আর অবশ্যই আমি তাদেরকে আযাব দ্বারা পাকড়াও করলাম, তবুও তারা তাদের রবের কাছে নত হয়নি এবং বিনীত প্রার্থনাও করে না। আল-বায়ান
আমি তাদেরকে শাস্তি দ্বারা পাকড়াও করেছিলাম, কিন্তু তারা তাদের প্রতিপালকের নিকট নত হল না, আর তারা কাকুতি মিনতিও করল না। তাইসিরুল
আমি তাদেরকে শাস্তি দ্বারা ধৃত করলাম, কিন্তু তারা তাদের রবের প্রতি বিনত হলনা এবং কাতর প্রার্থনাও করলনা। মুজিবুর রহমান
And We had gripped them with suffering [as a warning], but they did not yield to their Lord, nor did they humbly supplicate, [and will continue thus] Sahih International
৭৬. আর অবশ্যই আমরা তাদেরকে শাস্তি দ্বারা পাকড়াও করলাম, তারপরও তারা তাদের রব-এর প্রতি অবনত হল না এবং কাতর প্রার্থনাও করল না।(১)
(১) পূর্ববর্তী আয়াতে মুশরিকদের সম্পর্কে বলা হয়েছিল যে, তারা আযাবে পতিত হওয়ার সময় আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করে। আমি যদি তাদের ফরিয়াদের কারণে দয়াপরবশ হয়ে আযাব সরিয়ে দেই, তবে মজ্জগত অবাধ্যতার কারণে আযাব থেকে মুক্তি পাওয়ার পরীক্ষণেই ওরা আবার নাফরমানীতে মশগুল হয়ে যাবে। এ আয়াতে তাদের এমনি ধরণের এক ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে যে, তাদেরকে একবার এক আযাবে গ্রেফতার করা হয়। কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দো’আর বরকতে আযাব থেকে মুক্তি পাওয়ার পরও তারা আল্লাহর কাছে নত হয়নি এবং শির্ককেই আঁকড়ে ধরে থাকে। মূলতঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কাবাসীদের উপর দুর্ভিক্ষের আযাব দেয়ার জন্য দোআ করেছিলেন। ফলে কুরাইশরা ঘোরতর দুর্ভিক্ষে পতিত হয় এবং মৃত জন্তু, কুকুর ইত্যাদি খেতে বাধ্য হয়।
অবস্থা বেগতিক দেখে আবু সুফিয়ান রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে উপস্থিত হয় এবং বলেঃ আমি আপনাকে আত্মীয়তার কসম দিচ্ছি। আপনি কি একথা বলেননি যে, আপনি বিশ্ববাসীদের জন্যে রহমতস্বরূপ প্রেরিত হয়েছেন? তিনি উত্তরে বললেন হ্যাঁ, নিঃসন্দেহে আমি একথা বলেছি, এবং বাস্তবেও তাই। আবু সুফিয়ান বললঃ স্বগোত্রের প্রধানদেরকে তো বদর যুদ্ধে তরবারী দ্বারা হত্যা করেছেন। যারা জীবিত আছে, তাদেরকে ক্ষুধা দিয়ে হত্যা করছেন। আল্লাহর কাছে দোআ করুন, যাতে এই আযাব আমাদের উপর থেকে সরে যায়।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম দো'আ করলেন। ফলে, তৎক্ষণাৎ আযাব খতম হয়ে যায়। এর পরিপ্রেক্ষিতেই উক্ত আয়াত নাযিল হয়। আয়াতে বলা হয়েছে যে, আযাবে পতিত হওয়া এবং আযাব থেকে মুক্তি পাওয়ার পরও তারা তাদের পালনকর্তার সামনে নত হয়নি। বাস্তব ঘটনা তাই ছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দো’আয় দুর্ভিক্ষ দূর করা হলো কিন্তু মক্কার মুশরিকরা তাদের শির্ক ও কুফরে পূর্ববৎ অটল রইল। [সহীহ ইবনে হিব্বানঃ ১৭৫৩, (মাওয়ারিদুজ্জামআন]।
তাফসীরে জাকারিয়া(৭৬) আমি তাদেরকে শাস্তি দ্বারা পাকড়াও করলাম, কিন্তু তারা তাদের প্রতিপালকের প্রতি বিনয়ী হল না এবং সকাতর প্রার্থনাও করল না। [1]
[1] এখানে শাস্তি আযাব বলতে বদরের যুদ্ধে মক্কার কাফেরদের পরাজয়কে বুঝানো হয়েছে। যাতে তাদের ৭০ জন ব্যক্তি মারা পড়েছিল। অথবা সেই দুর্ভিক্ষের বছরকে বুঝানো হয়েছে যা নবী (সাঃ)-এর বদ্দুআর ফলে তাদের উপর এসেছিল। নবী (সাঃ) বদ্দুআ করেছিলেন, ‘‘হে আল্লাহ! ইউসুফ (আঃ)-এর যুগের ৭ বছর দুর্ভিক্ষের মত দুর্ভিক্ষে পীড়িত করে তাদের বিরুদ্ধে আমাকে সাহায্য কর।’’ (বুখারীঃ দু’আ অধ্যায়, মুসলিমঃ মাসাজিদ অধ্যায়।) যার ফলে মক্কার কাফেররা দুর্ভিক্ষের কবলে পড়ে। অতঃপর আবু সুফিয়ান নবী (সাঃ)-এর নিকট আসেন এবং আল্লাহ ও আত্মীয়তার দোহাই দিয়ে বললেন যে, ‘এখন আমরা জীব-জন্তুর চামড়া ও রক্ত পর্যন্ত ভক্ষণ করতে বাধ্য হয়েছি।’ এই পরিপ্রেক্ষিতে এই আয়াত অবতীর্ণ হয়।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান