৫৯০৮

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - মু'জিযার বর্ণনা

৫৯০৮-[৪১] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন আবূ ত্বলহাহ্ (রাঃ) উম্মু সুলায়ম (রাঃ)-কে বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর কণ্ঠস্বর খুব দুর্বল শুনতে পেলাম, তাতে আমি অনুভব করলাম, তিনি ক্ষুধার্ত। তোমরা কাছে (খাওয়ার) কিছু আছে কি? উম্মু সুলায়ম বা বললেন, হ্যাঁ; আছে। এই বলে তিনি কিছু যবের রুটি বের করলেন। অতঃপর ওড়নাটি বের করে তার একাংশ দিয়ে রুটিগুলো বেঁধে গোপনে আমার হাতে দিলেন এবং ওড়নার অপরাংশ আমার দেহে জড়িয়ে দিলেন। তারপর আমাকে রাসূলুল্লাহ (সা.) - এর কাছে পাঠিয়ে দিলেন। [আনাস (রাঃ) বলেন] আমি গিয়ে রাসূলুল্লাহ (সা.) -কে মসজিদে পেলাম। (খন্দকের যুদ্ধের সময় সালাতের জন্য অস্থায়ীভাবে যে জায়গা নির্ধারণ করেছিলেন) তার সাথে আরো কিছু লোক ছিল। আমি সালাম দিয়ে তাদের সামনে দাঁড়ালাম। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাকে প্রশ্ন করলেন, তোমাকে কি আবূ তুলহাহ পাঠিয়েছে? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি (সা.) আরো প্রশ্ন করলেন, খাদ্য নিয়ে পাঠিয়েছে? আমি বললাম, হ্যাঁ। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) তাঁর সাহাবী যাঁরা সেখানে ছিলেন, সকলকে ডেকে বললেন, তোমরা উঠ এবং চল! (এ বলে সমস্ত লোকজনসহ) তিনি রওয়ানা হলেন আর আমিও তাদের সামনে (আবূ ত্বলহাহ্’র বাড়ির দিকে) চলতে লাগলাম এবং আবূ ত্বলহাহ্’র কাছে এসে তাঁকে [রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর আগমন বার্তা] জানালাম। তখন আবূ ত্বলহাহ্ (রাঃ) বললেন, হে উম্মু সুলায়ম! রাসূলুল্লাহ (সা.) লোকজনসহ এসেছেন। অথচ আমাদের কাছে এ পরিমাণ খাদ্য-সামগ্রী নেই যা আমরা তাদের সকলকে খেতে দিতে পারি। তখন উম্মু সুলায়ম (রাঃ) বললেন, আল্লাহ তা’আলা ও তাঁর রাসূল (সবকিছু) ভালো জানেন। অতঃপর আবূ তুলহাহ্ (রাঃ) গিয়ে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সাথে সাক্ষাৎ করলেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) ঘরের দিকে এগিয়ে আসলেন এবং আবূ ত্বলহাহও তার সাথে ছিলেন। তারপর রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, হে উম্মু সুলায়ম! তোমার কাছে যা কিছু আছে আমার কাছে নিয়ে আসে। তখন তিনি ঐ রুটিগুলো এনে উপস্থিত করলেন। এরপর রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর নির্দেশে রুটিগুলো টুকরা টুকরা করা হলো; আর উম্মু সুলায়ম (রাঃ) ঘি এর পাত্র হতে ঘি বের করে তাকে তরকারি হিসেবে পেশ করলেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সা.) আল্লাহর ইচ্ছা অনুসারে কিছু পাঠ করলেন। তারপর বললেন, দশজনকে আসতে বল। তাদেরকে আসতে বলা হলো। তাঁরা সকলে খেয়ে তুষ্ট হয়ে বের হয়ে গেলেন। তারপর বললেন, আরো দশজনকে আসতে বল, তারপর আরো দশজন, এভাবে সকলে তুষ্ট হয়ে খানা খেলেন। তাদের সংখ্যা সত্তর অথবা আশিজন ছিল। (বুখারী ও মুসলিম)

সহীহ: মুসলিম-এর এক বর্ণনায় আছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, দশজনকে আসার জন্য অনুমতি দাও। তাঁরা ঘরের ভিতরে প্রবেশ করলেন। অতঃপর তিনি বললেন, তোমরা বিসমিল্লা-হ পড়ে খাও। তাঁরা খেলেন এবং এভাবে (দশ দশজন করে) আশিজন লোক খাদ্য খেলেন। অতঃপর নবী (সা.) গৃহবাসীরা সকলে খেলেন এবং কিছু খাদ্য অবশিষ্টও রয়ে গেল।
সহীহুল বুখারীর অপর এক বর্ণনাতে আছে- তিনি বললেন, দশজনকে আমার কাছে উপস্থিত কর। এভাবে (দশ দশজন করে) চল্লিশজনকে গণনা করলেন। অতঃপর নবী (সা.) নিজে খেলেন। আনাস (রাঃ) বলেন, আমি দেখতে লাগলাম, খাদ্যের মধ্যে কিছু কম হয়েছে কিনা?
সহীহ মুসলিম-এর অপর এক বর্ণনাতে আছে- সকলের খাওয়ার শেষে রাসূলুল্লাহ (সা.) অবশিষ্ট খাদ্যগুলো একত্রিত করলেন, তারপর তাতে বরকতের জন্য দু’আ করলেন। তখন তা ঐ পরিমাণ হয়ে গেল যে পরিমাণ আগে ছিল। অতঃপর তিনি (সা.) বললেন, নাও, তা তোমাদের জন্য।

الفصل الاول (بَاب فِي المعجزا)

وَعَن أنسٍ قَالَ: قَالَ أَبُو طَلْحَةَ لِأُمِّ سُلَيْمٍ لَقَدْ سَمِعْتُ صَوْتَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ضَعِيفًا أَعْرِفُ فِيهِ الْجُوعَ فَهَلْ عِنْدَكِ من شَيْء؟ فَأَخْرَجَتْ أَقْرَاصًا مِنْ شَعِيرٍ ثُمَّ أَخْرَجَتْ خِمَارًا لَهَا فَلَفَّتِ الْخُبْزَ بِبَعْضِهِ ثُمَّ دَسَّتْهُ تَحْتَ يَدِي وَلَاثَتْنِي بِبَعْضِهِ ثُمَّ أَرْسَلَتْنِي إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ فَذَهَبْتُ بِهِ فَوَجَدْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي الْمَسْجِدِ وَمَعَهُ النَّاسُ فَقُمْتُ عَلَيْهِمْ فَقَالَ لِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَرْسَلَكَ أَبُو طَلْحَةَ؟» قُلْتُ نَعَمْ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِمَنْ مَعَهُ قُومُوا فَانْطَلَقَ وَانْطَلَقْتُ بَيْنَ أَيْدِيهِمْ حَتَّى جِئْت أَبَا طَلْحَة فَقَالَ أَبُو طَلْحَةَ يَا أُمَّ سُلَيْمٍ قَدْ جَاءَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِالنَّاسِ وَلَيْسَ عِنْدَنَا مَا نُطْعِمُهُمْ فَقَالَتْ اللَّهُ وَرَسُوله أعلم قَالَ فَانْطَلَقَ أَبُو طَلْحَةَ حَتَّى لَقِيَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأَقْبَلَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَبُو طَلْحَةَ مَعَهُ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ هَلُمِّي يَا أُمَّ سُلَيْمٍ مَا عِنْدَكِ فَأَتَتْ بذلك الْخبز فَأمر بِهِ ففت وعصرت أم سليم عكة لَهَا فأدمته ثمَّ قَالَ فِيهِ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا شَاءَ اللَّهُ أَنْ يَقُولَ ثُمَّ قَالَ ائْذَنْ لِعَشَرَةٍ فَأَذِنَ لَهُمْ فَأَكَلُوا حَتَّى شَبِعُوا ثُمَّ خَرَجُوا ثُمَّ قَالَ ائْذَنْ لِعَشَرَةٍ فَأَذِنَ لَهُمْ فَأَكَلُوا حَتَّى شَبِعُوا ثُمَّ خَرَجُوا ثُمَّ قَالَ ائْذَنْ لِعَشَرَةٍ فَأَذِنَ لَهُمْ فَأَكَلُوا حَتَّى شَبِعُوا ثمَّ خَرجُوا ثمَّ أذن لِعَشَرَةٍ فَأَكَلَ الْقَوْمُ كُلُّهُمْ وَشَبِعُوا وَالْقَوْمُ سَبْعُونَ أَوْ ثَمَانُونَ رَجُلًا. مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ وَفِي رِوَايَةٍ لمُسلم أَنه قَالَ: «أذن لِعَشَرَةٍ» فَدَخَلُوا فَقَالَ: «كُلُوا وَسَمُّوا اللَّهَ» . فَأَكَلُوا حَتَّى فَعَلَ ذَلِكَ بِثَمَانِينَ رَجُلًا ثُمَّ أَكَلَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَهْلُ الْبَيْتِ وَتَرَكَ سُؤْرًا وَفِي رِوَايَةٍ لِلْبُخَارِيِّ قَالَ: «أَدْخِلْ عَلَيَّ عَشَرَةً» . حَتَّى عَدَّ أَرْبَعِينَ ثُمَّ أَكَلَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَجَعَلْتُ أَنْظُرُ هَلْ نَقَصَ مِنْهَا شَيْءٌ؟ وَفِي رِوَايَةٍ لِمُسْلِمٍ: ثُمَّ أَخَذَ مَا بَقِيَ فَجَمَعَهُ ثُمَّ دَعَا فِيهِ با لبركة فَعَاد كَمَا كَانَ فَقَالَ: «دونكم هَذَا»

