পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর ওফাতের পর সাহাবীদের মক্কাহ্ হতে হিজরত করা সম্পর্কে
৫৯৫৭-[২] আবূ সাঈদ আল খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদিন রাসূলুল্লাহ (সা.) (তার অন্তিমকালে) মিম্বারের উপর বসে বললেন, আল্লাহ তা’আলা তার কোন বান্দাকে দুনিয়ার ভোগ-বিলাস ও আল্লাহ কাছে রক্ষিত নি’আমাত, এ দুটির মধ্যে ইখতিয়ার দিয়েছেন। তখন ঐ বান্দা আল্লাহর নিকট (রক্ষিত) নি’আমাতকে পছন্দ করেছেন। (রাবী বলেন,) এ কথা শুনে আবূ বকর সিদ্দিক (রাঃ) কাঁদতে লাগলেন এবং বললেন, আমাদের পিতা ও মাতাকে আপনার জন্য উৎসর্গ করলাম। রাবী বলেন, আমরা অবাক হলাম এবং লোকেরা বলতে লাগল, এই বৃদ্ধের প্রতি দৃষ্টি দাও, রাসূলুল্লাহ (সা.) তো কোন একজন বান্দা সম্পর্কে খবর দিচ্ছেন যে, তাকে দুনিয়ার ভোগ-বিলাস অথবা আল্লাহর কাছে রক্ষিত নি’আমাত- এ দুটি জিনিসের মধ্যে যে কোন একটি গ্রহণ করার ইখতিয়ার দিয়েছেন আর এ লোক বলছেন, আমরা আমাদের পিতামাতাকে আপনার ওপর কুরবান করছি। (রাবী বলেন,) আর পরে আমরা বুঝতে পারলাম, সে ইচ্ছা স্বাধীনতা বান্দা ছিলেন স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (সা.) আর আবূ বকর সিদ্দিক (রাঃ) ছিলেন আমাদের সকলের তুলনায় অধিক জ্ঞানী। (বুখারী ও মুসলিম)
الفصل الاول (بَاب هِجْرَة أَصْحَابه صلى الله عَلَيْهِ وَسلم من مَكَّة ووفاته)
وَعَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيُّ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ جَلَسَ عَلَى الْمِنْبَرِ فَقَالَ: «إِنَّ عَبْدًا خَيَّرَهُ اللَّهُ بَيْنَ أَنْ يُؤْتِيَهُ مِنْ زَهْرَةِ الدُّنْيَا مَا شَاءَ وَبَيْنَ مَا عِنْدَهُ فَاخْتَارَ مَا عِنْدَهُ» . فَبَكَى أَبُو بَكْرٍ قَالَ: فَدَيْنَاكَ بِآبَائِنَا وَأُمَّهَاتنَا فعجبنا لَهُ فَقَالَ النَّاس: نظرُوا إِلَى هَذَا الشَّيْخِ يُخْبِرُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ عَبْدٍ خَيَّرَهُ اللَّهُ بَيْنَ أَنْ يُؤْتِيَهُ مِنْ زَهْرَةِ الدُّنْيَا وَبَيْنَ مَا عِنْدَهُ وَهُوَ يَقُولُ: فَدَيْنَاكَ بِآبَائِنَا وَأُمَّهَاتِنَا فَكَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ هُوَ الْمُخَير وَكَانَ أَبُو بكر هُوَ أعلمنَا. مُتَّفق عَلَيْهِ
متفق علیہ ، رواہ البخاری (3904) و مسلم (2 / 2382)، (6170) ۔
(مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ)
ব্যাখ্যা: উল্লেখিত ঘটনাটি ঘটেছিল নবী (সা.) -এর মৃত্যুর পূর্বে। অন্য একটি বর্ণনায় এসেছে যে, এ ঘটনা ছিল নবী (সা.) -এর মৃত্যুর পাঁচ রাত পূর্বের।
তিনি ছিলেন আল্লাহর এক মহান বান্দা যাকে তিনি মৃত্যুর সিদ্ধান্তের ব্যাপারে ইখতিয়ার দিয়েছিলেন, তাঁর সুদীর্ঘ হায়াত ও দুনিয়ায় বেঁচে থেকে তার আরাম-আয়েশ ভোগ করার জন্য যতদিন ইচ্ছা থাকতে পারবেন। অতএব তিনি এ দুনিয়ার অস্থায়ী সুখ-শান্তির উপর প্রাধান্য দেন সে সব নি'আমাকে যা আল্লাহ প্রস্তুত করে রেখেছেন তাঁর প্রিয় বান্দার জন্য। আর যে নি'আমাত চিরস্থায়ী। নবী (সা.) -এর মুখে এ বর্ণনা শুনে আবূ বাকর (রাঃ) কেঁদে ফেললেন, কারণ তিনি তার পরিপূর্ণ বুঝ ও জ্ঞানের কারণে নবী (সা.) -এর বিচ্ছেদের ব্যাপারে আন্দাজ করতে পেরেছিলেন। কারণ তাঁর অসুস্থতা তখন শুরু হয়ে গিয়েছিল। তিনি অসুস্থতা দেখে অনুমান করতে পেরেছিলেন অথবা তিনি দুনিয়ার চাকচিক্যের উপর আখিরাতের জীবনকে প্রাধান্য দিয়েছেন- এ কথা দ্বারা তিনি অনুমান করেছেন যে, তিনি নবী (সা.)-ই হবেন। কারণ এটি কেবল একজন আল্লাহর ওয়ালীই পারেন। আর নবী (সা.) তো হলেন নবীগণের নেতা। তাই তিনি দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী এ ভোগ-বিলাসের উপর আখিরাতের স্থায়ী সুখ-শান্তিকে বাছাই করে নিয়েছেন। নবী (সা.) -এর ইশারা দ্বারাই আবূ বাকর (রাঃ) বুঝতে পারলেন যে, নবী (সা.) শুধু এ দুনিয়ার উপর আখিরাতকে প্রাধান্য দিয়েছেন। (মিরকাতুল মাফাতীহ)