৩১ সূরাঃ লুকমান | Luqman | سورة لقمان - আয়াত নং - ১৮ - মাক্কী
‘আর তুমি মানুষের দিক থেকে তোমার মুখ ফিরিয়ে নিয়ো না। আর যমীনে দম্ভভরে চলাফেরা করো না; নিশ্চয় আল্লাহ কোন দাম্ভিক, অহঙ্কারীকে পছন্দ করেন না’। আল-বায়ান
অহংকারের বশবর্তী হয়ে তুমি মানুষকে অবজ্ঞা কর না, আর পৃথিবীতে গর্বভরে চলাফেরা কর না, নিশ্চয়ই আল্লাহ কোন দাম্ভিক অহংকারীকে পছন্দ করেন না। তাইসিরুল
অহংকার বশে তুমি মানুষকে অবজ্ঞা করনা এবং পৃথিবীতে উদ্ধতভাবে বিচরণ করনা। কারণ আল্লাহ কোন উদ্ধত, অহংকারীকে পছন্দ করেননা। মুজিবুর রহমান
And do not turn your cheek [in contempt] toward people and do not walk through the earth exultantly. Indeed, Allah does not like everyone self-deluded and boastful. Sahih International
১৮. আর তুমি মানুষের প্রতি অবজ্ঞাভরে তোমার গাল বাঁকা কর না(১) এবং যমীনে উদ্ধতভাবে বিচরণ কর না(২); নিশ্চয় আল্লাহ কোন উদ্ধত, অহংকারীকে পছন্দ করেন না।(৩)
(১) পঞ্চম উপদেশ সামাজিক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে, বলা হয়েছে যে, লোকের সাথে সাক্ষাত বা কথোপকথনের সময় মুখ ফিরিয়ে রেখো না-যা তাদের প্রতি উপেক্ষা ও অহংকারের নিদর্শন এবং ভদ্রোচিত স্বভাব ও আচরণের পরিপন্থী। এর আরেক অর্থ হলো, মানুষের প্রতি গাল বাঁকা করে কথা বলো না। এ অর্থ অনুসারে তার প্রতি তাকিয়েও যদি গাল বাঁকা করে তাকে অপমান করা উদ্দেশ্য হয় তবে তাও নিষিদ্ধ হবে। [কুরতুবী, ফাতহুল কাদীর]
(২) অর্থাৎ গর্বভরে ঔদ্ধত্যের সহিত বিচরণ করো না। আল্লাহ ভূমিকে যাবতীয় বস্তু হতে নত ও পতিত করে সৃষ্টি করেছেন। তোমাদের সৃষ্টিও এ মাটি দিয়েই। তোমরা এর উপর দিয়েই চলাফেরা করা-নিজের নিগুঢ় তত্ত্ব বুঝতে চেষ্টা কর। আত্মাভিমানীদের ধারা অনুসরণ করে অহংকারভরে বিচরণ করো না। আল্লাহ কোন অহংকারী আত্মাভিমানীকে পছন্দ করেন না। হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যার অন্তরে শরিষা দানা পরিমান ঈমান আছে সে জাহান্নামে যাবে না, পক্ষান্তরে যার অন্তরে শরিষা দানা পরিমান অহংকার আছে সে জান্নাতে যাবে না।’ [মুসলিম: ১৩২] অন্য এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ আর তিনজনকে আল্লাহ পছন্দ করেন না, অহংকারী, দাম্ভিক। যেমন তোমরা আল্লাহর কিতাবে পাও, তারপর আলোচ্য আয়াত তেলাওয়াত করলেন। আর দান করে খোঁটা প্রদানকারী কৃপণ ব্যক্তি; এরং শপথের মাধ্যমে বিক্রয়কারী। [মুসনাদে আহমাদ: ৫/১৭৬]
(৩) ‘মুখতোল’ মানে হচ্ছে, এমন ব্যক্তি যে নিজেই নিজেকে কোন বড় কিছু মনে করে। আর ‘ফাখুর’ তাকে বলে, যে নিজের বড়াই করে অন্যের কাছে। [ইবন কাসীর] মানুষের চালচলনে অহংকার, দম্ভ ও ঔদ্ধত্যের প্রকাশ তখনই অনিবাৰ্য হয়ে ওঠে, যখন তার মাথায় নিজের শ্রেষ্ঠত্বের বিশ্বাস ঢুকে যায় এবং সে অন্যদেরকে নিজের বড়াই ও শ্রেষ্ঠত্ব অনুভব করাতে চায়। [ফাতহুল কাদীর]
তাফসীরে জাকারিয়া(১৮) মানুষের জন্য নিজের গাল ফুলায়ো না[1] এবং পৃথিবীতে উদ্ধতভাবে বিচরণ করো না;[2] কারণ আল্লাহ কোন উদ্ধত, অহংকারীকে ভালবাসেন না।
[1] অর্থাৎ, (অহংকার বশে তুমি মানুষকে অবজ্ঞা করো না।) এমন অহংকার করো না, যাতে তুমি মানুষকে তুচ্ছ ভাবো ও তাকে ঘৃণা কর এবং কোন মানুষ তোমার সাথে কথা বললে তার থেকে বৈমুখ হও অথবা কথোপকথনের সময় নিজ মুখমন্ডলকে অন্য দিকে ফিরিয়ে রাখো। صعر এক প্রকার ব্যাধি, যা উটের মাথা অথবা ঘাড়ে হয় এবং যার ফলে সেই উটের ঘাড় বাঁকা হয়ে যায়। এখানে অহংকার হেতু মুখ ফিরিয়ে নেওয়া (বা মুখ বাঁকানো)র অর্থে শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। (ইবনে কাসীর)
[2] অর্থাৎ, এমন বিচরণ ও চালচলন, যাতে ধন-সম্পদ, পদ বা বংশ মর্যাদা অথবা শক্তিমত্তা, ক্ষমতার বড়াই ও অহংকার ফুটে ওঠে, তা আল্লাহ পছন্দ করেন না। কারণ মানুষ একজন অক্ষম ও নগণ্য বান্দা মাত্র। তাই আল্লাহ তাআলা এটাই পছন্দ করেন যে, সে নিজের মান ও অবস্থা অনুযায়ী বিনয় ও নম্রতা বজায় রাখবে এবং তা অতিক্রম করে অহংকার প্রদর্শন করবে না। কারণ গর্ব ও অহংকার শুধুমাত্র আল্লাহর জন্যই শোভনীয়; যিনি সকল এখতিয়ারের মালিক এবং সকল গুণের অধিকারী। এই জন্যই হাদীসে বলা হয়েছে, ‘‘আল্লাহ আয্যা অজাল্ল্ বলেন, গৌরব ও গর্ব খাস আমার গুণ। সুতরাং যে তাতে আমার অংশী হতে চাইবে, আমি তাকে শাস্তি দেব।’’ (মুসলিম ২৬২০নং) ‘‘ঐ ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না, যার অন্তরে সরিষার দানা সমপরিমাণ অহংকার আছে।’’ (আহমাদ ১/৪১২, তিরমিযী) ‘‘যে ব্যক্তি অহংকার হেতু নিজ (পরনের) কাপড় (মাটিতে) ছেঁচড়ে চলাফেরা করে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা তার দিকে তাকিয়ে দেখবেন না।’’ (আহমাদ ৫/১০৯, বুখারীঃ কিতাবুল লিবাস) তা সত্ত্বেও অহংকার প্রকাশ না করে আল্লাহর নিয়ামত প্রকাশ বা ভাল পোশাক পরা ও উত্তম খাবার খাওয়া ইত্যাদি অবৈধ নয়। (বরং অহংকার প্রকাশ না করে আল্লাহর নিয়ামত প্রকাশ করাই উত্তম।)
তাফসীরে আহসানুল বায়ান