পরিচ্ছেদঃ ১৩৮. নীরব ক্বিরাআতের সালাতে মুক্তাদীর কিরাত পাঠ সম্পর্কে
৮২৯। ’ইমরান ইবনু হুসায়ন (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের সাথে যুহরের সালাত আদায় শেষে বললেন, তোমাদের মধ্যকার কে ’’সাব্বিহিসমা রব্বিকাল আ’লা’’ (সূরাহ আ’লা) পড়েছে? এক ব্যক্তি বলল, আমি। তখন তিনি বললেন, আমি বুঝতে পেরেছি যে, তোমাদের কেউ আমাকে সালাতে কুরআন পাঠে জটিলতায় ফেলেছে।[1]
সহীহ : মুসলিম।
بَابُ مَنْ رَأَى الْقِرَاءَةَ إِذَا لَمْ يَجْهَرِ الْإِمَامُ بِقِرَاءَتِهِ
حَدَّثَنَا ابْنُ الْمُثَنَّى، حَدَّثَنَا ابْنُ أَبِي عَدِيٍّ، عَنْ سَعِيدٍ، عَنْ قَتَادَةَ، عَنْ زُرَارَةَ، عَنْ عِمْرَانَ بْنِ حُصَيْنٍ، أَنَّ نَبِيَّ اللَّهِ صلي الله عليه وسلم صَلَّى بِهِمُ الظُّهْرَ فَلَمَّا انْفَتَلَ، قَالَ:أَيُّكُمْ قَرَأَ بِسَبِّحِ اسْمَ رَبِّكَ الْأَعْلَى؟، فَقَالَ رَجُلٌ: أَنَا، فَقَالَ:عَلِمْتُ أَنَّ بَعْضَكُمْ خَالَجَنِيهَا
- صحيح : م
-
হাদীস থেকে শিক্ষাঃ
১। ইমামের পিছনে মুক্তাদীর স্বশব্দে ক্বিরাআত পাঠ অপছন্দনীয়।
২। স্বরব ক্বিরাআত সম্পন্ন সালাতের ন্যায় নীরব ক্বিরাআত সম্পন্ন সালাতেও মুক্তাদীগণ ইমামের পিছনে সূরাহ ফাতিহা চুপি চুপি পাঠ করবেন।
৩। নীরব ক্বিরাআত সম্পন্ন সালাতে মুক্তাদীগণ সূরাহ ফাতিহার সাথে অন্য সূরাহও পাঠ করবেন।
৪। সালাতে ক্বিরাআতের ন্যায় রুকু‘ সিজদা, তাশাহুদ ইত্যাদিতে পঠিতব্য দু‘আবলীও মুক্তাদীগণ নীরবে পাঠ করবেন, যাতে জোরে পড়ার কারণে ইমামসহ পাশ্ববর্তী মুসল্লীর ক্বিরাআত, দু‘আ পাঠ ও একাদ্রতায় বিঘ্ন সৃষ্টি না হয়। তবে সেসব দু‘আর কথা ভিন্ন যেগুলো জোরে পড়ার অনুমতি হাদীসে এসেছে। যেমন, স্বরব ক্বিরাআত সম্পন্ন সালাতে ইমামের সাথে মুক্তাদীগণের জোরে আমীন বলা। এটি সহীহভাবে প্রমাণিত আছে।
সংশয় নিরসনঃ ইমামের পিছনে সূরাহ ফাতিহা পাঠ না করার পক্ষে পেশকৃত কতিপয় দলীল ও তার জবাব।
(১) সূরাহ মুযযাম্মিলের ২০নং আয়াতে কুরআন থেকে সহজমত পাঠ করতে বলা হয়েছে আর সূরাহ ‘আরাফের ২০৪ নং আয়াতে ক্বিরাআতের সময় চুপ থাকতে বলা হয়েছে। এতে কোনো সূরাহকে নির্দিষ্ট করা হয়নি। সুতরাং হাদীস দ্বারা সূরাহ ফাতিহা পাঠ করাকে নির্দিষ্ট করা কুরআনের আয়াতকে রহিত করার শামিল। হাদীস দ্বারা তো কুরআনের আয়াত রহিত করা যায় না।
উত্তরঃ এখানে রহিত হবার প্রশ্নই উঠে না। বরং হাদীসে ব্যাখ্যাকারে বর্ণিত হয়েছে এবং কুরআনের মধ্য থেকে উম্মুল কুরআনকে নির্দিষ্ট (খাস) করা হয়েছে। যেমন কুরআনে সকল উম্মাতকে লক্ষ্য করে ‘মীরাস’ বণ্টনের সাধারণ নিয়ম-এর আদেশ দেয়া হয়েছে (নিসা, ৭, ১১)। কিন্তু হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সম্পত্তি তার উত্তরাধিকারী সন্তানগণ পাবেন না বলে ‘খাস’ ভাবে নির্দেশ করা হয়েছে।
মূলতঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আগমন ঘটেছিল কুরআনের ব্যাখ্যাকারী হিসেবে এবং ঐ ব্যাখ্যাও ছিলো সরাসরি আল্লাহ কর্তৃক প্রত্যাদিষ্ট। অতএব রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রদত্ত্ব ব্যাখ্যাকে প্রত্যাখ্যান করা ‘অহিয়ে গায়ের মাতলু’ বা আল্লাহর অনাবৃত্ত অহিকে প্রত্যাখ্যান করার শামিল হবে।
(২) আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ইমাম নিযুক্ত করা হয়েছে তাকে অনুসরণ করার জন্য। তিনি যখন তাকবীর বলেন, তখন তোমরা তাকবীর বলো। তিনি যখন ক্বিরাআত করেন, তখন তোমরা চুপ থাকো। (নাসায়ী, আবূ দাঊদ, ইবনু মাজাহ)।
জবাবঃ ‘উক্ত হাদীসে ‘আম’ ভাবে ক্বিরাআতের সময় চুপ থাকতে বলা হয়েছে। কুরআনেও অনুরূপ নির্দেশ এসেছে (আরাফ ২০৪)। একই বর্ণনাকারীর ইতিপূর্বেকার বর্ণনায় এবং আনাস (রাঃ) বর্ণিত হাদীসে সূরায়ে ফাতিহাকে ‘খাস’ ভাবে চুপে চুপে পড়তে নির্দেশ করা হয়েছে। অতএব ইমামের পিছনে চুপে চুপে সূরায়ে ফাতিহা পাঠ করলে উভয় সহীহ হাদীসের উপরে ‘আমল করা সম্ভব হয়।
(৩) জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যার ইমাম রয়েছে, ইমামের ক্বিরাআত তার জন্য ক্বিরাআত হবে- (ইবনু মাজাহ, দারাকুতনী, বায়হাক্বী)। হাফিয ইবনু হাজার আসকালানী (রহঃ) বলেন, যতগুলি সূত্র থেকে হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে সকল সূত্রই দোষযুক্ত। সেজন্য হাদীসটি সকল বিদ্বানের নিকটে সর্বসম্মতভাবে যঈফ। (ফাতহুল বারী ২/৬৮৩)।
জবাবঃ অত্র হাদীসে ক্বিরাআত শব্দটি ‘আম।’ কিন্তু সূরাহ ফাতিহা পাঠের নির্দেশটি ‘খাস।’ অতএব অন্য সব সূরাহ বাদ দিয়ে কেবল সূরাহ ফাতিহা পাঠ করতে হবে। দ্বিতীয়তঃ যদি অত্র হাদীসের অর্থ ‘ইমামের ক্বিরাআত মুক্তাদীর জন্য যথেষ্ট, বলে ধরা হয়, তবে হাদীসটি কেবল সহীহ হাদীসসমূহের বিরোধী হবে না, বরং কুরআনী নির্দেশেরও বিরোধী হবে। কেননা কুরআনে (সূরাহ মুযযাম্মিল ২০ নং আয়াতে) ইমাম, মুক্তাদী বা একাকী সকল মুসল্লীর জন্য কুরআন থেকে যা সহজ মনে করা হয়, তা পড়তে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অথচ উপরোক্ত যঈফ হাদীস মানতে গেলে ইমামের পিছনে কুরআনের কিছুই পড়া চলে না। তৃতীয়তঃ উক্ত হাদীসে ইমামের ক্বিরাআত ইমামের জন্য বলা হয়েছে। মুক্তাদীর জন্য হবে, এমন কথা নেই। কেননা ‘তার জন্য’ (له) সর্বনামটির ইঙ্গিত নিকটতম বিশেষ্য ‘ইমাম’ (الإمام) এর দিকে হওয়াই ব্যাকরণের দৃষ্টিতে যুক্তযুক্ত। অতএব ইমাম সূরাহ ফাতিহা পড়লে তা কেবল ইমামের জন্যই হবে, মুক্তাদীর জন্য নয়। উদাহরণ স্বরূপঃ من كان له إمام فزوجة الإمام له زوجة অর্থাৎ ‘যার ইমাম আছে, উক্ত ইমামের স্ত্রী তার জন্য স্ত্রী হবে।’ কিন্তু এ বাক্যের অর্থ ইমামের স্ত্রী মুক্তাদীর জন্য হবে’ এমনটা করা যাবে না।’ অনুরূপভাবে ইমামের ক্বিরাআত ইমামের জন্য হবে। কিন্তু ‘ইমামের ক্বিরাআত মুক্তাদীর জন্য হবে’ এমন অর্থ করা ঠিক হবে না। (দেখুন, সালাতুর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পৃঃ ৫৩-৫৫)।
‘Imran b. Husain reported that the prophet of Allah (ﷺ) led them in the noon prayer. When he finished it, he said:
Which of you did recite the surah “ Glorify the name of thy lord, the Most High”(Surah lxxxvii.) A man said: I . He said: I knew that some one of you confused me in it(i.e in the recitation of the Qur’an).