৪৬৬৭

পরিচ্ছেদঃ ২. প্রথম অনুচ্ছেদ - অনুমতি প্রার্থনা

৪৬৬৭-[১] আবূ সা’ঈদ আল খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন আমাদের কাছে আবূ মূসা আল আশ্’আরী(রাঃ) এসে বললেনঃ ’উমার(রাঃ) আমার কাছে জনৈক ব্যক্তিকে পাঠিয়ে আমাকে ডেকে পাঠালেন। আমি যথারীতি তাঁর দরজায় উপস্থিত হলাম এবং তিনবার সালাম দিলাম; কিন্তু আমার সালামের উত্তর দেয়া হলো না বিধায় আমি ফিরে গেলাম। অতঃপর (অন্যত্র) ’উমার(রাঃ) আমাকে বললেনঃ আমাদের কাছে আসতে তোমাকে কিসে বারণ করল? আমি বললাম, আমি এসেছিলাম এবং আপনার দরজায় তিনবার সালাম করেছিলাম, কিন্তু আপনাদের কেউই আমার সালামের জবাব দেননি। তখন আমি ফিরে গেলাম। কেননা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বলেছেনঃ যখন তোমাদের কেউ তিনবার অনুমতি প্রার্থনা করে, আর অনুমতি না মেলে, তবে সে যেন ফিরে আসে। ’উমার(রাঃ) এটা শুনে বললেনঃ এ ব্যাপারে তোমাকে অবশ্যই প্রমাণ পেশ করতে হবে। আবূ সা’ঈদ আল খুদরী(রাঃ) বলেনঃ তখন আমি আবূ মূসা আল আশ্’আরী-এর সাথে ’উমার (রাঃ)-এর নিকট গেলাম এবং সাক্ষ্য দিলাম। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ الْإِسْتِئْذَانِ

عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ قَالَ: أَتَانَا أَبُو مُوسَى قَالَ: إِنَّ عُمَرَ أَرْسَلَ إِلَيَّ أَنْ آتِيَهُ فَأَتَيْتُ بَابَهُ فَسَلَّمْتُ ثَلَاثًا فَلَمْ يَرُدَّ عَلَيَّ فَرَجَعْتُ. فَقَالَ: مَا مَنَعَكَ أَنْ تَأْتِيَنَا؟ فَقُلْتُ: إِنِّي أَتَيْتُ فَسَلَّمْتُ عَلَى بَابِكَ ثَلَاثًا فَلم تردَّ عليَّ فَرَجَعْتُ وَقَدْ قَالَ لِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِذَا اسْتَأْذَنَ أَحَدُكُمْ ثَلَاثًا فَلَمْ يُؤْذَنْ لَهُ فَلْيَرْجِعْ» . فَقَالَ عُمَرُ: أَقِمْ عَلَيْهِ الْبَيِّنَةَ. قَالَ أَبُو سَعِيدٍ: فَقُمْتُ مَعَهُ فذهبتُ إِلى عمرَ فشهِدتُ

عن ابي سعيد الخدري قال: اتانا ابو موسى قال: ان عمر ارسل الي ان اتيه فاتيت بابه فسلمت ثلاثا فلم يرد علي فرجعت. فقال: ما منعك ان تاتينا؟ فقلت: اني اتيت فسلمت على بابك ثلاثا فلم ترد علي فرجعت وقد قال لي رسول الله صلى الله عليه وسلم: «اذا استاذن احدكم ثلاثا فلم يوذن له فليرجع» . فقال عمر: اقم عليه البينة. قال ابو سعيد: فقمت معه فذهبت الى عمر فشهدت

ব্যাখ্যাঃ ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ কুরআন, সুন্নাহ ও ইজমায়ে উম্মাতের দলীলের আলোকে বিদ্বানগণ ঐকমত্য পোষণ করেছেন যে, অনুমতি নেয়া শারী‘আতসিদ্ধ। সুন্নাত হলো সালাম দেয়া। অনুমতি চাইবে তিনবার। অতএব সালাম ও অনুমতি। উভয়টি করার কুরআনে স্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে।

সালাম আগে দিবে না অনুমতি আগে চাইবে- এ নিয়ে ‘আলিমগণ মতভেদ করেছেন। তবে হাদীসে যা রয়েছে সেটা সঠিক। যার দরুন বিদ পন্ডিতগণ বলেছেন, আগে সালাম দিবে। তারপর অনুমতি চাইবে। যেমন সে বলবে, ‘‘আস্সালা-মু ‘আলায়কুম’’ আমি কি প্রবেশ করতে পারি? কারণ প্রথমে সালাম দেয়ার ব্যাপারে দু’টি সহীহ হাদীস রয়েছে।

২য় মতে আগে অনুমতি চাইবে। অতঃপর সালাম দিবে।

৩য় মতে, মাওয়ারদী বলেনঃ যদি অনুমতি প্রার্থনাকারীর চোখ প্রবেশ করার পূর্বে বাড়ীর লোকের ওপর পড়ে যায় সেক্ষেত্রে আগে সালাম দিবে। নতুবা আগে অনুমতি চাইবে। তিনবারের বেশি অনুমতি চাওয়া যাবে কিনা? এ নিয়ে কয়েকটি মত পাওয়া যায়। এক মতে, তিনবারের অধিক অনুমতি চাওয়া যাবে না। এরপরে ফিরে আসতে হবে। যেমনটি হাদীসের দাবী। আরেক মতে, যদি সে মনে করে যে, অনুমতিদাতা শুনছে কিন্তু অনুমতি দেয় না তখন সে প্রয়োজনে এর সংখ্যা বাড়াতে পারে। (শারহুন নাবাবী ১৪শ খন্ড, হাঃ ২১৩৫)

তিনবার সালাম দেয়া বা অনুমতি চাওয়ার তত্ত্ব সম্পর্কে ইবনু আবী শায়বাহ্, ‘আলী ইবনু আবূ ত্বালিব থেকে বর্ণনা করে বলেন, প্রথমটি হচ্ছে জানানোর জন্য এবং দ্বিতীয়টি হলো চিন্তা করার জন্য আর ৩য়টি হলো সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য। হয় সে অনুমতি দিবে অথবা প্রত্যাখ্যান করবে। (ফাতহুল বারী ১১শ খন্ড, হাঃ ৬২৪৫)

ইমাম নাবাবী (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ যারা দাবী করে যে, খবরে ওয়াহিদ দ্বারা দলীল গ্রহণ করা যায় না তারা এ হাদীসকে প্রমাণ হিসেবে পেশ করে এবং দাবী করে যে, ‘উমার  আবূ মূসার হাদীসকে খবরে ওয়াহিদ হওয়ার কারণে গ্রহণ করেননি। এটা বাতিল মত। অথচ যারা এ হাদীসকে দলীলের উপযুক্ত মনে করে এবং তার প্রতি ‘আমল করে তারা ঐকমত্যে পৌঁছেছেন। আর এর দলীল স্বয়ং রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, খুলাফায়ে রাশিদীন, সমস্ত সাহাবী ও পরবর্তী অসংখ্য ব্যক্তিদের নিকট থেকে পাওয়া যায়। ‘উমার  আবূ মূসাকে প্রমাণ পেশ করতে বললেন এটা তার কথাকে রদ করার জন্য নয়। বরং ‘উমার  বিদ্‘আতী, মিথ্যুক ও মুনাফিকদের মতো লোকেদের রসূলের ব্যাপারে এমন কথা যা তিনি বলেননি এবং কারো স্বার্থে রসূলের নামে মিথ্যা হাদীস বানানোর অপচেষ্টাকে শংকাবোধ করেছেন। এহেন শংকাবোধের রাস্তাকে বন্ধ করার জন্য আবূ মূসা ব্যতীত অন্যদেরকে সতর্ক করে দিয়েছেন। কারণ ‘উমার  আবূ মূসা (রাঃ)-এর ব্যাপারে এরূপ ধারণার ঊর্ধ্বে রয়েছেন যে, তিনি রসূলের নামে এমন কথা বলবেন যা রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেননি আসলে তিনি এভাবে অন্যদেরকে এ থেকে নিষেধ করেছেন। কারণ যখন অন্যরা আবূ মূসার এ ব্যাপারটি দেখবে অথবা জানতে পারবে তখন যাদের অন্তরে রোগ রয়েছে এবং হাদীস বানিয়ে বলে তারা আবূ মূসার মতো ভয় করবে। ফলে তারা হাদীস তৈরি করা এবং নিশ্চিত বিশ্বাস ছাড়াই হাদীসের প্রতি ঝুকে পড়া থেকে বিরত থাকবে।

এখান থেকে এ কথাও বুঝা যায় যে, খবরে ওয়াহিদ হওয়ার কারণে ‘উমার (রাঃ) আবূ মূসাকে প্রত্যাখ্যান করেননি। আসলে তিনি এ হাদীসের উপর ‘আমল করার জন্য অন্য ব্যক্তির সমর্থন কামনা করেছেন। আর এটা স্বতঃসিদ্ধ যে, দু’জনের খবরকেও খবরে ওয়াহিদ ধরা হয় যতক্ষণ পর্যন্ত মুতাওয়াতিরের পর্যায়ে না পৌঁছে। আবূ মূসা -এর ব্যাপারে উমার -এর যে দুর্বল ধারণা ছিল না- এ ব্যাপারে একাধিক দলীল রয়েছে। যেমন ইমাম মুসলিম আবূ মূসা (রাঃ)-এর বিষয়ে বর্ণনা করেন। উবাই ইবনু কা‘ব (রাঃ) বলেন, হে ইবনুল খত্ত্বাব! আপনি রসূলের কোন সাহাবীকে শাস্তি দিবেন না। তখন ‘উমার  বললেন, সুব্হা-নাল্ল-হ! আমি কিছু শুনেছি যেটার ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়াকে ভালো মনে করেছি। (তুহফাতুল আহওয়াযী ৭ম খন্ড, হাঃ ২৬৯০)

মুওয়াত্ত্বায় রয়েছে, ‘উমার  আবূ মূসা -কে বললেন, মনে রেখ হে আবূ মূসা! আমি তোমাকে অভিযুক্ত করছি না। বরং আমি শংকা করছি যে, মানুষ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নামে বানোয়াট কথা বলবে। (ফাতহুল বারী ১১শ খন্ড, হাঃ ৬২৪৫)

আবূ মূসা (রাঃ)-এর নিকট থেকে ‘উমার -এর প্রমাণ চাওয়া সম্পর্কে বুখারীর ভাষ্যকার ইমাম কিরমানী বলেনঃ এতে বেখেয়াল বা ভুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকায় ‘উমার (রাঃ) তার নিকট থেকে নিশ্চিত হতে চেয়েছিলেন। খবরে ওয়াহিদ হওয়ার কারণে গ্রহণ করেননি, এটা ঠিক নয়। এর দলীল এই যে, ‘উমার (রাঃ) শুধু হাম্বাল ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে ভ্রূণ হত্যার জরিমানা দাসমুক্ত করা সংক্রান্ত খবরে ওয়াহিদকে গ্রহণ করেছেন। এরূপ আরো প্রমাণ আছে যে, ‘উমার  খবরে ওয়াহিদকে গ্রহণ করেছেন, যেমন- ‘আবদুর রহমান ইবনু ‘আওফ (রাঃ)-এর নিকট থেকে জিয্ইয়াহ্ সংক্রান্ত খবরে ওয়াহিদও গ্রহণ করেছেন। কিরমানী আরো বলেনঃ এ হাদীসে এটাও স্পষ্ট বুঝা গেল যে, জ্ঞানী ব্যক্তির নিকটে এমন কোন জ্ঞান অজানা থেকে যায় যা তার চাইতে কম জ্ঞানী লোকের নিকট জানা থাকে। (‘আওনুল মা‘বূদ ৮ম খন্ড, হাঃ ৫১৭১)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৫: শিষ্টাচার (كتاب الآداب)