৫০০৯

পরিচ্ছেদঃ ১৬. প্রথম অনুচ্ছেদ - আল্লাহ তা‘আলার প্রতি ভালোবাসা এবং আল্লাহ তা‘আলার জন্য বান্দার প্রতি ভালোবাসা

৫০০৯-[৭] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। একদিন জনৈক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল : হে আল্লাহর রসূল! কিয়ামত কখন হবে? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ তোমার জন্য পরিতাপ। কিয়ামতের জন্য তুমি কী প্রস্তুত করেছ? সে জবাবে বলল, আমি কিছুই করিনি, তবে আমি আল্লাহ ও তাঁর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে ভালোবাসী। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ তুমি তার সাথেই হবে যাকে তুমি ভালোবাসো। (রাবী) আনাস (রাঃ) বলেনঃ ইসলাম আবির্ভাবের পর মুসলিমদেরকে আমি কোন কথায় এতটা খুশি হতে দেখিনি, যতটা তারা খুশি হয়েছিল রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এ বাণীতে। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ الْحُبِّ فِى اللهِ وَمِنَ اللهِ

وَعَنْ أَنَسٍ أَنَّ رَجُلًا قَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ مَتَى السَّاعَةُ؟ قَالَ: «وَيْلَكَ وَمَا أَعْدَدْتَ لَهَا؟» قَالَ: مَا أَعْدَدْتُ لَهَا إِلَّا أَنِّي أُحِبُّ اللَّهَ وَرَسُولَهُ. قَالَ: «أَنْتَ مَعَ مَنْ أَحْبَبْتَ» . قَالَ أَنَسٌ: فَمَا رَأَيْتُ الْمُسْلِمِينَ فَرِحُوا بِشَيْءٍ بَعْدَ الْإِسْلَامِ فَرَحَهُمْ بِهَا. مُتَّفق عَلَيْهِ

وعن انس ان رجلا قال: يا رسول الله متى الساعة؟ قال: «ويلك وما اعددت لها؟» قال: ما اعددت لها الا اني احب الله ورسوله. قال: «انت مع من احببت» . قال انس: فما رايت المسلمين فرحوا بشيء بعد الاسلام فرحهم بها. متفق عليه

ব্যাখ্যাঃ (مَتَى السَّاعَةُ) অর্থাৎ কিয়ামত কোন্ সময়ে সংগঠিত হবে? এ বাক্য দ্বারা কিয়ামতকে অস্বীকার করা বুঝাচ্ছে না বরং কিয়ামতের প্রতি অগাধ বিশ্বাস বুঝাচ্ছে। কিয়ামতের প্রতি দৃঢ় ঈমান থাকার কারণে ও তার ভয়ের কারণে সাহাবী রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে এ প্রশ্নটি করলেন।

(قَالَ: وَيْلَكَ) ‘তুমি ধ্বংস হও’, ‘তোমার জন্য পরিতাপ’ এ শব্দটি কখনো বদ্দু‘আ অর্থে ব্যবহার হয়ে থাকে। কিন্তু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মুখে সাহাবীর জন্য এ কথা বদ্দু‘আ ছিল না। এরপর তাকে পরীক্ষা করার জন্য বললেন, (مَا أَعْدَدْتَ لَهَا) ‘তুমি তার জন্য কি প্রস্তুত করেছ? উত্তরে সাহাবী বললেন, আমি কোন কিছু তৈরি করিনি। (إِلَّا أَنِّي أُحِبُّ اللهَ وَرَسُولَهٗ) তবে আমি আল্লাহ ও তার রসূলকে ভালোবাসী। এখানে সাহাবী কোন অন্য ‘আমলের কথা উল্লেখ করেননি। তিনি কোন অন্তরের ‘ইবাদাত, শারীরিক ‘ইবাদাত, কোন আর্থিক ‘ইবাদাতের কথা উল্লেখ করেননি। কেননা এসবগুলোই হলো ভালোবাসার (مَحَبَّةِ এর) শাখা। আর মুহাব্বাত বা ভালোবাসা হলো সবকিছুর চেয়ে উঁচু স্তরের ‘ইবাদাত। মহান আল্লাহ বলেন, يُحِبُّهُمْ وَيُحِبُّونَه ‘‘তিনি তাদেরকে ভালোবাসেন আর তারাও তাকে ভালোবাসে’’- (সূরাহ্ আল মায়িদাহ্ ৫ : ৫৪)। তিনি আরো বলেন, إِنْ كُنْتُمْ تُحِبُّونَ اللّٰهَ فَاتَّبِعُونِي يُحْبِبْكُمُ اللهُ ‘‘তোমরা আল্লাহকে ভালোবাসতে চাইলে আমার অনুসরণ কর, তাহলে আল্লাহ তোমাদেরকে ভালোবাসবেন’’- (সূরাহ্ আ-লি ‘ইমরা-ন ৩ : ৩১)। আর সাহাবীদের এটা ভালোভাবেই জানা ছিল যে, ভালোবাসা অনুসরণ করা ছাড়া অর্জিত হয় না, আর যে ‘ইবাদাত তাঁর অনুসরণ করা ব্যতীত করা হবে তাতে লাভ হবে না। (মিরক্বাতুল মাফাতীহ)

أَنْتَ مَعَ مَنْ أَحْبَبْتَ ‘তার সাথে থাকবে যাকে তুমি ভালোবাস’ এ কথার অর্থ হলো কিয়ামতের দিন তুমি তার সাথে মিলিত হয়ে তাদের দলে থাকবে। এখানে একটা প্রশ্ন থাকে তা হলো মানুষের স্তর তো বিভিন্ন ধরনের, তবে সাথে থাকার বিষয়টি কেমন? এর উত্তরে বলা হয়েছে, সাথে থাকার অর্থ এক জায়গায় তথা কোন জিনিসের মধ্যে একত্রিত হওয়াকে বুঝায়নি। আর সাথে থাকার অর্থ এক জিনিসের মধ্যে একত্রিত হওয়া এটা ওয়াজিব করে না। বরং সকলে যখন জান্নাতে প্রবেশ করবে তখন সাথে থাকার অর্থ সত্যায়িত হবে। যদিও সেখানে অনেক স্তর আছে। (ফাতহুল বারী ১০ম খন্ড, হাঃ ৬১৬৭)

এখানে আল্লাহ তা‘আলা, তাঁর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সৎলোকেদেরকে ভালোবাসার ফাযীলাত বর্ণনা করেছেন। আল্লাহ ও তাঁর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে ভালোবাসা বলতে বুঝায় তাদের আদেশসমূহ পালন করা। তাদের নিষেধসমূহ হতে দূরে থাকা এবং ইসলামী শারী‘আতের শিষ্টাচার অনুযায়ী শিষ্টাচার শিক্ষা করা। (শারহুন নাবাবী ১৬শ খন্ড, হাঃ ২৬৩৯; মিরক্বাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)