পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ - তাওয়াক্কুল (আল্লাহর ওপর ভরসা) ও সবর (ধৈর্যধারণ) প্রসঙ্গে
৫২৯৬-[২] উক্ত রাবী [ইবনু আব্বাস (রাঃ)] বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ (সা.) বাইরে এসে (আমাদেরকে) বললেন, (পূর্বের নবীগণের) উম্মতদেরকে আমার সম্মুখে পেশ করা হল। (দেখলাম) একজন নবী যাচ্ছেন, তাঁর সাথে রয়েছে মাত্র একজন লোক। আরেকজন নবী, তার সাথে রয়েছে কেবল দুজন লোক। অন্য এক নবীর সাথে রয়েছে একদল লোক। একজন নবী এমনও ছিলেন, যার সাথে কেউ ছিল না।
অতঃপর দেখলাম এক বিরাট দল, যা দিগন্ত জুড়ে রয়েছে। তখন আমি আকাঙ্ক্ষা করলাম: এ দলটি যদি আমার উম্মত হত। এ সময় বলা হলো, এটা মূসা (আঃ) ও তাঁর জাতি। অতঃপর আমাকে বলা হলো, আপনি ভালো করে দৃষ্টি দিন। তখন আমি দিগন্ত জোড়া একটি বিশাল দল দেখলাম। এ সময় আমাকে আবার বলা হলো, আপনি এদিক-ওদিক দেখুন। তখন আমি বিরাট দল দেখতে পেলাম, যা (এ সকল) দিগন্ত জুড়ে রয়েছে। এবার আমাকে জানানো হলো, এরা আপনার উম্মাত। এদের সামনে সত্তর হাজার লোক রয়েছে যারা বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করবে। তারা ঐ সমস্ত লোক যারা অশুভ-অমঙ্গল চিহ্ন বা লক্ষণ মানে না, ঝাড়ফুঁক বা মন্ত্র-তন্ত্রের প্রতি ভ্রুক্ষেপ করেন না এবং (আগুনে পোড়া লোহার) দাগ লাগায় না। তারা আপন পরওয়ারদিগারের ওপর ভরসা রাখে। তখন ’উককাশাহ ইবনু মিহসান দাড়িয়ে বললেন: (হে আল্লাহর রসূল!) আল্লাহর কাছে দু’আ করুন তিনি যেন আমাকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করেন। তখন তিনি (সা.) এ বলে দু’আ করলেন: হে আল্লাহ! তাকেও তাদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করো! এরপর আরেক ব্যক্তি উঠে দাঁড়িয়ে আবেদন করল; আমার জন্যও আল্লাহর কাছে দুআ করুন, তিনি যেন আমাকেও এদের মাঝে গণ্য করেন। তিনি (সা.) বললেন: এ ব্যাপারে ’উক্কাশাহ্ তোমার আগে সুযোগ নিয়ে গেছে। (বুখারী ও মুসলিম)
الفصل الاول (بَاب التَّوَكُّل وَالصَّبْر)
وَعَنْهُ قَالَ خَرَجَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمًا فَقَالَ: عُرِضَتْ عَلَيَّ الْأُمَمُ فَجَعَلَ يَمُرُّ النَّبِيُّ وَمَعَهُ الرَّجُلُ وَالنَّبِيُّ وَمَعَهُ الرَّجُلَانِ وَالنَّبِيُّ وَمَعَهُ الرَّهْطُ وَالنَّبِيُّ وَلَيْسَ مَعَهُ أَحَدٌ فَرَأَيْتُ سَوَادًا كَثِيرًا سَدَّ الْأُفُقَ فَرَجَوْتُ أَنْ يَكُونَ أُمَّتِي فَقِيلَ هَذَا مُوسَى فِي قَوْمِهِ ثُمَّ قِيلَ لِي انْظُرْ فَرَأَيْتُ سَوَادًا كَثِيرًا سَدَّ الْأُفُقَ فَقِيلَ لِي انْظُرْ هَكَذَا وَهَكَذَا فَرَأَيْتُ سَوَادًا كَثِيرًا سَدَّ الْأُفق فَقيل: هَؤُلَاءِ أُمَّتُكَ وَمَعَ هَؤُلَاءِ سَبْعُونَ أَلْفًا قُدَّامَهُمْ يَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ بِغَيْرِ حِسَابٍ هُمُ الَّذِينَ لَا يَتَطَيَّرُونَ ولايسترقون وَلَا يَكْتَوُونَ وَعَلَى رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُونَ فَقَامَ عُكَّاشَةُ بْنُ مِحْصَنٍ فَقَالَ: ادْعُ اللَّهَ أَنْ يَجْعَلَنِي مِنْهُمْ. قَالَ «اللَّهُمَّ اجْعَلْهُ مِنْهُمْ» . ثُمَّ قَامَ رجل فَقَالَ: ادْعُ اللَّهَ أَنْ يَجْعَلَنِي مِنْهُمْ. فَقَالَ سَبَقَكَ بِهَا عُكَّاشَةُ. مُتَّفق عَلَيْهِ
متفق علیہ ، رواہ البخاری (5752) و مسلم (374 / 220)، (527) ۔
(مُتَّفق عَلَيْهِ)
হাদীসটির শিক্ষা:
(১) কল্যাণকর কাজে দ্রুত অগ্রসর হওয়া এবং নেক বান্দাদের নিকট থেকে দু'আ চাওয়া, কেননা নেককাজে পিছিয়ে থাকার মধ্যে অকল্যাণ রয়েছে।
(২) উক্কাশাহ্-এর অগ্রগামীতা এবং উক্ত ৭০ হাজারের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হওয়া ওয়াহীর মাধ্যমেই হয়েছে যা অন্য কারো জন্য হয়নি।
(৩) ২য় ব্যক্তি উক্ত মর্যাদা লাভের উপযুক্ত ছিলেন না যেমনটি উপযুক্ত ছিলেন উক্কাশাহ্। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
ব্যাখ্যা : (هَؤُلَاءِ أُمَّتُكَ) এরা আপনার উম্মাত। আল্লামাহ্ কিরমানী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, এখানে (উম্মাত) দ্বারা উদ্দেশ্য হলো: উম্মাতুল ইজাবা অথবা উম্মাতুল ইত্তিবা। কেননা নবী (সা.) -এর উম্মাত তিন প্রকার। একটি অপরটি থেকে বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত। (১) উম্মাতুল ইত্তিবা, (২) উম্মাতুল ইজাবা, (৩) উম্মাতুদ দা'ওয়া। প্রথমটি দ্বারা উদ্দেশ্য যারা সৎকার্জ সম্পাদন করে। আর ২য় টি দ্বারা উদ্দেশ্য হলো সাধারণ মুসলিম এবং তৃতীয় প্রকার দ্বারা উদ্দেশ্য হলো উক্ত দুই প্রকার ব্যতীত অন্য সকল উম্মাত যাদের প্রতি নবী (সা.) প্রেরিত হয়েছেন।
(وَمَعَ هَؤُلَاءِ سَبْعُونَ أَلْفًا) এই উম্মাতের সাথে সত্তর হাজার লোক রয়েছে। ইমাম নবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেন, হয়তো এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো আপনার এই উম্মাত ছাড়াও আরো ৭০ হাজার লোক রয়েছে অথবা এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো আপনার উম্মতের মাঝে ৭০ হাজার লোক বিনা হিসাবে জান্নাতে যাবে। এর প্রমাণ হলো সহীহুল বুখারীর বর্ণিত হাদীস : (هٰذِه„ أُمَّتُكَ وَيَدْخُلُ الْجَنَّةَ مِنْ هَؤُلاَءِ سَبْعُونَ أَلْفًا) “এরা হলো আপনার উম্মাত এদের মধ্য থেকে ৭০ হাজার লোক জান্নাতে প্রবেশ করবে”। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)
(هُمُ الَّذِينَ لَا يَتَطَيَّرُونَ) তারা অর্থাৎ ৭০ হাজার লোক তারাই, যারা পাখি উড়িয়ে ভাগ্য পরীক্ষা করে না বা কুলক্ষণে বিশ্বাস করে না।
(ولايسترقون) “ঝাড়ফুঁক করায় না” এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো : কুরআন ও সহীহ হাদীস বহির্ভূত দু'আ দিয়ে ঝাড়ফুঁক করায় না। যেমন, এমন অজ্ঞাত ঝাড়ফুঁক যা শিরকমুক্ত নয়।
(وَلَا يَكْتَوُونَ) লোহা গরম করে শরীরে দাগ দেয় না। তবে প্রয়োজনে এটা করা যাবে কিন্তু এই বিশ্বাস রাখতে হবে যে, আরোগ্য কেবল আল্লাহর ওপর ন্যস্ত শুধু দাগের কোন ক্ষমতা নেই। যেমনটি কোন কোন সাহাবী এ কাজ করেছেন। যেমন আশারায়ে মুবাশশারার অন্যতম সাহাবী সা'দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস।
(وَعَلَى رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُونَ) আর তারা তাদের রবের ওপর সর্বদা ভরসা করে। এই বাক্যটি পূর্বে উল্লেখিত তিনটি বিষয় : ঝাড়ফুক না করা, কুলক্ষণে বিশ্বাস না করা এবং শরীরে লোহা গরম করে দাগ লাগানো থেকে বিরত থাকার ব্যাখ্যা প্রদান করেছে। অথবা, প্রথমে নির্দিষ্ট গুণাবলি উল্লেখ করার পর আরো সাধারণভাবে আলোচনা করা হয়েছে। (ফাতহুল বারী ১১/৬৫৪১)