৫৯৪৬

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - কারামাত সম্পর্কে বর্ণনা

৫৯৪৬-[৩] ’আবদুর রহমান ইবনু আবূ বকর সিদ্দিক (রাঃ) বর্ণনা করেন। আসহাবে সুফফাগণ ছিলেন দরিদ্র লোক। এজন্য নবী (সা.) বলেছেন: যার কাছে দু’জনের খাদ্য আছে, সে যেন তৃতীয় লোক হিসেবে (আসহাবে সুফফাহ হতে) একজনকে নিয়ে যায়। আর যার কাছে চারজনের খাদ্য আছে সে যেন পঞ্চম কিংবা ষষ্ঠ লোককে নিয়ে যায়। এটা শুনে আবূ বকর সিদ্দিক (রাঃ) তিনজনকে এবং নবী (সা.) দশজনকে নিয়ে গেলেন। এদিকে আবূ বকর সিদ্দিক (রাঃ) নবী (সা.) -এর ঘরের রাত্রের খাবার গ্রহণ করে ঐখানেই দেরি করলেন। এমনকি ’ইশার সালাত আদায়ের পর আবার তিনি নবী (সা.)-এর ওখানে ফিরে গেলেন এবং নবী (সা.) -এর খাওয়া শেষ করা অবধি সেখানেই অবস্থান করলেন। তারপর অনেক রাত অতিবাহিত হওয়ার পরে তিনি বাড়ি ফিরলেন। তখন তাঁর স্ত্রী তাঁকে প্রশ্ন করলেন, তোমাকে তোমার মেহমান হতে কিসে আটকে রাখল? আবূ বকর সিদ্দিক (রাঃ) বললেন, তুমি কি তাদেরকে রাতের খাবার দাওনি? স্ত্রী বললেন, তুমি না আসা পর্যন্ত তারা খেতে অস্বীকার করেছে। এ কথা শুনে আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ) রাগান্বিত হয়ে বললেন, আল্লাহর শপথ! আমি কখনো খাব না। তার স্ত্রীও শপথ করলেন যে, তিনিও উক্ত খানা খাবেন না। এদিকে মেহামনগণও শপথ করে বললেন যে, তারাও এ খানা খাবেন না। অতঃপর আবূ বকর সিদ্দিক (রাঃ) বললেন, এটা (না খাওয়ার শপথ) শয়তানের তরফ হতে। এই বলে তিনি খাবার আনিয়ে নিলেন, অতঃপর আবূ বকর সিদ্দিক (রাঃ) খেলেন এবং তাঁরাও খেতে লাগলেন। তারা যখনই কোন লোমা উঠাতেন, তখন সাথে সাথেই তার নিচের দিক হতে ঐ পরিমাণ অপেক্ষা বেড়ে যেত।
তখন আবূ বকর সিদ্দিক (রাঃ) স্ত্রীকে লক্ষ্য করে বললেন, হে বানী ফিরাস-এর ভগ্নি! এটা কি? তখন তিনি [আবূ বকর (রাঃ)-এর স্ত্রী] বললেন, আমার চোখের প্রশান্তির কসম! নিঃসন্দেহে এগুলো আগের তুলনায় তিনগুণ অধিক হয়ে গেছে। অতঃপর তারা সকলে খেলেন এবং খাবারের অবশিষ্টাংশ নবী (সা.) -এর জন্য পাঠিয়ে দিলেন। এ প্রসঙ্গে এটা বর্ণনা করা হয়েছে যে, নবী (সা.) ও তা হতে খেয়েছেন। (বুখারী মুসলিম)

আর ’আবদুল্লাহ ইবনু মাস্’উদ (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত (كُنَّا نَسْمَعُ تَسْبِيحَ الطَّعَامِ) “আমরা খাবারের তাসবীহ পাঠ করা শুনতাম” মু’জিযার অধ্যায়ে বর্ণনা করা হয়েছে।

الفصل الاول ( بَاب الكرامات)

وَعَن عبد الرَّحْمَن بن أبي بكر إِنَّ أَصْحَابَ الصُّفَّةِ كَانُوا أُنَاسًا فَقُرَاءَ وَإِنَّ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «مَنْ كَانَ عِنْده طَعَام اثْنَيْنِ فليذهب بثالث وَإِن كَانَ عِنْدَهُ طَعَامُ أَرْبَعَةٍ فَلْيَذْهَبْ بِخَامِسٍ أَوْ سادس» وَأَن أَبَا بكر جَاءَ بِثَلَاثَة فَانْطَلق النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِعَشَرَةٍ وَإِنَّ أَبَا بكر تعَشَّى عِنْد النبيِّ صلى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ثُمَّ لَبِثَ حَتَّى صُلِّيَتِ الْعِشَاءُ ثُمَّ رَجَعَ فَلَبِثَ حَتَّى تَعَشَّى النَّبِيُّ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسلم فَجَاءَ بَعْدَ مَا مَضَى مِنَ اللَّيْلِ مَا شَاءَ الله. قَالَت لَهُ امْرَأَته: وَمَا حَبسك عَن أضيافك؟ قَالَ: أوما عَشَّيْتِيهِمْ؟ قَالَتْ: أَبَوْا حَتَّى تَجِيءَ فَغَضِبَ وَقَالَ: لَا أَطْعَمُهُ أَبَدًا فَحَلَفَتِ الْمَرْأَةُ أَنْ لَا تَطْعَمَهُ وَحَلَفَ الْأَضْيَافُ أَنْ لَا يَطْعَمُوهُ. قَالَ أَبُو بَكْرٍ: كَانَ هَذَا مِنَ الشَّيْطَانِ فَدَعَا بِالطَّعَامِ فَأَكَلَ وَأَكَلُوا فَجَعَلُوا لَا يَرْفَعُونَ لُقْمَةً إِلَّا رَبَتْ مِنْ أَسْفَلِهَا أَكْثَرَ مِنْهَا. فَقَالَ لِامْرَأَتِهِ: يَا أُخْتَ بَنِي فِرَاسٍ مَا هَذَا؟ قَالَتْ: وَقُرَّةِ عَيْنِي إِنَّهَا الْآنَ لَأَكْثَرُ مِنْهَا قَبْلَ ذَلِكَ بِثَلَاثِ مِرَارٍ فَأَكَلُوا وَبَعَثَ بِهَا إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَذُكِرَ أَنَّهُ أَكَلَ مِنْهَا. مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ وَذُكِرَ حَدِيثُ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ: كُنَّا نَسْمَعُ تَسْبِيحَ الطَّعَام فِي «المعجزات»

متفق علیہ ، رواہ البخاری (3581) و مسلم (176 / 2057)، (5365) 0 حدیث ابن مسعود تقدم (5910) ۔
(مُتَّفق عَلَيْهِ)

وعن عبد الرحمن بن ابي بكر ان اصحاب الصفة كانوا اناسا فقراء وان النبي صلى الله عليه وسلم قال: «من كان عنده طعام اثنين فليذهب بثالث وان كان عنده طعام اربعة فليذهب بخامس او سادس» وان ابا بكر جاء بثلاثة فانطلق النبي صلى الله عليه وسلم بعشرة وان ابا بكر تعشى عند النبي صلى الله عليه وسلم ثم لبث حتى صليت العشاء ثم رجع فلبث حتى تعشى النبي صلى الله عليه وسلم فجاء بعد ما مضى من الليل ما شاء الله. قالت له امراته: وما حبسك عن اضيافك؟ قال: اوما عشيتيهم؟ قالت: ابوا حتى تجيء فغضب وقال: لا اطعمه ابدا فحلفت المراة ان لا تطعمه وحلف الاضياف ان لا يطعموه. قال ابو بكر: كان هذا من الشيطان فدعا بالطعام فاكل واكلوا فجعلوا لا يرفعون لقمة الا ربت من اسفلها اكثر منها. فقال لامراته: يا اخت بني فراس ما هذا؟ قالت: وقرة عيني انها الان لاكثر منها قبل ذلك بثلاث مرار فاكلوا وبعث بها الى النبي صلى الله عليه وسلم فذكر انه اكل منها. متفق عليه وذكر حديث عبد الله بن مسعود: كنا نسمع تسبيح الطعام في «المعجزات» متفق علیہ ، رواہ البخاری (3581) و مسلم (176 / 2057)، (5365) 0 حدیث ابن مسعود تقدم (5910) ۔ (متفق عليه)

