুন্দর নামইতো তাঁর! তোমরা সালাতে তোমাদের স্বর উচু করনা এবং অতিশয় ক্ষীণও করনা; এই দুই এর মধ্য পন্থা অবলম্বন কর। মুজিবুর রহমান

Say, "Call upon Allah or call upon the Most Merciful. Whichever [name] you call - to Him belong the best names." And do not recite [too] loudly in your prayer or [too] quietly but seek between that an [intermediate] way. Sahih International

১১০. বলুন, তোমরা আল্লাহ নামে ডাক বা রাহমান নামে ডাক, তোমরা যে নামেই ডাক সকল সুন্দর নামই তো তাঁর। আর আপনি সালাতে স্বর খুব উচ্চ করবেন না আবার খুব ক্ষীণও করবেন না; বরং এ দুয়ের মধ্যপথ অবলম্বন করুন।(১)

(১) এ আয়াত নাযিল হওয়ার কারণ হিসেবে এসেছে যে, মক্কায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সালাতে উচ্চস্বরে তেলাওয়াত করতেন, তখন মুশরিকরা ঠাট্টা-বিদ্রুপ করত এবং কুরআন, জিবরীল ও স্বয়ং আল্লাহ্ তাআলাকে উদ্দেশ্য করে ধৃষ্টতাপূর্ণ কথাবার্তা বলত এর জওয়াবে আয়াতের শেষাংশ অবতীর্ণ হয়েছে। [বুখারীঃ ৪৭২২, মুসলিমঃ ৪৪৬] এতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে সশব্দ ও নিঃশব্দ উভয়ের মধ্যবর্তী পন্থা অবলম্বন করার শিক্ষা দেয়া হয়েছে। কেননা, মধ্যবর্তী শব্দে পাঠ করলেই প্রয়োজন পূর্ণ হয়ে যেত এবং সশব্দে পাঠ করলে মুশরিকরা নিপীড়নের যে সুযোগ পেত, তা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

কোন কোন মুফাসসির বলেন, এ আয়াতে সালাতে কুরআন তেলাওয়াতের আদব বর্ণনা করে বলা হয়েছে যে, খুব উচ্চঃস্বরে না হওয়া চাই এবং এমন নিঃশব্দেও না হওয়া চাই যে, মুক্তাদীরা শুনতে পায় না। বলাবাহুল্য এ বিধান বিশেষ করে সশব্দে পঠিত সালাতসমূহের জন্যে। যোহর ও আসরের নামাযে নিঃশব্দে পাঠ করা মুতাওয়াতির হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। জাহরী বা উচ্চঃস্বরে পড়তে হয় এমন সালাত বলতে ফজর, মাগরিব ও এশার সালাত বোঝায়। তাহাজ্জুদের সালাতও এর অন্তর্ভুক্ত। যেমন, এক হাদীসে রয়েছে, একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাহাজ্জুদের সময় আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু ও ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু এর কাছ দিয়ে গেলে আবু বকরকে নিঃশব্দে এবং ওমরকে উচ্চঃস্বরে তেলাওয়াতরত দেখতে পান।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবু বকর রাদি'আল্লাহু আনহু–কে বললেনঃ আপনি এত নিঃশব্দে তেলাওয়াত করেন কেন? তিনি আরয করলেনঃ যাকে শোনানো উদ্দেশ্য তাকে শুনিয়ে দিয়েছি। আল্লাহ্ তা'আলা গোপনতম আওয়াযও শ্রবণ করেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ সামান্য শব্দ সহকারে পাঠ করুন। অতঃপর ওমরকে বললেনঃ আপনি এত উচ্চঃস্বরে তেলাওয়াত করেন কেন? তিনি আরয করলেনঃ আমি নিদ্রা ও শয়তানকে বিতাড়িত করে দেয়ার জন্যে উচ্চঃস্বরে পাঠ করি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে আদেশ দিলেন, যে একটু অনুচ্চ শব্দে পাঠ করুন। [তিরমিযীঃ ৪৪৭]

তবে তাহাজুদের সালাতে ইচ্ছা করলে কেরাত উচ্চস্বরে পড়তে পারে আবার ইচ্ছা করলে নিচুস্বরেও পড়তে পারে। এ ব্যাপারে ধরাবাধা কোন নিয়ম নেই। [দেখুনঃ তিরমিযীঃ ৪৪৮] তবে এ আয়াতে বর্ণিত “সালাত” শব্দটির অর্থ সম্পর্কে আরো কিছু মত রয়েছে। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, এ আয়াতে সালাত বলতে দোআ বুঝানো হয়েছে। [বুখারীঃ ৪৭২৩, মুসলিমঃ ৪৪৭]। সুতরাং সে অনুসারে দোআ করতে স্বর খুব উচু করতে নিষেধ করা হয়েছে।

তাফসীরে জাকারিয়া

(১১০) বল, তোমরা ‘আল্লাহ’ নামে আহবান কর অথবা ‘রহমান’ নামে আহবান কর, তোমরা যে নামেই আহবান কর, সকল সুন্দর নামাবলী তাঁরই।[1] আর তুমি নামাযে তোমার স্বর উচ্চ করো না এবং অতিশয় ক্ষীণও করো না; বরং এই দুই-এর মধ্যবর্তী পথ অবলম্বন কর।[2]

[1] যেমন পূর্বেও অতিবাহিত হয়েছে যে, মক্কার মুশরিকরা আল্লাহর গুণবাচক নাম ‘রাহমান’ ও ‘রাহীম’এর সাথে পরিচিত ছিল না। আর কোন ‘আষার’ (সাহাবীর উক্তি)-তে এসেছে যে, মুশরিকদের কেউ কেউ যখন নবী (সাঃ)-এর পবিত্র মুখ থেকে ‘ইয়া রাহমান, ইয়া রাহীম’ শব্দ শুনল, তখন বলে উঠল যে, এই লোক তো আমাদেরকে বলে যে, কেবল এক আল্লাহকেই ডাক, আর সে নিজে দু’জন উপাস্যকে ডাকছে! তাদের এই কথার জবাবে এ­ই আয়াত নাযিল হয়। (ইবনে কাসীর)

