৩৫১৪

পরিচ্ছেদঃ ২. প্রথম অনুচ্ছেদ - যে সব অপরাধের ক্ষতিপূরণ (জরিমানা) নেই

৩৫১৪-[৫] উক্ত রাবী [আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি- কোনো ব্যক্তি যদি অনুমতি ব্যতীত তোমার ঘরে উঁকি মারে যাকে তুমি অনুমতি দাওনি আর তুমি যদি তাকে কোনো কঙ্কর নিক্ষেপ করে তার চক্ষু ফুঁড়ে দাও, এতে তোমার কোনো অপরাধ নেই। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ مَا يُضْمَنُ مِنَ الْجِنَايَاتِ

وَعَنْهُ أَنَّهُ سَمِعَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: «لَوِ اطَّلَعَ فِي بَيْتِكَ أحدٌ ولمْ تَأذن لَهُ فخذفته بحصاة ففتأت عَيْنَهُ مَا كَانَ عَلَيْكَ مِنْ جُنَاحٍ»

وعنه انه سمع رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول: «لو اطلع في بيتك احد ولم تاذن له فخذفته بحصاة ففتات عينه ما كان عليك من جناح»

ব্যাখ্যা: হাদীসে সাব্যস্ত হলো যে, চক্ষু ফুঁড়লে তার কোনো অপরাধ বা দোষ নেই। অন্য একটি হাদীসে প্রখ্যাত সাহাবী আবূ হুরায়রাহ্ -এর বর্ণনায় রয়েছে,

مِنِ اطَّلَعَ فِي بَيْتِ قَوْمٍ بِغَيْرِ إِذْنِهِمْ فَقَدْ حَلَّ لَهُمْ أَنْ يَفْقَئُوا عَيْنَه

বাড়ির লোকেদের অনুমতি ছাড়া কারো বাড়িতে উঁকি দিলে এর ফায়সালা হলো তার (উঁকিদাতার) চক্ষুকে ফুড়িয়ে ফেলবে। কিন্তু যারা মনে করেন- جُنَاحٍ-এর অর্থ إثم তথা গুনাহ অর্থাৎ চক্ষু ফুঁড়লে গুনাহ হবে না তবে এর দিয়াত প্রদান করতে হবে। যেহেতু গুনাহ মাফের দ্বারা দিয়াত রহিত হয় না। কেননা দিয়াতের আবশ্যকতা হাদীসের দৃষ্টিভঙ্গির দাবী। তাদের এই মতের জবাব উপরোক্ত হাদীসে বিদ্যমান।
কারণ সমাধানের প্রমাণ কিসাস ও দিয়াত সাব্যস্ত হওয়াকে বাধা দেয়। আরো একটি আবূ হুরায়রাহ্ -এর হাদীসে রয়েছে যা সর্বাধিক স্পষ্ট ও যাকে ইবনু হিব্বান ও বায়হাক্বী সহীহ বলেছেন। প্রত্যেকে বাশীর বিন নাহীক-এর রিওয়ায়াত উল্লেখ করেন। যথা : কোনো ব্যক্তি লোকজনের বাড়িতে তাদের অনুমতি ছাড়াই উঁকি দিলে তারা তার চক্ষুকে বিদ্ধ করে দেয় তাহলে কোনো কিসাস নেই, রক্তমূল্যও নেই।

(الِاسْتِئْذَانُ) ‘অনুমতি প্রার্থনা’ শুধু গায়ের মাহরামের জন্য খাস নয় বরং তা যে দেখা দিবে তাদের প্রত্যেকের প্রয়োজন যদিও মাতা ও বোন হয়।

সহীহ মুসলিম-এর ভাষ্যকার বলেনঃ অনুমতি প্রার্থনা শারী‘আতের নির্দেশ। যাতে দৃষ্টি নিষিদ্ধ বস্তুর উপরে আপতিত না হয় সেই জন্য শারী‘আত অনুমতি প্রার্থনার প্রবর্তন করেছে। (শারহে মুসলিম ১৪ খন্ড, হাঃ ২১৫৮)

