২৮ সূরাঃ আল-কাসাস | Al-Qasas | سورة القصص - আয়াত নং - ৫৪ - মাক্কী

২৮ : ৫৪ اُولٰٓئِكَ یُؤۡتَوۡنَ اَجۡرَهُمۡ مَّرَّتَیۡنِ بِمَا صَبَرُوۡا وَ یَدۡرَءُوۡنَ بِالۡحَسَنَۃِ السَّیِّئَۃَ وَ مِمَّا رَزَقۡنٰهُمۡ یُنۡفِقُوۡنَ ﴿۵۴﴾

তাদেরকে দু’বার প্রতিদান দেয়া হবে। এ কারণে যে, তারা ধৈর্যধারণ করে এবং ভাল দ্বারা মন্দকে প্রতিহত করে। আর আমি তাদেরকে যে রিয্ক দিয়েছি তা থেকে ব্যয় করে। আল-বায়ান

তাদেরকে তাদের পারিশ্রমিক দু’বার দেয়া হবে যেহেতু তারা ধৈর্য ধারণ করেছে এবং তারা ভাল দিয়ে মন্দের প্রতিহত করে আর আমি তাদেরকে যে রিযক দিয়েছি তাত্থেকে তারা ব্যয় করে। তাইসিরুল

তাদেরকে দু’বার পারিশ্রমিক প্রদান করা হবে; কারণ তারা ধৈর্যশীল এবং তারা ভাল দ্বারা মন্দের মুকাবিলা করে এবং আমি তাদেরকে যা দিয়েছি তা হতে তারা ব্যয় করে। মুজিবুর রহমান

Those will be given their reward twice for what they patiently endured and [because] they avert evil through good, and from what We have provided them they spend. Sahih International

৫৪. তাদেরকে দু’বার প্রতিদান দেয়া হবে(১); যেহেতু তারা ধৈর্যশীল এবং তারা ভাল দিয়ে মন্দের মুকাবিলা করে।(২) আর আমরা তাদেরকে যে রিযিক দিয়েছি তা থেকে তারা ব্যয় করে।

(১) অর্থাৎ আহলে কিতাবের মুমিনদেরকে দুইবার পুরস্কৃত করা হবে। পবিত্র কুরআনে এমনি ধরনের প্রতিশ্রুতি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্ৰা স্ত্রীগণের সম্পর্কেও বর্ণিত হয়েছে। বলা হয়েছে, (وَمَنْ يَقْنُتْ مِنْكُنَّ لِلَّهِ وَرَسُولِهِ وَتَعْمَلْ صَالِحًا نُؤْتِهَا أَجْرَهَا مَرَّتَيْنِ) “তোমাদের মধ্যে যে কেউ আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের প্রতি অনুগত হবে ও সৎকাজ করবে তাকে আমরা পুরস্কার দেব দু’বার” [সূরা আল-আহযাবঃ ৩১] অনুরূপভাবে এক হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “তিন ব্যক্তির জন্য দু’বার পুরস্কার রয়েছে ১। যে কিতাবধারী পূর্বে তার নবীর প্রতি ঈমান এনেছে তারপর এই নবীর প্রতি ঈমান এনেছে। ২। যে অপরের মালিকানাধীন দাস মনিব এবং তার মূল প্ৰভু রাব্বুল আলমীনের আনুগত্য করে ৩। যার মালিকানায় কোন যুদ্ধ-লব্ধ দাসী ছিল সে তাকে গোলামী থেকে মুক্ত করে বিবাহিতা স্ত্রী করে নিল৷ [বুখারীঃ ৯৭]

এখানে চিন্তাসাপেক্ষ বিষয় এই যে, এই কয়েক প্রকার লোককে দুবার পুরস্কৃত করার কারণ কি? এর জওয়াবে বলা যায় যে, তাদের প্রত্যেক আমল যেহেতু দুটি, এই যে, সে পূর্বে এক নবীর প্রতি ঈমান এনেছিল, এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রতি ঈমান এনেছে। পবিত্র স্ত্রীগণের দুই আমল এই যে, তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আনুগত্য ও মহব্বত রাসূল হিসেবেও করেন, আবার স্বামী হিসেবেও করেন। গোলামের দুই আমল তার দ্বিমুখী আনুগত্য, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য এবং তার মালিকের আনুগত্য। বাদীকে মুক্ত করে যে বিবাহ করে, তার এক আমল মুক্ত করা, আর দ্বিতীয় আমল বিবাহ করা। [কুরতুবী]

