৪৮৩৬

পরিচ্ছেদঃ ১০. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - জিহ্বার হিফাযাত, গীবত এবং গালমন্দ প্রসঙ্গে

৪৮৩৬-[২৫] ’আবদুল্লাহ ইবনু ’আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি নিশ্চুপ রইল, সে মুক্তি পেলো। (আহমাদ, তিরমিযী, দারিমী ও বায়হাক্বী’র ’’শু’আবুল ঈমানে’’ বর্ণনা করেছেন)[1]

وَعَنْ عَبْدِ
اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم: «من صَمَتَ نَجَا» . رَوَاهُ أَحْمَدُ وَالتِّرْمِذِيُّ وَالدَّارِمِيُّ وَالْبَيْهَقِيُّ فِي شعب الْإِيمَان

وعن عبد الله بن عمرو قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «من صمت نجا» . رواه احمد والترمذي والدارمي والبيهقي في شعب الايمان

ব্যাখ্যাঃ ‘‘যে বিরত থাকলো সে মুক্তি পেল’’ এর অর্থ হলো, যে অশ্লীল ও মিথ্যা কথা ও কাজ থেকে বিরত থাকলো সে তার পাপ ও শাস্তি থেকে মুক্তি পেল।

ইমাম রাগিব ইস্পাহানী (রহিমাহুল্লাহ) [শব্দ বিজ্ঞানী] বলেনঃ الصَّمْتُ ‘চুপ থাকা’ শব্দটি السُّكُوتِ ‘চুপ থাকা’ বা নীরব থাকা শব্দ হতে অধিক পূর্ণতা প্রকাশকারী শব্দ। কেননা الصَّمْتُ শব্দটি বাকশক্তিসম্পন্ন সত্তা এবং বাকশক্তিহীন সত্ত্বা উভয়ের ক্ষেত্রেই ব্যবহার হয়ে থাকে, পক্ষান্তরে السُّكُوتِ শব্দটি কেবলমাত্র বাকশক্তি সম্পন্ন সত্তার ক্ষেত্রেই ব্যবহার হয়ে থাকে।

ইমাম গাযালী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এ কথাটি مِنْ فَصْلِ الْخِطَابِ وَجَوَامِعِ الْكَلِمِ وَجَوَاهِرِ الْحِكَمِ এর অন্তর্ভুক্ত, কোন ব্যক্তিই এর অর্থ করে শেষ করতে পারবে না। বহুবিধ অর্থ সমৃদ্ধ বাক্যটির অর্থ অনুসন্ধানে সর্বকালের ‘আলিমগণই শ্রম সাধনা ব্যয় করে চলছেন।

মানুষের জিহ্বার স্খলনজনিত বিপদ অত্যন্ত বড় এবং তার অনিষ্টতা খুব বেশী। কেননা মিথ্যা, গীবত, অপবাদ, অশ্লীল কথা ইত্যাদি মুখ থেকে অবলীলাক্রমে অনায়াসেই বেড়িয়ে পড়ে এবং অন্তরও এতে অগ্রণী হয়, না এগুলোতে কোন বেগ পোহাতে হয় না। আর অন্তর তার একটি মিষ্টতাও অনুভব করে থাকে, অপরদিকে প্রবৃত্তি এবং শয়তানের সহযোগিতা থাকে পুরোদমে। সুতরাং কথা বলাই ঝুঁকিপূর্ণ এবং চুপ থাকাই নিরাপদ।

মানুষের প্রতিটি কথাই রেকর্ড করা হয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

مَا يَلْفِظُ مِنْ قَوْلٍ إِلَّا لَدَيْهِ رَقِيبٌ عَتِيدٌ

‘‘মানুষ যে কোন কথাই বলুক না কেন, তা লিপিবদ্ধ করার জন্যে তৎপর প্রহরী (ফেরেশতা) তার নিকটই রয়েছে।’’ (সূরাহ্ কাফ ৫০ : ১৮)

এ আয়াত দ্বারা চুপ থাকার নির্দেশ পাওয়া যায়। মানুষের কথা চার প্রকার, তন্মধ্যে এক প্রকার কথায় শুধু ক্ষতিই বিদ্যমান। দ্বিতীয় এক প্রকারের মধ্যে রয়েছে উপকার, তৃতীয় প্রকার লাভ ক্ষতি মিলে আর চতুর্থ প্রকার যার মধ্যে কোন লাভও নেই কোন ক্ষতিও নেই। যে কথায় শুধু ক্ষতিই তা থেকে নীরব থাক আবশ্যক। অনুরূপ লাভন্ডক্ষতি উভয়টি যেখানে বিদ্যমান, সে কথা থেকেও নীরব থাকা আবশ্যক। আর যে কথায় কোন লাভন্ডক্ষতি কিছুই নেই, নিঃসন্দেহে তা অহেতুক বা বেহুদা কথা, তা বলা সময় অপচয় ছাড়া আর কিছু নয়, সুতরাং তাও ক্ষতিকর। চতুর্থ আরেকটি প্রকার যাতেও রয়েছে ক্ষতির আশংকা। অতএব চুপ থাকা নিঃসন্দেহে নিরাপদ ও বাঁচার পথ।

মানুষের জিহ্বার অনিষ্টতা সীমাহীন, নিরবতাই তা থেকে মুক্তির একমাত্র পথ।

(মিরক্বাতুল মাফাতীহ; তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৬ষ্ঠ খন্ড, হাঃ ২৫০১)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)