ব্যাখ্যা: আসহাবে সুফফাহ্ হলেন দরিদ্র মানুষ। যারা ছিলেন আল্লাহর রাসূল (সা.) -এর সাহাবী। আবূ নু’আয়ম তার “হিলইয়াতুল আওলিয়া” কিতাবে তাদের মধ্য থেকে প্রসিদ্ধ কতিপয় সাহাবীর নাম উল্লেখ করেছেন, তাঁরা হলেন- আবূ যর গিফারী (রাঃ), ‘আম্মার ইবনু ইয়াসির (রাঃ), সালমান আল ফারসী (রাঃ), সুহায়ব (রাঃ), বিলাল (রাঃ), আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ), খব্বাব ইবনুল আরাত (রাঃ), হুযায়ফাহ্ ইবনুল ইয়ামান (রাঃ), আবূ সাঈদ আল খুদরী (রাঃ), বিশর ইবনুল খসাসিয়্যাহ্ (রাঃ), আবূ মু'আবিয়াহ্ (রাঃ) যিনি রাসূল (সা.) -এর মুক্তদাস ছিলেন, এছাড়াও আরো অনেকে ছিলেন। আর তাদের ব্যাপারে নাযিল হয়োছিল -
(وَ اصۡبِرۡ نَفۡسَکَ مَعَ الَّذِیۡنَ یَدۡعُوۡنَ رَبَّهُمۡ بِالۡغَدٰوۃِ وَ الۡعَشِیِّ یُرِیۡدُوۡنَ وَجۡهَهٗ) “আর আপনি তাদের সাথে ধৈর্য ধরে থাকুন যারা তাদের রবকে সকাল-সন্ধ্যায় ডাকে, আর তারা তার (আল্লাহর) সন্তুষ্ট চায়”- (সূরাহ্ আল কাহফ ১৮: ২৮)।
আর আসহাবে সুফফাগণ মাসজিদে অবস্থান করত যার ছাদ ছিল খেজুরের পাতার। এই দরিদ্র সাহাবীগণ সেখানেই তাদের থাকার জায়গা ও রাত কাটানোর জায়গা পেয়েছিল। অতএব তাদেরকে তার সাথেই সম্পর্কিত করা হয়। আর যখন ভিন্ন শহর থেকে কোন লোকে আগমন করত, আর সেখানে তার কোন পরিচিত লোক থাকত, তাহলে সে ব্যক্তি তার সেই পরিচিতের বাসায় উঠত। আর যদি তার পরিচিত কোন লোক না থাকত তবে সে সুফফার মেহমান হত। (মিরকাতুল মাফাতীহ)

আবূ বাকর (রাঃ) নবী (সা.) -এর নিকট রাতের খাবার খেয়েছিলেন। অর্থাৎ তিনি নবী (সা.) -এর সাথে রাতের খাবার খেয়েছিলেন। অথবা তাঁর মেহমানের সাথে রাতের খাবার খেয়েছিলেন, অথবা নবী (সা.) -এর বাড়ীতে আবূ বাকর (রাঃ) -এর মেয়ে ‘আয়িশাহ্ (রঃ) -এর কাছে একাকী খেয়েছিলেন।
(وَقُرَّةِ عَيْنِي) অর্থ- আমার চক্ষু শীতলকারীর শপথ! এ বাক্যে উম্মু রূমান (রাঃ)-এর কসম করার কারণ হলো, তিনি আবূ বাকর (রাঃ) -এর কারণে যে বরকতের কারামাত লক্ষ্য করলেন তার কারণে কসম করলেন। কেউ কেউ বলেন, তিনি এটা দিয়ে নবী (সা.) -কে বুঝিয়েছিলেন। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৯: চারিত্রিক গুণাবলি ও মর্যাদাসমূহ (كتاب الْفَضَائِل وَالشَّمَائِل)