৫৯০২

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - মু'জিযার বর্ণনা

৫৯০২-[৩৫] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (সা.) -এর সময় একবার লোকেরা দুর্ভিক্ষে কবলিত হলো। এমতাবস্থায় একদিন নবী (সা.) - জুমুআর দিন খুৎবা দিচ্ছিলেন। তখন এক বেদুঈন দাঁড়িয়ে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! (বৃষ্টির অভাবে) ধনসম্পদ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে, পরিবার-পরিজন অনাহার থাকছে, তাই আল্লাহর কাছে আমাদের জন্য দু’আ করুন। তখনই তিনি (সা.) (দু’আর জন্য) দু’ হাত উঠালেন, অথচ সে সময় আকাশে কোন মেঘের টুকরা আমরা দেখতে পাইনি। ঐ সত্তার শপথ করে বলছি, যার হাতে আমার প্রাণ! তিনি (সা.) এখনও হাত নামাননি হঠাৎ পাহাড়ের মতো মেঘমালা ছুটে আসলো। অতঃপর তিনি (সা.) তখনো মিম্বার হতে নামেননি। আমি দেখতে পেলাম তাঁর দাড়ির উপর বৃষ্টির ফোঁটা পড়া শুরু হয়েছে। বর্ণনাকারী বলেন, সেদিন, তার পরের দিন, তার পরবর্তী দিন, এমনকি পরবর্তী জুমু’আহ্ অবধি একনাগাড়ে আমাদের উপর বর্ষণ হতে থাকল। অতঃপর উক্ত বেদুঈন কিংবা অন্য এক লোক দাড়িয়ে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! ঘরগুলো ভেঙ্গে পড়ছে, ধন-সম্পদসমূহ ডুবে গেছে। অতএব আল্লাহর কাছে আমাদের জন্য দু’আ করুন যেন বৃষ্টি বন্ধ হয়ে যায়। তখন তিনি (সা.) হাতদ্বয় উঠিয়ে বললেন, হে আল্লাহ! আমাদের ওপর নয়; বরং আমাদের পার্শ্ববর্তী এলাকায় বর্ষণ করুন। এই বলে তিনি (সা.) হাত দ্বারা আকাশের যেদিকে ইশারা করলেন সাথে সাথেই সেদিকের মেঘ কেটে গেল এবং অল্পক্ষণের মধ্যে সমগ্র মদীনাহ্ কুণ্ডলীর মতো একটি মেঘ-শূন্য স্থানে পরিণত হলো। আর উপত্যকার নালাসমূহ একাধারে এক মাস যাবৎ প্রবাহিত থাকল।
বর্ণনাকারী বলেন, তখন যেদিক হতে যে লোকই আসত, সে এ অত্যধিক বৃষ্টি বর্ষণের কথাই আলোচনা করত। অপর এক বর্ণনায় আছে- তখন আল্লাহর রাসূল (সা.) দু’আ করতে করতে বললেন, হে আল্লাহ! আমাদের ওপর নয়; বরং আমাদের আশপাশে। হে আল্লাহ। টিলার উপরে, পাহাড়ের গায়ে, উপত্যকা এলাকায় এবং বৃক্ষের পাদদেশে বর্ষণ করুন। বর্ণনাকারী বলেন, ফলে বৃষ্টি বন্ধ হয়ে গেল এবং আমরা রৌদ্রের মাঝে (মসজিদ হতে) ফিরে গেলাম। (বুখারী ও মুসলিম)

الفصل الاول (بَاب فِي المعجزا)

وَعَن أنسٍ قَالَ أَصَابَت النَّاس سنَةٌ عَلَى عَهْدِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَبَيْنَا النَّبِيُّ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسلم يخْطب فِي يَوْم جُمُعَة قَامَ أَعْرَابِيٌّ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ هَلَكَ الْمَالُ وَجَاعَ الْعِيَالُ فَادْعُ اللَّهَ لَنَا فَرَفَعَ يَدَيْهِ وَمَا نَرَى فِي السَّمَاءِ قَزَعَةً فَوَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ مَا وَضَعَهَا حَتَّى ثَارَ السَّحَابُ أَمْثَالَ الْجِبَالِ ثُمَّ لَمْ يَنْزِلْ عَنْ مِنْبَرِهِ حَتَّى رَأَيْت الْمَطَر يتحادر على لحيته صلى الله عَلَيْهِ وَسلم فمطرنا يَوْمنَا ذَلِك وَمن الْغَد وَبعد الْغَد وَالَّذِي يَلِيهِ حَتَّى الْجُمُعَةِ الْأُخْرَى وَقَامَ ذَلِكَ الْأَعْرَابِيُّ أَوْ قَالَ غَيْرُهُ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ تَهَدَّمَ الْبِنَاءُ وَغَرِقَ الْمَالُ فَادْعُ اللَّهَ لَنَا فَرَفَعَ يَدَيْهِ فَقَالَ اللَّهُمَّ حَوَالَيْنَا وَلَا عَلَيْنَا فَمَا يُشِيرُ بِيَدِهِ إِلَى نَاحِيَةٍ مِنَ السَّحَابِ إِلَّا انْفَرَجَتْ وَصَارَتِ الْمَدِينَةُ مِثْلَ الْجَوْبَةِ وَسَالَ الْوَادِي قَنَاةُ شَهْرًا وَلَمْ يَجِئْ أَحَدٌ مِنْ نَاحِيَةٍ إِلَّا حَدَّثَ بِالْجَوْدِ وَفِي رِوَايَةٍ قَالَ: «اللَّهُمَّ حَوَالَيْنَا وَلَا عَلَيْنَا اللَّهُمَّ عَلَى الْآكَامِ وَالظِّرَابِ وَبُطُونِ الْأَوْدِيَةِ وَمَنَابِتِ الشَّجَرِ» . قَالَ: فَأَقْلَعَتْ وَخَرَجْنَا نَمْشِي فِي الشّمسِ مُتَّفق عَلَيْهِ

متفق علیہ ، رواہ البخاری (933) و مسلم (8 ، 9 / 897)، (2078) ۔
(مُتَّفق عَلَيْهِ)

وعن انس قال اصابت الناس سنة على عهد النبي صلى الله عليه وسلم فبينا النبي صلى الله عليه وسلم يخطب في يوم جمعة قام اعرابي فقال يا رسول الله هلك المال وجاع العيال فادع الله لنا فرفع يديه وما نرى في السماء قزعة فوالذي نفسي بيده ما وضعها حتى ثار السحاب امثال الجبال ثم لم ينزل عن منبره حتى رايت المطر يتحادر على لحيته صلى الله عليه وسلم فمطرنا يومنا ذلك ومن الغد وبعد الغد والذي يليه حتى الجمعة الاخرى وقام ذلك الاعرابي او قال غيره فقال يا رسول الله تهدم البناء وغرق المال فادع الله لنا فرفع يديه فقال اللهم حوالينا ولا علينا فما يشير بيده الى ناحية من السحاب الا انفرجت وصارت المدينة مثل الجوبة وسال الوادي قناة شهرا ولم يجى احد من ناحية الا حدث بالجود وفي رواية قال: «اللهم حوالينا ولا علينا اللهم على الاكام والظراب وبطون الاودية ومنابت الشجر» . قال: فاقلعت وخرجنا نمشي في الشمس متفق عليه متفق علیہ ، رواہ البخاری (933) و مسلم (8 ، 9 / 897)، (2078) ۔ (متفق عليه)

ব্যাখ্যা: উক্ত হাদীসে উল্লেখিত (اللَّهُمَّ حَوَالَيْنَا وَلَا عَلَيْنَا) অর্থাৎ হে আল্লাহ! আমাদের আশেপাশে বর্ষণ করুন। আমাদের ওপর আর বর্ষণ করবেন না।
ইবনু হাজার আল আসক্বালানী (রহিমাহুল্লাহ) এর ব্যাখ্যায় বলেন যে, এ কথার অর্থ হলো। হে আল্লাহ! আপনি উদ্ভিদ উৎপন্ন হওয়ার জায়গায় বৃষ্টি বর্ষণ করুন। ঘর-বাড়ির উপর বর্ষণ করবেন না।
ত্বীবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এর অর্থ হলো, আপনি কৃষি জমিতে বর্ষণ করুন। ঘর-বাড়ির উপর বর্ষণ করবেন না।
(وَسَالَ الْوَادِي قَنَاةُ شَهْرًا) অর্থাৎ কনাহ্ উপত্যকায় দিয়ে একমাসের মতো বর্ষণ প্রবাহিত হলো। এখানে উল্লেখিত শব্দ (قَنَاةُ) এর পরিচয় নিয়ে মতানৈক্য রয়েছে। যেমন- কিরমানী বলেন, (قَنَاةُ) একটি জায়গার নাম।
কেউ কেউ বলেন, এটি হলো সেই উপত্যকার নাম যেখানে হামযাহ্ (রাঃ)-এর কবর রয়েছে। আবার কেউ কেউ বলেন, এটি হলো বর্শা পরিমাণ উঁচু একটি উপত্যকার নাম।
ইমাম নবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এ হাদীস থেকে প্রমাণিত হয় যে, যদি বৃষ্টি এতই বেশি হয় যে, তার কারণে মানুষদের ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে তাহলে সেই বৃষ্টি বন্ধ হওয়ার জন্য আল্লাহর কাছে দু'আ করা মুস্তাহাব। কিন্তু সেজন্য খোলা মাঠে সমবেত হয়ে একসাথে সালাত আদায় করা এবং দু'আ করা শারী'আতসম্মত নয়। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৯: চারিত্রিক গুণাবলি ও মর্যাদাসমূহ (كتاب الْفَضَائِل وَالشَّمَائِل)