৩৩০২

পরিচ্ছেদঃ ১২. তৃতীয় অনুচ্ছেদ - তিন তালাকপ্রাপ্তা রমণীর বর্ণনা

৩৩০২-[৮] ’ইকরিমাহ্ (রহঃ) ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তি স্বীয় স্ত্রীর সাথে যিহার করে, কিন্তু কাফফারা দেয়ার পূর্বেই তার সাথে সহবাস করে বসে। অতঃপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে এতদসম্পর্কে বর্ণনা করে। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কেন এরূপ করলে? সে বলল, হে আল্লাহর রসূল! আমি চাঁদের আলোতে তার পায়ের সৌন্দর্যতা দেখে নিজেকে সংবরণ করতে পারিনি। এতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হেসে ফেললেন এবং বললেন, কাফফারা দেয়ার পূর্বে যেন তার সংস্পর্শ হতে বিরত থাকে। (ইবনু মাজাহ)[1]

ইমাম তিরমিযী (রহঃ)-ও অনুরূপ বর্ণনা করে বলেছেন- হাদীসটি হাসান, সহীহ, গরীব।

আবূ দাঊদ ও নাসায়ী মুসনাদ ও মুরসালরূপে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। আর ইমাম নাসায়ী (রহঃ) বলেন, হাদীসটি মুসনাদ অপেক্ষা মুরসাল হওয়াই অধিক সঠিক।

عَنْ عِكْرِمَةَ عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ: أَنَّ رَجُلًا ظَاهَرَ مِنِ امْرَأَتِهِ فَغَشِيَهَا قَبْلَ أَنْ يَكَفِّرَ فَأَتَى النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَذَكَرَ ذَلِكَ لَهُ فَقَالَ: «مَا حَمَلَكَ عَلَى ذَلِكَ؟» قَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ رَأَيْتُ بَيَاضَ حِجْلَيْهَا فِي الْقَمَرِ فَلَمْ أَمْلِكْ نَفْسِي أَنْ وَقَعَتُ عَلَيْهَا فَضَحِكَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَمَرَهُ أَنْ لَا يَقْرَبَهَا حَتَّى يُكَفِّرَ. رَوَاهُ ابْنُ مَاجَهْ. وَرَوَى التِّرْمِذِيُّ نَحْوَهُ وَقَالَ: هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ غَرِيبٌ
وَرَوَى أَبُو دَاوُدَ وَالنَّسَائِيُّ نَحْوَهُ مُسْنَدًا وَمُرْسَلًا وَقَالَ النَّسَائِيُّ: المُرسل أوْلى بالصَّوابِ من المسْندِ

عن عكرمة عن ابن عباس: ان رجلا ظاهر من امراته فغشيها قبل ان يكفر فاتى النبي صلى الله عليه وسلم فذكر ذلك له فقال: «ما حملك على ذلك؟» قال: يا رسول الله رايت بياض حجليها في القمر فلم املك نفسي ان وقعت عليها فضحك رسول الله صلى الله عليه وسلم وامره ان لا يقربها حتى يكفر. رواه ابن ماجه. وروى الترمذي نحوه وقال: هذا حديث حسن صحيح غريب وروى ابو داود والنساىي نحوه مسندا ومرسلا وقال النساىي: المرسل اولى بالصواب من المسند

ব্যাখ্যা: بَيَاضَ حِجْلَيْهَا)) তার দুই পায়ের শুভ্রতা। حجل শব্দটির ‘হা’ হরফে যের বা যবর দু’ ভাবেই উচ্চারিত হয়। অর্থ হলো পায়ের নূপুর। তার পায়ের পায়ের শুভ্রতা বলে সম্ভবত তার পায়ের সুন্দর রূপের দিকে ইঙ্গিত করেছেন। কোনো কোনো বর্ণনায় بياض ساقيها শব্দ এসেছে। অর্থাৎ তার পায়ের গোছার শুভ্রতা। এই বর্ণনা থেকে স্পষ্ট হয় যে, তার পায়ের সুন্দর রূপের দিকে ইঙ্গিত করাই সাহাবীর উদ্দেশ্য।

