৫৮৮৮

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - মু'জিযার বর্ণনা

৫৮৮৮-[২১] ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হুনায়নের যুদ্ধে আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর সাথে শরীক ছিলাম। যখন মুসলিমগণ ময়দান হতে পৃষ্ঠপ্রদর্শন করল। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) নিজের বাহন খচ্চরকে তাড়া দিয়ে কাফিরদের দিকে অগ্রসর হলেন। [বর্ণনাকারী ’আব্বাস (রাঃ) বলেন] আর আমি রাসূলুল্লাহ (সা.) - এর খচ্চরের লাগাম ধরে রেখেছিলাম এবং আমি তাঁকে সামনে বাড়তে বাধা দিচ্ছিলাম, যেন তা দ্রুত কাফিরদের দলের মধ্যে ঢুকে না পড়ে। আর আবূ সুফইয়ান ইবনু হারিস ধরে রেখেছিলেন রাসূলুল্লাহ (সা.) -এর বাহনের গদি। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাকে লক্ষ্য করে বললেন, হে আব্বাস! সামুরাহ গাছের নিচে বায়’আতকারীদেরকে আহ্বান করুন। আব্বাস (রাঃ) ছিলেন উচ্চৈঃস্বর বিশিষ্ট লোক। তিনি বলেন, তৎক্ষণাৎ আমি উচ্চৈঃস্বরে ডাক দিয়ে বললাম, আসহাবে সামুরাগণ কোথায়? ’আব্বাস (রাঃ) বলেন, আল্লাহর শপথ! আমার আওয়াজ (আহ্বান) শুনার সাথে সাথেই আসহাবেই সামুরাগণ এমনভাবে দৌড়িয়ে ময়দানে এসে উপস্থিত হলেন, যেমন গাভী তার বাছুরের দিকে দৌড় দেয়। আর তারা আওয়াজ দিতে থাকল-
(يَا لَبَّيْكَ يَا لَبَّيْكَ) ’ইয়া লাব্বাইক, ইয়া লাব্বাইক। আমরা উপস্থিত! আমরা উপস্থিত।
আব্বাস (রাঃ) বলেন, অতঃপর মুসলিমগণ কাফিরদের সাথে যুদ্ধ লিপ্ত হয়ে গেল। অন্যদিকে আনসারদের মধ্যে এ ধ্বনি উচ্চারিত হয়- হে আনসার সম্প্রদায়। হে আনসার সম্প্রদায়! (শত্রু নিধনে ঝাপিয়ে পড়) ’আব্বাস (রাঃ) বলেন, অতঃপর তাদের ধ্বনি (একমাত্র) বানী হারিস ইবনু খাযরাজের ওপর সীমাবদ্ধ হয়ে গেল। (আনসারদের মধ্যে এ গোত্রটি ছিল সর্বাপেক্ষা বড়) এই সময় রাসূলুল্লাহ (সা.) নিজ বাহন খচ্চরের উপরে থেকে মাথা উঠিয়ে যুদ্ধের অবস্থার দিকে তাকিয়ে বললেন, এখনই যুদ্ধ জ্বলে উঠেছে। অতঃপর তিনি একমুষ্টি পাথর হাতে নিয়ে কাফিরদের মুখের প্রতি নিক্ষেপ করে বললেন, মুহাম্মাদের প্রভুর শপথ! কাফিরদল পরাজিত হয়েছে। [বর্ণনাকারী ’আব্বাস (রাঃ) বলেন] আমি আল্লাহর শপথ করে বলছি, তাদের এ পরাজয় কেবলমাত্র তাঁর [রাসূল (সা.) -এর] কঙ্কর নিক্ষেপের দ্বারাই ঘটেছে। অতঃপর আমি যুদ্ধের সমাপ্তি অবধি সর্বক্ষণ তাই দেখতে পেলাম যে, তাদের তলোয়ার ও বর্শার ধার ভোঁতা হয়ে পড়েছে এবং তারা পৃষ্ঠপ্রদর্শন করে পালাচ্ছে। (মুসলিম)

الفصل الاول (بَاب فِي المعجزا)

وَعَن عَبَّاسٍ قَالَ: شَهِدْتُ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَ حُنَيْنٍ فَلَمَّا الْتَقَى الْمُسْلِمُونَ وَالْكُفَّارُ وَلَّى الْمُسْلِمُونَ مُدْبِرِينَ فَطَفِقَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَرْكُضُ بَغْلَتَهُ قِبَلَ الْكُفَّارِ وَأَنَا آخِذٌ بِلِجَامِ بَغْلَةَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَكُفُّهَا إِرَادَةَ أَن لَا تسرع وَأَبُو سُفْيَان آخِذٌ بِرِكَابِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَيْ عَبَّاسُ نَادِ أَصْحَابَ السَّمُرَةِ فَقَالَ عَبَّاسٌ وَكَانَ رَجُلًا صَيِّتًا فَقُلْتُ بِأَعْلَى صَوْتِي أَيْنَ أَصْحَابُ السَّمُرَةِ فَقَالَ وَاللَّهِ لَكَأَنَّ عَطْفَتَهُمْ حِينَ سَمِعُوا صَوْتِي عَطْفَةُ الْبَقَرِ عَلَى أَوْلَادِهَا فَقَالُوا يَا لَبَّيْكَ يَا لَبَّيْكَ قَالَ فَاقْتَتَلُوا وَالْكُفَّارَ وَالدَّعْوَةُ فِي الْأَنْصَارِ يَقُولُونَ يَا مَعْشَرَ الْأَنْصَارِ يَا مَعْشَرَ الْأَنْصَارِ قَالَ ثُمَّ قُصِرَتِ الدَّعْوَةُ عَلَى بَنِي الْحَارِثِ بْنِ الْخَزْرَجِ فَنَظَرَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ عَلَى بَغْلَتِهِ كَالْمُتَطَاوِلِ عَلَيْهَا إِلَى قِتَالِهِمْ فَقَالَ حِينَ حَمِيَ الْوَطِيسُ ثُمَّ أَخَذَ حَصَيَاتٍ فَرَمَى بِهِنَّ وُجُوهَ الْكُفَّارِ ثُمَّ قَالَ انْهَزَمُوا وَرَبِّ مُحَمَّدٍ فَوَاللَّهِ مَا هُوَ إِلَّا أَنْ رَمَاهُمْ بِحَصَيَاتِهِ فَمَا زِلْتُ أَرَى حَدَّهُمْ كَلِيلًا وَأَمْرَهُمْ مُدبرا. رَوَاهُ مُسلم

رواہ مسلم (76 / 1775)، (4612) ۔
(صَحِيح)

وعن عباس قال: شهدت مع رسول الله صلى الله عليه وسلم يوم حنين فلما التقى المسلمون والكفار ولى المسلمون مدبرين فطفق رسول الله صلى الله عليه وسلم يركض بغلته قبل الكفار وانا اخذ بلجام بغلة رسول الله صلى الله عليه وسلم اكفها ارادة ان لا تسرع وابو سفيان اخذ بركاب رسول الله صلى الله عليه وسلم فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم اي عباس ناد اصحاب السمرة فقال عباس وكان رجلا صيتا فقلت باعلى صوتي اين اصحاب السمرة فقال والله لكان عطفتهم حين سمعوا صوتي عطفة البقر على اولادها فقالوا يا لبيك يا لبيك قال فاقتتلوا والكفار والدعوة في الانصار يقولون يا معشر الانصار يا معشر الانصار قال ثم قصرت الدعوة على بني الحارث بن الخزرج فنظر رسول الله صلى الله عليه وسلم وهو على بغلته كالمتطاول عليها الى قتالهم فقال حين حمي الوطيس ثم اخذ حصيات فرمى بهن وجوه الكفار ثم قال انهزموا ورب محمد فوالله ما هو الا ان رماهم بحصياته فما زلت ارى حدهم كليلا وامرهم مدبرا. رواه مسلم رواہ مسلم (76 / 1775)، (4612) ۔ (صحيح)

ব্যাখ্যা : হুনায়নের যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল অষ্টম হিজরীর শাওয়াল মাসে হুনায়ন নামক স্থানে। ‘হুনায়ন হলো ‘আরাফার পিছনে ত্বায়িফ ও মক্কার মাঝে একটি উপত্যকার নাম। সেই যুদ্ধে মুসলিমগণ প্রথমদিকে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পলায়ন করা শুরু করে। তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) নিজেই তার খচ্চরে আরোহণ করে কাফিরদের সামনে অগ্রসর হতে থাকেন। আকমাল বলেন, হুনায়নের যুদ্ধের দিন রাসূল (সা.) যেই খচ্চরে আরোহণ করেছিলেন সেটির নাম ছিল “দুলদুল” আর তা ফারওয়া ইবনু নাফাসা নামক ব্যক্তি তাকে হাদিয়্যাহ্ দিয়েছিল।
সে ছিল একজন মুশরিক। অতএব, উক্ত হাদীস থেকে বুঝা যায় যে, কোন মুশরিকের ব্যাপারে যদি ইসলাম গ্রহণের আশা করা যায় অথবা তার মাধ্যমে মুসলিমদের কোন কল্যাণের আশা করা যায় তাহলে তার থেকে হাদিয়্যাহ্ গ্রহণ করা যাবে। আর যদি তার থেকে এ ধরনের ভালো কিছু আশা করা না যায় তাহলে নিরুপায় না হলে তার থেকে কোন হাদিয়্যাহ্ গ্রহণ করা যাবে না।
(نَادِ أَصْحَابَ السَّمُرَةِ) অর্থাৎ তিনি বাবলা গাছের অধিবাসী বলে ডাক দিলেন। মিরকাত প্রণেতা বলেন, এখানে বাবলা গাছ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো ঐ গাছ যে গাছের নিচে সাহাবীগণ হুদায়বিয়ার বিষয়কে কেন্দ্র করে ‘উসমান হত্যার প্রতিশোধ নেয়ার জন্য রাসূল (সা.)-এর হাতে বায়'আত করেছিলেন।
‘আব্বাস (রাঃ) সাহাবীদেরকে এই নামে ডাক দিয়ে স্মরণ করিয়ে দিতে চেয়েছেন যে, তারা যেন সেই বায়'আতের কথা ভুলে না যান এবং দ্রুত জিহাদের ময়দানে আবার ফিরে আসেন।
তারপর আবার বিশেষভাবে বানূ হারিস ইবনু খাযরাজ-কে ডাকলেন। কারণ তারা ছিল একটি বড় গোত্রে এবং তাদের লোক সংখ্যাও ছিল বেশি। যে সকল সাহাবী যুদ্ধক্ষেত্র থেকে চলে গিয়েছিল 'আব্বাস (রাঃ) তাদেরকে ডাক দেয়ার পর তারা সকলেই আবার যুদ্ধের মাঠে ফিরে আসলো। আর নতুন করে আবার প্রচণ্ড যুদ্ধের দামামা বেজে উঠল।
এদিকে রাসূলুল্লাহ (সা.) কিছু কঙ্কর নিয়ে কাফিরদের চেহারার দিকে এই বলে নিক্ষেপ করলেন যে, (شَاجَبِ الْوُجُوهُ شَاهَبِ الْوُجُوهُ) অর্থাৎ তাদের চেহারা বিগড়ে যাক। তাদের চেহারা বিগড়ে যাক। তারপর কাফির সৈন্যরা পরাজিত হয়। আর মুসলিমগণ অনেক গনীমতের মাল নিয়ে বিজয়ী হয়ে ফিরে আসে।
ইমাম নবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, উক্ত হাদীস থেকে রাসূল (সা.) -এর দু’টি মু'জিযাহ্ প্রকাশিত হয়। ১) তাঁর কর্মের মাধ্যমে। যেমন- তিনি কাফির সেনাদের দিকে কঙ্কর নিক্ষেপ করেন। ২) সংবাদ দেয়ার মাধ্যমে। যেমন- তিনি এই সংবাদ দেন যে, কাফির বাহিনী পরাজিত হবে এবং পৃষ্ঠপ্রদর্শন করে পালিয়ে যাবে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৯: চারিত্রিক গুণাবলি ও মর্যাদাসমূহ (كتاب الْفَضَائِل وَالشَّمَائِل)