৩৫৫৫

পরিচ্ছেদঃ প্রথম অনুচ্ছেদ

রাগিব বলেনঃ হাদ্দ তথা দণ্ড হলো দু’টি বস্তুর মাঝে বাধা প্রদানকারী যা একে অপরের সাথে মিশে বাধা প্রদান করে আর যিনা এবং মদপানের দণ্ডকে বাধা দানকারী। এজন্য বলা হয় দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে পুনরায় তা করতে বাধা দেয় এবং অন্যকেও ঐ অপরাধ করতে বাধা দেয়।

ইবনু হুমাম বলেনঃ সমাজে দণ্ডবিধির বাস্তবায়নে অপূর্ব সৌন্দর্য এসেছে যা বর্ণনা ও লিখে শেষ করা যাবে না। এজন্য ফাকীহ ও অন্যান্যরা দণ্ডবিধি পরিচয়ে একই মন্তব্য করেছেন যে, অবশ্যম্ভাবী বিপর্যয়মূলক কার্যক্রম থেকে বিরত রাখে। যিনাতে প্রজন্ম বিনাশের ভূমিকা রয়েছে তথা বংশনামায় সন্দেহের অবকাশ রয়েছে আর অন্যান্য দণ্ডগুলো জ্ঞান লোপ, সম্মানহানী এবং মানুষের সম্পদ অন্যায়ভাবে আত্মসাতের মধ্যে, এগুলো ’আমলের সাথে জড়িত। এজন্য অন্যায়ভাবে সম্পদ আত্মসাৎ, সম্মানের উপর আঘাত, যিনা, নেশা- এগুলা সকল যুগের ধর্মে বৈধ করা হয়নি। যদিও পানি পান করাকে বৈধ করা হয়েছে (পৃথিবীর) যে কোনো স্থানে আপনি অন্যের পানি গ্রহণ করলে আত্মসাৎ করা হবে না বা দণ্ডের আওতায় আসবে না।

ইসলামী শারী’আত এ দণ্ড প্রয়োগের মূল উদ্দেশ্য হলো তিরস্কার বা ধমকানো যা দ্বারা বান্দার কষ্ট হয়। আর কোনো কোনো শায়খরা বলেছেন, শারী’আতের দণ্ডবিধির জ্ঞান রাখার নির্যাস হলো ঐ সকল কাজে অগ্রগামী হওয়া থেকে বিরত থাকা এবং দণ্ড বাস্তবায়নের পরে পুনরায় তা করতে বাধা প্রদান।


৩৫৫৫-[১] আবূ হুরায়রাহ্ এবং যায়দ ইবনু খালিদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তারা উভয়ে বলেন, দুই বিবদমান ব্যক্তি তাদের অভিযোগ নিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট আসলো। তন্মধ্যে একজন বলল, আমাদের মধ্যে আল্লাহর কিতাব দ্বারা ইনসাফ করুন। অপরজনও বলল, হ্যাঁ, হে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! অবশ্যই আমাদের মাঝে আল্লাহর কিতাব দ্বারা ইনসাফ করুন এবং আমাকে এতদসম্পর্কে বলার অনুমতি দিন। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আচ্ছা বল! লোকটি বলল, আমার ছেলে তার চাকর ছিল এবং সে তার স্ত্রীর সাথে যিনা করেছে। অতঃপর লোকেরা আমাকে বলল, আমার ছেলের শাস্তি হলো ’রজম’ (পাথর নিক্ষেপে হত্যা), কিন্তু আমি রজমের পরিবর্তে একশত ছাগল ও একটি দাসী ফিদ্ইয়াহ্ হিসেবে আদায় করেছি।

পরে আমি ’আলিমগণের নিকট জিজ্ঞেস করলে তারা জানালেন যে, আমার ছেলের শাস্তি হলো একশত চাবুক এবং এক বছরের জন্য দেশান্তর। আর তার স্ত্রীর শাস্তি হলো ’রজম’। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, জেনে রেখো! কসম ঐ আল্লাহর! যাঁর হাতে আমার প্রাণ, অবশ্যই আমি তোমাদের মাঝে আল্লাহর কিতাব অনুযায়ী বিচার-ফায়সালা করব। আর তা হলো, তোমার একশত ছাগল ও দাসী ফেরত নিয়ে তোমার ছেলেকে একশত চাবুক মারা হবে এবং এক বছরের জন্যে দেশান্তর করা হবে। আর হে উনায়স! তুমি সকালে তার স্ত্রীর নিকট যাও, যদি সে যিনায় লিপ্ত হওয়াকে স্বীকার করে, তাহলে তার প্রতি ’রজম’ অবধারিত কর। অতঃপর মহিলাটি স্বীকার করল এবং তিনি তাকে রজম করলেন। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