متفق علیہ ، رواہ البخاری (3578) و مسلم (142 / 2040) الروایۃ الثانیۃ ، رواھا مسلم (143 / 2040) و الروایۃ الثالثۃ ، رواھا البخاری (5450) و الروایۃ الرابعۃ ، رواھا مسلم (143 / 2040)، (5316) ۔
(صَحِيح)

وعن انس قال: قال ابو طلحة لام سليم لقد سمعت صوت رسول الله صلى الله عليه وسلم ضعيفا اعرف فيه الجوع فهل عندك من شيء؟ فاخرجت اقراصا من شعير ثم اخرجت خمارا لها فلفت الخبز ببعضه ثم دسته تحت يدي ولاثتني ببعضه ثم ارسلتني الى رسول الله صلى الله عليه وسلم قال فذهبت به فوجدت رسول الله صلى الله عليه وسلم في المسجد ومعه الناس فقمت عليهم فقال لي رسول الله صلى الله عليه وسلم: «ارسلك ابو طلحة؟» قلت نعم فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم لمن معه قوموا فانطلق وانطلقت بين ايديهم حتى جىت ابا طلحة فقال ابو طلحة يا ام سليم قد جاء رسول الله صلى الله عليه وسلم بالناس وليس عندنا ما نطعمهم فقالت الله ورسوله اعلم قال فانطلق ابو طلحة حتى لقي رسول الله صلى الله عليه وسلم فاقبل رسول الله صلى الله عليه وسلم وابو طلحة معه فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم هلمي يا ام سليم ما عندك فاتت بذلك الخبز فامر به ففت وعصرت ام سليم عكة لها فادمته ثم قال فيه رسول الله صلى الله عليه وسلم ما شاء الله ان يقول ثم قال اىذن لعشرة فاذن لهم فاكلوا حتى شبعوا ثم خرجوا ثم قال اىذن لعشرة فاذن لهم فاكلوا حتى شبعوا ثم خرجوا ثم قال اىذن لعشرة فاذن لهم فاكلوا حتى شبعوا ثم خرجوا ثم اذن لعشرة فاكل القوم كلهم وشبعوا والقوم سبعون او ثمانون رجلا. متفق عليه وفي رواية لمسلم انه قال: «اذن لعشرة» فدخلوا فقال: «كلوا وسموا الله» . فاكلوا حتى فعل ذلك بثمانين رجلا ثم اكل النبي صلى الله عليه وسلم واهل البيت وترك سورا وفي رواية للبخاري قال: «ادخل علي عشرة» . حتى عد اربعين ثم اكل النبي صلى الله عليه وسلم فجعلت انظر هل نقص منها شيء؟ وفي رواية لمسلم: ثم اخذ ما بقي فجمعه ثم دعا فيه با لبركة فعاد كما كان فقال: «دونكم هذا» متفق علیہ ، رواہ البخاری (3578) و مسلم (142 / 2040) الروایۃ الثانیۃ ، رواھا مسلم (143 / 2040) و الروایۃ الثالثۃ ، رواھا البخاری (5450) و الروایۃ الرابعۃ ، رواھا مسلم (143 / 2040)، (5316) ۔ (صحيح)

ব্যাখ্যা: (فَوَجَدْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي الْمَسْجِدِ) অর্থাৎ তখন আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) -কে মসজিদে পেলাম। ইবনু হাজার আল আসক্বালানী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এখানে মসজিদ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো ঐ স্থান, যাকে আল্লাহর রাসূল (সা.) খন্দক যুদ্ধের সময় কাফির কর্তৃক অবরুদ্ধকালীন সময়ে সালাতের জন্য নির্ধারণ করে নিয়েছিলেন। (মিরকাতুল মাফাতীহ, ফাতহুল বারী হা. ৩৫৭৮)

উক্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় ফাতহুল বারীতে একাধিক হাদীস নিয়ে আসা হয়েছে যেমন সেগুলোর মধ্য থেকে একটি যা সহীহ মুসলিমে আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূল (সা.) -এর কাছে এসে দেখতে পেলাম যে, তিনি সাহাবীদের সাথে বসে কথা বলছেন। আর দেখলাম যে, তিনি তার পেটে পট্টি বেঁধেছেন। তারপর আমি কিছু সাহাবীকে তার পট্টি বাঁধার কারণ জিজ্ঞেস করলাম। তারা বললেন, ক্ষুধার কারণে তিনি পট্টি বেঁধেছেন। অতঃপর আমি আবূ ত্বলহা-এর কাছে গিয়ে বিষয়টি জানালাম। তখন তিনি উম্মু সুলায়ম-এর কাছে গিয়ে বললেন, তোমার কাছে কি খাবারের কিছু আছে। তারপর হাদীসের বাকী অংশ বর্ণিত হয়েছে। পরে উম্মু সুলায়ম (রাঃ) রুটি প্রস্তুত করে আনাস (রাঃ)-এর মাধ্যমে রাসূল (সা.) -এর কাছে পাঠালেন। রুটির পরিমাণ ছিল একেবারেই অল্প। তাই যখন আনাস (রাঃ) রাসূল (সা.) -এর কাছে আসলেন তখন তার কাছে দেখলেন অনেক সাহাবী রয়েছে। আর রুটি অল্প পরিমাণ রয়েছে। তাই এই অল্প পরিমাণ রুটি রাসূল (সা.) -এর কাছে সরাসরি না দিয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন। তারপর তিনি তাকে দেখে জিজ্ঞেস করলেন এবং তার সাথে তাঁর সাহাবীদেরকে নিয়ে রওয়ানা দিলেন। তারা যখন আবূ ত্বলহাহ-এর কাছে গিয়ে পৌছল তখন তাদেরকে দেখে তিনি উম্মু সুলায়ম- কে বললেন, আল্লাহর রাসূল (সা.) অনেক লোক নিয়ে এসেছেন। আমাদের কাছে তো খাবার একেবারেই অল্প। তখন তার স্ত্রী উম্মু সুলায়ম (রাঃ) বললেন, আল্লাহও তাঁর রাসূলই ভালো জানেন।
ইমাম নবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এ কথার দ্বারা বুঝা যায় যে, উম্মু সুলায়ম-এর মহৎ গুণ রয়েছে। যার কারণে তিনি তার বিবেক বুদ্ধির উপর রাসূল (সা.)-এর কর্মকাণ্ডকেই প্রাধান্য দিলেন।
যেহেতু রাসূল (সা.) জানেন যে, খাবারের পরিমাণ অল্প, তারপরেও তিনি এত লোক নিয়ে এসেছেন। নিশ্চয় তাতে কোন কল্যাণ রয়েছে। যদি কোন কল্যাণ না থাকত তাহলে তিনি তা করতেন না।
(ائْذَنْ لِعَشَرَةٍ) অর্থাৎ দশজনকে অনুমতি দাও।
মিরকাত প্রণেতা বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) দশজনকে অনুমতি দিলেন। মিরকাত প্রণেতা আরো বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) দশ দশ জন করে প্রবেশ করে খেয়ে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছেন। এক সাথে সবাইকে প্রবেশ করে খাওয়ার অনুমতি দেননি। এর কয়েকটি কারণ হতে পারে। যেমন
(ক) ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, যে পাত্রে খাবার রাখা হয়েছিল তা ছিল ছোট। যেখানে দশজনের বেশি একসাথে খেতে বসলে সবারই কষ্ট হবে। তাই দশ জন করে প্রবেশ করে খেতে বলেছেন।
(খ) কেউ কেউ বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) সবাইকে এক সাথে প্রবেশ করে খাওয়ার অনুমতি দেননি। কারণ খাবার ছিল পরিমাণে কম। তাই যদি তারা সবাই একসাথে প্রবেশ করে তাহলে সেই অল্প খাবারের ব্যাপারে তাদের ধারণা হবে যে, এটি আমাদের জন্য যথেষ্ট হবে না। তাই সকলেরই সেই অল্প খাবারের প্রতি লোভ তৈরি হবে। আর তাতে খাবারের বরকত কমে যাবে।
(গ) এটিও কারণ হতে পারে যে, তারা সবাই একসাথে প্রবেশ করে যখন অল্প খাবার দেখবে তখন একে অপরকে প্রাধান্য দিবে এবং নিজে অল্প খাবে। আর এতে কেউ পরিতৃপ্ত হয়ে খেতে পারবে না। তখন প্রকৃত উদ্দেশ্য যে ক্ষুধা দূর করা তা অর্জিত হবে না।
(ঘ) কেউ কেউ বলেন, জায়গা সংকীর্ণ হওয়ার কারণে রাসূল (সা.) সবাইকে একসাথে প্রবেশ করার অনুমতি দেননি।
(وَالْقَوْمُ سَبْعُونَ أَوْ ثَمَانُونَ رَجُلًا) অর্থাৎ লোকজন ছিল সত্তর অথবা আশিজন।
ইবনু হাজার আল আসক্বালানী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এ হাদীসের রাবী সন্দেহ করে বলেছেন যে, লোকের সংখ্যা ছিল সত্তর জন অথবা আশিজন। কিন্তু অন্য হাদীসে দৃঢ়তার সাথে বলা হয়েছে যে, তাদের সংখ্যা ছিল আশিজন। আবার কোন কোন হাদীসে বলা হয়েছে তাদের সংখ্যা ছিল আশিজনের কিছু বেশি।
মিরকাত প্রণেতা বলেন, বাহ্যিকভাবে হাদীসের সংখ্যা নিয়ে বৈপরীত্য দেখা যাচ্ছে। তাই আমরা বলব যে, রাবীগণ দশক সংখ্যার আগে-পরের সংখ্যাগুলো বাদ দিয়ে বলেছেন। আর এভাবে সংখ্যা বলার রীতি রয়েছে। অতএব হাদীসগুলোর সংখ্যার মাঝে কোন বৈপরীত্য নেই।
কিন্তু ইমাম আহমাদ (রহিমাহুল্লাহ)-এর একটি বর্ণনায় রয়েছে যে, চল্লিশজন সাহাবী খেলেন। তারপরেও রুটি সেই পরিমাণই রয়ে গেল, যে পরিমাণ পূর্বে ছিল।
এ হাদীসের সাথে পূর্বের হাদীসগুলোর বৈপরীত্য খুব স্পষ্ট। কারণ এখানে বলা হয়েছে, চল্লিশজন আর পূর্বের হাদীসগুলোতে বলা হয়েছে আশি বা তার অধিক।
মিরকাত প্রণেতা বলেন, এখানে ঘটনাটি হয়েছে এমন যে, প্রথমে চল্লিশজন এসে খেয়ে গেছেন। তারপর বাকী চল্লিশজন এসেছেন। যারা প্রথম দলের পিছনে ছিলেন। অথবা নবী (সা.) আরো বাকী চল্লিশজনকে দাওয়াত দিয়ে নিয়ে এসেছেন।
(ثُمَّ دَعَا فِيهِ با لبركة فَعَاد كَمَا كَانَ) অর্থাৎ তারপর তিনি খাবারের বরকতের জন্য দু'আ করলেন। তখন খাবার সেই পূর্বের পরিমাণে চলে আসলো। তুরিবিশতী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এক হাদীসে রয়েছে আল্লাহর রাসূল (সা.) খাবারের শেষে অবশিষ্ট ঝুটা রেখে দিলেন। অন্য হাদীসে আছে যে, সাহাবী লক্ষ্য করে দেখলেন, সেই খাবার থেকে কিছু কমেছে কিনা?
এ বিষয়টি তিনভাবে হাদীসগুলোতে উল্লেখ করা হয়েছে। এই বৈপরীত্যপূর্ণ হাদীসগুলোর মাঝে মিরকাত প্রণেতা সমন্বয় সাধন করেছে এভাবে যে, যে হাদীসে বলা হয়েছে তিনি খাবারের শেষে উচ্ছিষ্ট ঝুটা রাখলেন, এর মানে তিনি খাওয়া শেষে ঝুটা রাখলেন। তারপর বরকতের দুআ করলেন। এর কারণে ঐ ঝুটাই পূর্বের পরিমাণ খাবারে পরিণত হলো। আর তখন সাহাবী দেখলেন যে, তার পরিমাণ আগের থেকে কমেছে কিনা? (মিরকাতুল মাফাতীহ, ফাতহুল বারী হা. ৩৫৭৮)।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৯: চারিত্রিক গুণাবলি ও মর্যাদাসমূহ (كتاب الْفَضَائِل وَالشَّمَائِل)