[2] এ আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার কারণ সম্পর্কে ইবনে আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বর্ণনা করেন যে, মক্কায় রসূল (সাঃ) আত্মগোপন করে থাকতেন। যখন তিনি তাঁর সাহাবীদের নামায পড়াতেন, তখন শব্দ একটু উঁচু করতেন। মুশকিরা কুরআন শুনে কুরআনকে এবং আল্লাহকে গালি-গালাজ করত। তাই মহান আল্লাহ বললেন, তোমার আওয়াজ এতটা উঁচু করো না যে, মুশরিকরা তা শুনে কুরআনকে গালি-গালাজ করে। আর এত আস্তেও পড়ো না যে, সাহাবীগণ তা শুনতেই না পায়। (বুখারীঃ তাওহীদ অধ্যায়, মুসলিমঃ নামায অধ্যায়) স্বয়ং নবী (সাঃ)-এর ঘটনা যে, কোন এক রাতে তিনি আবূ বাকর (রাঃ)-এর পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি দেখলেন যে, আবূ বাকর (রাঃ) খুব মৃদু আওয়াজে নামায পড়ছেন। অতঃপর উমার (রাঃ)-কেও দেখলেন যে, তিনি উঁচু শব্দে নামায পড়ছেন। তিনি তাঁদের উভয়কে কারণ জিজ্ঞাসা করলেন। আবূ বাকার (রাঃ) বললেন, আমি যাঁর সাথে মুনাজাতে ব্যস্ত ছিলাম, তিনি আমার শব্দ শুনছিলেন। আর উমার (রাঃ) উত্তরে বললেন, আমার উদ্দেশ্য ঘুমন্তদেরকে জাগানো এবং শয়তানকে ভাগানো। তিনি আবূ বাকার (রাঃ)-কে বললেন যে, তুমি তোমার শব্দ একটু উঁচু করে নিও এবং উমর (রাঃ)-কে বললেন যে, তুমি তোমার শব্দ একটু নীচু করে নিও। (আবূ দাউদ ও তিরমিযী) আয়েশা (রাঃ)  বলেন, এই আয়াতটি দু’আ সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে। (বুখারী ও মুসলিম- ফাতহুল কাদীর)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৯ মারইয়াম
১৯:১৮ قَالَتۡ اِنِّیۡۤ اَعُوۡذُ بِالرَّحۡمٰنِ مِنۡکَ اِنۡ کُنۡتَ تَقِیًّا ﴿۱۸﴾

মারইয়াম বলল, ‘আমি তোমার থেকে পরম করুণাময়ের আশ্রয় চাচ্ছি, যদি তুমি মুত্তাকী হও’। আল-বায়ান

মারইয়াম বলল, ‘আমি তোমা হতে দয়াময় আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করছি যদি তুমি আল্লাহকে ভয় কর’ (তবে আমার নিকট এসো না)।’ তাইসিরুল

মারইয়াম বললঃ তুমি যদি (আল্লাহকে) ভয় কর তাহলে আমি তোমা হতে দয়াময়ের কাছে আশ্রয় চাচ্ছি। মুজিবুর রহমান

She said, "Indeed, I seek refuge in the Most Merciful from you, [so leave me], if you should be fearing of Allah." Sahih International

১৮. মার্‌ইয়াম বলল, আমি তোমার থেকে দয়াময়ের আশ্রয় প্রার্থনা করছি (আল্লাহকে ভয় কর) যদি তুমি মুত্তাকী হও।(১)

(১) মারইয়াম যখন পর্দার ভেতর আগত একজন মানুষকে নিকটে দেখতে পেলেন, তখন তার উদেশ্য অসৎ বলে আশঙ্কা করলেন এবং বললেনঃ “আমি তোমার থেকে রহমানের আশ্রয় প্রার্থনা করি, যদি তুমি তাকওয়ার অধিকারী হও”। [ইবন কাসীর] এ বাক্যটি এমন, যেমন কেউ কোন যালেমের কাছে অপারগ হয়ে এভাবে ফরিয়াদ করেঃ যদি তুমি ঈমানদার হও, তবে আমার প্রতি যুলুম করো না। এ যুলুম থেকে বাধা দেয়ার জন্যে তোমার ঈমান যথেষ্ট হওয়া উচিত। উদ্দেশ্য এই যে, আল্লাহকে ভয় করা এবং অপকর্ম থেকে বিরত থাকা তোমার জন্যে সমীচীন। [বাগভী] অথবা এর অর্থ: যদি তুমি আল্লাহর নিকট আমার আশ্রয় প্রার্থনাকে মূল্য দাও। তবে আমার কাছ থেকে দূরে থাক। [তাবারী; আদওয়াউল বায়ান]

তাফসীরে জাকারিয়া

(১৮) মারয়্যাম বলল, ‘আমি তোমা হতে পরম করুণাময়ের আশ্রয় প্রার্থনা করছি; তুমি যদি সংযমশীল হও (তাহলে আমার নিকট থেকে সরে যাও)।’

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৯ মারইয়াম
১৯:২৬ فَکُلِیۡ وَ اشۡرَبِیۡ وَ قَرِّیۡ عَیۡنًا ۚ فَاِمَّا تَرَیِنَّ مِنَ الۡبَشَرِ اَحَدًا ۙ فَقُوۡلِیۡۤ اِنِّیۡ نَذَرۡتُ لِلرَّحۡمٰنِ صَوۡمًا فَلَنۡ اُکَلِّمَ الۡیَوۡمَ اِنۡسِیًّا ﴿ۚ۲۶﴾

‘অতঃপর তুমি খাও, পান কর এবং চোখ জুড়াও। আর যদি তুমি কোন লোককে দেখতে পাও তাহলে বলে দিও, ‘আমি পরম করুণাময়ের জন্য চুপ থাকার মানত করেছি। অতএব আজ আমি কোন মানুষের সাথে কিছুতেই কথা বলব না’। আল-বায়ান

অতঃপর খাও, পান কর আর (তোমার) চোখ জুড়াও। যদি তুমি কোন লোককে দেখতে পাও তাহলে বলবে- আমি রহমান আল্লাহর জন্য সাওম পালনের মানৎ করেছি, কাজেই আমি কোন মানুষের সঙ্গে আজ কিছুতেই কথা বলব না।’ তাইসিরুল

সুতরাং আহার কর, পান কর ও চক্ষু জুড়িয়ে নাও; মানুষের মধ্যে কেহকে যদি তুমি দেখ তখন বলঃ আমি দয়াময়ের উদ্দেশে মৌনতা অবলম্বনের মানত করেছি; সুতরাং আজ আমি কিছুতেই কোন মানুষের সাথে বাক্যালাপ করবনা। মুজিবুর রহমান

So eat and drink and be contented. And if you see from among humanity anyone, say, 'Indeed, I have vowed to the Most Merciful abstention, so I will not speak today to [any] man.' " Sahih International

২৬. কাজেই খাও, পান কর এবং চোখ জুড়াও। অতঃপর মানুষের মধ্যে কাউকেও যদি তুমি দেখ তখন বলো, আমি দয়াময়ের উদ্দেশ্যে মৌনতা অবলম্বনের মানত করেছি।(১) কাজেই আজ আমি কিছুতেই কোন মানুষের সাথে কথাবার্তা বলব না।(২)

(১) কাতাদাহ বলেন, তিনি খাবার, পানীয় ও কথা-বার্তা এ তিনটি বিষয় থেকেই সাওম পালন করেছিলেন। [আত-তাফসীরুস সহীহ]

