পরিচ্ছেদঃ ১১. প্রথম অনুচ্ছেদ - খুল্‘ই (খুলা‘ তালাক) ও তালাক প্রসঙ্গে
৩২৭৮-[৫] ’আয়িশাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহধর্মিণী যায়নাব বিনতু জাহশ-এর নিকট তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) (কিছু সময় বেশি) অবস্থান করতেন। অতঃপর একদিন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর নিকট মধু পান করেন। এ সংবাদ পেয়ে আমি ও হাফসাহ্ উভয়ে পরামর্শ করলাম যে, আমাদের মধ্যে যার নিকটই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উপস্থিত হবেন, সে যেন বলে, আমি আপনার (মুখ) হতে মাগাফীর-এর (দুর্গন্ধযুক্ত ফলের রস যা মৌমাছি সঞ্চয়ন করে) গন্ধ পাচ্ছি, আপনি কি মাগাফীর খেয়েছেন? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁদের [’আয়িশাহ্ ও হাফসাহ্ (রাঃ)] কোনো একজনের নিকট পৌঁছলে একজন বললেন। উত্তরে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, আমি যায়নাব বিনতু জাহশ-এর নিকট মধু খেয়েছি। আমি শপথ করছি, আর কক্ষনো মধু খাবো না, কিন্তু তুমি এটা কাউকেও বলো না। মূলত তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সহধর্মিণীগণের সন্তুষ্টি কামনার্থে এটা (শপথ) করেছিলেন। এমতাবস্থায় কুরআন মাজীদের আয়াত নাযিল হয়- ’’হে নবী! আল্লাহ যা তোমার জন্য হালাল করেছেন তা তুমি কেন হারাম করছ? (এর দ্বারা) তুমি তোমার স্ত্রীদের সন্তুষ্টি পেতে চাও?’’ (সূরা আত্ তাহরীম ৬৬ : ১)। (বুখারী ও মুসলিম)[1]
بَابُ الْخُلْعِ وَالطَّلَاقِ
وَعَنْ عَائِشَةَ: أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَمْكُثُ عِنْدَ زَيْنَبَ بِنْتِ جَحْشٍ وَشَرِبَ عِنْدَهَا عَسَلًا فَتَوَاصَيْتُ أَنَا وَحَفْصَةُ أَنَّ أَيَّتَنَا دَخَلَ عَلَيْهَا النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَلْتَقُلْ: إِنِّي أَجِدُ مِنْكَ رِيحَ مَغَافِيرَ أَكَلْتَ مَغَافِيرَ؟ فَدَخَلَ عَلَى إِحْدَاهُمَا فَقَالَتْ لَهُ ذَلِكَ فَقَالَ: «لَا بَأْسَ شَرِبْتُ عَسَلًا عِنْدَ زَيْنَبَ بِنْتِ جَحْشٍ فَلَنْ أَعُودَ لَهُ وَقَدْ حَلَفْتُ لَا تُخْبِرِي بِذَلِكِ أَحَدًا» يَبْتَغِي مرضاة أَزوَاجه فَنَزَلَتْ: (يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ لِمَ تُحَرِّمُ مَا أَحَلَّ الله لَك تبتغي مرضاة أَزوَاجك)
الْآيَة
ব্যাখ্যা: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মধু পছন্দ করতেন। ‘আস্র নামাযের পর তিনি প্রত্যেক স্ত্রীর খোঁজ খবর নেয়ার জন্য তাদের ঘরে যেতেন। এ সময় তার স্ত্রী যায়নাব বিনতু জাহ্শ তাকে মধু পান করাতেন। মানব স্বভাবসুলভ কারণে অন্যান্য স্ত্রীদের অনেকের কাছেই এটা অপছন্দনীয় ছিল। উম্মুল মু’মিনীন ‘আয়িশাহ্ (রাঃ) এবং হাফসাহ্ (রাঃ) উভয় মিলে ফন্দি আটলেন এবং যুক্তি পাকালেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের যার কাছেই আসে সে বলবে আপনার কাছ থেকে মাগাফীরের গন্ধ পাচ্ছি। আপনি কি মাগাফীর খেয়েছেন?
যুক্তি মোতাবেক যথাসময়ে তারা তাই করলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিছু বুঝে উঠতে পারলেন না, তিনি বললেনঃ আমি তো মধুপান করেছি মাত্র। অতঃপর তিনি শপথ করে বললেন, ঠিক আছে আমি আর মধু পান করবো না, তুমি এ কথা আর কাউকে বলো না। এটা ছিল স্ত্রীদের কতিপয়ের মন খুশির জন্য। আল্লাহ তার এ কথা পছন্দ করলেন না। সাথে সাথে আয়াত নাযিল করলেন,
يٰاَيُّهَا النَّبِيُّ لِمَ تُحَرِّمُ مَا أَحَلَّ اللّٰهُ لَكَ تَبْتَغِىْ مَرْضَاةَ أَزْوَاجِكَ
‘‘হে নাবী! আল্লাহ আপনার জন্য যা বৈধ করেছেন তা আপনি হারাম করছেন কেন? আপনি স্ত্রীদের সন্তুষ্টি খুঁজছেন?’’ (সূরা আত্ তাহরীম ৬৬ : ০১)
মাগাফীর হলো এক প্রকার কাঁটাযুক্ত বৃক্ষের ফলের নির্যাস যা মিষ্ট অথচ ভীষণ দুর্গন্ধযুক্ত।
ইবনুল মালিক বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হালাল বস্তু নিজের ওপর হারাম করে নেয়াটা ছিল পদস্খলন বা আকস্মিক ভুল, পাপ বা গুনাহের কাজ নয়। এটা ছিল খেলাফে আওলা বা উত্তমতার পরিপন্থী।
সুতরাং আল্লাহর বাণী: لِمَ تُحَرِّمُ এবং عَفَا اللّٰهُ عَنْكَ বাক্য দ্বারা তার নিন্দা জানানো হয়েছে।
হাদীস দ্বারা স্পষ্ট বুঝা যায় যে, মধু হারাম করার কারণে অত্র আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে। কিন্তু আরেকটি সহীহ হাদীসে এসেছে, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হাফসার গৃহে মধু পান করেছিলেন, তখন উম্মুল মু’মিনীন ‘আয়িশাহ্, সফিয়্যাহ্, সাওদাহ্ এরা মিলে পূর্বে উল্লেখিত যুক্তি পাকিয়েছিলেন।
‘আল্লামা বাগাভী (রহঃ) উক্ত আয়াতের শানে নুযূল বর্ণনা করতে গিয়ে মুফাস্সিরীনদের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার স্ত্রীদের মধ্যে পালা বণ্টন করতেন। হাফসাহ্ (রাঃ)-এর পালার দিন এলে তিনি তার বাপের সাক্ষাৎ যাওয়ার অনুমতি প্রার্থনা করলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে অনুমতি প্রদান করলেন তিনি বাপের বাড়ী চলে গেলেন। হাফসাহ্ (রাঃ) যখন চলে গেলেন তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মারিয়াহ্ আল ক্বিবত্বিয়্যাহ্ (রাঃ)-কে ডেকে পাঠালেন। মারিয়াহ্ আল ক্বিবত্বিয়্যাহ্ (রাঃ) আসলে তিনি তাকে হাফসাহ্ (রাঃ)-এর ঘরে প্রবেশ করালেন এবং তার সাথে মিলিত হলেন। ইতোমধ্যে হাফসাহ্ (রাঃ) যখন ফিরে এলেন, এসে দেখেন তার ঘরের দরজা বন্ধ। তিনি অগত্যা দরজায় বসে রইলেন, এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘর্মাক্ত অবস্থায় ঘর থেকে বের হলেন- এ অবস্থা দেখে হাফসাহ্ (রাঃ) কাঁদতে লাগলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন- তুমি কাঁদছো কেন? উত্তরে হাফসাহ্ (রাঃ) বললেন, এজন্যই কি আপনি আমাকে বাপের বাড়ী যাওয়ার অনুমতি দিয়েছিলেন? আমার পালার দিন, আমার বিছানায় একজন দাসীকে প্রবেশ করিয়েছেন? আপনি কি আমার মর্যাদা এবং আমার সম্মানের কথা ভাবেন না? আপনি স্ত্রীদের একজনের সাথে এই আচরণ করবেন?
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তাকে কি আল্লাহ তা‘আলা আমার জন্য হালাল করে দেননি? (হে হাফসাহ্!) তুমি থামো! তাকে (মারিয়াহ্ আল ক্বিবত্বিয়্যাহ্ (রাঃ)) আমার জন্য হারাম করে নিলাম। আমি তোমার সন্তুষ্টি চাই, তবে তুমি এ কথা স্ত্রীদের অন্য কাউকে বলো না- তখন আল্লাহ তা‘আলা يٰاَيُّهَا النَّبِيُّ لِمَ تُحَرِّمُ এ আয়াত নাযিল করেন। (মিরকাতুল মাফাতীহ)