(২) অর্থাৎ তারা মন্দের জবাব মন্দ দিয়ে নয়। বরং ভালো দিয়ে দেয়। মিথ্যার মোকাবিলায় মিথ্যা নয় বরং সত্য নিয়ে আসে। যুলুমকে যুলুম দিয়ে নয় বরং ইনসাফ দিয়ে প্রতিরোধ করে। দুষ্টামির মুখোমুখি দুষ্টামির সাহায্যে নয় বরং ভদ্রতার সাহায্যে হয়। এই মন্দ ও ভাল বলে কি বোঝানো হয়েছে, সে সম্পর্কে অনেক উক্তি বর্ণিত আছেঃ কেউ বলেন, ভাল বলে ইবাদত এবং মন্দ বলে গোনাহ বোঝানো হয়েছে। কেননা, পুণ্য কাজ অসৎ কাজকে মিটিয়ে দেয়। হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “গোনাহের পর নেক কাজ কর। নেককাজ গোনাহকে মিটিয়ে দেবে”। [তিরমিযীঃ ১৯৮৭] কেউ কেউ বলেন, ভাল বলে জ্ঞান ও সহনশীলতা এবং মন্দ বলে অজ্ঞতা ও অসহনশীলতা বোঝানো হয়েছে। অর্থাৎ তারা অপরের অজ্ঞতার জওয়াব জ্ঞান ও সহনশীলতা দ্বারা দেয়। [বাগভী] প্রকৃতপক্ষে এসব উক্তির মধ্যে কোন বিরোধ নেই। কেননা, এগুলো সবই ভাল ও মন্দের অন্তর্ভুক্ত।

এ আয়াতে দুটি গুরুত্বপূর্ণ হেদায়াত রয়েছেঃ এক. কারও দ্বারা কোন গোনাহ হয়ে গেলে তার প্রতিকার এই যে, এরপর সৎকাজে সচেষ্ট হতে হবে। সৎকাজ গোনাহের কাফফারা হয়ে যাবে। দুই. কেউ কারও প্রতি উৎপীড়ন ও মন্দ আচরণ করলে শরীয়তের আইনে যদিও সমান সমান হওয়ার শর্তে প্ৰতিশোধ নেয়া জায়েয আছে, কিন্তু প্রতিশোধ নেয়ার পরিবর্তে মন্দের প্রত্যুত্তরে ভাল এবং উৎপীড়নের প্রত্যুত্তরে অনুগ্রহ করাই উত্তম। এটা উৎকৃষ্ট চরিত্রের সর্বোচ্চ স্তর। দুনিয়া ও আখেরাতে এর উপকারিতা অনেক। কুরআনের অন্যত্র বলা হয়েছেঃ “ভাল ও মন্দ একসমান হতে পারে না। মন্দ ও যুলুমকে উৎকৃষ্ট পন্থায় প্রতিহত কর। (যুলুমের পরিবর্তে অনুগ্রহ কর)। এরূপ করলে যে ব্যক্তি ও তোমার মধ্যে শক্ৰতা আছে, সে তোমার অন্তরঙ্গ বন্ধু হয়ে যাবে। [সূরা ফুসসিলাতঃ ৩৪]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৫৪) ওদেরকে দু’বার পুরস্কৃত করা হবে, কারণ ওরা ধৈর্যশীল।[1] ওরা ভালোর দ্বারা মন্দকে দূর করে[2] এবং আমি ওদেরকে যে জীবনোপকরণ দিয়েছি, তা হতে ব্যয় করে।

[1] ‘ধৈর্যশীলতা’ বলতে সর্বাবস্থায় আম্বিয়া ও আল্লাহর কিতাবের উপর ঈমান আনা এবং তার উপর দৃঢ়তার সাথে অবিচলিত থাকা। যারা পূর্ববর্তী নবী ও তাঁর উপর অবতীর্ণ কিতাবের উপর ঈমান এনেছেন এবং তারপর পরবর্তী নবী ও তাঁর উপর অবতীর্ণ কিতাবের উপর ঈমান আনেন, তাঁদের জন্য রয়েছে ডবল পুরস্কার। হাদীসেও তাঁদের এই মর্যাদা বর্ণনা করে নবী (সাঃ) বলেছেন, ‘‘তিন শ্রেণীর লোককে দ্বিগুণ সওয়াব দান করা হবে। ওদের মধ্যে এক শ্রেণীর লোক হল, সেই ইয়াহুদী বা খ্রিষ্টান; যে নিজ নবীর উপর ঈমান এনেছিল, তারপর আমার উপর ঈমান আনল।

(বুখারীঃ শিক্ষা অধ্যায়, মুসলিমঃ ঈমান অধ্যায়)

[2] অর্থাৎ, অন্যায়ের প্রতিশোধ গ্রহণে অন্যায় করে না (ইট খেয়ে পাটকেল ছুঁড়ে না); বরং ক্ষমা করে দেয় ও উপেক্ষা করে চলে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান