পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ - রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর ওফাতের পর সাহাবীদের মক্কাহ্ হতে হিজরত করা সম্পর্কে
৫৯৬৯-[১৪] ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন () “যখন আসবে আল্লাহর সাহায্য ও (ইসলামের চূড়ান্ত) বিজয়”- (সূরা আন্ নাসর ১১০: ১) নাযিল হলো, তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) ফাতিমাহ্ (রাঃ) -কে ডেকে বললেন, আমাকে আমার মৃত্যুর সংবাদ দেয়া হয়েছে। এ কথা শুনে ফাতিমাহ্ (রাঃ) কেঁদে দিলেন। তখন তিনি (সা.) বললেন, তুমি কেঁদো না। কারণ আমার পরিবারের মাঝে তুমিই প্রথম আমার সাথে মিলিত হবে। তখন ফাতিমাহ্ (রাঃ) হাসলেন। ফাতিমাহ্ (রাঃ)-এর এ অবস্থা দেখে নবী (সা.) -এর কোন এক স্ত্রী প্রশ্ন করলেন, হে ফাতিমাহ্! আমরা প্রথমে একবার তোমাকে দেখলাম কাঁদতে। আবার পরে দেখলাম হাসতে উত্তরে ফাতিমা (রাঃ) বললেন, প্রথমে তিনি আমাকে বলেছেন, ’তাঁকে তাঁর মৃত্যুর সংবাদ দেয়া হয়েছে। তা শুনে আমি কেঁদেছি। অতঃপর তিনি (সা.) আমাকে বললেন, তুমি কেঁদো না। কারণ আমার পরিবারের মধ্য হতে তুমিই সর্বপ্রথম আমার সাথে মিলিত হবে। এ কথা শুনে আমি হাসলাম। আর রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, যখন আল্লাহর সাহায্য এসেছে এবং মক্কার বিজয় হয়েছে এবং ইয়ামানবাসীগণ (ইসলাম গ্রহণ করে) রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর কাছে এসেছে, তারা কোমল অন্তরের অধিকারী, ঈমান ইয়ামানবাসীদের মাঝে এবং হিকমাতও ইয়ামানবাসীদের মাঝে রয়েছে। (দারিমী)
اَلْفصْلُ الثَّالِثُ (بَاب هِجْرَة أَصْحَابه صلى الله عَلَيْهِ وَسلم من مَكَّة ووفاته)
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: لَمَّا نَزَلَتْ [إِذَا جَاءَ نصر الله وَالْفَتْح] دَعَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَاطِمَةَ قَالَ: «نُعِيَتْ إِلَيَّ نَفْسِي» فَبَكَتْ قَالَ: «لَا تَبْكِي فَإِنَّكِ أَوَّلُ أَهْلِي لَاحِقٌ بِي» فَضَحِكَتْ فَرَآهَا بَعْضُ أَزْوَاجِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقُلْنَ: يَا فَاطِمَةُ رَأَيْنَاكِ بَكَيْتِ ثُمَّ ضَحِكْتِ. قَالَتْ: إِنَّهُ أَخْبَرَنِي أَنَّهُ قَدْ نُعِيَتْ إِلَيْهِ نَفْسُهُ فَبَكَيْتُ فَقَالَ لِي: لَا تبْكي فإِنك أوَّلُ أَهلِي لاحقٌ بِي فضحكتُ. وَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِذَا جَاءَ نصرُ الله وَالْفَتْح وَجَاءَ أَهْلُ الْيَمَنِ هُمْ أَرَقُّ أَفْئِدَةً وَالْإِيمَانُ يمانٍ وَالْحكمَة يَمَانِية» . رَوَاهُ الدَّارمِيّ
سندہ حسن ، رواہ الدارمی (1 / 37 ح 80) ۔
(حسن)
ব্যাখ্যা: (عِيَتْ إِلَيَّ نَفْسِي) “আমাকে আমার মৃত্যুর খবর দেয়া হয়েছে।” অর্থাৎ আমাকে সংবাদ দেয়া হয়েছে যে, আমি মারা যাব। ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, আমার মৃত্যুর খবর আমাকে দেয়া হয়েছে। যেমন তুমি বল, আমি তোমার নিকট অমুকের প্রশংসা করছি। কথিত আছে যে, মৃত ব্যক্তি তার মৃত্যুর সংবাদ প্রচার করছে। যখন সে সেটা জেনে কাউকে জানাচ্ছে। আর এর গুপ্ত রহস্য হলো, মহান আল্লাহ বলেছেন,
(فَسَبِّحۡ بِحَمۡدِ رَبِّکَ) “আপনি আপনার রবের প্রশংসার সাথে পবিত্রতা ঘোষণা করুন”- (সূরা আন্ নাসর ১১০: ৩)। তার কথার সারমর্ম হলো- اِذَا جَآءَ نَصۡرُ اللّٰهِ وَ الۡفَتۡحُ ۙ﴿۱﴾ وَ رَاَیۡتَ النَّاسَ یَدۡخُلُوۡنَ فِیۡ دِیۡنِ اللّٰهِ اَفۡوَاجًا ۙ﴿۲﴾ “যখন আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় আসবে। আর তুমি দলে দলে মানুষকে আল্লাহর দীনে প্রবেশ করতে দেখবে"(সূরা আন্ নাসর ১১০: ১-২)। এটা আল্লাহর রাসূল (সা.) -এর প্রতি বিশেষ নির্দেশ যে, তিনি আল্লাহর প্রশংসা করবেন এবং তাঁর নি'আমাতের উপর গুণকীর্তন করবেন। এটা হলো তাঁর প্রতি অর্পিত রিসালাতের প্রচারপ্রসার কাজে কষ্ট স্বীকার করা, আর দীনের শত্রুদের ওপর চেষ্টা-প্রচেষ্টা করা, আর ইবাদাত কবুল হওয়ার জন্য চেষ্টা করা, আর সম্মান ও মর্যাদার সর্বোচ্চ চূড়ায় আরোহণের জন্য ত্বাকওয়ার নীতি অবলম্বন করা। আর সবশেষে উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন বন্ধুর সাথে মিলিত হওয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে যাওয়া।
(فإِنك أوَّلُ أَهلِي لاحقٌ بِي فضحكتُ) “নিশ্চয় তুমি আমার পরিবারের প্রথম সদস্য যে আমার সাথে মিলিত হবে, এ কথা শুনে সে হেসে উঠল।” অর্থাৎ আল্লাহর রাসূল (সা.) তার মেয়ে ফাতিমাহ্ (রাঃ)-কে বলেন, আমার পরে তুমি আমার পরিবারের মাঝে প্রথম মৃত্যুবরণ করবে। আকমাল বলেন, সহীহ মত হলো তিনি রাসূল (সা.) -এর মৃত্যুর ছয় মাস পরে মারা যান। কথিত আছে যে, আট মাস পরে মারা যান। এও কথিত আছে যে, তিন মাস পরে মারা যান। আরো কথিত আছে যে, তিনি দুই মাস পরে মারা যান। এছাড়াও কথিত আছে যে, তিনি রাসূল (সা.)-এর মৃত্যুবরণ করার মাত্র সত্তর দিন পরে মারা যান।
(وَالْإِيمَانُ يمانٍ) “ঈমান হলো ইয়ামানবাসীদের মধ্যে।” বলা হয়ে থাকে, মক্কাহ্ থেকে ঈমানের সূচনা হয়েছে। আর তা হলো ত্বিহামাহ্ এলাকা থেকে। আর ত্বিহামাহ্ হলো ইয়ামান দেশের মধ্যে। এ কারণে বলা হয়ে থাকে, ইয়ামানী কা'বাহ্। কথিত আছে, তিনি এ কথা বলেছেন তাবুকে থাকা অবস্থায়। তখন মক্কাহ্ ও মদীনাহ্ তাবূক ও ইয়ামানের মাঝে ছিল। তিনি ইয়ামানের দিকে ইঙ্গিত করে মক্কাকে বুঝিয়েছেন। আবূ ‘উবায়দ বলেন, তিনি আনসারদের উদ্দেশ্য করে বলেছেন কারণ তারা মূলত ইয়ামানী। আর তাদের দিকে ঈমানকে সম্পৃক্ত করা হয়েছে কারণ তারা তাকে সাহায্য করেছেন। শায়খ আবূ ‘উমার বলেন, বরং তার উদ্দেশ্য ছিল ইয়ামানবাসী। যেমনটি বাহ্যিকভাবে ঈমানকে তাদের সাথে সম্পৃক্ত করেছেন, কারণ নবী (সা.) - এর পূর্ণতা হয়েছে তাদের মাঝে। কারণ কোন ব্যক্তি যে গুণে গুণান্বিত হয় ও যার উপর ভর করে শক্তিশালী হয় সে নিজেকে তার দিকে সম্পৃক্ত করে, আর এ কাজ অন্য কিছুকে নিষেধ করে না। অতএব তার মাঝে আর রাসূল (সা.) -এর কথার মাঝে কোন পার্থক্য নেই। (মিরকাতুল মাফাতীহ)।