১৬ সূরাঃ আন-নাহাল | An-Nahl | سورة النحل - আয়াত নং - ৮১ - মাক্কী

১৬ : ৮১ وَ اللّٰهُ جَعَلَ لَكُمۡ مِّمَّا خَلَقَ ظِلٰلًا وَّ جَعَلَ لَكُمۡ مِّنَ الۡجِبَالِ اَكۡنَانًا وَّ جَعَلَ لَكُمۡ سَرَابِیۡلَ تَقِیۡكُمُ الۡحَرَّ وَ سَرَابِیۡلَ تَقِیۡكُمۡ بَاۡسَكُمۡ ؕ كَذٰلِكَ یُتِمُّ نِعۡمَتَهٗ عَلَیۡكُمۡ لَعَلَّكُمۡ تُسۡلِمُوۡنَ ﴿۸۱﴾

আর আল্লাহ যা সৃষ্টি করেছেন, তা থেকে তোমাদের জন্য ছায়ার ব্যবস্থা করেছেন এবং পাহাড় থেকে তোমাদের জন্য আশ্রয়স্থল বানিয়েছেন, আর ব্যবস্থা করেছেন পোশাকের, যা তোমাদেরকে গরম থেকে রক্ষা করে এবং বর্মেরও ব্যবস্থা করেছেন যা তোমাদেরকে রক্ষা করে তোমাদের যুদ্ধে। এভাবেই তিনি তোমাদের উপর তার নিআমতকে পূর্ণ করবেন, যাতে তোমরা অনুগত হও। আল-বায়ান

আল্লাহ যা সৃষ্টি করেছেন তাত্থেকে তোমাদের জন্য ছায়ার ব্যবস্থা করেছেন, পাহাড়-পর্বতে তোমাদের আত্মগোপনের জায়গা বানিয়েছেন। তিনি তোমাদের জন্য পোশাক দিয়েছেন যা তোমাদেরকে তাপ থেকে রক্ষা করে। আর দিয়েছেন এমন পোশাক যা তোমাদেরকে সংঘাতের সময় রক্ষা করে। এভাবে তিনি তোমাদের জন্য তাঁর নি‘মাতসমূহ পূর্ণ করেন যাতে তোমরা তাঁর প্রতি আত্মসমর্পণ কর। তাইসিরুল

আর আল্লাহ যা কিছু সৃষ্টি করেছেন তাতে তোমাদের জন্য ছায়ার ব্যবস্থা করেন এবং তিনি তোমাদের জন্য পাহাড়ে আশ্রয়ের ব্যবস্থা করেন এবং তোমাদের জন্য ব্যবস্থা করেন পরিধেয় বস্ত্রের; ওটা তোমাদেরকে তাপ হতে রক্ষা করে এবং তিনি ব্যবস্থা করেন তোমাদের জন্য বর্মের, ওটা তোমাদেরকে যুদ্ধে রক্ষা করে; এভাবে তিনি তোমাদের প্রতি তাঁর অনুগ্রহ পূর্ণ করেন যাতে তোমরা আত্মসমর্পণ কর। মুজিবুর রহমান

And Allah has made for you, from that which He has created, shadows and has made for you from the mountains, shelters and has made for you garments which protect you from the heat and garments which protect you from your [enemy in] battle. Thus does He complete His favor upon you that you might submit [to Him]. Sahih International

৮১. আর আল্লাহ যা কিছু সৃষ্টি করেছেন তা থেকে(১) তিনি তোমাদের জন্য ছায়ার ব্যবস্থা করেছেন এবং তোমাদের জন্য পাহাড়ে আশ্রয়স্থল বানিয়েছেন এবং তোমাদের জন্য ব্যবস্থা করেছেন পরিধেয় বস্ত্রের; তা তোমাদেরকে তাপ থেকে রক্ষা করে(২) এবং তিনি ব্যবস্থা করেছেন তোমাদের জন্য বর্মের, তা তোমাদেরকে যুদ্ধে রক্ষা করে। এভাবেই তিনি তোমাদের প্রতি তার অনুগ্রহ পূর্ণ করেছেন(৩) যাতে তোমরা আত্মসমর্পণ কর।