এ হাদীস দ্বারা গোয়েন্দার প্রতি তীর নিক্ষেপের প্রমাণ পেশ করা হয়েছে। যদি সে হালকা বস্তু দ্বারা সরে না পড়ে তবে এর জন্য ভারি বস্তু ব্যবহার করা জায়িয। এতে সে যদি নিহত হয় বা কোনো অঙ্গের ক্ষতি হয় তবে এর দিয়াত বা কিসাস বাতিল।

সহীহ মুসলিম-এর ভাষ্যকার বলেনঃ এ হাদীসে উঁকিদাতার চোখে হালকা বস্তুর নিক্ষেপণের বৈধতা রয়েছে। তাই যখন মাহরাম মহিলাহীন গৃহে কেউ তাকালে তার প্রতি হালকা বস্তু নিক্ষেপ করায় চক্ষু বিদ্ধ হলে এতে কোনো দিয়াত বা রক্তপণ নেই। (শারহে মুসলিম ১৪ খন্ড, হাঃ ২১৫৭)

মালিকী মাযহাবের অনুসারীগণ ক্বিসাসের বিধান প্রযোজ্য বলে মত ব্যক্ত করেছেন। তারা আরো বলেন যে, চক্ষু অথবা অন্য কোনো অঙ্গ ক্ষতি সাধনের ইচ্ছা পোষণ করা ঠিক নয়। তারা এর কারণ হিসেবে বলেন যে, অপরাধকে অপরাধ দ্বারা বা পাপকে পাপ দ্বারা জবাব দেয়া ঠিক নয়।

জুমহূর ‘উলামার জবাবে বলেনঃ অনুমতিপ্রাপ্ত ব্যক্তির অনুমতি নিশ্চিত হলে সেটা তখন পাপ থাকে না। তবে কাজটা উপরোক্ত কারণ থেকে মুক্ত হলে সেটাকে পাপ বলে গণ্য করা হয়, অথচ তারা আক্রমণকারীকে জীবন দিয়ে হলেও প্রতিহত করা জায়িয মর্মে ঐকমত্য পোষণ করেছেন।

মালিকী মতাবলম্বী হাদীসটির উত্তর প্রদানে বলেন- হাদীস দ্বারা বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়ার ও ভীতি প্রদর্শন করার ব্যাপারটি বর্ণিত হয়েছে। ইমাম আবূ হানীফাও এই মতটির উপর সমর্থন যুগিয়েছেন।
(মিরকাতুল মাফাতীহ)

কিন্তু মালিকী মাযহাব মতাবলম্বী কারণ বর্ণনা করে বলেন, এই মর্মে ইজমা হয়েছে যে, যে ব্যক্তি ইচ্ছা করে কারো লজ্জাস্থানের প্রতি নজর দেয় তাহলে তার চোখকে ফুঁড়ে দেয়া বৈধ নয়। আর যে ব্যক্তি চক্ষুকে ফুঁড়ে উপড়িয়ে ফেলবে তাকে এর দায় গ্রহণ করতে হবে। ইমাম কুরতুবী উক্ত ইজমা প্রমাণিত হবার ব্যাপারে বিতর্কে লিপ্ত হয়েছেন। তিনি বলেনঃ নিশ্চয় হাদীসটি সব উকি দিয়ে দর্শনকারীকে শামিল করে। যখন ধারণাবশত উঁকিদাতা এর অন্তর্ভুক্ত তখন অনুসন্ধানী উঁকিদাতা আরো অধিক অন্তর্ভুক্ত।
ইমাম ইবনু হাজার ‘আস্ক্বালানী বলেনঃ এটা বিতর্কিত বিষয়। কেননা বাড়ির অভ্যন্তরে তাকানো কোনো নির্দিষ্ট জিনিসের প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ করাকে সীমাবদ্ধ করে না। উদাহরণস্বরূপ কারো লজ্জাস্থান বরং তা অন্দরমহলকে উন্মোচন করার শামিল। যাকে বাড়ির মালিক গোপনে রাখতে চায় এবং যার প্রতি কারো নজর দেয়া ঠিক নয়। আর এ কারণে শারী‘আতে গোয়েন্দাগীরিকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আর এ পথকে বন্ধ করার জন্য এর শাস্তির বিধান রয়েছে। আর দাবীকৃত ইজমা যদি ঠিক হতো তবে এই খাস বিধানের অবতারণা শারী‘আতের মধ্যে থাকত না।

সর্বজনবিদিত ব্যাপার হলো : কোনো বিবেকবান লোকের নিকটে অন্য ব্যক্তি কর্তৃক তার স্ত্রীর বা মেয়ের মুখমণ্ডলের প্রতি নজর দেয়া খুব কঠিন। অনুরূপভাবে স্বীয় স্ত্রীর সাথে অপরিচিত ব্যক্তি কর্তৃক নির্জন বাসকে অবলোকন করা বিশেষ অঙ্গকে খোলা রাখা অবস্থার চেয়ে আরো বড় কঠিন ব্যাপার।

ইমাম কুরতুবী, যার প্রতি নজর দেয়া হয় এমন ব্যক্তির জন্য উঁকিদাতাকে প্রতিহত করা বাধ্যতামূলক করেছেন। ইমাম শাফি‘ঈ-এর দৃষ্টিকোণ থেকে এই সূরাতে এটা শারী‘আতসম্মত নয়। পাথর ছোঁড়ার পূর্বে ভীতিপ্রদর্শন শর্ত কিনা- এই ব্যাপারে দু’টি মত রয়েছে। কেউ বলেছেন, ভীতিপ্রদর্শন শর্ত যেমন আক্রমণকারীকে প্রতিহত করা। তবে সর্বাধিক বিশুদ্ধ মত হলো ভীতিপ্রদর্শন শর্ত নয়।

সহীহ মুসলিম-এর ব্যাখ্যাকারও এই মতের প্রতি ধাবিত হয়েছেন। তিনি বলেন, ভীতিপ্রদর্শনের পরে ছুঁড়ে মারা বৈধ ও অধিক শুদ্ধ।
আড়িপাতা এর অন্তর্ভুক্ত কিনা- এই ব্যাপারে দু’টি মত। অধিক শুদ্ধ মত হলো আড়িপাতা এর শামিল নয়। কেননা গোপন কথা আড়ি পেতে শুনার চেয়ে লজ্জাস্থানের দিকে তাকানো বেশি মারাত্মক।

কিন্তু যার বাড়িতে স্বামী বা স্ত্রী মাহরাম ব্যক্তি অথবা ধন-সম্পদ আছে সে তা পর্যবেক্ষণ করার ইচ্ছা পোষণ করলে তার প্রতি কিছু ছুঁড়ে মারা নিষেধ। কারণ সেটা অস্পষ্ট বিষয়। কেউ বলেন কোনো তফাৎ নেই। কেউ বলেনঃ যদি গৃহে গোপন কোনো কিছু না থাকে আর তথায় অন্য কেউ অবস্থান করে তবে ভীতিপ্রদর্শন করবে। কারণ এতে সে বিরত হবে। অন্যথায় আঘাত করা জায়িয। আর যদি গৃহে শুধু একজন মালিক বা বাসিন্দা থাকে তবে ভীতিপ্রদর্শনের পূর্বে কিছু ছুঁড়ে মারা বৈধ নয়। কিন্তু হ্যাঁ, যদি সে গোপনাঙ্গ খোলা অবস্থায় থাকে তাহলে জায়িয।

কেউ বলেনঃ সর্বাবস্থায় গৃহের অভ্যন্তরে উঁকি দেয়া ব্যক্তিকে কিছু নিক্ষেপ করা বৈধ। (ফাতহুল বারী ১২ খন্ড, হাঃ ৬৯০২)


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৬: কিসাস (প্রতিশোধ) (كتاب القصاص)