৪৭৬০

পরিচ্ছেদঃ ৮. প্রথম অনুচ্ছেদ - নাম রাখা

৪৭৬০-[১১] আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ নিজের দাস-দাসীকে ’’আমার বান্দা’’, ’’আমার বাঁদী’’ ইত্যাদি যেন না বলে। কেননা তোমরা সকল পুরুষই আল্লাহ তা’আলার বান্দা, আর সকল মহিলাই আল্লাহ তা’আলার বাঁদি; বরং সে যেন বলে, ’’আমার চাকর’’, ’’আমার চাকরাণী’’, ’’আমার ছেলে’’, ’’আমার মেয়ে’’। আর গোলামও নিজের মুনীবকে প্রভু বলবে না; বরং সে বলবে, ’’আমার সর্দার’’।অপর এক বর্ণনায় আছে, সে যেন ’’আমার সর্দার’’ ও ’’আমার মনিব’’ বলে। আরেক বর্ণনায় আছে যে, দাস তার মালিককে যেন ’’আমার প্রভু’’ না বলে। কারণ তোমাদের সকলের প্রভুই আল্লাহ রব্বুল ’আলামীন। (মুসলিম)[1]

بَابُ الْأَسَامِىْ

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: لَا يَقُولَنَّ أَحَدُكُمْ عَبدِي وَأمتِي كلكُمْ عباد اللَّهِ وَكُلُّ نِسَائِكُمْ إِمَاءُ اللَّهِ. وَلَكِنْ لِيَقُلْ: غُلَامِي وَجَارِيَتِي وَفَتَايَ وَفَتَاتِي. وَلَا يَقُلِ الْعَبْدُ: رَبِّي ولكنْ ليقلْ: سَيِّدِي وَفِي رِوَايَةٍ: لِيَقُلْ: سَيِّدِي وَمَوْلَايَ . وَفِي رِوَايَةٍ: لَا يَقُلِ الْعَبْدُ لِسَيِّدِهِ: مَوْلَايَ فَإِنَّ مولاكم اللَّهُ . رَوَاهُ مُسلم

عن ابي هريرة قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: لا يقولن احدكم عبدي وامتي كلكم عباد الله وكل نساىكم اماء الله. ولكن ليقل: غلامي وجاريتي وفتاي وفتاتي. ولا يقل العبد: ربي ولكن ليقل: سيدي وفي رواية: ليقل: سيدي ومولاي . وفي رواية: لا يقل العبد لسيده: مولاي فان مولاكم الله . رواه مسلم

ব্যাখ্যাঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ) বর্ণিত সহীহ মুসলিমের হাদীসে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন : কতিপয় শব্দের মাধ্যমে মুনীব বা দাস কেউ কাউকে ডাকতে পারবে না- এ প্রসঙ্গে নিম্নে আলোচনা উল্লেখ করা হলো-

১. আবূ হুরায়রা (রাঃ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণনা করেন, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ তোমাদের কেউ বলবে না তুমি খাওয়াও তোমার রবকে। উযূ করিয়ে দাও তোমার রবকে এবং তার বলা উচিত আমার নেতা, আমার বন্ধু। আর তোমাদের কেউ বলবে না আমার দাস আমার দাসী এবং তার বলা উচিত আমার যুবক এবং আমার যুবতী এবং আমার ছেলে। আরবী হাদীস নিম্নে প্রদত্ত হলো,

عن ابى هريرة يحدث عن النبي صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ انه قال لا يقل احدكم اطعم ربك وضيئ ربك وليقل سيدى مولاى ولا احدكم عبدى امتى وليقل فتاى وفتاتى غلامى

২. আবূ দাঊদ, নাসায়ী, আহমাদ এবং মুসান্নিফ (রহিমাহুমুল্লাহ) ‘আল আদাবুল মুফরাদ’-এর মধ্যে বর্ণনা করেন ‘আবদুল্লাহ ইবনু আশ্ শিখখীর-এর বর্ণিত হাদীস উল্লেখ করেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন السيد শব্দ দ্বারা আল্লাহ তা‘আলাকে বুঝানো হয়েছে। ইমাম মালিক (রহিমাহুল্লাহ) বলেন হারফে নিদার দ্বারা নির্দিষ্ট করে আহবান করাকে অপছন্দ করা হয়েছে। অতঃপর তিনি বলেনঃ কোন ব্যক্তির বলা يا سيدى এরূপ বলা অপছন্দ অর্থাৎ ঠিক হবে না।

৩. মুসান্নিফ (রহিমাহুল্লাহ) আল আদাবুল মুফরাদে বৃদ্ধি করেছেন এবং ইমাম মুসলিম (রহিমাহুল্লাহ) ‘আলা ইবনু ‘আবদুর রহমান তিনি তার আববা থেকে তার আববা আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন, "كلكم عبيد الله وكل نسائكم اماء الله অর্থাৎ- তোমরা সবাই আল্লাহর বান্দাসমূহ বা দাসসমূহ এবং তোমাদের সকল মহিলারা আল্লাহর বান্দীসমূহ বা দাসীসমূহ।

৪. ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ নিষেধাজ্ঞার দ্বারা উদ্দেশ্য হলো বড়ত্ব ও অহংকার প্রকাশ করার জন্য বৈধ হবে না। আর যদি শুধু পরিস্থিতির জন্য রাখে তা হলো শিথিলতা রয়েছে। والله أعلم

৫. শারহু মুসলিমে শাব্দিক কিছু একই রূপ হাদীস উল্লেখ করেছেন।

৬. ‘আওনুল মা‘বূদে আবূ হুরায়রা  হতে বর্ণিত হাদীস উল্লেখ করা হলো :

لَا يَقُولَنَّ أَحَدُكُمْ عَبْدِىْ وَلَا أَمَتِىْ وَلَا يَقُلِ الْمَمْلُوكُ رَبِّىْ وَرَبَّتِىْ وَلٰكِنْ لِيَقُلِ الْمَالِكُ فَتَاىَ وَفَتَاتِىْ وَالْمَمْلُوكُ سَيِّدِىْ وَسَيِّدَتِىْ فَإِنَّكُمُ الْمَمْلُوكُونَ وَالرَّبُّ اللهُ تَعَالٰى

অর্থাৎ আবূ হুরায়রা  হতে বর্ণিত, নিশ্চয় রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমাদের কেউ বলবে না আমার বান্দা, আমার দাসী এবং দাস; তার মুনীবকে বলবে না আমার রব (প্রভু)। আর ‘রব্’ শব্দকে তা দ্বারা স্ত্রী লিঙ্গ বানিয়ে বলবে না আমার রববাতী স্ত্রী প্রভু নামে সম্বোধন করবে না। কর্তার বলা উচিত আমার যুবক এবং যুবতী এবং দাসের বলা উচিত আমার নেতা ও আমার নেত্রী। অতঃপর অবশ্যই তোমরা সবাই আল্লাহর দাসসমূহ আর প্রকৃত প্রভু আল্লাহ তা‘আলা। অতএব ‘রব্’ শব্দ আল্লাহ তা‘আলার জন্যই প্রযোজ্য অন্য কারোর জন্য নয়। আর ইমাম মালিক (রহিমাহুল্লাহ) দু‘আ করার সময় سيد শব্দের মাধ্যমে দু‘আ করা তিনি অপছন্দ করেন। سيد শব্দ আল্লাহর নাম হিসেবে কুরআন এবং মুতাওয়াতির হাদীসে প্রমাণ পাওয়া যায় না। আর ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ ‘রব্’ শব্দ দ্বারা আল্লাহ তা‘আলাকে বুঝানো হয়েছে। মুনযিরী (রহিমাহুল্লাহ) বলেছেনঃ ইমাম নাসায়ী এটা সংকলন করেন।

শিক্ষা : হাদীসসমূহ পর্যালোচনা করে বুঝা যায়, যে সমস্ত নাম আল্লাহ তা‘আলার জন্য প্রযোজ্য, তা অন্য কারোর জন্য প্রয়োগ না করা। আর যে সমস্ত শব্দ বা নাম এর ব্যাপারে সন্দেহ রয়েছে ঐ নাম বা শব্দ অন্যের নামের (সৃষ্টি জীবের) জন্য ব্যবহার ও সম্বোধন না করা। যেমন ربة، رب، سيد، امة، عبد، مولى ইত্যাদি। যা আল্লাহর জন্য ব্যবহার করা দরকার তা আল্লাহ তা‘আলার জন্য আর যা অন্যের জন্য ব্যবহার করা যায় তা অন্যের জন্য এটা ছাড়া বিপরীত থেকে অবশ্যই বিরত থাকতে হবে তা না হলে পাপী হতে হবে এবং শির্ক হয়ে যাবে।

(ফাতহুল বারী ৫ম খন্ড, হাঃ ২৫৫২; শারহুন নাবাবী ১৫শ খন্ড, হাঃ ২২৪৯/১৫; ‘আওনুল মা‘বূদ ৮ম খন্ড, হাঃ ৪৯৬৭)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)