৩১ সূরাঃ লুকমান | Luqman | سورة لقمان - আয়াতঃ ১৩
৩১:১৩ وَ اِذۡ قَالَ لُقۡمٰنُ لِابۡنِهٖ وَ هُوَ یَعِظُهٗ یٰبُنَیَّ لَا تُشۡرِكۡ بِاللّٰهِ ؕؔ اِنَّ الشِّرۡكَ لَظُلۡمٌ عَظِیۡمٌ ﴿۱۳﴾
و اذ قال لقمن لابنهٖ و هو یعظهٗ یبنی لا تشرك بالله ان الشرك لظلم عظیم ﴿۱۳﴾

আর স্মরণ কর, যখন লুকমান তার পুত্রকে উপদেশ দিতে গিয়ে বলেছিল, ‘প্রিয় বৎস, আল্লাহর সাথে শিরক করো না; নিশ্চয় শিরক হল বড় যুলম'। আল-বায়ান

স্মরণ কর, যখন লুকমান তার ছেলেকে নসীহত ক’রে বলেছিল- হে বৎস! আল্লাহর সাথে কোন কিছুকে শিরক কর না, শিরক হচ্ছে অবশ্যই বিরাট যুলম। তাইসিরুল

স্মরণ কর, যখন লুকমান উপদেশাচ্ছলে তার পুত্রকে বলেছিলঃ হে বৎস! আল্লাহর সাথে কোন শরীক করনা। নিশ্চয়ই শিরক হচ্ছে চরম যুলম। মুজিবুর রহমান

And [mention, O Muhammad], when Luqman said to his son while he was instructing him, "O my son, do not associate [anything] with Allah. Indeed, association [with him] is great injustice." Sahih International

১৩. আর স্মরণ করুন, যখন লুকমান উপদেশ দিতে গিয়ে তার পুত্ৰকে বলেছিল, হে আমার প্রিয় বৎস! আল্লাহর সাথে কোন শির্ক করো না। নিশ্চয় শির্ক বড় যুলুম।(১)

(১) জ্ঞানগর্ভ বাণীসমূহের মধ্যে সর্বাগ্রে হলো আকীদাসমূহের পরিশুদ্ধিতার ব্যাপারে কথা বলা। সে জন্য লুকমানের সর্বপ্রথম কথা হলো কোন প্রকারের অংশীদারিত্ব স্থির না করে আল্লাহ কে গোটা বিশ্বের স্রষ্টা ও প্ৰভু বলে বিশ্বাস করা। সাথে সাথে আল্লাহর কোন সৃষ্ট বস্তুকে স্রষ্টার সমমর্যাদাসম্পন্ন মনে করার মত গুরুতর অপরাধ দুনিয়াতে আর কিছু হতে পারে না। তাই তিনি বলেছেন, “হে আমার প্রিয় বৎস, আল্লাহর অংশীদার স্থির করো না, অংশীদার স্থাপন করা গুরুতর যুলুম। জুলুমের প্রকৃত অর্থ হচ্ছে, কারো অধিকার হরণ করা এবং ইনসাফ বিরোধী কাজ করা। শির্ক এ জন্য বৃহত্তর জুলুম যে, মানুষ এমন সব সত্তাকে তার নিজের স্রষ্টা, রিযিকদাতা ও নিয়ামতদানকারী হিসেবে বরণ করে নেয়, তার সৃষ্টিতে যাদের কোন অংশ নেই। তাকে রিযিক দান করার ক্ষেত্রে যাদের কোন দখল নেই এবং মানুষ এ দুনিয়ায় যেসব নিয়ামত লাভে ধন্য হচ্ছে সেগুলো প্ৰদান করার ব্যাপারে যাদের কোন ভূমিকাই নেই। এটা এত বড় অন্যায়, যার চেয়ে বড় কোন অন্যায়ের কথা চিন্তাই করা যায় না। তারপর মানুষ একমাত্র তার স্রষ্টারই বন্দেগী করবে, এটা মানুষের ওপর তার স্রষ্টার অধিকার। কিন্তু সে অন্যের বন্দেগী ও পূজা-অৰ্চনা করে তাঁর অধিকার হরণ করে।

তারপর স্রষ্টা ছাড়া অন্য সত্তার বন্দেগী ও পূজা করতে গিয়ে মানুষ যে কাজই করে তাতে সে নিজের দেহ ও মন থেকে শুরু করে পৃথিবী ও আকাশের বহু জিনিস ব্যবহার করে। অথচ এ সমস্ত জিনিস এক লা-শরীক আল্লাহই সৃষ্টি করেছেন এবং এর মধ্যে কোন জিনিসকে আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো বন্দেগীতে ব্যবহার করার অধিকার তার নেই। তারপর মানুষ নিজেকে লাঞ্ছনা ও দুর্ভোগের মধ্যে ঠেলে দেবে না, তার নিজের ওপর এ অধিকার রয়েছে। কিন্তু সে স্রষ্টাকে বাদ দিয়ে সৃষ্টির বন্দেগী করে নিজেকে লাঞ্ছিত ও অপমানিত করে এবং এই সঙ্গে শাস্তির যোগ্যও বানায়। এভাবে একজন মুশরিকের সমগ্র জীবন একটি সৰ্বমুখী ও সার্বক্ষণিক যুলুমে পরিণত হয়। তার কোন একটি মুহুৰ্তও যুলুমমুক্ত নয়। পক্ষান্তরে মুমিন এ ধরনের অবস্থা থেকে মুক্ত। হাদীসে এসেছে, যখন নাযিল হল “যারা ঈমান এনেছে এবং তাদের ঈমানের সাথে যুলুমের সংমিশ্রণ ঘটায়নি তাদের জন্যই রয়েছে নিরাপত্তা।” [সূরা আল-আন’আম: ৮২] তখন সাহাবায়ে কিরাম অত্যন্ত ভীত হয়ে গেলেন; (কারণ তারা যুলুমের আভিধানিক অর্থ ধরে নিয়েছিলেন)। তারা বলতে লাগলেন, আমাদের কেউ কি এমন আছে যে, যার ঈমানের সাথে যুলুম নেই? তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, এটা সেই যুলুম নয় (যার ভয় তোমরা করছ)। তোমরা কি শুননি লুকমান তার ছেলেকে কি বলেছে, তিনি বলেছেনঃ নিশ্চয় শির্ক হচ্ছে বড় যুলুম। [বুখারী: ৪৭৭৬]

তাফসীরে জাকারিয়া

(১৩) (স্মরণ কর) যখন লুকমান উপদেশচ্ছলে তার পুত্রকে বলেছিল, ‘হে বৎস! আল্লাহর কোন অংশী করো না।[1] আল্লাহর অংশী করা তো চরম অন্যায়।’ [2]

[1] আল্লাহ্ তাআলা লুকমান হাকীমের সর্বপ্রথম অসিয়ত এই উল্লেখ করেছেন যে, তিনি নিজ ছেলেকে শিরক করতে নিষেধ করেছিলেন। যাতে পরিষ্কার হয়ে যায় যে, পিতা-মাতার কর্তব্য হল, নিজেদের সন্তানদেরকে শিরক থেকে বাঁচানোর সর্বপ্রথম ও সর্বাধিক বেশী চেষ্টা করা।

[2] অনেকের নিকট এ বাক্যাংশটি লুকমান হাকীমের উক্তি। আবার অনেকে এটিকে আল্লাহর উক্তি বলেছেন এবং তার সমর্থনে (الَّذِينَ آمَنُوا وَلَمْ يَلْبِسُوا إِيمَانَهُمْ بِظُلْمٍ) আয়াতটি অবতীর্ণ সম্পর্কে বর্ণিত হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। যাতে সাহাবাগণ বললেন, ‘আমাদের কে আবার যুলম করে না?’ সুতরাং তারই পরিপ্রেক্ষিতে অবতীর্ণ হল, (إِنَّ الشِّرْكَ لَظُلْمٌ عَظِيمٌ) (বুখারী ৪৭৭৬নং) কিন্তু আসলে এতে ঐ কথা আল্লাহর উক্তি হওয়ার বা না হওয়ার কোন প্রমাণ হয় না। পক্ষান্তরে অন্য এক বর্ণনায় আছে যে, উক্ত আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার পর সাহাবাগণ তা বড় কঠিন মনে করে নবী (সাঃ)-কে জিজ্ঞাসা করলেন এবং তিনি তার উত্তরে বললেন, ‘‘তোমরা যা ধারণা করছ, তা নয়। এখানে যুলম বলতে সেই যুলমকে বুঝানো হয়েছে, যার কথা লুকমান তাঁর ছেলেকে বলেছিলেন, (يَا بُنَيَّ لَا تُشْرِكْ بِاللَّهِ إِنَّ الشِّرْكَ لَظُلْمٌ عَظِيمٌ) (বুখারী) এ বর্ণনা দ্বারা বুঝা যায় যে, ঐ উক্তি লুকমান হাকীমেরই ছিল।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান