৫৯৪৩

পরিচ্ছেদঃ তৃতীয় অনুচ্ছেদ - মু'জিযার বর্ণনা

৫৯৪৩-[৭৬] হিযাম ইবনু হিশাম তাঁর পিতার মাধ্যমে, তিনি তাঁর দাদা উম্মু মা’বাদ-এর ভাই হুবায়শ ইবনু খালিদ হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) যখন মক্কাহ্ হতে বহিস্কৃত হলেন, তখন তিনি মদীনার দিকে হিজরত করলেন। তাঁর সাথে ছিলেন আবূ বকর সিদ্দীক (রাঃ) আবূ বকর সিদ্দিক (রাঃ) এর আযাদকৃত দাস ’আমির ইবনু ফুহায়রাহ্ এবং পথপ্রদর্শক ’আবদুল্লাহ আল লায়সী। পথ অতিক্রমকালে তাঁরা উম্মু মা’বাদ (রাঃ) হতে মাংস এবং খেজুর ক্রয় করতে চাইলেন, কিন্তু তার কাছে এর কিছুই পাননি। মূলত সে সময় লোকেরা অনাহার ও দুর্ভিক্ষে নিমজ্জিত ছিল। এমতাবস্থায় রাসূলুল্লাহ (সা.) তাঁবুর এক পার্শ্বের একটি বকরি দেখতে পেলেন। তিনি প্রশ্ন কররেন, হে উম্মু মা’বাদ! এ বকরিটির কি হয়েছে? সে বলল, এটা এতই দুর্বল যে, দলের বকরিগুলোর সাথে যাওয়ার মতো ক্ষমতা নেই। তিনি (সা.) প্রশ্ন করলেন, এতে কি দুধ আছে? উম্মু মা’বাদ (রাঃ) বলল, সে নিজেই বিপদগ্রস্তা; অতএব দুধ দেবে কিভাবে? তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, তুমি কি আমাকে এ অনুমতি দেবে যে, আমি তার দুধ দোহন করি? উম্মু মা’বাদ (রাঃ) আগ্রহের সাথে বলল, আমার পিতামাতা আপনার ওপর উৎসর্গ হোক! আপনি যদি তার স্তনে দুধ দেখতে পান, তাহলে তা দোহন করুন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সা.) বকরিটিকে কাছে আনলেন, তারপর বকরিটির স্তনে হাত বুলালেন এবং বিসমিল্লা-হ পড়ে উম্মু মা’বাদ-এর জন্য তার বকরির বিষয়ে (বরকতের) দুআ করলেন। তখন বকরিটি দোহনের জন্য নিজের রান দুটি প্রশস্ত করে রাসূল (সা.) -এর সামনে দাঁড়িয়ে জাবর কাটতে লাগল। এদিকে দুধ দোহনের জন্য নবী (সা.) - এত বড় একটি পাত্র চাইলেন, যা দ্বারা একদল লোক তুষ্টির সাথে পান করতে পারে। প্রবাহিত ঢলের মতো তিনি তাতে দুধ দোহন করলেন, এমনকি তার উপর ফেনাও জমে গেল। অতঃপর তিনি উম্মু মা’বাদ-কে পান করতে দিলেন। সে তুষ্ট হয়ে পান করল। পরে তিনি (সা.) সাথিদেরকে পান করালেন, তারাও পরিতৃপ্তি লাভ করলেন এবং সকলের শেষে রাসূলুল্লাহ (সা.) নিজে পান করলেন।
এর কিছুক্ষণ পরেই রাসূলুল্লাহ (সা.) - দ্বিতীয়বার দোহন করলেন, এমনকি সেই পাত্রটি এবারও দুধে পরিপূর্ণ হয়ে গেল। অতঃপর তিনি সেই দুধ উম্মু মা’বাদ-এর কাছে রেখে দিলেন। (যেন তার স্বামীও নবী (সা.) -এর মু’জিযাকে প্রত্যক্ষ করতে পারে) এবং উম্মু মা’বাদ-এর তরফ হতে ইসলামের বায়’আত গ্রহণ করে তাঁরা সামনের দিকে যাত্রা করলেন।
(শারহুস সুন্নাহ; আর ইবনু আবদুল বার ইস্তী’আব গ্রন্থে এবং ইবনু জাওযী আল-ওয়াফা কিতাবে বর্ণনা করেছেন এবং অত্র হাদীসটির মধ্যে আরো কিছু ঘটনা রয়েছে)

اَلْفصْلُ الثَّالِثُ (بَاب فِي المعجزا)

وَقد يرقى إِلَى الْحسن بِتَعَدُّد طرقه) وَعَن حَازِم بْنِ هِشَامٍ عَنْ أَبِيهِ عَنْ جَدِّهِ حُبَيْشِ بن خَالِد - وَهُوَ أَخُو أمِّ مَعْبَد - أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حِينَ أُخْرِجَ مِنْ مَكَّةَ خَرَجَ مُهَاجِرًا إِلَى الْمَدِينَةِ هُوَ وَأَبُو بَكْرٍ وَمَوْلَى أَبِي بَكْرٍ عَامِرُ بْنُ فُهَيْرَةَ وَدَلِيلُهُمَا عَبْدُ اللَّهِ اللَّيْثِي مَرُّوا عَلَى خَيْمَتَيْ أُمِّ مَعْبَدٍ فَسَأَلُوهَا لَحْمًا وَتَمْرًا لِيَشْتَرُوا مِنْهَا فَلَمْ يُصِيبُوا عِنْدَهَا شَيْئًا من ذَلِك وَكَانَ الْقَوْمُ مُرْمِلِينَ مُسْنِتِينَ فَنَظَرَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَى شَاةٍ فِي كِسْرِ الْخَيْمَةِ فَقَالَ: «مَا هَذِهِ الشَّاةُ يَا أُمَّ معبد؟» قَالَتْ: شَاةٌ خَلَّفَهَا الْجَهْدُ عَنِ الْغَنَمِ. قَالَ: «هَلْ بِهَا مِنْ لَبَنٍ؟» قَالَتْ: هِيَ أَجْهَدُ مِنْ ذَلِكَ. قَالَ: «أَتَأْذَنِينَ لِي أَنْ أَحْلِبَهَا؟» قَالَتْ: بِأَبِي أَنْتَ وَأُمِّي إِنْ رَأَيْتَ بِهَا حَلباً فاحلبها. فَدَعَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَمَسَحَ بِيَدِهِ ضَرْعَهَا وَسَمَّى اللَّهَ تَعَالَى وَدَعَا لَهَا فِي شَاتِهَا فتفاجت عَلَيْهِ وَردت وَاجْتَرَّتْ فَدَعَا بِإِنَاءٍ يُرْبِضُ الرَّهْطَ فَحَلَبَ فِيهِ ثجَّاً حَتَّى علاهُ الْبَهَاءُ ثُمَّ سَقَاهَا حَتَّى رَوِيَتْ وَسَقَى أَصْحَابَهُ حَتَّى رَوُوا ثُمَّ شَرِبَ آخِرَهُمْ ثُمَّ حَلَبَ فِيهِ ثَانِيًا بَعْدَ بَدْءٍ حَتَّى مَلَأَ الْإِنَاءَ ثُمَّ غَادَرَهُ عِنْدَهَا وَبَايَعَهَا وَارْتَحَلُوا عَنْهَا. رَوَاهُ فِي «شَرْحِ السُّنَّةِ» وَابْنُ عَبْدِ الْبَرِّ فِي «الِاسْتِيعَابِ» وَابْنُ الْجَوْزِيِّ فِي كِتَابِ «الْوَفَاءِ» وَفِي الحَدِيث قصَّةٌ

حسن ، رواہ البغوی فی شرح السنۃ (13 / 261 ح 3704) و ابن عبدالبر فی الاستیعاب (4 / 495 ۔ 498 مع الاصابۃ) [و صححہ الحاکم (3 / 9 ، 10 و وافقہ الذھبی] * و للحدیث شواھد

وقد يرقى الى الحسن بتعدد طرقه) وعن حازم بن هشام عن ابيه عن جده حبيش بن خالد - وهو اخو ام معبد - ان رسول الله صلى الله عليه وسلم حين اخرج من مكة خرج مهاجرا الى المدينة هو وابو بكر ومولى ابي بكر عامر بن فهيرة ودليلهما عبد الله الليثي مروا على خيمتي ام معبد فسالوها لحما وتمرا ليشتروا منها فلم يصيبوا عندها شيىا من ذلك وكان القوم مرملين مسنتين فنظر رسول الله صلى الله عليه وسلم الى شاة في كسر الخيمة فقال: «ما هذه الشاة يا ام معبد؟» قالت: شاة خلفها الجهد عن الغنم. قال: «هل بها من لبن؟» قالت: هي اجهد من ذلك. قال: «اتاذنين لي ان احلبها؟» قالت: بابي انت وامي ان رايت بها حلبا فاحلبها. فدعا رسول الله صلى الله عليه وسلم فمسح بيده ضرعها وسمى الله تعالى ودعا لها في شاتها فتفاجت عليه وردت واجترت فدعا باناء يربض الرهط فحلب فيه ثجا حتى علاه البهاء ثم سقاها حتى رويت وسقى اصحابه حتى رووا ثم شرب اخرهم ثم حلب فيه ثانيا بعد بدء حتى ملا الاناء ثم غادره عندها وبايعها وارتحلوا عنها. رواه في «شرح السنة» وابن عبد البر في «الاستيعاب» وابن الجوزي في كتاب «الوفاء» وفي الحديث قصة حسن ، رواہ البغوی فی شرح السنۃ (13 / 261 ح 3704) و ابن عبدالبر فی الاستیعاب (4 / 495 ۔ 498 مع الاصابۃ) [و صححہ الحاکم (3 / 9 ، 10 و وافقہ الذھبی] * و للحدیث شواھد

ব্যাখ্যা: উম্মু মা'বাদ এক-এর আসল নাম ‘আতিকাহ্ বিনতু খালিদ আল খুযাইয়্যাহ্। রাসূল (সা.) হিজরতকালীন সময়ে তিনি ইসলামের সুশীতল ছায়ায় আশ্রয় গ্রহণ করেন। তবে কথিত আছে, তিনি মদীনায় গিয়ে ইসলাম গ্রহণ করেন। (মিরকাতুল মাফাতীহ)
(وَفِي الحَدِيث قصَّةٌ) “অত্র হাদীসের মধ্যে আরো কিছু ঘটনা আছে। আর তা হলো, আর যখন রাসূল (সা.) উম্মু মা'বাদ -এর তাবু অতিক্রম করে সামনে অগ্রসর হলেন এবং উম্মু মা'বাদ (রাঃ) তাঁর স্বামী আবূ মা'বাদ (রাঃ)-কে সম্পূর্ণ ঘটনা অত্যধিক সুন্দর বাচনভঙ্গিতে রাসূল (সা.) -এর মর্যাদা ও গুণাগুণসহ বর্ণনা করে বলেন, এক মহান বরকতপূর্ণ ব্যক্তি আমাদের তাঁবুতে এসেছিলেন এবং এ দুধ তাঁর আগমনেরই নিদর্শন। আবূ মা'বাদ (রাঃ) এসব শুনে বলেন, নিশ্চয় ঐ মহান ব্যক্তি কুরায়শ বংশীয় তিনিই যার অনেক গুণাবলির কথা আমি মক্কায় শুনেছি। যদি আমি যেতে সক্ষম হই তাহলে আল্লাহর শপথ! আমি ঐ মহান ব্যক্তির দরবারে উপস্থিত হওয়ার এবং সঙ্গত্ব লাভের ইচ্ছা পোষণ করেছি।
অন্য এক বর্ণনায় আছে যে, রাসূল (সা.) যখন হিজরতের জন্য আবূ বাকর (রাঃ) -কে সাথে নিয়ে মদীনার পথে রওয়ানা হন এবং মক্কাবাসীরা রাসূল (সা.) -এর গতিবিধি ও গন্তব্যস্থল সম্পর্কে অবগত হতে বিফল হয় তখন এক মুসলিম জিন্ আবূ কুবায়স পাহাড়ে আরোহণ করে সেখানে উচ্চৈঃস্বরে কিছু কবিতা আবৃত্তি করতে লাগল আর মক্কাবাসীরা বিস্ময়ের সাথে তা শ্রবণ করল। সে আওয়াজ তাদের কানে পরিষ্কারভাবে আসছিল কিন্তু উক্ত আওয়াজ যেদিক থেকে আসছিল সেদিকে কিছুই দেখা যাচ্ছিল না। উক্ত কবিতাগুলোর মধ্য হতে দু’টি কবিতা হলো এই –

جزي الله رب الناس خير جزائه * رفيقين حلا خيمتى أم معبد
هما نزلا بالهدى واهتديت به * فقد فازمن امسى رفيق محمد

অর্থাৎ সকল মানুষের রব আল্লাহ তা'আলা ঐ দুই সাথিকে উত্তম প্রতিদান দান করেছেন যারা উম্মু মা'বাদ-এর তাবুতে অবতরণ করেছেন। তাঁরা দুজন হিদায়াতের আলোকরশ্মি নিয়ে অবতরণ করেছেন আর উম্মু মা'বাদ সেই হিদায়াতপ্রাপ্ত হয়েছেন। ঐ সকল ব্যক্তিরাই সফলকাম হয়েছেন যাঁরা মুহাম্মাদ (সা.) -এর সাথি হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করতে পেরেছেন। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৯: চারিত্রিক গুণাবলি ও মর্যাদাসমূহ (كتاب الْفَضَائِل وَالشَّمَائِل)