৪২৪৬

পরিচ্ছেদঃ ১. প্রথম অনুচ্ছেদ - অতিথি আপ্যায়ন প্রসঙ্গে

৪২৪৬-[৪] আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, কোন একদিন বা রাতের বেলায় রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বের হয়েই আবূ বকর ও ’উমার -কে দেখতে পেলেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেন : কোন জিনিস তোমাদের উভয়কে এ মুহূর্তে ঘর হতে বের হতে বাধ্য করেছে? তারা উভয়ে বললেনঃ ক্ষুধার তাড়না। তখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ সে মহান সত্তার কসম, যাঁর হাতে আমার প্রাণ! যে জিনিস তোমাদের দু’জনকে বের করেছে, আমাকেও সে জিনিস বের করেছে। আচ্ছা! চলো। অতঃপর তাঁরা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে চললেন এবং জনৈক আনসারীর বাড়িতে আসলেন। তখন তিনি ঘরে ছিলেন না। যখনই আনসারীর স্ত্রী রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে দেখতে পেলেন, তখন তিনি তাঁকে খোশ আমদেদ জানালেন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাকে জিজ্ঞেস করলেন, অমুক (অর্থাৎ- তোমার স্বামী) কোথায়? তিনি বললেনঃ তিনি আমাদের জন্য মিষ্টি পানি আনতে গিয়েছেন। ঠিক এমন সময় আনসারী এসে উপস্থিত হলেন। তিনি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সঙ্গীদ্বয়কে দেখে বললেনঃ আলহাম্দুলিল্লাহ! আজকের দিন আমার মতো সম্মানিত মেহমানের সৌভাগ্য লাভকারী আর কেউই নেই।

বর্ণনাকারী (রাবী) বলেন, এ কথা বলেই তিনি বাগানে চলে গেলেন এবং মেহমানদের জন্য এমন একটি খেজুরের ছড়া নিয়ে আসলেন, যার মধ্যে পাকা, শুকনা ও কাঁচা হরেক রকমের খেজুর ছিল। অতঃপর জিজ্ঞেস করলেন : অনুগ্রহ করে আপনারা এটা হতে খেতে থাকুন এবং তিনি একখানা ছুরি হাতে নিলেন। তাঁর উদ্দেশ্য বুঝতে পেরে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে লক্ষ্য করে বললেনঃ সাবধান! দুধওয়ালা বকরী যাবাহ করবে না। অবশেষে তিনি তাদের জন্য একটি বকরী যাবাহ করলেন। তাঁরা বকরীর মাংস ও খেজুরের ছড়া হতে খেলেন এবং পানি পান করলেন। যখন তাঁরা খাদ্য ও পানীয় দ্বারা পরিতৃপ্ত হলেন, তখন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবূ বকর ও ’উমার -কে লক্ষ্য করে বললেনঃ সে মহান সত্তার কসম! যাঁর হাতে আমার প্রাণ, কিয়ামতের দিন নিশ্চয় তোমরা এ সমস্ত নি’আমাত সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে। ক্ষুধা তোমাদেরকে নিজ নিজ ঘর হতে বের করেছিল, অতঃপর গৃহে ফিরে যাওয়ার পূর্বেই তোমরা এ সমস্ত নি’আমাত লাভ করলে। (মুসলিম;[1] আবূ মাস্’ঊদ -এর হাদীস كَانَ رَجُلٌ مِنَ الْاَنْصَارِ ওয়ালীমাহ্’র অধ্যায়ে উল্লেখ করা হয়েছে।)

بَابُ الضِّيَافَةِ

وَعَن أبي هريرةَ قَالَ: خَرَجَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ذَاتَ يَوْم وَلَيْلَة فَإِذَا هُوَ بِأَبِي بَكْرٍ وَعُمَرَ فَقَالَ: «مَا أَخْرَجَكُمَا مِنْ بُيُوتِكُمَا هَذِهِ السَّاعَةَ؟» قَالَا: الْجُوعُ قَالَ: «وَأَنَا وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَأَخْرَجَنِي الَّذِي أَخْرَجَكُمَا قُومُوا» فَقَامُوا مَعَهُ فَأَتَى رَجُلًا مِنَ الْأَنْصَارِ فَإِذَا هُوَ لَيْسَ فِي بَيْتِهِ فَلَمَّا رَأَتْهُ المرأةُ قَالَت: مرْحَبًا وَأهلا فَقَالَ لَهَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَيْنَ فُلَانٌ؟» قَالَتْ: ذَهَبَ يَسْتَعْذِبُ لَنَا مِنَ الْمَاءِ إِذْ جَاءَ الْأَنْصَارِيُّ فَنَظَرَ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَصَاحِبَيْهِ ثُمَّ قَالَ: الْحَمْدُ لِلَّهِ مَا أَحَدٌ الْيَوْمَ أكرمَ أضيافاً مني قَالَ: فانطَلَق فَجَاءَهُمْ بِعِذْقٍ فِيهِ بُسْرٌ وَتَمْرٌ وَرُطَبٌ فَقَالَ: كُلُوا مِنْ هَذِهِ وَأَخَذَ الْمُدْيَةَ فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِيَّاكَ وَالْحَلُوبَ» فَذَبَحَ لَهُمْ فَأَكَلُوا مِنَ الشَّاةِ وَمِنْ ذَلِكَ الْعِذْقِ وَشَرِبُوا فَلَمَّا أَنْ شَبِعُوا وَرَوُوا قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِأَبِي بَكْرٍ وَعُمَرَ: «وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَتُسْأَلُنَّ عَنْ هَذَا النَّعِيمِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَخْرَجَكُمْ مِنْ بُيُوتِكُمُ الْجُوعُ ثُمَّ لَمْ تَرْجِعُوا حَتَّى أَصَابَكُمْ هَذَا النعيمُ» . رَوَاهُ مُسلم. وَذَكَرَ حَدِيثَ أَبِي مَسْعُودٍ: كَانَ رَجُلٌ مِنَ الْأَنْصَار فِي «بَاب الْوَلِيمَة»

وعن ابي هريرة قال: خرج رسول الله صلى الله عليه وسلم ذات يوم وليلة فاذا هو بابي بكر وعمر فقال: «ما اخرجكما من بيوتكما هذه الساعة؟» قالا: الجوع قال: «وانا والذي نفسي بيده لاخرجني الذي اخرجكما قوموا» فقاموا معه فاتى رجلا من الانصار فاذا هو ليس في بيته فلما راته المراة قالت: مرحبا واهلا فقال لها رسول الله صلى الله عليه وسلم: «اين فلان؟» قالت: ذهب يستعذب لنا من الماء اذ جاء الانصاري فنظر الى رسول الله صلى الله عليه وسلم وصاحبيه ثم قال: الحمد لله ما احد اليوم اكرم اضيافا مني قال: فانطلق فجاءهم بعذق فيه بسر وتمر ورطب فقال: كلوا من هذه واخذ المدية فقال له رسول الله صلى الله عليه وسلم: «اياك والحلوب» فذبح لهم فاكلوا من الشاة ومن ذلك العذق وشربوا فلما ان شبعوا ورووا قال رسول الله صلى الله عليه وسلم لابي بكر وعمر: «والذي نفسي بيده لتسالن عن هذا النعيم يوم القيامة اخرجكم من بيوتكم الجوع ثم لم ترجعوا حتى اصابكم هذا النعيم» . رواه مسلم. وذكر حديث ابي مسعود: كان رجل من الانصار في «باب الوليمة»

ব্যাখ্যাঃ (الْحَمْدُ لِلّٰهِ مَا أَحَدٌ الْيَوْمَ أكرمَ أضيافًا مني) এখানে অনেক শিক্ষা রয়েছে। তন্মধ্যে একটি শিক্ষা : প্রকাশ্য কোন নি‘আমাত অর্জিত হলে মহান আল্লাহর প্রশংসা করা মুস্তাহাব।

আরেকটি শিক্ষা হলো সুসংবাদ প্রকাশ করা মুস্তাহাব, মেহমান আসার ফলে তার সামনে খুশি হওয়া ও মহান আল্লাহর প্রশংসা করাও মুস্তাহাব। মেহমানের ফিতনার ব্যাপারে ভয় না থাকলে তার সামনেই প্রশংসা করা যায়। আর ভয় থাকলে সামনে প্রশংসা করা যাবে না।

আরো একটি শিক্ষা হলো হাদীসে আনসারী সাহাবী (রাঃ)-এর মর্যাদা, তার ভাষার প্রতি দক্ষতা ও তার বিরাট পরিচিতি পাওয়া যায়, কারণ সে অল্প কথায় অনেক কিছু সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছে। (শারহুন নাবাবী ১৩শ খন্ড, হাঃ ২০৩৮)

(فانطَلَق فَجَاءَهُمْ بِعِذْقٍ فِيهِ بُسْرٌ وَتَمْرٌ وَرُطَبٌ فَقَالَ: كُلُوا مِنْ هٰذِه) এখানে عِذْقٍ শব্দের অর্থ খেজুরের কাঁদি (থোকা)। খেজুরের কাঁদি আনার কারণ হলো মেহমানরা যেন ইচ্ছামত খেতে পারে।

এখানে শিক্ষণীয় বিষয় হলো : মেহমানকে রুটি, গোশত ইত্যাদি খাবারের পূর্বে ফল খেতে দেয়া মুস্তাহাব। মেহমানের জন্য সহজ জিনিস দিয়ে শুরু করা মুস্তাহাব। এরপর তার জন্য যে খাবার তৈরি করা হয়েছে তা দিয়ে তাকে সম্মান করা। বিশেষ করে যখন বুঝবে এখন তার খাওয়ার দরকার তখন খাবার উপস্থাপন করবে। প্রয়োজনের কারণে সে কখনও খুব তাড়াহুড়া করে, আবার কখনও দ্রুত ফিরে যওয়ার কারণে তার জন্য যা তৈরি করা হচ্ছে তার জন্য অপেক্ষা করা কঠিন হয়। সালাফদের একটি দল মেহমানকে কষ্ট দেয়াকে অপছন্দ করেছেন। আর তা হলো এভাবে যে, বাহ্যিকভাবে বাড়ীর মালিকের যে কষ্ট হয়, কারণ সেটা মেহমানের প্রতি পূর্ণ আনন্দ ও ইখলাস থেকে বাধা দেয়। আবার কখনও সে এমন কিছু প্রকাশ করে যা মেহমানকে কষ্ট দেয়। সে এমন কিছু উপস্থিত করে যাতে মেহমান তার অবস্থা বুঝতে পারে যে, সে তার জন্য কষ্টে পড়ছে। সে তাকে ব্যস্ততায় ফেলেছে সে জন্য তার সাথে সে সহানুভূতি দেখাতে পারছে না। আর এ সকল কাজই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এ কথার বিরোধী তা হলো :

مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ فَلْيُكْرِمْ ضَيْفَه কেননা তার সাথে পূর্ণ সম্মান দেখানো হচ্ছে না, তার আগমনে আনন্দ প্রকাশ করা হচ্ছে না। পক্ষান্তরে আনসার সাহাবী সে তার ছাগল যাবাহ করে দিল। এতে তার কোন কষ্ট হয়নি। বরং সে সব ছাগল যাবাহ করতে পারলে এমনকি তার সব মাল রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ও তাঁর দুই সঙ্গীর -এর জন্য খরচ করতে পারলে নিজেকে ধন্য মনে করত। (শারহুন নাবাবী ১৩শ খন্ড, হাঃ ২০৩৮)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব ২১: খাদ্য (كتاب الأطعمة)