(فَلَمْ أَمْلِكْ نَفْسِىْ) আমি আমার নাফসের মালিক হতে পারিনি। অর্থাৎ তার পায়ের রূপ দেখে আমি নিজেকে সংবরণ করতে পারিনি।

(وَأَمَرَه أَنْ لَا يَقْرَبَهَا حَتّٰى يُكَفِّرَ) অর্থাৎ কাফফারা না দিয়ে তাকে স্ত্রীর নিকট যেতে বারণ করেন। এই হাদীস থেকে প্রমাণ হয় যে, যিহারকারী ব্যক্তি অবশ্যই স্ত্রীর নিকট গমনের পূর্বে কাফফারাহ্ দিয়ে দিবে। কাফফারা না দিয়ে গমন করলে সে গুনাহগার হবে। তবে গুনাহগার হওয়ার সাথে সাথে যিহারের কাফফারা ছাড়া পূর্বে গমনের কারণে অতিরিক্ত আরেকটি কাফফারা দিতে হবে কিনা, তার আলোচনা ইতোপূর্বে করা হয়েছে।

[বর্ণিত হাদীসটির মাধ্যমে বুঝা যায় যে, তাকে অতিরিক্ত আরেকটি কাফফারা দিতে হবে না। কেননা এখানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকটিকে নির্দেশ দিলেন, সে যেন কাফফারা না দিয়ে স্ত্রীর নিকট না যায়। এটা অবশ্যই যিহারের কাফফারা। বাকী সে যে একবার চলে গেল এজন্য তাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অতিরিক্ত কোনো কাফফারার নির্দেশ দেননি।] (সম্পাদক)

হাদীস থেকে আমরা জানতে পারি যে, স্ত্রীর সাথে যিহার করলে কাফফারা আদায় না করে তার সাথে সহবাস না-জায়িয বা অবৈধ। তবে সহবাস ছাড়া সহবাসের প্রাসঙ্গিক কর্ম বৈধ কিনা- এ ব্যাপারে মুল্লা ‘আলী কারী মিরকাতুল মাফাতীহে লিখেন, ‘‘এরপর জেনে রাখো, ইমাম আবূ হানীফাহ্, ইমাম মালিক (রহঃ)-গণের নিকট সহবাসের প্রাসঙ্গিক বা সহবাসের দিকে আকৃষ্ট করে এমন কাজ হারাম। আর এটা যুহায়রী, আওযা‘ঈ, নাখ‘ঈ-এর মত। ইমাম শাফি‘ঈ (রহঃ)-এরও একটি মত। ইমাম আহমাদ (রহঃ) থেকে একটি বর্ণনা। ইবনুল হুমাম বলেন, ‘প্রকৃত কথা হলো, যিহারের মধ্যে সহবাসের প্রাসঙ্গিক বিষয় নিষেধের ব্যাপারটি মানসূস অর্থাৎ স্পষ্ট উদ্ধৃত। কেননা আল্লাহ তা‘আলা বলেন, مِنْ قَبْلِ أَنْ يَتَمَاسَّا অর্থাৎ ‘‘স্পর্শ করার পূর্বে’’- (সূরা আল মুজাদালাহ্ ৫৮ : ৩)। এখানে রূপক অর্থ সহবাস না নিয়ে প্রকৃত অর্থ স্পর্শ নেয়া সম্ভব। আর সহবাস হারাম হয়ে যাবে, কেননা তা স্পর্শের অন্তর্ভুক্ত। অতএব স্পর্শ সহবাস ও স্পর্শ সবই নস্ দ্বারা হারাম হয়ে গেলো।’’ (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
বর্ণনাকারীঃ ইকরিমা (রহঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৩: বিবাহ (كتاب النكاح)