সূরাঃ আন-নিসা | An-Nisa | سورة النساء - আয়াতঃ ৪০
৪:৪০ اِنَّ اللّٰهَ لَا یَظۡلِمُ مِثۡقَالَ ذَرَّۃٍ ۚ وَ اِنۡ تَكُ حَسَنَۃً یُّضٰعِفۡهَا وَ یُؤۡتِ مِنۡ لَّدُنۡهُ اَجۡرًا عَظِیۡمًا ﴿۴۰﴾
ان الله لا یظلم مثقال ذرۃ و ان تك حسنۃ یضعفها و یؤت من لدنه اجرا عظیما ﴿۴۰﴾

নিশ্চয় আল্লাহ অণু পরিমাণও যুলম করেন না। আর যদি সেটি ভাল কাজ হয়, তিনি তাকে দ্বিগুণ করে দেন এবং তাঁর পক্ষ থেকে মহা প্রতিদান প্রদান করেন। আল-বায়ান

আল্লাহ অণু পরিমাণও যুলম করেন না, আর কোন পুণ্য কাজ হলে তাকে তিনি দ্বিগুণ করেন এবং নিজের নিকট হতেও বিরাট পুরস্কার দান করেন। তাইসিরুল

নিশ্চয়ই আল্লাহ অণু পরিমাণও অত্যাচার করেননা এবং যদি কেহ কোন সৎ কাজ করে তাহলে তিনি ওটা দ্বিগুণ করে দেন এবং স্বীয় পক্ষ হতে ওর মহান প্রতিদান প্রদান করেন। মুজিবুর রহমান

Indeed, Allah does not do injustice, [even] as much as an atom's weight; while if there is a good deed, He multiplies it and gives from Himself a great reward. Sahih International

৪০. নিশ্চয় আল্লাহ অণু পরিমাণও যুলুম করেন না।(১) আর কোন পূণ্য কাজ হলে আল্লাহ সেটাকে বহুগুণ বর্ধিত করেন(২) এবং আল্লাহ তার কাছ থেকে মহাপুরস্কার প্রদান করেন।(৩)

(১) অর্থাৎ আল্লাহ তা'আলা কারও সৎকর্মের সওয়াব এবং অশুভ প্রতিদানের বেলায় বিন্দু-বিসর্গও অন্যায় ও যুলুম করেন না। বরং নিজের পক্ষ থেকে এতে অধিকতর বৃদ্ধি করে দেন এবং আখেরাতে এগুলোকে কয়েকগুণ বাড়িয়ে তার সওয়াব দান করবেন এবং নিজের পক্ষ থেকেও দেবেন মহান দান। আল্লাহ তা'আলা হলেন মহাদাতা। তিনি তার অসীম রহমতে (সৎ কাজের বিনিময়) এমনভাবে বাড়িয়ে দেন, যা কোন হিসাব বা সীমা-পরিসীমায় আসে না। প্রতিটি ভাল কাজ মীযানে পরিমাপ হবে। আল্লাহ বলেন, “আর কেয়ামতের দিনে আমরা ন্যায়বিচারের দাড়িপাল্লা স্থাপন করব, সুতরাং কারো প্রতি কোন যুলুম করা হবে না।” [সূরা আল-আম্বিয়া: ৪৭]

অনুরূপভাবে লুকমানের ওসিয়ত বর্ণনায় আল্লাহ বলেন, “হে প্রিয় বৎস! নিশ্চয় তা (পাপ-পুণ্য) যদি সরিষার দানা পরিমাণও হয়, অতঃপর তা থাকে শিলাগর্ভে অথবা আসমানসমূহে কিংবা যমীনে, আল্লাহ তাও উপস্থিত করবেন” [সূরা লুকমান ১৬] অন্য সূরায় আল্লাহ বলেন, “সেদিন মানুষ ভিন্ন ভিন্ন দলে বের হবে, যাতে তাদেরকে তাদের কৃতকর্ম দেখান যায়, কেউ অণু পরিমাণ সৎকাজ করলে সে তা দেখবে, আর কেউ অণু পরিমাণ অসৎকাজ করলে সে তাও দেখবে। [সূরা আয-যালযালাহ: ৬-৮]

(২) এ আয়াতে কতগুণ বর্ধিত হবে, তার সর্বোচ্চ বা সর্বনিম পরিমাণ নির্ধারণ করে বলা হয় নি। পক্ষান্তরে অন্য আয়াতে বলা হয়েছে যে, সর্বনিম বর্ধিতের পরিমাণ হচ্ছে, দশগুণ। আল্লাহ বলেন, যে কেউ কোন সৎকাজ করল, তার জন্য রইল সেটার অনুরূপ দশগুণ। [সূরা আল-আনআমঃ ১৬০] অন্য আয়াতে আল্লাহ্ তা'আলা বহুগুণ বর্ধিত হওয়ার ব্যাপারে আরও বলেছেন যে, তা কখনও কখনও সত্তর গুণেরও বেশী হয়ে যায়। আল্লাহ বলেন, যারা নিজেদের ধন-সম্পদ আল্লাহর পথে ব্যয় করে তাদের উপমা একটি বীজের মত, যা সাতটি শীষ উৎপাদন করে, প্রত্যেক শীষে একশ শস্যদানা। আর আল্লাহ যাকে ইচ্ছে বহু গুণে বৃদ্ধি করে দেন। [সূরা আল-বাকারাহ: ২৬১] এর অর্থ হচ্ছে, সাতশ গুণ হওয়াতেই এ বর্ধিতকরণের পরিমাণ সীমাবদ্ধ নয়, বরং কখনও কখনও আল্লাহ যাকে ইচ্ছা তার থেকে বেশী বৃদ্ধি করে থাকেন। [আদওয়াউল বায়ান]

মোটকথা: আল্লাহ তা'আলার দরবার থেকে যে কি মহাদান হতে পারে, তা কোন মানুষ কল্পনাও করতে পারে না। তাই আল্লাহর নির্দেশ অনুসারে চলে যতটুকু সম্ভব সৎ কর্মের মাধ্যমে তার রহমতের অধিকারী হওয়ার প্রচেষ্টা চালানোই হবে মুমিন জীবনের প্রধান কাজ।

(৩) কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা'আলা কারও কারও জন্য সামান্য আমলকেও নিজের পক্ষ থেকে বাড়িয়ে তার নাজাতের অসীলা বানিয়ে দিবেন। শাফাআতের বিখ্যাত হাদীসে এসেছে, “অতঃপর আল্লাহ তা’আলা বলবেন, তোমরা যাও এবং যার অন্তরে অণু পরিমাণ ঈমান আছে তাকেও জাহান্নাম থেকে বের করে নাও। তখন তারা যাদের সম্পর্কে জানতে পারবে তাদেরকে বের করে আনবেন।” বর্ণনাকারী আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু উপরোক্ত আয়াতটি পড়ার জন্য বললেন। [বুখারী: ৭৪৩৯]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৪০) নিশ্চয় আল্লাহ অণু পরিমাণও যুলুম করেন না এবং তা পুণ্যকার্য হলে, আল্লাহ তাকে বহুগুণে বর্ধিত করেন এবং আল্লাহ তাঁর নিকট হতে মহাপুরস্কার প্রদান করেন।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান