পরিচ্ছেদঃ ১০. প্রথম অনুচ্ছেদ - জিহ্বার হিফাযাত, গীবত এবং গালমন্দ প্রসঙ্গে
৪৮২৯-[১৮] ’আয়িশাহ্ সিদ্দিকা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে সাক্ষাতের অনুমতি প্রার্থনা করল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (সাহাবায়ে কিরাম (রাঃ)-কে) বললেনঃ তাকে আসার অনুমতি দাও। সে নিজের গোত্রের খারাপ ব্যক্তি। যখন লোকটি তাঁর দরবারে এসে বসল, তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) প্রশস্ত ললাটে তার দিকে তাকালেন এবং মৃদু-হাস্যে তার সাথে কথা বললেন। যখন লোকটি চলে গেল, তখন ’আয়িশাহ্ সিদ্দিকা (রাঃ) বললেনঃ হে আল্লাহর রসূল! আপনি লোকটি সম্পর্কে এমন এমন বলেছেন, অতঃপর আপনিই তার সাথে প্রশস্ত ললাটে সাক্ষাৎ করলেন এবং মৃদু হেসে কথা বললেন। এটা শুনে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তুমি কি আমাকে কখনো অশ্লীলভাষী পেয়েছ? কিয়ামতের দিন আল্লাহর দরবারে মানুষের মধ্যে মর্যাদার দিক দিয়ে সে-ই নিকৃষ্ট হবে, যাকে মানুষ তার অনিষ্টের ভয়ে ত্যাগ করে।
অপর এক বর্ণনায় আছে, যাকে মানুষ তার অশ্লীলতার ভয়ে পরিত্যাগ করবে। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ حِفْظِ اللِّسَانِ وَالْغِيبَةِ وَالشَّتَمِ
وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا أَنَّ رَجُلًا اسْتَأْذَنَ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ. فَقَالَ: «ائْذَنُوا لَهُ فَبِئْسَ أَخُو الْعَشِيرَةِ» فَلَمَّا جَلَسَ تَطَلَّقَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي وَجْهِهِ وَانْبَسَطَ إِلَيْهِ. فَلَمَّا انْطَلَقَ الرَّجُلُ قَالَتْ عَائِشَةُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ قُلْتَ لَهُ: كَذَا وَكَذَا ثُمَّ تَطَلَّقْتَ فِي وَجْهِهِ وَانْبَسَطْتَ إِلَيْهِ. فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَتى عهدتني فحاشا؟ ؟ إِن شَرّ النَّاس مَنْزِلَةً يَوْمَ الْقِيَامَةِ مَنْ تَرَكَهُ النَّاسُ اتِّقَاءَ شَرِّهِ» وَفِي رِوَايَةٍ: «اتِّقَاءَ فُحْشِهِ» . مُتَّفَقٌ عَلَيْهِ
ব্যাখ্যাঃ যে লোকটি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট প্রবেশের অনুমতি প্রার্থনা করেছিল তার নাম এখানে উল্লেখ নেই। কেউ বলেছেন, তার নাম ছিল ‘উয়াইনাহ্ আল ফাযারী। আবার কেউ বলেছেন, মাখরামাহ্ ইবনু নাওফাল। লোকটি প্রবেশের সময় তার সম্পর্কে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মন্তব্য করলেন- সে গোত্রের কতই না নিকৃষ্ট লোক। সহীহুল বুখারীর অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, সে গোত্রের কতই না নিকৃষ্ট লোক এবং কতই না নিকৃষ্ট লোকের সন্তান। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সম্পর্কে এমন কথা বলার কারণ হলো- সে তখনও ইসলাম গ্রহণ করেনি, কিন্তু জনসম্মুখে ভূয়াভাবে ইসলাম প্রকাশ করেছে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার অবস্থা প্রকাশের জন্য এমন কথা বলেছেন যাতে কেউ তার কথায় ধোঁকায় না পরে এবং প্রতারিত না হয়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সাথে হাস্যোজ্জ্বল চেহারায় দেখা করেন এবং মিষ্টি ও নরম কথা বলেন। এটা ছিল রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্বভাবজাত অভ্যাস, তিনি শত্রুর সাথেও নরম ও মিষ্টি কথা বলতেন। তাছাড়া ঐ লোকটির অন্তর জয় করাও ছিল একটি উদ্দেশ্য।
শারহুস্ সুন্নাহ্ গ্রন্থকার এ হাদীসের ভিত্তিতে বলেন, ফাসিক ব্যক্তির ভিতরের অসৎ রূপ প্রকাশ করা বৈধ, যাতে জনগণ তার অনিষ্টতা থেকে আত্মরক্ষা করতে পারে। এরূপ বলা বা করা গীবতের অন্তর্ভুক্ত হবে না। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার অন্তরের লুকায়িত কুফরী প্রকাশ করে স্বীয় নুবুওয়াতী মু‘জিযা প্রকাশ করেছেন, এটা গীবত হবে না।
ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ যে নিজের পাপাচারী এবং বিদ্‘আত প্রকাশ করে বেড়ায় তার গীবত দোষণীয় নয়। এরূপ আটস্থলে গীবত করা বৈধ, বিস্তারিত দেখুন- রিয়াযুস্ সলিহীন, গীবত অধ্যায়।
(মিরক্বাতুল মাফাতীহ; ফাতহুল বারী ১০ম খন্ড, হাঃ ৬০৩২; ‘আওনুল মা‘বূদ ৮ম খন্ড, হাঃ ৪৭৮৩; তুহফাতুল আহ্ওয়াযী ৫ম খন্ড, হাঃ ১৯৯৬)