১৩ সূরাঃ আর-রাদ | Ar-Ra'd | سورة الرعد - আয়াত নং - ৭ মাদানী

১৩ : ৭ وَ یَقُوۡلُ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا لَوۡ لَاۤ اُنۡزِلَ عَلَیۡهِ اٰیَۃٌ مِّنۡ رَّبِّهٖ ؕ اِنَّمَاۤ اَنۡتَ مُنۡذِرٌ وَّ لِکُلِّ قَوۡمٍ هَادٍ ﴿۷﴾

আর যারা কুফরী করেছে, তারা বলে, ‘তার উপর তার রবের পক্ষ থেকে কোন নিদর্শন নাযিল হয় না কেন’? তুমি তো কেবল সতর্ককারী, আর প্রত্যেক কওমের জন্য রয়েছে হিদায়াতকারী। আল-বায়ান

যারা কুফুরী করেছে তারা বলে, ‘তার কাছে তার প্রতিপালকের পক্ষ হতে কোন নিদর্শন অবতীর্ণ হয় না কেন?’ তুমি তো শুধু সতর্ককারী, আর প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্য রয়েছে একজন সঠিক পথ প্রদর্শনকারী। তাইসিরুল

যারা কুফরী করেছে তারা বলেঃ তার রবের নিকট হতে তার নিকট কোন নিদর্শন অবতীর্ণ হয়না কেন? হে নাবী! কথা এই যে, তুমিতো শুধুমাত্র ভয় প্রদর্শনকারী এবং প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্য রয়েছে পথ প্রদর্শক। মুজিবুর রহমান

And those who disbelieved say, "Why has a sign not been sent down to him from his Lord?" You are only a warner, and for every people is a guide. Sahih International

৭. আর যারা কুফরী করেছে তারা বলে, তার রবের কাছ থেকে তার উপর কোন নিদর্শন নাযিল হয় না কেন?(১) আপনি তো শুধু সতর্ককারী, আর প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্য আছে পথ প্রদর্শক।(২)

(১) কাফেরদের তৃতীয় সন্দেহ ছিল এই যে, আমরা রাসূলের কাছে বিশেষ ধরনের যেসব মু'জিযা দেখতে চাই, সেগুলো তিনি প্রকাশ করেন না কেন? এখানে তারা এমন নিশানীর কথা বলতে চাচ্ছিল যা দেখে তারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আল্লাহর রাসূল হবার উপর ঈমান আনতে পারে। এটা ছিল মূলতঃ তাদের গোঁড়ামী। যেমন এর পূর্বেও তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে সাফা পাহাড়কে স্বর্ণে পরিণত করার অযথা আব্দার করেছিল। তারা আরও বলেছিল যে, আপনি মক্কার পাহাড়গুলোকে সরিয়ে দিন।

সে পাহাড়ের জায়গায় নদী-নালার ব্যবস্থা করে দিন। অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, “আর আমাদেরকে নিদর্শন প্রেরণ করা থেকে শুধু এটাই বিরত রেখেছে যে, তাদের পূর্ববর্তীগণ তাতে মিথ্যারোপ করেছিল।” [সূরা আল-ইসরাঃ ৫৯] [ইবন কাসীর] মু'জিযা প্রকাশ করা সরাসরি আল্লাহর কাজ। তিনি যখন যে ধরনের মু'জিযা প্রকাশ করতে চান, তাই করেন। তিনি কারো দাবী ও ইচ্ছা পূরণ করতে বাধ্য নন। এ জন্যই বলা হয়েছেঃ (إِنَّمَا أَنْتَ مُنْذِرٌ) অর্থাৎ আপনার কাজ শুধু আল্লাহর আযাব সম্পর্কে ভয় প্রদর্শন করা।

(২) আয়াতের কয়েকটি অর্থ করা হয়ে থাকে। এক. আপনি তো একজন ভীতিপ্রদর্শনকারী আর প্রতিটি কাওমের জন্য রয়েছে হিদায়াতকারী নবী, যিনি তাদেরকে আল্লাহর দিকে আহবান করবেন। [বাগভী; ইবন কাসীর] দুই. আপনি তো একজন ভীতিপ্রদর্শনকারী এবং প্রতিটি কাওমের জন্যও আপনি হিদায়াতকারী অর্থাৎ আহবানকারী। [বাগভী; ইবন কাসীর] তিন. সাঈদ ইবন জুবাইর বলেন, এর অর্থ আপনি তো একজন ভীতিপ্রদর্শনকারী। আর সত্যিকার হিদায়াতকারী তো আল্লাহ তা'আলাই। [বাগভী; ইবন কাসীর]

প্রথম মতটিকে ইমাম শানকীতী প্রাধান্য দিয়ে বলেন, এর সমার্থে অন্যত্র এসেছে, “আর প্রত্যেক উম্মতের জন্য আছে একজন রাসূল।” [সূরা ইউনুস: ৪৭] আরও এসেছে, “আর এমন কোন উম্মত নেই যার কাছে গত হয়নি সতর্ককারী।” [সূরা ফাতির: ২৪] আরও এসেছে, “আর অবশ্যই আমরা প্রত্যেক জাতির মধ্যে রাসূল পাঠিয়েছিলাম।” [সূরা আন-নাহ্‌ল: ৩৬] [আদওয়াউল বায়ান]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৭) যারা অবিশ্বাস করেছে তারা বলে, ‘তার প্রতিপালকের নিকট হতে তার নিকট কোন নিদর্শন অবতীর্ণ করা হয় না কেন?’ তুমি তো শুধুমাত্র একজন সতর্ককারী।[1] আর প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্য পথ প্রদর্শক রয়েছে। [2]

[1] প্রত্যেক নবীকে মহান আল্লাহ অবস্থা, প্রয়োজন এবং স্বীয় ইচ্ছা ও হিকমত মোতাবেক কিছু নিদর্শন ও মু’জিযা দান করেছেন। কিন্তু কাফেররা নিজ খেয়াল-খুশি অনুযায়ী মু’জিযা তলব করতে থাকে। যেমন মক্কার কাফেররা নবী (সাঃ)-কে বলত যে, সাফা পর্বতকে সোনার বানিয়ে দেওয়া হোক অথবা পর্বতের স্থানে নদী ও ঝর্ণা প্রবাহিত করে দেওয়া হোক ইত্যাদি ইত্যাদি। তাদের মন মত মু’জিযা না দেখানো হলে তারা বলতে আরম্ভ করত যে, এর উপর কোন মু’জিযা কেন অবতীর্ণ করা হলো না? মহান আল্লাহ বলেন, হে নবী! তোমার কাজ শুধু সতর্ক করা এবং পৌঁছে দেওয়া। এটা তুমি করতে থাক। কেউ মানুক বা না মানুক, সেটা তোমার দেখার নয়। কেননা হিদায়াত দান করা আমার কাজ। তোমার কাজ পথ দেখানো। তাকে উক্ত পথে চালানো তোমার কাজ নয়, সে কাজ আমার।

[2] প্রত্যেক সম্প্রদায়ের নিকট মহান আল্লাহ তাদের নির্দেশনার জন্য পথপ্রদর্শক অবশ্যই পাঠিয়েছেন। এটা ভিন্ন কথা যে, সম্প্রদায়ের মানুষেরা হিদায়াতের পথ অবলম্বন করল বা করল না। কিন্তু সঠিক পথ দেখাবার জন্য পয়গম্বর অবশ্যই এসেছেন। মহান আল্লাহ বলেন: ﴿وَإنْ مِنْ أُمَّةٍ إلَّا خَلَا فِيْهَا نَذِيْرٌ﴾ অর্থাৎ, প্রত্যেক সম্প্রদায়ের নিকট সতর্ককারী অবশ্যই এসেছে। (সূরা ফাতির: ২৪)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান