৫৫ সূরাঃ আর-রাহমান | Ar-Rahman | سورة الرحمن - আয়াতঃ ১৪
৫৫:১৪ خَلَقَ الۡاِنۡسَانَ مِنۡ صَلۡصَالٍ كَالۡفَخَّارِ ﴿ۙ۱۴﴾
خلق الانسان من صلصال كالفخار ﴿۱۴﴾

তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন শুষ্ক ঠনঠনে মাটি থেকে যা পোড়া মাটির ন্যায়। আল-বায়ান

তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন পোড়া মাটির মত শুকনা পচা কাদা হতে, তাইসিরুল

মানুষকে তিনি সৃষ্টি করেছেন পোড়া মাটির মত শুস্ক মৃত্তিকা হতে – মুজিবুর রহমান

He created man from clay like [that of] pottery. Sahih International

১৪. মানুষকে তিনি সৃষ্টি করেছেন শুষ্ক ঠনঠনে মাটি থেকে যা পোড়া মাটির মত(১),

(১) এখানে إنسان বলে সরাসরি মৃত্তিকা থেকে সৃষ্ট আদম আলাইহিস সালাম-কে বুঝানো হয়েছে। صلصال এর অর্থ পানি মিশ্ৰিত শুষ্ক মাটি। فخار এর অর্থ পোড়ামাটি। অর্থাৎ মানুষকে আল্লাহ্ তা'আলা পোড়ামাটির ন্যায় শুষ্ক মৃত্তিকা থেকে সৃষ্টি করেছেন। [কুরতুবী] কুরআন মজীদে মানুষ সৃষ্টির যে প্রাথমিক পর্যায়সমূহ বৰ্ণনা করা হয়েছে, কুরআন মাজীদের বিভিন্ন স্থানের বক্তব্য একত্রিত করে তাঁর নিম্নোক্ত ক্ৰমিক বিন্যাস অবগত হওয়া যায়

(১) تراب ‘তুরাব’ অর্থাৎ মাটি। আল্লাহ বলেন, (كَمَثَلِ آدَمَ خَلَقَهُ مِنْ تُرَابٍ) [সূরা আলে-ইমরান: ৫৯]

(২) طين ‘ত্বীন’ অৰ্থাৎ পচা কৰ্দম যা মাটিতে পানি মিশিয়ে বানানো হয়। আল্লাহ বলেন, (الَّذِي أَحْسَنَ كُلَّ شَيْءٍ خَلَقَهُ وَبَدَأَ خَلْقَ الْإِنْسَانِ مِنْ طِينٍ) [সূরা আস-সাজদাহ: ৭]

(৩) (طِينٍ لَّازِبٍ) ‘ত্বীন লাযেব’ বা আঠালো কাদামাটি। অৰ্থাৎ এমন কাদা, দীর্ঘদিন পড়ে থাকার কারণে যার মধ্যে আঠা সৃষ্ট হয়ে যায়। মহান আল্লাহ বলেন, (إِنَّا خَلَقْنَاهُمْ مِنْ طِينٍ لَازِبٍ) [সূরা আস-সাফফাত: ১১]

(৪) (صَلْصَالٍ مِّنْ حَمَإٍ مَّسْنُونٍ) ‘সালসালিন মিন হামায়িন মাসনুন’ যে কাদার মধ্যে গন্ধ সৃষ্টি হয়ে যায়। আল্লাহ্‌ বলেন, (وَلَقَدْ خَلَقْنَا الْإِنْسَانَ مِنْ صَلْصَالٍ مِنْ حَمَإٍ مَسْنُونٍ) [সূরা আল-হিজর: ২৬]

(৫) (صَلْصَالٍ كَالْفَخَّارِ) ‘সালসালিন কাল-ফাখখার’ অর্থাৎ পচা কাদা যা শুকিয়ে যাওয়ার পরে মাটির শুকনো ঢিলার মত হয়ে যায়। আলোচ্য সূরা আর-রাহমানের এ আয়াতেই আল্লাহ্ তা'আলা এ পর্যায়টি উল্লেখ করে বলেন,

(৬) (بشر) ‘বাশার’ মাটির এ শেষপর্যায় থেকে যাকে বানানো হয়েছে, আল্লাহ তা'আলা যার মধ্যে তার বিশেষ রূহ ফুৎকার করেছেন, ফেরেশতাদের দিয়ে যাকে সিজদা করানো হয়েছিল এবং তার সমজাতীয় থেকে তার জোড়া সৃষ্টি করা হয়েছিল। আল্লাহ্‌ বলেন, (إِذْ قَالَ رَبُّكَ لِلْمَلَائِكَةِ إِنِّي خَالِقٌ بَشَرًا مِنْ طِينٍ ٭ فَإِذَا سَوَّيْتُهُ وَنَفَخْتُ فِيهِ مِنْ رُوحِي فَقَعُوا لَهُ سَاجِدِينَ) [সূরা সোয়াদ: ৭১–৭২]

(৭) (مِنْ سُلَالَةٍ مِنْ مَاءٍ مَهِينٍ) “মিন সুলালাতিন মিন মায়িন মাহীন” তারপর পরবর্তী সময়ে নিকৃষ্ট পানির মত সংমিশ্রিত দেহ নির্যাস থেকে তার বংশ ধারা চালু করা হয়েছে। আল্লাহ বলেন, (ثُمَّ جَعَلَ نَسْلَهُ مِنْ سُلَالَةٍ مِنْ مَاءٍ مَهِينٍ) [সূরা আস-সাজদাহ: ৮] এ কথাটি বুঝাতে অন্য স্থানসমূহে نطفة বা শুক্র শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে।

তাফসীরে জাকারিয়া

(১৪) মানুষকে (আদমকে) তিনি সৃষ্টি করেছেন পোড়া মাটির মত শুষ্ক মাটি থেকে। [1]

[1] صَلْصَالٍ শুকনো মাটি যাতে শব্দ হয়। فَخَّارٌ আগুনে পোড়ানো মাটি যাকে খোলামকুচি বলে। এখানে মানুষ বলতে আদম (আঃ)-কে বুঝানো হয়েছে। যাঁর প্রথমে মাটি থেকে (মানুষের) আকার তৈরী করা হয়। অতঃপর আল্লাহ তাতে ‘রূহ’ ফুঁকেন (আত্মাদান করেন)। তারপর আদম (আঃ)-এর বাম পাঁজরের হাড় থেকে হাওয়াকে সৃষ্টি করেন এবং এর পর থেকে তাঁদের উভয়ের মাধ্যমে মানুষ সৃষ্টির ধারাবাহিকতা চলতে থাকে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান