৩২৫৫

পরিচ্ছেদঃ ১০. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - স্ত্রীদের সাথে সদ্ব্যবহার এবং তাদের প্রত্যেকের (স্বামী-স্ত্রীর) পারস্পরিক হক ও অধিকার সংক্রান্ত

৩২৫৫-[১৮] আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি যদি কোনো মানবকে সিজদা করার নির্দেশ দিতাম, তবে স্ত্রীকে তার স্বামীর জন্য সিজদা করার নির্দেশ দিতাম। (তিরমিযী)[1]

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عَلَيْهِ وَسلم: «لَو كُنْتُ آمُرُ أَحَدًا أَنْ يَسْجُدَ لِأَحَدٍ لَأَمَرْتُ الْمَرْأَة أَن تسْجد لزَوجهَا» . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ

وعن ابي هريرة قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «لو كنت امر احدا ان يسجد لاحد لامرت المراة ان تسجد لزوجها» . رواه الترمذي

ব্যাখ্যা: ‘সিজদা’ হলো (انْقِيَادِ) বা বশ্যতা ও আত্মসমর্পণের চূড়ান্তরূপ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বাণীঃ ‘‘যদি আমি কোনো মানুষকে সিজদা করার নির্দেশ করতাম তবে অবশ্যই নারীকে নির্দেশ করতাম তার স্বামীকে সিজদা করতে।’’ কেননা স্ত্রীর ওপর স্বামীর অধিকার এবং হক এতই বেশি যে, সে তার কৃতজ্ঞতা কোনোভাবেই আদায় করতে সক্ষম হবে না।

সাজদার মতো একটি চূড়ান্ত কৃতজ্ঞতা প্রকাশের কাজ যদি আল্লাহ ছাড়া অন্যের জন্য বৈধ হতো তবে এর হকদার স্বামীই হতো; কিন্তু সিজদা যেহেতু একমাত্র আল্লাহর অধিকার, তিনিই একচ্ছত্রভাবে এ অধিকার ও হক সংরক্ষণ করেন। সুতরাং এই সাজদার প্রাপ্যতা পৃথিবীর আর কারো জন্যই অবশিষ্ট নেই।

স্বামীকে সাজদার কথা নিছক একটা উপমা হিসেবে বলা হয়েছে মাত্র।

অত্র হাদীসের প্রেক্ষাপট হলোঃ সাহাবী মু‘আয সিরিয়ায় গিয়ে দেখেন তারা তাদের বড়দের সিজদা করছে। তিনি মনে মনে নিয়্যাত করলেন আমি মদীনায় গিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে সিজদা করবো। ফিরে এসে তিনি তাই করলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, মু‘আয! তুমি একি করছো? তিনি বললেন, আমি সিরিয়ায় গিয়ে দেখেছি সেখানে সর্বসাধারণ বড় বড় পাদ্রী ও রাজন্যবর্গকে সিজদা করছে। তাই অমি মনে মনে ভেবেছিলাম মদীনায় ফিরে গিয়ে আমি আপনাকে সিজদা দিবো। এ ঘটনার প্রেক্ষিতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উক্ত হাদীসটি বর্ণনা করেন। অনেকে বলে থাকেন সম্মান ও তা‘যীমের সিজদা বৈধ। যেমন (ফতোয়ায়ে) কাযী খান (গ্রন্থে) বলেছেন,

إِنْ سَجَدَ لِلسُّلْطَانِ إِنْ كَانَ قَصْدُهُ التَّعْظِيمَ وَالتَّحِيَّةَ دُونَ الْعِبَادَةِ لَا يَكُونُ ذٰلِكَ كُفْرًا وَأَصْلُه أَمْرُ الْمَلَائِكَةِ بِالسُّجُودِ لِاٰدَمَ وَسُجُودُ إِخْوَةِ يُوسُفَ - عَلَيْهِمُ الصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ

‘ইবাদাতের উদ্দেশ্য না করে যদি সম্মান এবং শ্রদ্ধার জন্য বাদশাহকে সিজদা করা হয় তাহলে এটা কুফরী হবে না। কেননা আল্লাহ তা‘আলা মালায়িকার (ফেরেশতাদের) নির্দেশ করেছিলেন আদামকে সিজদা করতে। অনুরূপ ইউসুফ (আঃ)-এর ভাইয়েরা ইউসুফকে সিজদা করেছিলেন।

এই যুক্তির ভিত্তিতে অনেক পীর তার মুরীদ বা শিষ্যদের সিজদা গ্রহণ করে থাকেন। এরূপ সিজদা সম্পূর্ণ হারাম ও কবীরা গুনাহ। আদামকে সাজদার যে নির্দেশ ছিল তা মালায়িকার প্রতি, আদাম সন্তানের প্রতি (এ নির্দেশ) নয়। উপরোক্ত আদামের এ ঘটনা ঊর্ধ্ব জগতের বিষয় দুনিয়ার শারী‘আত ও তার বিধানে তা প্রযোজ্য নয়। সর্বোপরি ঐ সাজদার ধরণ ও প্রকৃতি কেমন ছিল তাও আমাদের কারোই জানা নেই; সুতরাং ওটাকে ভিত্তি করে কোনো মানুষ কোনো মানুষকে কোনো প্রকারের সিজদাই করা বৈধ নয়।

অনুরূপ সূরা ইউসুফ-এর আরেকটি আয়াত নিয়ে অনেকে ভ্রান্তিতে পতিত হয়েছেন। সেটা হলো ইউসুফ (আঃ)-এর আমন্ত্রণে তার ভাইয়েরা এবং পিতা-মাতা যখন মিসরে পৌঁছলেন তখন ইউসুফ (আঃ) পিতাকে যথাসম্মানে সিংহাসনে বসালেন। এ অকল্পনীয় ঘটনা দেখে তারা সবাই তার সামনে (আল্লাহর উদ্দেশে) সাজদায় লুটিয়ে পড়লেন। দেখুন সূরা ইউসুফ ১০০; এই সিজদা ইউসুফকে দেয়া হয়নি বরং ইউসুফের সামনে আল্লাহকে সিজদা দেয়া হয়েছিল।

বিশ্ব বিখ্যাত ফাকীহ ‘আল্লামা মুফতী শাফী (পাকিস্থান) স্বীয় গ্রন্থ তাফসীরে মা‘রিফুল কুরআনে এ আয়াতের তাফসীর করতে গিয়ে বলেনঃ

‘‘পিতা-মাতা ও ভ্রাতারা সবাই ইউসুফ (আঃ)-এর সামনে সিজদা করলেন। ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আব্বাস বলেন, এ কৃতজ্ঞতাসূচক সিজদা্টি ইউসুফ (আঃ)-এর জন্য নয় বরং আল্লাহ তা‘আলার উদ্দেশেই করা হয়েছিল।

কেউ কেউ বলেন, উপাসনামূলক সিজদা প্রত্যেক পয়গাম্বরের শারী‘আতেই হারাম ছিল, কিন্তু সম্মানসূচক সিজদা একে অপরকে দেয়া পূর্ববর্তী নাবীগণের শারী‘আতে বৈধ ছিল। ‘আল্লামা শাফী (রহঃ) বলেছেন, শির্কের সিঁড়ি হওয়ার কারণে ইসলামী শারী‘আতে তাও সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। (মিরকাতুল মাফাতীহ)


হাদিসের মানঃ হাসান (Hasan)
বর্ণনাকারীঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১৩: বিবাহ (كتاب النكاح)