নিশ্চয় তুমি মৃতকে শোনাতে পারবে না, আর তুমি বধিরকে আহবান শোনাতে পারবে না, যখন তারা পিঠ দেখিয়ে চলে যায়। আল-বায়ান
তুমি মৃতদেরকে শুনাতে পারবে না, আর বধিরকেও আহবান শুনাতে পারবে না (বিশেষতঃ) যখন তারা পিঠ ফিরিয়ে চলে যায়। তাইসিরুল
মৃতকে তুমি কথা শোনাতে পারবেনা, বধিরকেও পারবেনা আহবান শোনাতে, যখন তারা পিছন ফিরে চলে যায়। মুজিবুর রহমান
Indeed, you will not make the dead hear, nor will you make the deaf hear the call when they have turned their backs retreating. Sahih International
৮০. মৃতকে তো আপনি শোনাতে পারবেন না(১), বধিরকেও পারবেন না ডাক শুনাতে, যখন তারা পিঠ ফিরিয়ে চলে যায়।
(১) মৃতরা কি কিছু শুনতে পায়? আর মৃতদের কি কিছু শোনানো সম্ভব? যে সমস্ত বিষয়ে সাহাবায়ে কিরাম রাদিয়াল্লাহু আনহুমদের মাঝেও মতপার্থক্য ছিল মৃতদের শ্রবণ করার বিষয়টি সেগুলোর অন্যতম। [মাজমূ’ ফাতাওয়া: ৩/২৩০, ১৯/১২৩; আল-মুস্তাদরাক আলা মাজময়িল ফাতাওয়া: ১/৯৪] আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা এর পক্ষে এবং আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বিপক্ষে মতপ্রকাশ করেছেন। [দেখুন: বুখারী: ৩৯৮০, ৩৯৮১; মুসলিম: ৯৩২] তাই তাবেয়ীগণ এবং এর পরবর্তী আলেমগণ সবাই ভিন্ন দুটি মতে বিভক্ত হয়েছেন। কুরআনের বিভিন্ন স্থানে যা এসেছে এখানে তা বর্ণনা করছি। আলোচ্য সূরা আন-নামল এর আয়াতে বলা হয়েছে, “মৃতকে তো আপনি শোনাতে পারবেন না”। সূরা আর-রূমে বলা হয়েছে, “আপনি তো মৃতকে শুনাতে পারবেন না” [সূরা আর-রূম: ৫২] অনুরূপভাবে সূরা ফাতিরে এসেছে, “আপনি শোনাতে পারবেন না যারা কবরে রয়েছে তাদেরকে” [সূরা ফাতির: ২২]
এতে বুঝা যায় যে, মৃতদেরকে শোনানোর দায়িত্ব মানুষের নয়, এটা আল্লাহর কাজ। তাই সর্বাবস্থায় মৃতরা শুনতে পাবে এটার সপক্ষে কোন দলীল নেই। তবে আল্লাহর ইচ্ছায় মাঝে মধ্যে তারা যে শুনতে পায় তার প্রমাণ আমরা পাচ্ছি এক হাদীসে, বন্দরের যুদ্ধের পরে কাফেরদের লাশ যখন একটি গর্তে রেখে দেয়া হলো, তখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের লাশদের উদ্দেশ্য করে নাম ধরে ডেকে ডেকে বললেনঃ তোমরা কি তোমাদের মা’বুদদের কৃত ওয়াদাকে বাস্তব পেয়েছ? আমরা তো আমাদের মা’বুদের ওয়াদা বাস্তব পেয়েছি। সাহাবীগণ বললেনঃ রাসূল! আপনি এমন লোকদের সাথে কি কথা বলছেন যারা মরে পচে গেছে? তিনি বললেনঃ “আল্লাহর শপথ! তোমরা আমার কথা তাদের থেকে বেশী শুনতে পাচ্ছো না”। [বুখারীঃ ৩৭৫৭] সুতরাং কবর যেহেতু আখেরাতের ব্যাপার আর আখেরাতের ব্যাপারে যতটুকু কুরআন ও হাদীসে যা এসেছে তার বাইরে কোন কিছু বলা কোন ক্রমেই ঠিক নয়। [বিস্তারিত দেখুন: কুরতুবী; ফাতহুল কাদীর; নূ’মান খাইরুদ্দীন আল-আলূসী, আল-আয়াতুল বাইয়্যিনাত ফী আদামি সামায়িল আমওয়াত]
তাফসীরে জাকারিয়া(৮০) মৃতকে তুমি শোনাতে পারবে না, আর বধিরকেও তোমার আহবান শোনাতে পারবে না;[1] যখন ওরা পিছন ফিরে চলে যায়। [2]
[1] এটি ঐ সব কাফেরদের পরোয়া না করা এবং শুধু আল্লাহর উপর ভরসা করার দ্বিতীয় কারণ। আর তা হল তারা মৃত; যারা কিছু শুনে উপকৃত হতে সক্ষম নয়। অথবা বধির; যারা শুনতেও পায় না, বুঝেও না এবং পথও খুঁজে পায় না। অর্থাৎ, কাফেরদেরকে মৃতদের সাথে তুলনা করা হয়েছে; যাদের মধ্যে না কোন অনুভূতি থাকে, আর না জ্ঞান। অথবা বধিরদের সাথে তুলনা করা হয়েছে; যারা না উপদেশ ও নসীহত শোনে, আর না আল্লাহর দাওয়াত কবুল করে।
[2] অর্থাৎ, তারা পুরোপুরি সত্য হতে বৈমুখ ও বীতশ্রদ্ধ। কারণ বধির ব্যক্তি সামনা-সামনিই কোন কথা শুনতে সক্ষম নয়। সুতরাং মুখ ফিরিয়ে চলে যাওয়ার সময় তারা কিভাবে শুনতে সক্ষম হবে? কুরআন কারীমের এই আয়াত হতে এটাও জানা গেল যে, মৃতরা শুনতে পায় -এই বিশ্বাস করা কুরআনের পরিপন্থী। মৃতরা কারো কথা শুনতে পায় না। অবশ্য ঐ সব অবস্থার কথা স্বতন্ত্র; যে অবস্থায় তাদের শোনার ব্যাপারে শরীয়তের স্পষ্ট দলীল আছে। যেমন হাদীসে এসেছে যে, যখন মানুষ মৃতকে দাফন করার পর ফিরে যায়, তখন তারা তাদের জুতোর শব্দ শুনতে পায়। (বুখারী ৩৩৮, মুসলিম ২২০নং) অনুরূপ বদর যুদ্ধের পর যখন কাফেরদের মৃত লাশগুলোকে এক পরিত্যক্ত কূপে ফেলে দেওয়া হল, তখন নবী (সাঃ) তাদের উদ্দেশ্যে কিছু বললেন। সাহাবাগণ বললেন, ‘আপনি প্রাণহীন দেহের সঙ্গে কথা বলছেন?’ তিনি বললেন, ‘‘তোমাদের থেকে তারা আমার কথা বেশি ভালোভাবে শুনছে।’’ অর্থাৎ, মু’জিযাস্বরূপ মহান আল্লাহ তাঁর কথা মৃতদেরকে শুনিয়ে দিয়েছিলেন। (বুখারী ১৩০৭নং)
তাফসীরে আহসানুল বায়ান