(২) কোন কোন মুফাস্‌সির বলেন, ইসলাম পূর্বকালে সকাল থেকে রাত্রি পর্যন্ত মৌনতা অবলম্বন করা এবং কারও সাথে কথা না বলার সাওম পালন ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত ছিল। [ইবন কাসীর] ইসলাম একে রহিত করে মন্দ কথাবার্তা, গালিগালাজ, মিথ্যা, পরনিন্দা ইত্যাদি থেকে বেঁচে থাকাকেই জরুরী করে দিয়েছে। সাধারণ কথাবার্তা ত্যাগ করা ইসলামে কোন ইবাদত নয়। তাই এর মানত করাও জায়েয নয়। এক হাদীসে আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ “সন্তান সাবালক হওয়ার পর পিতা মারা গেলে তাকে এতীম বলা হবে না এবং সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মৌনতা অবলম্বন করা কোন ইবাদত নয়।” [আবু দাউদঃ ২৮৭৩]

তাফসীরে জাকারিয়া

(২৬) সুতরাং আহার কর, পান কর ও চোখ জুড়াও;[1] মানুষের মধ্যে কাউকেও যদি তুমি দেখ, তাহলে বল, [2] আমি দয়াময়ের উদ্দেশ্যে চুপ থাকার মানত করেছি; সুতরাং আজ আমি কিছুতেই কোন মানুষের সাথে কথা বলব না।’

[1] অর্থাৎ খেজুর খাও, নদী বা ঝরনার পানি পান কর এবং সন্তানকে দেখে চোখ জুড়াও।

[2] এখানে বলার অর্থ ইশারা বা ইঙ্গিতে বলা; মুখের বলা নয়। যেহেতু তাদের শরীয়তে রোযার অর্থই ছিল খাওয়া ও কথা বলা হতে বিরত থাকা।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৯ মারইয়াম
১৯:৪৪ یٰۤاَبَتِ لَا تَعۡبُدِ الشَّیۡطٰنَ ؕ اِنَّ الشَّیۡطٰنَ کَانَ لِلرَّحۡمٰنِ عَصِیًّا ﴿۴۴﴾

‘হে আমার পিতা, তুমি শয়তানের ইবাদাত করো না। নিশ্চয় শয়তান হল পরম করুণাময়ের অবাধ্য’। আল-বায়ান

হে আমার পিতা! আপনি শয়তানের ‘ইবাদাত করবেন না, শয়তান হচ্ছে দয়াময়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী। তাইসিরুল

হে আমার পিতা! শাইতানের ইবাদাত করনা; শাইতান আল্লাহর অবাধ্য। মুজিবুর রহমান

O my father, do not worship Satan. Indeed Satan has ever been, to the Most Merciful, disobedient. Sahih International

৪৪. হে আমার পিতা! শয়তানের ইবাদত করবেন না।(১) শয়তান তো দয়াময়ের অবাধ্য।

(১) বলা হচ্ছে, “শয়তানের ইবাদাত করবেন না” যদিও ইবরাহীমের পিতা এবং তার জাতির অন্যান্য লোকেরা মূর্তি পূজা করতো কিন্তু যেহেতু তারা শয়তানের আনুগত্য করছিল তাই ইবরাহীম তাদের এ শয়তানের আনুগত্যকেও শয়তানের ইবাদাত গণ্য করেন। আয়াতের অর্থ দাঁড়ায়, আপনি এ মূর্তিগুলোর ইবাদত করার মাধ্যমে তার আনুগত্য করবেন না। কেননা, সেই তো এগুলোর ইবাদতের প্রতি মানুষদেরকে আহবান জানায় এবং এতে সে সন্তুষ্ট। [ইবন কাসীর] বস্তুত: শয়তান কোন কালেও মানুষের মাবুদ (প্রচলিত অর্থে) ছিল না। বরং তার নামে প্রতি যুগে মানুষ অভিশাপ বর্ষণ করেছে। তবে বর্তমানে মিশর, ইরাক, সিরিয়া, লেবাননাসহ বিভিন্ন আরব ও ইউরোপীয় রাষ্ট্রে শয়তানের ইবাদতকারী ‘ইয়াযীদিয়্যাহ’ ফের্কা নামে একটি দলের সন্ধান পাওয়া যায়, যারা শয়তানের কাল্পনিক প্রতিকৃতি স্থাপন করে তার ইবাদাত করে।

তাফসীরে জাকারিয়া

(৪৪) হে আমার পিতা! শয়তানের উপাসনা করো না; নিশ্চয় শয়তান পরম দয়াময়ের অবাধ্য। [1]

[1] অর্থাৎ শয়তানের কুমন্ত্রণা ও তার প্রলোভনে পড়ে তুমি এমন সব দেবদেবীর পূজা করছ, যারা না শুনতে ও দেখতে পায়, আর না লাভ-নোকসানের ক্ষমতা রাখে। বাস্তবে এটা তো সেই শয়তানেরই পূজা; যে আল্লাহর অবাধ্য এবং অন্যদেরকে তাঁর অবাধ্য করে নিজের মত করতে চেষ্টা করে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৯ মারইয়াম
১৯:৪৫ یٰۤاَبَتِ اِنِّیۡۤ اَخَافُ اَنۡ یَّمَسَّکَ عَذَابٌ مِّنَ الرَّحۡمٰنِ فَتَکُوۡنَ لِلشَّیۡطٰنِ وَلِیًّا ﴿۴۵﴾

‘হে আমার পিতা, আমি আশংকা করছি যে, পরম করুণাময়ের (পক্ষ থেকে) তোমাকে আযাব স্পর্শ করবে, ফলে তুমি শয়তানের সঙ্গী হয়ে যাবে।’ আল-বায়ান

হে আমার পিতা! আমার ভয় হয় যে, দয়াময়ের ‘আযাব আপনাকে ধরে বসবে, তখন আপনি শয়তানের বন্ধু হয়ে যাবেন।’ তাইসিরুল

হে আমার পিতা! আমি আশংকা করি, তোমাকে আল্লাহর শাস্তি স্পর্শ করবে এবং তুমি শাইতানের সাথী হয়ে পড়বে। মুজিবুর রহমান

O my father, indeed I fear that there will touch you a punishment from the Most Merciful so you would be to Satan a companion [in Hellfire]." Sahih International

৪৫. হে আমার পিতা! নিশ্চয় আমি আশংকা করছি যে, আপনাকে দয়াময়ের শাস্তি স্পর্শ করবে, তখন আপনি হয়ে পড়বেন শয়তানের বন্ধু।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(৪৫) হে আমার পিতা! নিশ্চয় আমি আশংকা করি, তোমাকে পরম দয়াময়ের শাস্তি স্পর্শ করবে এবং তুমি শয়তানের বন্ধু হয়ে পড়বে।’[1]

