নাকি তারা বলছে যে, তার মধ্যে কোন পাগলামী রয়েছে? না, বরং সে তাদের কাছে সত্য নিয়েই এসেছিল। আর তাদের অধিকাংশ লোকই সত্যকে অপছন্দকারী। আল-বায়ান
অথবা তারা কি বলে যে, সে উন্মাদ? না, প্রকৃতপক্ষে সে তাদের কাছে সত্য নিয়ে এসেছে, কিন্তু তাদের অধিকাংশই সত্যকে অপছন্দ করে। তাইসিরুল
অথবা তারা কি বলে যে, সে উন্মাদ? বস্তুতঃ সে তাদের নিকট সত্য এনেছে এবং তাদের অধিকাংশ সত্যকে অপছন্দ করে। মুজিবুর রহমান
Or do they say, "In him is madness?" Rather, he brought them the truth, but most of them, to the truth, are averse. Sahih International
৭০. নাকি তারা বলে যে, তিনি উন্মাদনাগ্রস্ত?(১) না, তিনি তাদের কাছে সত্য এনেছেন, আর তাদের অধিকাংশই সত্যকে অপছন্দকারী।(২)
(১) অর্থাৎ তাদের অস্বীকার করার কারণ কি এই যে, তারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে পাগল মনে করে? মোটেই না, এটাও আসলে কোন কারণই নয়। মুখে তারা যাই বলুক না কেন মনে মনে তারা তার জ্ঞান ও বুদ্ধিমত্তার স্বীকৃতি দিয়ে চলছে। বরং আল্লাহ হক নিয়ে তাকে পাঠিয়েছেন। আর তিনি হক নিয়ে এসেছেন। তিনি যে বাণী বহন করে এনেছেন কোন পাগল বা রোগীর মুখ দিয়ে তা বের হতে পারে না। সুতরাং তাদের এ দাবীও অসার। [সা'দী]
(২) ঈমান না আনার পেছনে যে সমস্ত সম্ভাব্য কারণ থাকতে পারে ৬৩, ৬৭–৭০ ও পরবর্তী ৭২ নং আয়াতে আল্লাহ তা’আলা তার অনেকগুলো কারণ উল্লেখ করেছেন। অনুরূপভাবে ঈমান আনার পক্ষে যুক্তিস্বরূপও অনেকগুলো কারণ বর্ণনা করেছেন। ঈমান না আনার পক্ষে তাদের যে সমস্ত কারণ থাকতে পারে তা বর্ণনা করে তার প্রত্যেকটি খণ্ডন করেছেন। ঈমান না আনার কারণসমূহ উল্লেখ করে প্রথমেই বলেছেন, ১. তাদের মন ও অন্তর এ ব্যাপারে অজ্ঞতায় আচ্ছন্ন। ২. হারাম শরীফের তত্ত্বাবধান তথা ইবাদত-বন্দেগীর গর্ব ও অহংকার। ৩. ভিত্তিহীন গল্প-গুজবে মেতে থাকা। ৪, খারাপ গালি-গালাজ ও রাত্রি জাগরণ করে সময় নষ্ট করা। ৫. কুরআন নিয়ে চিন্তাগবেষণা না করা। ৬. কুরআনে যা এসেছে তা পূর্ববর্তীদের কাছে যা নাযিল হয়েছে তার থেকে ভিন্নতর হওয়ার দাবী করা। ৭. নবীকে বুঝতে চেষ্টা না করা। ৮. নবীকে মোহগ্ৰস্থ বা পাগল বলে দাবী করা। ৯. কুরআন ও রাসূলের আহবান তাদের প্রবৃত্তির বিপরীত হওয়া। ১০. কুরআন থেকে বিমুখতা।
কাফেরদের এসব যুক্তি উল্লেখ করে তা পুরোপুরি খণ্ডন করা হয়েছে। এর বিপরীতে ঈমান আনার পক্ষে যে সমস্ত যুক্তি দেয়া হয়েছে তা হচ্ছে, ১. কুরআন গবেষণা করা। ২. আল্লাহর নেয়ামতকে কবুল করা। ৩. মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অবস্থা সম্পর্কে জানা। তাঁর পূর্ণ সত্যবাদিতা ও আমানতদারী সম্পর্কে অবহিত হওয়া। ৪. দাওয়াতের উপর বিনিময় না চাওয়া। ৫. তিনি তাদের উপকারার্থে যাবতীয় শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন। ৬. তিনি সঠিক সরল পথের দিকে আহবান জানাচ্ছেন। যে পথ চলা অত্যন্ত সহজ। যে পথে চললে মনজিলে মাকসূদে পৌছা যায়। তারপরও তারা আপনার অনুসরণ না করে কোথায় ঘুরে বেড়াচ্ছে? আপনার অনুসরণ না করার পিছনে তাদের কোন যুক্তি নেই। তাদের হাতে শুধু পথভ্রষ্টতাই রয়েছে। আর এভাবে যারাই হক থেকে দূরে থাকে তারা সবকিছু বক্রভাবেই দেখে। আল্লাহ বলেন, “তারপর তারা যদি আপনার ডাকে সাড়া না দেয়, তাহলে জানবেন তারা তো শুধু নিজেদের খেয়াল-খুশীরই অনুসরণ করে। আল্লাহর পথনির্দেশ অগ্রাহ্য করে যে ব্যক্তি নিজ খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করে তার চেয়ে বেশী বিভ্রান্ত আর কে? আল্লাহ যালিম সম্প্রদায়কে হেদায়াত করেন না।” [সূরা আল-কাসাস: ৫০] [দেখুন: সা'দী]
তাফসীরে জাকারিয়া(৭০) অথবা তারা কি বলে যে, সে পাগল?[1] বস্তুতঃ সে তাদের নিকট সত্য এনেছে। আর তাদের অধিকাংশ সত্যকে অপছন্দ করে।[2]
[1] এটিও তিরস্কার ও ধমক স্বরূপ বলা হয়েছে। অর্থাৎ, এই পয়গম্বর এমন একটি কুরআন তাদের সামনে পেশ করলেন যার অনুরূপ (একটি সূরা) রচনা করতেও পৃথিবীর মানুষ অপারগ। অনুরূপ তাঁর শিক্ষাও মনুষ্য জাতির জন্য করুণা ও শান্তিস্বরূপ। এমন কুরআন ও এমন শিক্ষা কি এমন এক ব্যক্তি পেশ করতে পারে, যে পাগল ও উন্মাদ?
[2] অর্থাৎ, তাদের মুখ ফিরিয়ে নেওয়া ও অহংকার করার আসল কারণ সত্যকে অপছন্দ করা, যা দীর্ঘ দিন অসত্যকে পোষণ করার ফলে তাদের হৃদয়ে সৃষ্টি হয়েছে।
তাফসীরে আহসানুল বায়ান