১৮ সূরাঃ আল-কাহফ | Al-Kahf | سورة الكهف - আয়াত নং - ৮৩ - মাক্কী

১৮ : ৮৩ وَ یَسۡـَٔلُوۡنَكَ عَنۡ ذِی الۡقَرۡنَیۡنِ ؕ قُلۡ سَاَتۡلُوۡا عَلَیۡكُمۡ مِّنۡهُ ذِكۡرًا ﴿ؕ۸۳﴾

আর তারা তোমাকে যুলকারনাইন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করছে। বল, ‘আমি এখন তার সম্পর্কে তোমাদের নিকট বর্ণনা দিচ্ছি’। আল-বায়ান

তোমাকে তারা যুলকারনাইন সম্পর্কে জিজ্ঞেস করছে। বল, ‘আমি তার বিষয় তোমাদের নিকট কিছু বর্ণনা করব।’ তাইসিরুল

তারা তোমাকে যুলকারনাইন সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করছে; তুমি বলে দাওঃ আমি তোমাদের নিকট তার বিষয় বর্ণনা করব। মুজিবুর রহমান

And they ask you, [O Muhammad], about Dhul-Qarnayn. Say, "I will recite to you about him a report." Sahih International

৮৩. আর তারা আপনাকে যুল-কারনাইন সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করে।(১) বলুন, অচিরেই আমি তোমাদের কাছে তার বিষয় বর্ণনা করব।

(১) যুলকারনাইন কে ছিলেন, কোন যুগে ও কোন দেশে ছিলেন এবং তার নাম যুলকারনাইন হল কেনঃ যুলকারনাইন নামকরণের হেতু সম্পর্কে বহু উক্তি ও তীব্র মতভেদ পরিদৃষ্ট হয়। কেউ বলেনঃ তার মাথার চুলে দুটি গুচ্ছ ছিল। তাই যুলকারনাইন (দুই গুচ্ছওয়ালা) আখ্যায়িত হয়েছেন। কেউ বলেনঃ পাশ্চাত্য ও প্রাচ্যদেশসমূহ জয় করার কারণে যুলকারনাইন খেতাবে ভূষিত হয়েছেন। কেউ এমনও বলেছেন যে, তার মাথায় শিং-এর অনুরূপ দুটি চিহ্ন ছিল। কোন কোন বর্ণনায় এসেছে যে, তার মাথার দুই দিকে দুটি ক্ষতচিহ্ন ছিল। [ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর]

তবে আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে সহীহ সনদে বর্ণিত রয়েছে যে, তিনি বলেছেনঃ যুলকারনাইন নবী বা ফিরিশতা ছিলেন না, একজন নেক বান্দা ছিলেন। আল্লাহকে তিনি ভালবেসেছিলেন, আল্লাহও তাকে ভালবেসেছিলেন। আল্লাহর হকের ব্যাপারে অতিশয় সাবধানী ছিলেন, আল্লাহও তার কল্যাণ চেয়েছেন। তাকে তার জাতির কাছে পাঠানো হয়েছিল। তারা তার কপালে মারতে মারতে তাকে হত্যা করল। আল্লাহ তাকে আবার জীবিত করলেন, এজন্য তার নাম হল যুলকারনাইন। [মুখতারাঃ ৫৫৫, ফাত্হুল বারীঃ ৬/৩৮৩]

যুলকারনাইনের ঘটনা সম্পর্কে কুরআনুল করীম যা বর্ণনা করেছে, তা এইঃ তিনি একজন সৎ ও ন্যায়পরায়ণ বাদশাহ ছিলেন এবং পাশ্চাত্য ও প্রাচ্যদেশসমূহ জয় করেছিলেন। এসব দেশে তিনি সুবিচার ও ইনসাফের রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে তাকে লক্ষ্য অর্জনের জন্য সর্বপ্রকার সাজ-সরঞ্জাম দান করা হয়েছিল। তিনি দিগ্বিজয়ে বের হয়ে পৃথিবীর তিন প্রান্তে পৌছেছিলেন- পাশ্চাত্যের শেষ প্রান্তে, প্রাচ্যের শেষ প্রান্তে এবং উত্তরে উভয় পর্বতমালার পাদদেশ পর্যন্ত। এখানেই তিনি দুই পর্বতের মধ্যবর্তী গিরিপথকে একটি থেকে এলাকার জনগণ নিরাপদ হয়ে যায়।

তাফসীরে জাকারিয়া

(৮৩) আর তারা তোমাকে যুলকারনাইন সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করে; [1] তুমি বলে দাও, ‘আমি তোমাদের নিকট তার বিষয়ে বর্ণনা করব।’

[1] ইয়াহুদীদের কথামত মুশরিকরা যে তিনটি প্রশ্ন নবী (সাঃ)-কে করেছিল তার মধ্যে এটি তৃতীয় প্রশ্নের উত্তর। যুলক্বারনাইন এর শাব্দিক অর্থ হল দুই শিংবিশিষ্ট। আর তাঁর নামকরণের কারণঃ যেহেতু তাঁর মাথায় বাস্তবেই দুটি শিং ছিল। কিংবা কারণ এই যে, তিনি পৃথিবীর পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তে পৌঁছে সূর্যের (উদয়-অস্তের সময় তার) শিং বা কিরণ প্রত্যক্ষ করেছিলেন। কেউ কেউ বলেন, তাঁর মাথায় শিঙের মত চুলের দুটি ঝুঁটি ছিল। পূর্ববর্তী মুফাসসিরগণের মতানুসারে তিনি হলেন রোমের আলেকজান্ডার, যাঁর রাজত্ব ছিল পূর্ব-পশ্চিম বিস্তৃত। কিন্তু আধুনিক যুগের মুফাসসিরগণ অভিনব ঐতিহাসিক তত্তের আলোকেই তাঁদের সাথে একমত নন। বিশেষ করে মওলানা আবুল কালাম আজাদ যিনি যুলক্বারনাইনের স্বরূপ ও প্রকৃতত্ব উদ্ঘাটনের জন্য যে গবেষণা করেছেন তা প্রশংসাযোগ্য।

তার গবেষণার সারমর্ম হলঃ

(ক) যুলক্বারনাইন সম্বন্ধে কুরআন পরিষ্কার করে দিয়েছে যে, তিনি এমন এক বাদশাহ ছিলেন যাকে আল্লাহ প্রচুর পার্থিব উপকরণ ও উপাদান দান করেছিলেন। (খ) পূর্ব ও পশ্চিমের দেশসমূহকে জয় করে এমন এক পাহাড়ী রাস্তায় পৌছলেন যার অন্য দিকে য়্যা’জূজ-মা’জূজ জাতি বাস করে। (গ) সেখানে তিনি য়্যা’জূজ-মা’জুজের রাস্তা বন্ধ করার জন্য একটি মজবুত প্রাচীর নির্মাণ করেন। (ঘ) তিনি ন্যায়পরায়ণ, আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাসী সম্রাট ছিলেন। (ঙ) তিনি প্রবৃত্তিপূজারী ও ধন-সম্পদের লোভী ছিলেন না। মওলানা আজাদ বলেন, এই সমস্ত গুণের অধিকারী একমাত্র পারস্যের সেই সম্রাট যাকে ইউনানী (গ্রীস) ভাষায় সাইরাস, ইবরানী (হিব্রু) ভাষায় খুরাস এবং আরবী ভাষায় কাইখাসরু নামে অভিহিত করা হয়। তাঁর রাজত্বকাল ৫৩৯ খ্রিষ্টপূর্ব। মওলানা আরো বলেন, ১৮৩৮ খ্রিষ্টাব্দে সাইরাসের একটি মূর্তি পাওয়া গেছে, যাতে তাঁর দেহকে এমনভাবে দেখানো হয়েছে যে, তাঁর শরীরের দু দিকে ঈগলের মত দুটি ডানা এবং ভেড়ার মত মাথায় দুটি শিং রয়েছে। (বিস্তারিত দ্রষ্টব্যঃ তুরজুমানুল কুরআন ১ম খন্ড ৩৯৯-৪৩০পৃঃ)  আর আল্লাহই ভালো জানেন।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান