কুরআনের আয়াতের অনুবাদ/তাফসীর 'টি ইমেইলে পাঠাতে নিচের ফর্মটি পূরণ করুন
security code

২২ সূরাঃ আল-হজ্জ | Al-Hajj | سورة الحج - আয়াত নং - ৩২ মাদানী

২২ : ৩২ ذٰلِكَ ٭ وَ مَنۡ یُّعَظِّمۡ شَعَآئِرَ اللّٰهِ فَاِنَّهَا مِنۡ تَقۡوَی الۡقُلُوۡبِ ﴿۳۲﴾

এটাই হল আল্লাহর বিধান; যে আল্লাহর নিদর্শনসমূহকে সম্মান করে, নিঃসন্দেহে তা অন্তরের তাকওয়া থেকেই। আল-বায়ান

এই (তার অবস্থা), আর যে কেউ আল্লাহর নিদর্শনগুলোকে সম্মান করবে সে তো তার অন্তরস্থিত আল্লাহ-ভীতি থেকেই তা করবে। তাইসিরুল

এটাই আল্লাহর বিধান এবং কেহ (আল্লাহর) নিদর্শনাবলীকে সম্মান করলে এটাতো তার হৃদয়ের তাকওয়ারই বহিঃপ্রকাশ। মুজিবুর রহমান

That [is so]. And whoever honors the symbols of Allah - indeed, it is from the piety of hearts. Sahih International

৩২. এটাই আল্লাহর বিধান এবং কেউ আল্লাহ্‌র নিদর্শনাবলীকে(১) সম্মান করলে এ তো তার হৃদয়ের তাকওয়াপ্রসূত।(২)

(১) شَعَائِر শব্দটি شعيرة এর বহুবচন। এর অর্থ আলামত, চিহ্ন। আল্লাহর শা’য়ীরা বা চিহ্ন বলতে বুঝায় এমন প্রতিটি বিষয় যাতে আল্লাহর কোন নির্দেশের চিহ্ন দেয়া আছে। [কুরতুবী] সাধারণের পরিভাষায় যে যে বিধানকে মুসলিম হওয়ার আলামত মনে করা হয়, সেগুলোকে ‘শা’আয়েরে ইসলাম’ বলা হয়। [দেখুন, সা’দী] এগুলো আল্লাহর প্রতি আনুগত্যের চিহ্ন। বিশেষ করে হজের সাথে সম্পৃক্ত বিষয়াদি যেমন, হজের যাবতীয় কর্মকাণ্ড। [কুরতুবী; সা'দী] হাদঈর জন্য হাজীদের সংগে নেয়া উট ইত্যাদি। [ইবন কাসীর]

ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, এখানে আল্লাহর নিদর্শন বা চিহ্ন সম্মান করার দ্বারা হাদঈর জন্তুটি মোটাতাজা ও সুন্দর হওয়া বোঝানো হয়েছে। [ইবন কাসীর] হাদীসে এসেছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দুটি সাদাতে কালো রঙ্গ মিশ্রিত শিং বিশিষ্ট ছাগল দিয়ে কুরবানী করেছেন। [আবু দাউদ: ২৭৯৪] তাছাড়া তিনি চোখ, কান, ভালভাবে দেখতে নির্দেশ দিয়েছেন। [ইবন মাজাহঃ ৩১৪৩] সুতরাং যারা এ নির্দেশ গুলো উন্নত মানের জন্তু হাদঈ ও কুরবানীতে প্ৰদান করবে সেটা তাদের মধ্যে তাকওয়ার পরিচায়ক। [ইবন কাসীর]

(২) অর্থাৎ আল্লাহর আলামতসমূহের প্রতি সম্মান প্রদর্শন আন্তরিক আল্লাহভীতির লক্ষণ যার অন্তরে তাকওয়া বা আল্লাহভীতি থাকে, সে-ই এগুলোর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করতে পারে। এ সম্মান প্রদর্শন হৃদয় অভ্যন্তরের তাকওয়ার ফল এবং মানুষের মনে যে কিছু না কিছু আল্লাহর ভয় আছে তা এরই চিহ্ন। [সা'দী] তাইতো কেউ আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অমর্যাদা করলে এটা একথার সুস্পষ্ট প্রমাণ যে, তার মনে আল্লাহর ভয় নেই। এতে বোঝা গেল যে, মানুষের অন্তরের সাথেই তাকওয়ার সম্পর্ক। অন্তরে আল্লাহভীতি থাকলে তার প্রতিক্রিয়া সব কাজকর্মে পরিলক্ষিত হয়। এজন্যেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “তাকওয়া এখানে, আর তিনি বুকের দিকে ইঙ্গিত করলেন” [মুসলিম: ২৫৬৪]

আপাতদৃষ্টিতে এটা একটা সাধারণ উপদেশ। আল্লাহ প্রতিষ্ঠিত সকল মর্যাদাশালী জিনিসের প্রতি মর্যাদা প্রদর্শনের জন্য একথা বলা হয়েছে। কিন্তু মসজিদে হারাম, হজ্জ, উমরাহ ও মক্কার হারামের যে মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে এ বক্তব্যে সেগুলোই প্রধানতম উদ্দেশ্য। [কুরতুবী; ফাতহুল কাদীর]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৩২) এটাই আল্লাহর বিধান। আর কেউ আল্লাহর (দ্বীনের) প্রতীকসমূহের সম্মান করলে এটা তো তার হৃদয়ের সংযমশীলতারই বহিঃপ্রকাশ। [1]

[1] شَعَائر শব্দটি شَعيرة এর বহুবচন। যার অর্থ বিশেষ চিহ্ন ও নিদর্শন। যেমন যুদ্ধের জন্য একটি প্রতীক চিহ্ন (বিশেষ শব্দ নিদর্শনরূপে) বেছে নেওয়া হয়। যার দ্বারা একে অপরকে চিনতে পারে। এই অর্থে আল্লাহর নিদর্শন বা প্রতীক হল তাই, যা দ্বীনের বিশেষ চিহ্ন অর্থাৎ ইসলামের এমন কিছু বৈশিষ্ট্যপূর্ণ আনুষ্ঠানিক বিধান যার দ্বারা একজন মুসলিমের সবাতন্ত্র্য ও ব্যক্তিত্ব বিশেষরূপে প্রকাশ পায় এবং অন্য ধর্মাবলম্বী হতে তাকে সহজে পৃথকভাবে চেনা যায়। সাফা-মারওয়া পাহাড়কেও এই কারণেই আল্লাহর নিদর্শন বলা হয়েছে, যেহেতু মুসলিমরা হজ্জ বা উমরাতে এই দুয়ের মাঝে সাঈ করে থাকেন। এখানে হজ্জে অন্যান্য কর্মসমূহের মধ্যে কুরবানীর পশুকে আল্লাহর নিদর্শন বা প্রতীক বলা হয়েছে। আর কুরবানীর পশুর তা’যীম বা সম্মান বলতে তা খুব ভালো ও মোটাতাজা দেখে পছন্দ করা, (তাকে তোয়াজ করে খাওয়ানো, তার যাতে কোন ক্ষতি না হয়, তার বিশেষ খেয়াল রাখা ইত্যাদি)। ওর সম্মানকে অন্তরের ‘তাকওয়া’ (পরহেযগারী) বলা হয়েছে, অর্থাৎ তা অন্তরের এমন এক কাজ যার বুনিয়াদ হল তাকওয়া।

(প্রকাশ থাকে যে, তার পা ধুয়ে দেওয়া বা শিং ও ক্ষুরে তেল মাখিয়ে দেওয়া অতিরঞ্জনের পর্যায়ভুক্ত। -সম্পাদক)

তাফসীরে আহসানুল বায়ান