[1] অর্থাৎ, আমার ভয় হয় যে, যদি তুমি নিজ কুফরী ও শির্কে অটল থাকো, আর এই অবস্থায় যদি তোমার মৃত্যু এসে যায়, তাহলে আল্লাহর শাস্তি হতে তোমাকে কেউ বাঁচাতে পারবে না। অথবা পৃথিবীতেই তোমার উপর আল্লাহর আযাব এসে পতিত হবে এবং শয়তানের সঙ্গী হয়ে চিরদিনের মত আল্লাহর রহমত হতে বিতাড়িত হয়ে যাবে। ইবরাহীম (আঃ) নিজ পিতার সম্মান-সম্ভ্রম সম্পূর্ণ খেয়াল রেখে অত্যদিক নম্রতা ও শ্রদ্ধার সাথে তাওহীদের (এক আল্লাহর ইবাদতের) নসীহত শোনালেন। কিন্তু তাওহীদের এই সবক (পাঠ) যতই নরম ভাষা ও মধুর ভঙ্গিমায় বলা হোক না কেন, মুশরিকদের কাছে তা অসহনীয়ই হবে। অতএব মূর্তিপূজক পিতা এই নম্রতা ও ভালবাসা-মাখা সম্বোধনের জবাবে অত্যন্ত কটু ও কঠোর বাক্য দ্বারা একেশ্বরবাদী পুত্রকে বলল, ‘যদি তুমি আমার দেবদেবী থেকে বিমুখ হওয়া হতে ফিরে না এসো, তাহলে আমি তোমাকে পাথরের আঘাতে শেষ করে ফেলব।’

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৯ মারইয়াম
১৯:৫৮ اُولٰٓئِکَ الَّذِیۡنَ اَنۡعَمَ اللّٰهُ عَلَیۡهِمۡ مِّنَ النَّبِیّٖنَ مِنۡ ذُرِّیَّۃِ اٰدَمَ ٭ وَ مِمَّنۡ حَمَلۡنَا مَعَ نُوۡحٍ ۫ وَّ مِنۡ ذُرِّیَّۃِ اِبۡرٰهِیۡمَ وَ اِسۡرَآءِیۡلَ ۫ وَ مِمَّنۡ هَدَیۡنَا وَ اجۡتَبَیۡنَا ؕ اِذَا تُتۡلٰی عَلَیۡهِمۡ اٰیٰتُ الرَّحۡمٰنِ خَرُّوۡا سُجَّدًا وَّ بُکِیًّا ﴿ٛ۵۸﴾ (سُجود‎‎)

এরাই সে সব নবী, আদম সন্তানের মধ্য থেকে যাদের উপর আল্লাহ অনুগ্রহ করেছেন এবং যাদের আমি নূহের সাথে নৌকায় আরোহণ করিয়েছিলাম। আর ইবরাহীম ও ইসরাঈলের বংশোদ্ভূত এবং যাদেরকে আমি পথ প্রদর্শন করেছিলাম ও মনোনীত করেছিলাম। যখন তাদের কাছে পরম করুণাময়ের আয়াতসমূহ পাঠ করা হত, তারা কাঁদতে কাঁদতে সিজদায় লুটিয়ে পড়ত। [সাজদাহ] ۩ আল-বায়ান

এরাই হল তারা আদাম বংশের নবীগণের মধ্য হতে, আর নূহের সঙ্গে যাদেরকে (নৌকায়) আরোহণ করিয়েছিলাম তাদের মধ্য হতে, আর ইবরাহীম ও ইসরাঈলের বংশধরদের মধ্য হতে যাদেরকে আমি অনুগ্রহ করেছিলাম, এরা তাদেরই মধ্য হতে, যাদেরকে আমি পথনির্দেশ দিয়েছিলাম আর বেছে নিয়েছিলাম, এদের নিকট দয়াময়ের আয়াত আবৃত্তি করা হলে তারা সাজদায় অবনত হয়ে কান্নাভরে লুটিয়ে পড়ত। [সাজদাহ] ۩ তাইসিরুল

নাবীদের মধ্যে যাদেরকে আল্লাহ অনুগ্রহ করেছেন এরাই তারা, আদমের এবং যাদেরকে আমি নূহের সাথে নৌকায় আরোহণ করিয়েছিলাম তাদের বংশদ্ভুত, ইবরাহীম ও ইসরাঈলের বংশদ্ভুত ও যাদেরকে আমি পথ নির্দেশ করেছিলাম ও মনোনীত করেছিলাম তাদের অন্তর্ভুক্ত; তাদের নিকট দয়াময়ের আয়াত আবৃত্তি করা হলে তারা সাজদাহয় লুটিয়ে পড়ত ক্রন্দন করতে করতে। [সাজদাহ] ۩ মুজিবুর রহমান

Those were the ones upon whom Allah bestowed favor from among the prophets of the descendants of Adam and of those We carried [in the ship] with Noah, and of the descendants of Abraham and Israel, and of those whom We guided and chose. When the verses of the Most Merciful were recited to them, they fell in prostration and weeping. Sahih International

৫৮. এরাই তারা, নবীদের মধ্যে আল্লাহ যাদেরকে অনুগ্রহ করেছেন, আদমের বংশ থেকে এবং যাদেরকে আমরা নূহের সাথে নৌকায় আরোহণ করিয়েছিলাম। আর ইবরাহীম ও ইসরাঈলের বংশোদ্ভূত, আর যাদেরকে আমরা হেদায়াত দিয়েছিলাম এবং মনোনীত করেছিলাম; তাদের কাছে দয়াময়ের আয়াত তিলাওয়াত করা হলে তারা লুটিয়ে পড়ত সিজদায়(১) এবং কান্নায়।(২) [সাজদাহ] ۩

(১) অন্য আয়াতেও বলা হয়েছে, “বলুন, তোমরা কুরআনে বিশ্বাস কর বা বিশ্বাস না কর, যাদেরকে এর আগে জ্ঞান দেয়া হয়েছে তাদের কাছে যখন এটা পড়া হয় তখনই তারা সিজদায় লুটিয়ে পড়ে। তারা বলে, আমাদের প্রতিপালক পবিত্র, মহান। আমাদের প্রতিপালকের প্রতিশ্রুতি কার্যকর হয়েই থাকে। এবং তারা কাঁদতে কাঁদতে ভূমিতে লুটিয়ে পড়ে এবং এটা তাদের বিনয় বৃদ্ধি করে।” [সূরা আল-ইসরা: ১০৭–১০৯]

(২) এ আয়াত থেকে জানা গেল যে, কুরআনের আয়াত তেলাওয়াতের সময় কান্নার অবস্থা সৃষ্টি হওয়া প্রশংসনীয় এবং নবীদের সুন্নত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম, সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ীন ও সৎকর্মশীলদের থেকে এ ধরনের বহু ঘটনা বর্ণিত আছে। উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু একবার এ সূরা পড়ে সিজদা করলেন এবং বললেন, সিজদা তো হলো, কিন্তু ক্ৰন্দন কোথায়! [ইবন কাসীর]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৫৮) নবীদের মধ্যে যাদেরকে আল্লাহ অনুগ্রহ করেছেন এরাই তারা, আদমের ও যাদেরকে আমি নূহের সাথে নৌকায় আরোহণ করিয়েছিলাম তাদের বংশোদ্ভূত, ইব্রাহীম ও ইস্রাঈলের বংশোদ্ভূত ও যাদেরকে আমি পথ নির্দেশ করেছিলাম ও মনোনীত করেছিলাম তাদের অন্তর্ভুক্ত। তাদের নিকট পরম করুণাময়ের আয়াত আবৃত্তি করা হলে, তারা ক্রন্দন করতে করতে সিজদায় লুটিয়ে পড়ত। [1] [সাজদাহ] ۩

[1] আল্লাহর আয়াত শ্রবণ করে নম্রতা ও কান্নাভাব সৃষ্টি হওয়া ও আল্লাহর মহত্ত্বের সামনে সিজদায় লুটিয়ে পড়া আল্লাহর বান্দাদের বিশেষ লক্ষণ। (এই আয়াত পাঠ শেষে তিলাঅতের সিজদাহ করা সুন্নত। সিজদার আহকাম জানতে সূরা আ’রাফের শেষ আয়াতের টীকা দেখুন।)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৯ মারইয়াম
১৯:৬১ جَنّٰتِ عَدۡنِۣ الَّتِیۡ وَعَدَ الرَّحۡمٰنُ عِبَادَهٗ بِالۡغَیۡبِ ؕ اِنَّهٗ کَانَ وَعۡدُهٗ مَاۡتِیًّا ﴿۶۱﴾

তা চিরস্থায়ী জান্নাত, যার ওয়াদা পরম করুণাময় তাঁর বান্দাদের দিয়েছেন গায়েবের সাথে। নিশ্চয় তাঁর ওয়াদাকৃত বিষয় অবশ্যম্ভাবী। আল-বায়ান

স্থায়ী জান্নাত, দয়াময় তাঁর বান্দাহ্কে যে অদৃশ্য বিষয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তাঁর প্রতিশ্রুতি অবশ্যই পূর্ণ হবে। তাইসিরুল

এটা স্থায়ী জান্নাত, যে অদৃশ্য বিষয়ের প্রতিশ্রুতি দয়াময় তাঁর বান্দাদেরকে দিয়েছেন, তাঁর প্রতিশ্রুত বিষয় অবশ্যম্ভাবী। মুজিবুর রহমান

[Therein are] gardens of perpetual residence which the Most Merciful has promised His servants in the unseen. Indeed, His promise has ever been coming. Sahih International

৬১. এটা স্থায়ী জান্নাত, যে গায়েবী প্রতিশ্রুতি দয়াময় তাঁর বান্দাদেরকে দিয়েছেন(১)। নিশ্চয় তার প্রতিশ্রুত বিষয় আসবেই।

(১) অর্থাৎ যার প্রতিশ্রুতি করুণাময় আল্লাহ তাদেরকে এমন অবস্থায় দিয়েছেন যখন ঐ জান্নাতসমূহ তাদের দৃষ্টির অগোচরে রয়েছে। সেটা একমাত্র গায়েবী ব্যাপার। [ইবন কাসীর]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৬১) সেই স্থায়ী জান্নাত, যার প্রতিশ্রুতি পরম দয়াময় নিজ দাসদেরকে অদৃশ্যভাবে দিয়েছেন; [1] নিশ্চয় তাঁর প্রতিশ্রুত বিষয় অবশ্যম্ভাবী।

[1] অর্থাৎ, এটি তাদের ঈমান ও ইয়াক্বীনের দৃঢ়তা যে, তারা জান্নাত তো দেখেইনি বরং আল্লাহর অদৃশ্যভাবে দেওয়া প্রতিশ্রুতির উপর ভরসা করে জান্নাত পাওয়ার আশায় ঈমান ও আল্লাহ-ভীতির রাস্তা অবলম্বন করেছে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৯ মারইয়াম
১৯:৬৯ ثُمَّ لَنَنۡزِعَنَّ مِنۡ کُلِّ شِیۡعَۃٍ اَیُّهُمۡ اَشَدُّ عَلَی الرَّحۡمٰنِ عِتِیًّا ﴿ۚ۶۹﴾

তারপর প্রত্যেক দল থেকে পরম করুণাময়ের বিরুদ্ধে সর্বাধিক অবাধ্যকে আমি টেনে বের করবই। আল-বায়ান

অতঃপর প্রত্যেক দল হতে দয়াময়ের প্রতি সবচেয়ে অবাধ্যকে অবশ্য অবশ্যই টেনে বের করব। তাইসিরুল

অতঃপর প্রত্যেক দলের মধ্যে যে দয়াময়ের প্রতি সর্বাধিক অবাধ্য আমি তাকে টেনে বের করবই। মুজিবুর রহমান

Then We will surely extract from every sect those of them who were worst against the Most Merciful in insolence. Sahih International

৬৯. তারপর প্রত্যেক দলের মধ্যে যে দয়াময়ের সর্বাধিক অবাধ্য আমরা তাকে টেনে বের করবই।(১)

(১) আয়াতের উদ্দেশ্য এই যে, কাফেরদের বিভিন্ন দলের মধ্যে যে দলটি সর্বাধিক উদ্ধত হবে, তাকে সবার মধ্য থেকে পৃথক করে অগ্রে প্রেরণ করা হবে। কোন কোন তফসীরবিদ বলেনঃ অপরাধের আধিক্যের ক্রমানুসারে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্তরে অপরাধীদেরকে জাহান্নামে প্রবেশ করানো হবে। [ইবন কাসীর]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৬৯) অতঃপর প্রত্যেক দলের মধ্যে যে পরম দয়াময়ের প্রতি সর্বাধিক অবাধ্য আমি তাকে টেনে অবশ্যই বের করব। [1]

[1] عِتي শব্দটিও عَاتٍٍ এর বহুবচন, যার উৎপত্তি عَتا يَعتُو থেকে। এর অর্থঃ অত্যধিক অবাধ্য, বিদ্রোহী। অর্থাৎ প্রত্যেক ভ্রষ্ট দল হতে বড় বড় নেতা ও বিদ্রোহীদেরকে আলাদা করে নেব এবং একত্রিত করে জাহান্নামে ঠেলে দেব। কেননা এ সব নেতারা অন্য সব জাহান্নামীদের তুলনায় বেশী শাস্তিযোগ্য। যেমন পরবর্তী আয়াতে এ কথা এসেছে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৯ মারইয়াম
১৯:৭৫ قُلۡ مَنۡ کَانَ فِی الضَّلٰلَۃِ فَلۡیَمۡدُدۡ لَهُ الرَّحۡمٰنُ مَدًّا ۬ۚ حَتّٰۤی اِذَا رَاَوۡا مَا یُوۡعَدُوۡنَ اِمَّا الۡعَذَابَ وَ اِمَّا السَّاعَۃَ ؕ فَسَیَعۡلَمُوۡنَ مَنۡ هُوَ شَرٌّ مَّکَانًا وَّ اَضۡعَفُ جُنۡدًا ﴿۷۵﴾

বল, ‘যে বিভ্রান্তিতে রয়েছে তাকে পরম করুণাময় প্রচুর অবকাশ দেবেন, যতক্ষণ না তারা যে বিষয়ে তাদের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে তা প্রত্যক্ষ করবে, চাই তা আযাব হোক অথবা কিয়ামত। তখন তারা জানতে পারবে কে মর্যাদায় নিকৃষ্ট ও দলবলে দুর্বল। আল-বায়ান

বল, যারা গুমরাহীতে পড়ে আছে, দয়াময় তাদের জন্য (রশি) ঢিল দিয়ে দেন, যে পর্যন্ত না তারা দেখতে পাবে যার ওয়া‘দা তাদেরকে দেয়া হচ্ছে- তা শাস্তিই হোক কিংবা ক্বিয়ামতই হোক।’ তখন তারা জানতে পারবে মর্যাদায় কে নিকৃষ্ট আর জনবলে দুর্বল। তাইসিরুল

বলঃ যারা বিভ্রান্তিতে আছে, দয়াময় তাদেরকে প্রচুর অবকাশ দিবেন যতক্ষণ না তারা, যে বিষয়ে তাদেরকে সতর্ক করা হচ্ছে তা প্রত্যক্ষ করবে, তা শাস্তি হোক অথবা কিয়ামাতই হোক; অতঃপর তারা জানতে পারবে কে মর্যাদায় নিকৃষ্ট এবং কে দলবলে দুর্বল। মুজিবুর রহমান

Say, "Whoever is in error - let the Most Merciful extend for him an extension [in wealth and time] until, when they see that which they were promised - either punishment [in this world] or the Hour [of resurrection] - they will come to know who is worst in position and weaker in soldiers." Sahih International

৭৫. বলুন, যারা বিভ্রান্তিতে আছে, দয়াময় তাদেরকে প্রচুর অবকাশ দেবেন যতক্ষণ না তারা যে বিষয়ে তাদেরকে সতর্ক করা হচ্ছে তা দেখবে; তা শাস্তি হোক বা কেয়ামতই হোক (১)। অতঃপর তারা জানতে পারবে কে মর্যাদায় নিকৃষ্ট ও কে দলবলে দুর্বল।

(১) কাফের মুশরিকদের অবাধ্যতার পরও আল্লাহ্‌ তা’আলা তাদেরকে অবকাশ দিতে থাকেন তারপর সময়মত তাদের ঠিকই পাকড়াও করেন। তাদের সে পাকড়াও কখনও দুনিয়াতে হয় আবার কখনো কখনো তা কিয়ামতের মাঠ পর্যন্ত বর্ধিত হয়। অন্যত্র মহান আল্লাহ বলেনঃ “কাফিরগণ যেন কিছুতেই মনে না করে যে, আমি অবকাশ দেই তাদের মংগলের জন্য; আমি অবকাশ দিয়ে থাকি যাতে তাদের পাপ বৃদ্ধি পায় এবং তাদের জন্য লাঞ্চনাদায়ক শাস্তি রয়েছে।” [সূরা আলে-ইমরান: ১৭৮]

অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, “তাদেরকে যে উপদেশ দেয়া হয়েছিল তারা যখন তা ভুলে গেল তখন আমি তাদের জন্য সবকিছুর দরজা খুলে দিলাম; অবশেষে তাদেরকে যা দেয়া হল যখন তারা তাতে উল্লসিত হল তখন হঠাৎ তাদেরকে ধরলাম; ফলে তখনি তারা নিরাশ হল।” [সূরা আল-আনআম: ৪৪] কোন কোন মুফাসসির বলেন, এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে কাফের মুশরিকদের জন্য পেশকৃত ‘মুবাহালা’ বা প্রত্যেকে প্রত্যেকের জন্য মৃত্যুর দো’আ করবে, কারণ যদি তোমাদের এটাই মনে হয় যে, তোমরা আল্লাহর কাছে প্রিয় হওয়ার কারণেই দুনিয়ার জিনিস বেশী পাচ্ছো, তাহলে মৃত্যু কামনা কর। তখন দেখা যাবে আসলে কারা আল্লাহর প্রিয়। [তাবারী]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৭৫) বল, ‘যারা বিভ্রান্তিতে আছে, পরম দয়াময় তাদেরকে প্রচুর ঢিল দেবেন; পরিশেষে যখন তারা যে বিষয়ে তাদেরকে সতর্ক করা হচ্ছে তা প্রত্যক্ষ করবে; তা শাস্তি হোক অথবা কিয়ামতই হোক; তখন তারা জানতে পারবে, কে মর্যাদায় নিকৃষ্ট ও কে দলবলে দুর্বল।’ [1]

[1] এ ছাড়াও এসব বস্তু পথভ্রষ্ট ও কাফেরদেরকে অবকাশ ও ঢিল দেওয়ার জন্য দান করা হয়। অতএব তা দেখার বিষয় নয়। মূলতঃ ভাল-মন্দের পার্থক্য ঐ সময় সূচিত হবে, যখন আমলের অবকাশ সময় শেষ হয়ে গিয়ে আল্লাহর আযাব এসে পড়বে বা কিয়ামত এসে পড়বে। কিন্তু ঐ সময়ের জ্ঞান কোন উপকার দেবে না। কারণ ঐ সময় শুধরে নেওয়ার অথবা সংশোধনের কোন সুযোগ থাকবে না।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৯ মারইয়াম
১৯:৭৭ اَفَرَءَیۡتَ الَّذِیۡ کَفَرَ بِاٰیٰتِنَا وَ قَالَ لَاُوۡتَیَنَّ مَالًا وَّ وَلَدًا ﴿ؕ۷۷﴾

তুমি কি সেই ব্যক্তিকে দেখেছ* যে আমার আয়াতসমূহ অস্বীকার করে এবং বলে, ‘আমাকে অবশ্যই ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দেয়া হবে।’ আল-বায়ান

তুমি কি লক্ষ্য করেছ সে ব্যক্তিকে যে আমার নিদর্শনসমূহকে প্রত্যাখ্যান করেছে আর সে বলে, ‘আমাকে অবশ্য অবশ্যই সম্পদ আর সন্তানাদি দেয়া হবে।’ তাইসিরুল

তুমি কি লক্ষ্য করেছ তাকে, যে আমার আয়াতসমূহ প্রত্যাখ্যান করে এবং বলেঃ আমাকে ধন সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দেয়া হবেই। মুজিবুর রহমান

Then, have you seen he who disbelieved in Our verses and said, "I will surely be given wealth and children [in the next life]?" Sahih International

* উল্লিখিত আয়াত ক’টি ‘আস ইব্ন ওয়ায়েল সম্পর্কে নাযিল হয়। তাঁর কাছে খাববাব ইবনুল আরাত (রা.)এর কিছু ঋণ পাওনা ছিল। তা চাইতে গেলে সে তা প্রত্যাখ্যান করে বলে,‘আমি যখন মারা যাব, অতঃপর আবার জীবিত হব তখন তুমি আমার কাছে এসো। তখনো আমাকে সন্তান-সন্ততি দেয়া হবে। সেখান থেকে তোমার ঋণ পরিশোধ করব’।

৭৭. আপনি কি জেনেছেন (এবং আশ্চর্য হয়েছেন) সে ব্যক্তি সম্পর্কে, যে আমাদের আয়াতসমূহে কুফরী করে এবং বলে, আমাকে অবশ্যই ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দেয়া হবে।(১)

(১) খাব্বাব ইবনে আরত রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেনঃ তিনি ‘আস ইবনে ওয়ায়েল কাফেরের কাছে কিছু পাওনার তাগাদায় গেলে সে বললঃ তুমি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি ঈমান প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত আমি তোমার পাওনা পরিশোধ করব না। খাব্বাব জওয়াব দিলেনঃ এরূপ করা আমার পক্ষে কোনক্রমেই সম্ভবপর নয়, চাই কি তুমি মরে পুনরায় জীবিত হতে পার। আ’স বললঃ ভালো তো, আমি কি মৃত্যুর পর পুনরায় জীবিত হব? এরূপ হলে তাহলে তোমার ঋণ তখনই পরিশোধ করব। কারণ, তখনও আমার হাতে ধন-দৌলত ও সন্তান-সন্ততি থাকবে। [বুখারীঃ ১৯৮৫, ২০৯১, ২১৫৫, ২২৭৫ মুসলিমঃ ২৭৯৫] অর্থাৎ সে বলে, তোমরা আমাকে যতই পথভ্রষ্ট ও দুরাচার বলতে এবং আল্লাহর আযাবের ভয় দেখাতে থাকো না কেন আমি তো আজো তোমাদের চাইতে অনেক বেশী সচ্ছল এবং আগামীতেও আমার প্রতি অনুগ্রহ ধারা বর্ষিত হতে থাকবে। তাই আল্লাহ্ তা'আলা তাদের এ বিকৃত মনমানসিকতা উল্লেখ করে সেটার উত্তর দিয়ে বলেছেনঃ সে কিরূপে জানতে পারল যে, পুনরায় জীবিত হওয়ার সময়ও তার হাতে ধন-দৌলত ও সন্তান-সন্ততি থাকবে? সে কি উকি মেরে অদৃশ্যের বিষয়সমূহ জেনে নিয়েছে?

তাফসীরে জাকারিয়া

(৭৭) তুমি কি লক্ষ্য করেছ তাকে, যে আমার আয়াতসমূহ প্রত্যাখ্যান করে এবং বলে, অবশ্যই আমাকে ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দেওয়া হবে।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৯ মারইয়াম
১৯:৭৮ اَطَّلَعَ الۡغَیۡبَ اَمِ اتَّخَذَ عِنۡدَ الرَّحۡمٰنِ عَهۡدًا ﴿ۙ۷۸﴾

সে কি গায়েব সম্পর্কে অবহিত হয়েছে, না পরম করুণাময়ের কাছ থেকে কোন প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করেছে? আল-বায়ান

সে কি অদৃশ্য বিষয় জেনে ফেলেছে, নাকি দয়াময়ের নিকট থেকে প্রতিশ্রুতি লাভ করেছে? তাইসিরুল

সে কি অদৃশ্য সম্বন্ধে অবহিত হয়েছে অথবা দয়াময়ের নিকট হতে প্রতিশ্রুতি লাভ করেছে? মুজিবুর রহমান

Has he looked into the unseen, or has he taken from the Most Merciful a promise? Sahih International

৭৮. সে কি গায়েব দেখে নিয়েছে, নাকি দয়াময়ের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি লাভ করেছে?

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(৭৮) সে কি অদৃশ্য সম্বন্ধে অবহিত হয়েছে অথবা পরম দয়াময়ের নিকট হতে প্রতিশ্রুতি লাভ করেছে?

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৯ মারইয়াম
১৯:৮৫ یَوۡمَ نَحۡشُرُ الۡمُتَّقِیۡنَ اِلَی الرَّحۡمٰنِ وَفۡدًا ﴿ۙ۸۵﴾

যেদিন পরম করুণাময়ের নিকট মুত্তাকীদেরকে সম্মানিত মেহমানরূপে সমবেত করব, আল-বায়ান

যেদিন মুত্তাকীদেরকে দয়াময়ের নিকট একত্রিত করব সম্মানিত অতিথি হিসেবে। তাইসিরুল

যেদিন আমি দয়াময়ের নিকট মুত্তাকীদের সম্মানিত মেহমান রূপে সমবেত করব। মুজিবুর রহমান

On the Day We will gather the righteous to the Most Merciful as a delegation Sahih International

৮৫. যেদিন দয়াময়ের নিকট মুত্তাকীগণকে সম্মানিত মেহমানরূপে(১) আমরা সমবেত করব

(১) যারা বাদশাহ, অথবা কোন শাসনকতাঁর কাছে সম্মান ও মর্যাদা সহকারে বাহনে চড়ে গমন করে, তাদেরকে وفد বলা হয়। [ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর] আয়াত থেকে বুঝা যায় যে, ঈমানদারদেরকে অত্যন্ত সম্মানের সাথে তাদের প্রভুর সমীপে নিয়ে যাওয়া হবে। তাদেরকে জান্নাত ও সম্মানিত ঘরে প্রবেশ করানো হবে। [ফাতহুল কাদীর] পরবর্তী আয়াতে এর উল্টো চিত্ৰই ফুটে উঠেছে। সেখানে অপরাধীদেরকে তৃষ্ণার্ত অবস্থায় জাহান্নামে প্রবেশ করানোর কথা বলা হয়েছে। [ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৮৫) (স্মরণ কর,) যেদিন আমি পরম দয়াময়ের নিকট সাবধানীদেরকে অতিথিরূপে (সওয়ার অবস্থায়) সমবেত করব।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৯ মারইয়াম
১৯:৮৬ وَّ نَسُوۡقُ الۡمُجۡرِمِیۡنَ اِلٰی جَهَنَّمَ وِرۡدًا ﴿ۘ۸۶﴾

আর অপরাধীদেরকে তৃষ্ণার্ত অবস্থায় জাহান্নামের দিকে হাঁকিয়ে নিয়ে যাব। আল-বায়ান

আর আমি অপরাধীদেরকে জাহান্নামের দিকে তাড়িয়ে নিয়ে যাব (যেভাবে পিপাসার্ত গরু বাছুরকে পানির দিকে তাড়িয়ে নেয়া হয়)। তাইসিরুল

এবং অপরাধীদেরকে পিপাসার্ত অবস্থায় জাহান্নামের দিকে তাড়িয়ে নিয়ে যাব। মুজিবুর রহমান

And will drive the criminals to Hell in thirst Sahih International

৮৬. এবং অপরাধীদেরকে তৃষ্ণাতুর অবস্থায় জাহান্নামের দিকে হাঁকিয়ে নিয়ে যাব।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(৮৬) এবং অপরাধীদেরকে পিপাসার্ত অবস্থায় জাহান্নামের দিকে তাড়িয়ে নিয়ে যাব। [1]

[1] وَفد শব্দটি وَافِد শব্দের বহুবচন, যেমন رَكب শব্দটি رَاكِب শব্দের বহুবচন। অর্থ এই যে, সেদিন পরহেযগার ও সাধানীদেরকে উট ও ঘোড়ার উপর চড়িয়ে অত্যন্ত ইয্যত ও সম্মানের সাথে জান্নাতের দিকে নিয়ে যাওয়া হবে। وِردًا এর অর্থ পিপাসার্ত। অর্থাৎ, তাঁদের বিপরীত অপরাধীদেরকে ক্ষুধার্ত ও পিপাসিত অবস্থায় জাহান্নামের দিকে নিয়ে যাওয়া হবে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৯ মারইয়াম
১৯:৮৭ لَا یَمۡلِکُوۡنَ الشَّفَاعَۃَ اِلَّا مَنِ اتَّخَذَ عِنۡدَ الرَّحۡمٰنِ عَهۡدًا ﴿ۘ۸۷﴾

যারা পরম করুণাময়ের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি নিয়েছে তারা ছাড়া অন্য কেউ সুপারিশ করার ক্ষমতা রাখবে না। আল-বায়ান

দয়াময়ের নিকট যে প্রতিশ্রুতি লাভ করেছে সে ছাড়া অন্য কারো সুপারিশ করার অধিকার থাকবে না। তাইসিরুল

যে দয়াময়ের নিকট প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করেছে সে ব্যতীত অন্য কারও সুপারিশ করার ক্ষমতা থাকবেনা। মুজিবুর রহমান

None will have [power of] intercession except he who had taken from the Most Merciful a covenant. Sahih International

৮৭. যারা দয়াময়ের কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি নিয়েছে, তারা ছাড়া কেউ সুপারিশ করার মালিক হবে না।(১)

(১) عهد অৰ্থ অঙ্গীকার আদায় করা। বলা হয়ে থাকে, বাদশাহ এ অঙ্গীকার নামা অমুকের জন্য দিয়েছেন। [ফাতহুল কাদীর] যেটাকে সহজ ভাষায় পরোয়ানা বলা যেতে পারে। অর্থাৎ যে পরোয়ানা হাসিল করে নিয়েছে তার পক্ষেই সুপারিশ হবে এবং যে পরোয়ানা পেয়েছে সে-ই সুপারিশ করতে পারবে। আয়াতের শব্দগুলো দু’দিকেই সমানভাবে আলোকপাত করে। সুপারিশ কেবলমাত্র তার পক্ষেই হতে পারবে যে রহমান থেকে পরোয়ানা হাসিল করে নিয়েছে, একথার অর্থ হচ্ছে এই যে, যে ব্যক্তি দুনিয়ায় ‘আল্লাহ ছাড়া আর কোন সত্য ইলাহ নেই’ এ সাক্ষ্য দিয়েছে এবং সেটার হক আদায় করেছে। ইবন আব্বাস বলেন, পরোয়ানা হচ্ছে, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ আর আল্লাহ ছাড়া আর কারও কাছে কোন প্রকার শক্তি-সামৰ্থ ও উপায় তালাশ না করা, আল্লাহ ব্যতীত কারও কাছে আশা না করা। [ইবন কাসীর]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৮৭) যে পরম দয়াময়ের নিকট প্রতিশ্রুতি গ্রহণ করেছে, সে ছাড়া অন্য কারো সুপারিশ করবার ক্ষমতা থাকবে না। [1]

[1] প্রতিশ্রুতির অর্থঃ ঈমান ও আল্লাহর ভয়। অর্থাৎ ঈমানদার ও আল্লাহ-ভীরু বান্দাদের মধ্যে যাঁদেরকে আল্লাহ সুপারিশ করার অনুমতি প্রদান করবেন তাঁরা ব্যতীত আর কেউ সুপারিশ করার অনুমতিই পাবে না।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৯ মারইয়াম
১৯:৮৮ وَ قَالُوا اتَّخَذَ الرَّحۡمٰنُ وَلَدًا ﴿ؕ۸۸﴾

আর তারা বলে, ‘পরম করুণাময় সন্তান গ্রহণ করেছেন।’ আল-বায়ান

তারা বলে, ‘দয়াময় সন্তান গ্রহণ করেছেন।’ তাইসিরুল

তারা বলেঃ দয়াময় সন্তান গ্রহণ করেছেন। মুজিবুর রহমান

And they say, "The Most Merciful has taken [for Himself] a son." Sahih International

৮৮. আর তারা বলে, দয়াময় সন্তান গ্ৰহণ করেছেন।

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(৮৮) তারা বলে, ‘পরম দয়াময় সন্তান গ্রহণ করেছেন!’

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৯ মারইয়াম
১৯:৮৯ لَقَدۡ جِئۡتُمۡ شَیۡئًا اِدًّا ﴿ۙ۸۹﴾

অবশ্যই তোমরা এক জঘন্য বিষয়ের অবতারণা করেছ। আল-বায়ান

(এমন কথা ব’লে) তোমরা তো এক ভয়ানক বিষয়ের অবতারণা করেছ। তাইসিরুল

তোমরাতো এক ভয়ংকর কথার অবতারণা করেছ। মুজিবুর রহমান

You have done an atrocious thing. Sahih International

৮৯. তোমরা তো এমন এক বীভৎস বিষয়ের অবতারণা করছ;

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(৮৯) তোমরা তো এক বীভৎস[1] কথার অবতারণা করেছ।

[1] إَدّ এর অর্থঃ ভয়ানক ব্যাপার বা বীভৎস কান্ড। এ বিষয় এর আগেও আলোচিত হয়েছে যে, ‘আল্লাহর সন্তান আছে’ বলা এত বড় অপরাধ যে, এই অপরাধে আকাশ-পৃথিবী বিদীর্ণ হতে পারে এবং পাহাড়-পর্বত চূর্ণ-বিচূর্ণ হতে পারে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
১৯ মারইয়াম
১৯:৯০ تَکَادُ السَّمٰوٰتُ یَتَفَطَّرۡنَ مِنۡهُ وَ تَنۡشَقُّ الۡاَرۡضُ وَ تَخِرُّ الۡجِبَالُ هَدًّا ﴿ۙ۹۰﴾

এতে আসমানসমূহ ফেটে পড়ার, যমীন বিদীর্ণ হওয়ার এবং পাহাড়সমূহ চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে পড়ে যাওয়ার উপক্রম হবে। আল-বায়ান

যাতে আকাশ বিদীর্ণ হওয়ার, পৃথিবী খন্ড খন্ড হওয়ার আর পর্বতমালা চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে পতিত হওয়ার, উপক্রম হয়েছে। তাইসিরুল

এতে যেন আকাশসমূহ বিদীর্ণ হয়ে যাবে, পৃথিবী খন্ড বিখন্ড হবে এবং পর্বতসমূহ চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে আপতিত হবে – মুজিবুর রহমান

The heavens almost rupture therefrom and the earth splits open and the mountains collapse in devastation Sahih International

৯০. যাতে আসমানসমূহ বিদীর্ণ হয়ে যাবার উপক্রম হয়, আর যমীন খণ্ড-বিখণ্ড হবে এবং পর্বতমণ্ডলী চুর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে আপতিত হবে,

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(৯০) এতে যেন আকাশসমূহ বিদীর্ণ হয়ে যাবে, পৃথিবী খন্ড-বিখন্ড হবে এবং পর্বতসমূহ চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে আপতিত হবে।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ২০ পর্যন্ত, সর্বমোট ৬৩ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ 1 2 3 4 পরের পাতা »