اَلْفَصْلُ الْأَوَّلُ

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ وَزَيْدِ بْنِ خَالِدٍ: أَنَّ رَجُلَيْنِ اخْتَصَمَا إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ أَحَدُهُمَا: اقْضِ بَيْنَنَا بِكِتَابِ اللَّهِ وَقَالَ الْآخَرُ: أَجَلْ يَا رَسُولَ اللَّهِ فاقْضِ بَيْننَا بكتابِ الله وائذَنْ لِي أَنْ أَتَكَلَّمَ قَالَ: «تَكَلَّمْ» قَالَ: إِنَّ ابْنِي كَانَ عَسِيفًا عَلَى هَذَا فَزَنَى بِامْرَأَتِهِ فَأَخْبرُونِي أنَّ على ابْني الرَّجْم فاقتديت مِنْهُ بِمِائَةِ شَاةٍ وَبِجَارِيَةٍ لِي ثُمَّ إِنِّي سَأَلْتُ أَهْلَ الْعِلْمِ فَأَخْبَرُونِي أَنَّ عَلَى ابْنِي جَلْدَ مِائَةٍ وَتَغْرِيبَ عَامٍ وَإِنَّمَا الرَّجْمُ عَلَى امْرَأَتِهِ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَمَا وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَأَقْضِيَنَّ بَيْنَكُمَا بِكِتَابِ اللَّهِ أَمَّا غَنَمُكَ وَجَارِيَتُكَ فَرَدٌّ عَلَيْكَ وَأَمَّا ابْنُكَ فَعَلَيْهِ جَلْدُ مِائَةٍ وَتَغْرِيبُ عَامٍ وَأَمَّا أَنْتَ يَا أُنَيْسُ فَاغْدُ إِلَى امْرَأَةِ هَذَا فَإِن اعْترفت فارجمها» فَاعْترفت فرجمها

عن ابي هريرة وزيد بن خالد: ان رجلين اختصما الى رسول الله صلى الله عليه وسلم فقال احدهما: اقض بيننا بكتاب الله وقال الاخر: اجل يا رسول الله فاقض بيننا بكتاب الله واىذن لي ان اتكلم قال: «تكلم» قال: ان ابني كان عسيفا على هذا فزنى بامراته فاخبروني ان على ابني الرجم فاقتديت منه بماىة شاة وبجارية لي ثم اني سالت اهل العلم فاخبروني ان على ابني جلد ماىة وتغريب عام وانما الرجم على امراته فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «اما والذي نفسي بيده لاقضين بينكما بكتاب الله اما غنمك وجاريتك فرد عليك واما ابنك فعليه جلد ماىة وتغريب عام واما انت يا انيس فاغد الى امراة هذا فان اعترفت فارجمها» فاعترفت فرجمها

ব্যাখ্যা: (اِقْضِ بَيْنَنَا بِكِتَابِ اللّٰهِ) আমি অবশ্যই তোমাদেরকে আল্লাহর কিতাব দ্বারা ফায়সালা করবোঃ উদ্দেশ্য সম্ভাবনা রয়েছে আল্লাহর আইন দ্বারা।
কারো মতে আল্লাহ তা‘আলা এ আয়াতের প্রতি ইঙ্গিত বহন করে, ‘‘না আল্লাহ তা‘আলা অন্য কোনো পথ নির্দেশ বের করেন’’- (সূরা আন্ নিসা ৪ : ১৫)।
আর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে তাফসীর করেছেন বিবাহকারীদের রজম যা ইতিপূর্বে ‘উবাদাহ্ ইবনুস্ সামিত-এর হাদীসে আলোচনা গত হয়েছে।
কারো মতে এ আয়াতের প্রতি ইঙ্গিত বহন করে।

«الشَّيْخُ وَالشَّيْخَةُ إِذَا زَنَيَا فَارْجُمُوهُمَا» যখন বিবাহিত পুরুষ বা মহিলা যিনা করে তাদেরকে রজম করো (রজম হলো কোমর পর্যন্ত গেরে পাথর মেরে হত্যা করা) আয়াতটির তিলাওয়াত মানসূখ হয়েছে কিন্তু হুকুম এখনও অবশিষ্ট রয়েছে। এর উপর ভিত্তি করে বেত্রাঘাত গ্রহণ করা হয়েছে অত্র আয়াতে।

(الزانية والزاني) যিনাকারিণী ও যিনাকারী : কারো মতে উদ্দেশ্য হলো তাদের ছাগল গ্রহণের আপোষকে বাতিল করা।

(سَأَلْتُ أَهْلَ الْعِلْمِ) এতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ব্যতিরেকে তাঁর সময়কালে অন্য কারো কাছে ফতোয়া চাওয়া বৈধ, কেননা রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিষয়টিকে অস্বীকার করেননি। (শারহে মুসলিম ১১শ খন্ড, হাঃ ১৬৯৭)

আরো বৈধতা প্রমাণিত হয় যে, বড় ‘আলিম থাকা সত্ত্বেও ছোট ‘আলিমের নিকট ফতোয়া চাওয়া বৈধ।

(فَإِنْ اِعْتَرَفَتْ) যদি মহিলা যিনার স্বীকৃতি দেয় কুসতুলানী বলেনঃ মহিলার নিকট উনায়সকে পাঠালে তাকে জানানো যে, এই লোকটি তার ছেলেকে দিয়ে তার দুর্নাম ছড়াচ্ছে। তাহলে মিথ্যা তুহমত দেয়ার জন্য তার হাদ্দ বা দণ্ড কার্যকর করা হবে যদি সে চায় অথবা ক্ষমা করবে তবে যদি সে স্বীকৃতি দেয় তাহলে মিথ্যা তহমতের হাদ্দ কার্যকর হবে না বরং মহিলার যিনার হাদ্দ কার্যকর হবে আর তা রজম যেহেতু সে বিবাহিত।

উনায়স গেলেন তার নিকট এবং জিজ্ঞেস করলে সে স্বীকার করে, ফলে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে রজমের আদেশ দিলেন। (‘আওনুল মা‘বূদ ৭ম খন্ড, হাঃ ৪৪৩৫)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৭: দণ্ডবিধি (كتاب الحدود)