(১) এ আয়াতে আরও কিছু নেয়ামতের বর্ণনা দিচ্ছেন। পূর্ববর্তী আয়াতে তাঁবুবাসীদের বর্ণনা চলে গেছে। কিন্তু এমনও রয়েছে যাদের কোন তাবু নেই। তাদের পাকা ঘরের ব্যবস্থাও নেই, যার ছায়ায় তারা আশ্রয় নিতে পারে, দারিদ্রতা কিংবা অন্য কোন কারণে। তখন তাকে কোন গাছ বা দেয়াল অথবা আকাশের মেঘের ছায়ায় বা অনুরূপ জানিয়ে বলছেন যে, “আর আল্লাহ যা কিছু সৃষ্টি করেছেন তা থেকে তিনি তোমাদের জন্য ছায়ার ব্যবস্থা করেছেন।” কাতাদা বলেন, এর অর্থ গাছ। [ইবন কাসীর]

তবে পূর্বে উল্লেখিত সবগুলোর ছায়াই এর দ্বারা উদ্দেশ্য হতে পারে। [ফাতহুল কাদীর] তারপর মুসাফিরকে যেহেতু কখনও কখনও এমন কোন কিছুর আশ্রয় নিতে হয়, যেখানে সে অবস্থান করবে, আবার তার কাছে এমন কিছুও থাকতে হয় যা দ্বারা সে প্রচণ্ড তাপ ও খরা থেকে নিজেকে রক্ষা করবে, সেদিকে দৃষ্টি দিয়ে আল্লাহ বলেন, “আর তিনি তোমাদের জন্য পাহাড়ে আশ্রয়স্থল বানিয়েছেন”। [ফাতহুল কাদীর] পাহাড়ে তারা কিল্লা ও দূর্গ বানায় [ইবন কাসীর] অনুরূপভাবে সেখানে তাদের জন্য রয়েছে গিরিগুহাসমূহ যেখানে তারা আশ্রয় নিতে পারে। বিপদাপদ ও লোকচক্ষু থেকে আড়াল করতে পারে। [ফাতহুল কাদীর] আর তিনি “তোমাদের জন্য ব্যবস্থা করেছেন পরিধেয় বস্ত্রের; তা তোমাদেরকে তাপ থেকে রক্ষা করে এবং তিনি ব্যবস্থা করেছেন তোমাদের জন্য এমন কিছু যা তোমাদেরকে যুদ্ধে রক্ষা করে। যেমন বর্ম ও লোহার অন্যান্য যুদ্ধের কাপড়। [ইবন কাসীর]

(২) ঠাণ্ডা থেকে বাঁচাবার কথা না বলার কারণ সম্পর্কে কোন কোন মুফাসসির বলেনঃ এ সূরার শুরুতে (لَكُمْ فِيهَا دِفْءٌ) বলে পোষাকের সাহায্যে শীত থেকে আত্মরক্ষা এবং উত্তাপ হাসিল করার কথা পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছিল। তাই এখানে শুধু উত্তাপ প্রতিহত করার কথা বলা হয়েছে। অথবা একটির কথা বলায় অপরটি এমনিতেই এসে যাবে এজন্য ভিন্নভাবে উল্লেখ করা হয়নি। অথবা, কুরআনুল কারীম আরবী ভাষায় নাযিল হয়েছে। সর্বপ্রথম এতে আরবদেরকে সম্বোধন করা হয়েছে। তাই এতে আরবদের অভ্যাস ও প্রয়োজনের প্রতি লক্ষ্য রেখে বক্তব্য রাখা হয়েছে। আরব হলো গ্রীষ্মপ্রদান দেশ। সেখানে বরফ জমা ও শীতের কল্পনা করা কঠিন। তাই শুধু গ্রীষ্ম থেকে রক্ষা করার কথা বলা হয়েছে। [ফাতহুল কাদীর]

কাতাদাহ বলেন, এ সূরাকে সূরাতুন নি’আম বা নেয়ামতের সূরা বলা হয়। আতা আল-খুরাসানী বলেন, কুরআন আরবদের জ্ঞান অনুসারে নাযিল হয়েছে। তুমি কি দেখনা আল্লাহ তা'আলার বাণীর দিকে যেখানে বলা হয়েছে, “আর আল্লাহ যা কিছু সৃষ্টি করেছেন তা থেকে তিনি তোমাদের জন্য ছায়ার ব্যবস্থা করেছেন এবং তোমাদের জন্য পাহাড়ে আশ্রয়স্থল বানিয়েছেন” অথচ সমতল ভূমিতে আরও বড় ও বেশী ব্যবস্থাপনা আল্লাহ করে রেখেছেন কিন্তু সেটা উল্লেখ করেন নি। কেননা, তারা ছিল পাহাড়ী জাতি। অনুরূপভাবে তুমি দেখ না আল্লাহর বাণীর দিকে যেখানে বলা হয়েছে, “আর (ব্যবস্থা করেছেন) তাদের পশম, লোম ও চুল থেকে কিছু কালের গৃহ-সামগ্রী ও ব্যবহার উপকরণ” অথচ এর বাইরে আরও যে সমস্ত সামগ্রী তিনি মানুষের জন্য রেখেছেন তা অনেক বেশী কিন্তু তারা ছিল মেষপালক, পশমের বাড়িতে অবস্থানকারী গোষ্ঠী।

তদ্রুপ তুমি কি দেখ না আল্লাহর বাণীর প্রতি, যেখানে তিনি বলেছেন, “আকাশে অবস্থিত মেঘের পাহাড়ের মধ্যস্থিত শিলাস্তুপ থেকে তিনি বর্ষণ করেন শিলা।” [সূরা আন-নূর: ৪৩] কারণ, তারা এটা নিয়ে আশ্চর্যবোধ করে। অথচ আল্লাহ যে বরফ নাযিল করেন তা আরও বড় ব্যাপারে ও অধিকহারেই। কিন্তু তারা সেটা জানত না। সেরকমই তুমি দেখবে আল্লাহর বাণীর প্রতি লক্ষ্য করলে, যেখানে বলা হয়েছে, “এবং তোমাদের জন্য ব্যবস্থা করেছেন পরিধেয় বস্ত্রের; তা তোমাদেরকে তাপ থেকে রক্ষা করে” অথচ ঠাণ্ডার ব্যাপারে তার ব্যবস্থাপনা আরও বড় ও বেশী। কিন্তু তারা যেহেতু গরম এলাকার লোক, তাই তাদের কাছে গরমটাই উল্লেখ করা হয়েছে। [ইবন কাসীর]

(৩) নিয়ামত পূর্ণ বা সম্পূর্ণ করার মানে হচ্ছে এই যে, মহান আল্লাহ জীবনের প্রতিটি বিভাগে মানুষের যাবতীয় প্রয়োজনের চুলচেরা বিশ্লেষণ করেন এবং তারপর একটি প্রয়োজন পূর্ণ করার ব্যবস্থা করেন। তিনি সম্পূর্ণ তার রহমতের কারণে এখানে সেখানে মানুষের উপর তার নেয়ামত দিয়েই যাচ্ছেন। এভাবে তিনি তার দয়া ও অনুগ্রহে দুনিয়া ও আখেরাতে বান্দার যাবতীয় প্রয়োজন পূরণ করবেন। [ফাতহুল কাদীর]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৮১) আল্লাহ যা কিছু সৃষ্টি করেছেন তা হতে তিনি তোমাদের জন্য ছায়ার ব্যবস্থা করেছেন[1] এবং তোমাদের জন্য পাহাড়ে আশ্রয়ের ব্যবস্থা করেছেন এবং তোমাদের জন্য ব্যবস্থা করেছেন পরিধেয় বস্ত্রের; যা তোমাদেরকে তাপ হতে রক্ষা করে এবং তিনি ব্যবস্থা করেছেন তোমাদের জন্য বর্মের, ওটা তোমাদের যুদ্ধে রক্ষা করে।[2] এইভাবে তিনি তোমাদের প্রতি তাঁর অনুগ্রহ পূর্ণ করেন, যাতে তোমরা আত্মসমর্পণ কর।

[1] অর্থাৎ, গাছ সৃষ্টি করেছেন; যার থেকে ছায়া পাওয়া যায়।

[2] অর্থাৎ, উল ও সুতোর পোশাক যা সাধারণতঃ ব্যবহার করা হয় এবং লোহার বর্ম, শিরস্ত্রাণ; যা যুদ্ধে পরা হয়।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান