(সদাকা) সেসব দরিদ্রের জন্য যারা আল্লাহর রাস্তায় আটকে গিয়েছে, তারা যমীনে চলতে পারে না। না চাওয়ার কারণে অনবগত ব্যক্তি তাদেরকে অভাবমুক্ত মনে করে। তুমি তাদেরকে চিনতে পারবে তাদের চিহ্ন দ্বারা। তারা মানুষের কাছে নাছোড় হয়ে চায় না। আর তোমরা যে সম্পদ ব্যয় কর, অবশ্যই আল্লাহ সে সম্পর্কে পূর্ণ জ্ঞানী। আল-বায়ান
ওটা সেই অভাবগ্রস্তদের প্রাপ্য যারা আল্লাহর পথে আবদ্ধ আছে, দেশময় ঘুরে বেড়াতে পারে না, ভিক্ষাবৃত্তি অবলম্বী না হওয়ার কারণে অজ্ঞ লোকেরা তাদেরকে অভাবমুক্ত মনে করে, তাদের চেহারা দেখে তুমি তাদেরকে চিনতে পারবে। তারা লোকেদের কাছে নাছোড় হয়ে ভিক্ষা করে না এবং তোমাদের মাল হতে যা কিছু ব্যয় করবে, নিশ্চয়ই আল্লাহ সে সম্পর্কে সুপরিজ্ঞাত। তাইসিরুল
দান খয়রাত ঐ সব লোকদের জন্য যারা আল্লাহর কাছে আবদ্ধ হয়ে গেছে, জীবিকার সন্ধানে অন্যত্র ঘোরাফিরা করতে সক্ষম নয়। তাদের সাবলিল চলাচলের জন্য অজ্ঞ লোকেরা তাদেরকে অভাবহীন মনে করে, তুমি তাদেরকে তাদের লক্ষণ দ্বারা চিনবে। তারা মানুষের কাছে যাঞ্চা করেনা। এবং তোমরা বৈধ সম্পদ থেকে যা ব্যয় কর সে বিষয়ে আল্লাহ সম্যকরূপে অবগত। মুজিবুর রহমান
[Charity is] for the poor who have been restricted for the cause of Allah, unable to move about in the land. An ignorant [person] would think them self-sufficient because of their restraint, but you will know them by their [characteristic] sign. They do not ask people persistently [or at all]. And whatever you spend of good - indeed, Allah is Knowing of it. Sahih International
২৭৩. এগুলো অভাবগ্রস্থ লোকদের প্রাপ্য; যারা আল্লাহ্র পথে এমনভাবে ব্যাপৃত যে, দেশময় ঘুরাফিরা করতে পারে না(১); আত্মসম্মানবোধ না চাওয়ার কারণে অজ্ঞ লোকেরা তাদেরকে অভাবমুক্ত মনে করে(২); আপনি তাদের লক্ষন দেখে চিনতে পারবেন(৩)। তারা মানুষের কাছে নাছোড় হয়ে চায় না।(৪) আর যে ধন-সম্পদ তোমরা ব্যয় কর, নিশ্চয় আল্লাহ্ সে ব্যাপারে সবিশেষ জ্ঞানী।
(১) এখানে অভাবগ্রস্ত লোক বলতে ঐ সকল লোককে বোঝানো হয়েছে, যারা দ্বীনী কাজে নিয়োজিত থাকার কারণে জীবিকা অর্জনের উদ্দেশ্যে অন্য কোন কাজ করতে পারে না।
(২) এ আয়াত থেকে জানা যায় যে, কোন ফকীরকে যদি মূল্যবান পোষাক পরিহিত অবস্থায় দেখা যায়, তবে এ কারণে তাকে ধনী মনে করা হবে না; বরং ফকীরই বলা হবে। এরূপ ব্যক্তিকে যাকাত দান করাও জায়েয হবে। [তাফসীরে কুরতুবী]
(৩) এতে বোঝা যায় যে, লক্ষণাদি দেখে বিচার করা অশুদ্ধ নয়। কাজেই যদি এমন কোন বেওয়ারিশ মৃতদেহ পাওয়া যায়, যার দেহে পৈতা আছে এবং সে খতনাকৃতও নয়, তবে তাকে মুসলিমদের গোরস্তানে দাফন করা যাবে না। [তাফসীরে কুরতুবী]
(৪) এ আয়াত থেকে বাহ্যতঃ জানা যায় যে, তারা পথ আগলিয়ে সওয়াল করে না। কিন্তু পথ না আগলিয়েও সওয়াল করে না- এরূপ বোঝা যায় না। কোন কোন তাফসীরকারক তাই বলেছেন। কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ট তাফসীরকারদের মতে এর অর্থ এই যে, তারা মোটেই সওয়াল করে না। বরং সওয়াল করা থেকে নিজেদেরকে পুরোপুরি নিরাপদ দূরত্বে রাখে। [তাফসীরে কুরতুবী]
তাফসীরে জাকারিয়া(২৭৩) (দান) অভাবগ্রস্ত লোকদের প্রাপ্য; যারা আল্লাহর পথে এমনভাবে ব্যাপৃত যে, জীবিকার সন্ধানে ভূপৃষ্ঠে ঘোরা-ফেরা করতে পারে না।[1] তারা কিছু চায় না বলে, অবিবেচক লোকেরা তাদেরকে অভাবমুক্ত মনে করে। তুমি তাদেরকে তাদের লক্ষণ দেখে চিনতে পারবে; তারা লোকেদের কাছে নাছোড়বান্দা হয়ে যাচ্ঞা করে না। [2] আর তোমরা যা কিছু ধন-সম্পদ দান কর, আল্লাহ তা সবিশেষ জ্ঞাত।
[1] এ থেকে সেই মুহাজিরদের বুঝানো হয়েছে যাঁরা মক্কা ত্যাগ করে আসেন এবং আল্লাহর পথে এসে প্রত্যেক জিনিস থেকে বঞ্চিত হতে হয়। সব কিছুই তাঁদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়। দ্বীনী জ্ঞান অন্বেষণকারী ছাত্র-ছাত্রী এবং আলেমরাও এরই আওতায় পড়তে পারে।
[2] অর্থাৎ, ঈমানদারদের গুণ হল, অভাব-অনটন সত্ত্বেও তারা চাওয়া ও ভিক্ষা করা থেকে বাঁচতে চেষ্টা করে এবং নাছোড় বান্দা হয়ে চাওয়া থেকে বিরত থাকে। কেউ কেউ إلحاف এর অর্থ করেছেন, মোটেই না চাওয়া। কেননা, তাদের প্রথম গুণ বলা হয়েছে যে, তারা যাচ্ঞা করে না। (ফাতহুল ক্বাদীর) আর কেউ কেউ বলেছেন, তারা চাওয়াতে বারবার আবেদন ও কাকুতি-মিনতি করে না এবং অপ্রয়োজনীয় জিনিস লোকের কাছে প্রার্থনা করে না। কারণ, إلحاف হল, প্রয়োজন না থাকা সত্ত্বেও (স্বভাবগত কারণে) মানুষের কাছে চাওয়া। এই অর্থের সমর্থন সেই হাদীসসমূহ দ্বারাও হয়ে যায় যাতে বলা হয়েছে, ‘‘মিসকীন তো সে নয়, যে একটি-দু’টি খেজুরের জন্য অথবা এক-দু’ লুকমা খাবারের জন্য দ্বারে দ্বারে গিয়ে চেয়ে বেড়ায়, বরং আসল মিসকীন তো সেই, যে (অভাব সত্ত্বেও) চাওয়া থেকে বেঁচে থাকে।’’ অতঃপর নবী করীম (সাঃ) প্রমাণস্বরূপ
{لاَ يَسْئَلُوْنَ النَّاسَ إلْحَافًا} আয়াতটি পাঠ করেন। (সহীহ বুখারী ১৪৭৬নং) এই জন্য পেশাদার ভিক্ষুকের পরিবর্তে মুহাজির, দ্বীনী জ্ঞান অন্বেষণকারী ছাত্র-ছাত্রী, উলামা এবং চাইতে পারে না অথবা চাইতে লজ্জাবোধ করে এমন গুপ্ত অভাবীদের খোঁজ করে তাদের সহযোগিতা করা উচিত। কারণ, অন্যের সামনে হাতপাতা মানুষের আত্মসম্মান পরিপন্থী ও মর্যাদাহানিকর কর্ম। তাছাড়া হাদীসে এসেছে যে, যার কাছে তার প্রয়োজনের যথেষ্ট সামগ্রী থাকা সত্ত্বেও মানুষের কাছে ভিক্ষা চায়, কিয়ামতের দিন তার মুখমন্ডল ক্ষত-বিক্ষত হবে। (সুনানে আরবাআহ) আর বুখারী ও মুসলিম শরীফের বর্ণনায় এসেছে যে, ‘‘যে ব্যক্তি সব সময় মানুষের কাছে চায়, কিয়ামতের দিন তার মুখমন্ডলে গোশত থাকবে না।’’ (বুখারী ১৪৭৫, মুসলিম ১০৪০নং)
তাফসীরে আহসানুল বায়ান