২৯ সূরাঃ আল-আনকাবূত | Al-Ankabut | سورة العنكبوت - আয়াত নং - ৩ - মাক্কী

২৯ : ৩ وَ لَقَدۡ فَتَنَّا الَّذِیۡنَ مِنۡ قَبۡلِهِمۡ فَلَیَعۡلَمَنَّ اللّٰهُ الَّذِیۡنَ صَدَقُوۡا وَ لَیَعۡلَمَنَّ الۡکٰذِبِیۡنَ ﴿۳﴾

আর আমি তো তাদের পূর্ববর্তীদের পরীক্ষা করেছি। ফলে আল্লাহ অবশ্যই জেনে নেবেন, কারা সত্য বলে এবং অবশ্যই তিনি জেনে নেবেন, কারা মিথ্যাবাদী। আল-বায়ান

তাদের পূর্বে যারা ছিল আমি তাদেরকে পরীক্ষা করেছিলাম; অতঃপর আল্লাহ অবশ্য অবশ্যই জেনে নেবেন কারা সত্যবাদী আর কারা মিথ্যেবাদী। তাইসিরুল

আমিতো তাদের পূর্ববর্তীদেরকেও পরীক্ষা করেছিলাম; আল্লাহ অবশ্যই প্রকাশ করে দিবেন কারা সত্যবাদী ও কারা মিথ্যাবাদী। মুজিবুর রহমান

But We have certainly tried those before them, and Allah will surely make evident those who are truthful, and He will surely make evident the liars. Sahih International

৩. আর অবশ্যই আমরা এদের পূৰ্ববতীদেরকেও পরীক্ষা করেছিলাম(১); অতঃপর আল্লাহ অবশ্যই প্রকাশ করে দেবেন কারা সত্যবাদী এবং তিনি অবশ্যই প্রকাশ করে দেবেন কারা মিথ্যাবাদী।(২)

(১) অর্থাৎ তোমাদের সাথে যা কিছু হচ্ছে, তা কোন নতুন ব্যাপার নয়। ইতিহাসে হরহামেশা এমনটিই হয়ে এসেছে। যে ব্যক্তিই ঈমানের দাবী করেছে তাকে অবশ্যই পরীক্ষার অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষেপ করে দগ্ধ করা হয়েছে। আর অন্যদেরকেও যখন পরীক্ষা না করে কিছু দেয়া হয়নি তখন তোমাদের এমন কি বিশেষত্ব আছে যে, কেবলমাত্র মৌখিক দাবীর ভিত্তিতেই তোমাদেরকে দেয়া হবে? [দেখুন: সা’দী]

(২) মূল শব্দ হচ্ছে لَيَعْلَمَنَّ এর শাব্দিক অনুবাদ হবে, “আল্লাহ অবশ্যই জেনে নেবেন”। অর্থাৎ এসব পরীক্ষা ও বিপদাপদের মাধ্যমে আল্লাহ তা'আলা খাঁটি-অখাঁটি এবং সৎ ও অসাধুর মধ্যে অবশ্যই পার্থক্য ফুটিয়ে তুলবেন। কেননা, খাঁটিদের সাথে কপট বিশ্বাসীদের মিশ্রণের ফলে মাঝে মাঝে বিরাট ক্ষতিসাধিত হয়ে যায়। [মুয়াসসার] আলোচ্য আয়াতের উদ্দেশ্য সৎ, অসৎ এবং খাঁটি-অখাঁটি পার্থক্য ফুটিয়ে তোলা। একে এভাবে ব্যক্ত করা হয়েছে যে, আল্লাহ্ তা'আলা জেনে নেবেন কারা সত্যবাদী এবং কারা মিথ্যাবাদী। প্রত্যেক মানুষের সত্যবাদিতা ও মিথ্যাবাদিতা তার জন্মের পূর্বেই আল্লাহ্ তা'আলার জানা রয়েছে। তবুও পরীক্ষার মাধ্যমে জানার অর্থ এই যে, এই পার্থক্যকে অপরাপর লোকদের কাছেও প্রকাশ করে দেবেন।

বস্তুত: মানুষকে আল্লাহ্ তা'আলা বিভিন্ন ভাবে পরীক্ষা করে থাকেন। ভাল-মন্দ, ধনী-গরিব, দুঃখকষ্ট, সার্বিক অবস্থায় ফেলে তিনি তাদের পরীক্ষা সম্পন্ন করেন। এসমস্ত অবস্থায় বিশ্বাসে সন্দেহ হলে যদি সে তা তাড়িয়ে দিয়ে ঈমানের উপর স্থির থাকতে পারে তবেই সে সফলকাম। অনুরূপভাবে তার প্রবৃত্তির পাগলা ঘোড়া তাকে যা ইচ্ছে তা করতে বললে সে যদি তা থেকে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারে তবেই সে এ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ও পাশ করেছে বলে বিবেচিত হবে। [দেখুন: সা'দী]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৩) আমি অবশ্যই এদের পূর্ববর্তীদেরকেও পরীক্ষা করেছিলাম;[1] সুতরাং আল্লাহ অবশ্যই জেনে নেবেন, কারা সত্যবাদী ও কারা মিথ্যাবাদী।

[1] অর্থাৎ, এটি হল আল্লাহর একটি নিয়ম যা আদি কাল হতে চলে আসছে। সেই জন্য তিনি এই জাতির মু’মিনদেরও পরীক্ষা নেবেন; যেমন পূর্ববর্তী জাতির নেওয়া হয়েছে। এই সকল আয়াতের অবতীর্ণ হওয়ার কারণ সম্পর্কে যে বর্ণনা রয়েছে তাতে বলা হয়েছে যে, সাহাবা (রাঃ) রসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর নিকট মক্কার কাফেরদের অত্যাচার ও উৎপীড়নের কথা অভিযোগ করে দু’আর আবেদন জানালেন, যাতে আল্লাহ তাঁদের সাহায্য করেন। তিনি বললেন, দুখঃ-কষ্ট ভোগ করা ঈমানদারদের ইতিহাসের একটি অংশ। তোমাদের পূর্বের কোন কোন মু’মিনকে গর্ত খুঁড়ে তার মধ্যে দাঁড় করিয়ে করাত দিয়ে তাকে দু’ফাঁক করে দেওয়া হয়েছে। অনুরূপ লোহার চিরুনি দিয়ে তাদের শরীর হতে গোশত আলাদা করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এই সমস্ত অত্যাচার তাদেরকে হক পথ হতে ফেরাতে পারেনি। (বুখারীঃ আম্বিয়ার হাদীস অধ্যায়) আম্মার, তাঁর মাতা সুমাইয়্যাহ ও পিতা ইয়াসির, সুহায়েব, বিলাল ও মিকদাদ (রাঃ) ইত্যাদি সাহাবাদের উপর ইসলামের প্রারম্ভিক যুগে যে অত্যাচারের পাহাড় ভাঙ্গা হয়েছিল তা ইতিহাসের পাতায় আজও সংরক্ষিত আছে। এই পরিস্থিতি ও ঘটনাবলীই এসব আয়াতের অবতীর্ণ হওয়ার কারণ। পরন্তু আয়াতের সাধারণ অর্থের দিক দিয়ে কিয়ামতের পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত সকল ঈমানদারও এতে শামিল।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান