৪৫১৫

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

৪৫১৫-[২] জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রত্যেক রোগের জন্য ঔষধ রয়েছে। সুতরাং সঠিক ঔষধ যখন রোগের জন্য ব্যবহৃত হয়, তখন আল্লাহ তা’আলার হুকুমে রোগী রোগমুক্ত হয়ে যায়। (মুসলিম)[1]

الْفَصْلُ الْأَوَّلُ

وَعَنْ جَابِرٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لِكُلِّ دَاءٍ دَوَاءٌ فَإِذَا أُصِيبَ دَوَاءٌ الدَّاءَ بَرَأَ بِإِذْنِ اللَّهِ» . رَوَاهُ مُسلم

وعن جابر قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «لكل داء دواء فاذا اصيب دواء الداء برا باذن الله» . رواه مسلم

ব্যাখ্যাঃ রোগ-ব্যাধিতে চিকিৎসা গ্রহণ মুস্তাহাব। এটাই সহাবা, তাবি‘ঈ, মুহাদ্দিসীনে কিরাম, সালাফ-খালাফ তথা পূর্ববর্তী ও পরবর্তী যুগের মানুষের প্রচলিত রীতি হিসেবে সাব্যস্ত। ইমাম কাযী ‘ইয়ায-এর মতে, এ সকল হাদীসের মাধ্যমে দীন ও দুনিয়াবী জ্ঞানের বিষয়টি সাব্যস্ত হয়েছে এবং চিকিৎসাশাস্ত্রের বৈধতাও এর মাধ্যমে স্বীকৃত হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি বিষয় হলো, এ সকল হাদীসের মাধ্যমে কট্টরপন্থী সূফীদের ‘আক্বীদাহ্ বাতিল হিসেবে সাব্যস্ত হয়েছে। যাদের বিশ্বাস হচ্ছে, তাকদীরের প্রতিটি বিষয় আল্লাহ তা‘আলা কর্তৃক নির্ধারিত। অতএব চিকিৎসা গ্রহণের কোন প্রয়োজন নেই। ‘উলামায়ে কিরাম এ হাদীসটি তাদের ভ্রান্ত বিশ্বাস বাতিল হওয়ার ব্যাপারে উৎকৃষ্ট দলীল হিসেবে প্রমাণ করেছেন।

চিকিৎসা গ্রহণের বিষয়টিও আল্লাহর পক্ষ হতে নির্ধারিত। তবে চিকিৎসা গ্রহণের নির্দেশটি এজন্য যে, স্বয়ং নিজ হাতে নিজেকে ধ্বংস হতে মুক্ত রাখা আবশ্যক। যেমন সূরাহ্ আল বাকারায় আল্লাহ তা‘আলা বলেছেনঃ ‘‘তোমরা নিজেদেরকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিও না’’- (সূরাহ্ আল বাকারাহ্ ২ : ১৯৫)। চিকিৎসাশাস্ত্রে পন্ডিত ব্যক্তিদের মতে, রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়া মানেই শরীরের স্বাভাবিক অবস্থার অবনতি হওয়া। আর চিকিৎসার মাধ্যমে তা আবার পূর্বের স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। সঠিক খাবার গ্রহণ ও অন্যান্য নিয়ম বিধি মেনে চলার মাধ্যমে সুস্থতার সংরক্ষণ হয় এবং পথ্যের দ্বারা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এক্ষেত্রে চিকিৎসককে অভিজ্ঞ হওয়াটা জরুরী। তাছাড়া রোগ প্রতিরোধের মূল বিষয়টি নির্ণয় করা চিকিৎসাশাস্ত্রে অতীব জরুরী। এতে ভুল হলে আরোগ্যের জন্য সঠিক পথ্য নির্ণয় করা দুরূহ হয় এবং আরোগ্য বিলম্বিত হয় ও কঠিন হয়ে পড়ে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রদর্শিত চিকিৎসা ব্যবস্থায় শিঙ্গা লাগানো, মধু সেবন করা ও আগুনের ছ্যাঁকা দেয়াকে উত্তম পথ্য হিসেবে নির্ণিত করা হয়েছে। চিকিৎসাশাস্ত্রে অভিজ্ঞদের নিকট এটি একটি অভিনব ও বাস্তবসম্মত চিকিৎসা পদ্ধতি। রোগ-ব্যাধি বিভিন্ন সমস্যার সাথে সংশ্লিষ্ট, যেমন- রক্ত, জন্ডিস, কৃষ্ণবর্ণ ও শেস্নষ্মা। যখন তা রক্তের সাথে সংশ্লিষ্ট হবে তখন রক্ত বের করাই উপযুক্ত চিকিৎসা। বাকী অন্যান্য সমস্যা মলের সাথে সংশ্লিষ্ট। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মধুর কথা বলেছেন। আর রক্তের সমস্যার সমাধানে হিজামাহ্ বা শিঙ্গা লাগানের নির্দেশনা দিয়েছেন। পরিশেষে গরম ছেঁকা দেয়ার কথাও বলেছেন।

প্রতিটি রোগেরই পথ্য রয়েছে। আলোচ্য হাদীসে রোগ-ব্যাধিতে চিকিৎসা গ্রহণের বৈধতার স্বীকৃতি বিবৃত হয়েছে। তবে চিকিৎসার মাধ্যমে নির্ধারিত ভাগ্যলিপি, হায়াত বৃদ্ধি হবে না। আল্লাহ তা‘আলার নির্দেশক্রমে ভাগ্যক্রমে আরোগ্য হবে মাত্র। বিষয়টি সকল মুহাদ্দিসীনে কিরাম, সালাফে সলিহীন ও পরবর্তী যুগের ইমামগণ কর্তৃক স্বীকৃত। তাঁরা আলোচ্য হাদীসের আলোকেই তাঁদের নির্ভরযোগ্য অভিমত পেশ করেছেন।

ইমাম আবূ ‘আবদুল্লাহ আল মাযিরী (রহিমাহুল্লাহ)-এর মতে, আলোচ্য হাদীসটি ইমাম মুসলিম (রহিমাহুল্লাহ) তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থে সংকলিত করেছেন। যেখানে ডায়রিয়ার ক্ষেত্রে মধু সেবনের নির্দেশনা রয়েছে। তবে কেউ কেউ এ ব্যাপারে দ্বিমত পোষণ করে বলেছেনঃ চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে, মধু কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে, এটি আবার কিভাবে ডায়রিয়ার চিকিৎসায় কার্যকর হতে পারে? তেমনিভাবে জ্বরের ক্ষেত্রে পানি ব্যবহারের কারণে ঠাণ্ডা-গরমের মিশ্রণে শরীরে ক্ষতির আশংকা রয়েছে। সম্মানিত ব্যাখ্যাকার বলেনঃ যারা এ ব্যাপারে দ্বিমত পোষণ করেছেন, তাদের জ্ঞানের পরিধি সীমিত বলেই তারা এ ধরনের উদ্ভট মতামত পেশ করেছে। (শারহুন নাবাবী ১৪শ খন্ড, হাঃ ২২০৪-[৬৯])


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-২৩: চিকিৎসা ও ঝাড়-ফুঁক (كتاب الطب والرقى)