পরিচ্ছেদঃ ১১৯. রুকু‘র সময় হাত না উঠানোর বর্ণনা
৭৪৯। বারাআ ইবনু ’আযিব (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত আরম্ভের সময় কেবল একবার কানের কাছাকাছি পর্যন্ত হাত উঠাতেন। এরপর আর হাত উঠাতেন না।[1]
দুর্বল।
باب مَنْ لَمْ يَذْكُرِ الرَّفْعَ عِنْدَ الرُّكُوعِ
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ الصَّبَّاحِ الْبَزَّازُ، حَدَّثَنَا شَرِيكٌ، عَنْ يَزِيدَ بْنِ أَبِي زِيَادٍ، عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ أَبِي لَيْلَى، عَنِ الْبَرَاءِ، أَنَّ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم كَانَ إِذَا افْتَتَحَ الصَّلَاةَ رَفَعَ يَدَيْهِ إِلَى قَرِيبٍ مِنْ أُذُنَيْهِ ثُمَّ لَا يَعُودُ .
- ضعيف
একঃ বর্ণনাকারী ইয়াযীদ ইবনু আবূ যিয়াদ। তার সম্পর্কে ইবনু মাঈন বলেনঃ তিনি দুর্বল। হাফিয ‘আত-ত্বাকরীব’ গ্রন্থে বলেনঃ দুর্বল। বৃদ্ধ বয়সে তার স্মরণশক্তি বিকৃত হয়ে যায়। ফলে তিনি তালকীন করতেন। তিনি ছিলেন শিয়া। ‘খুলাসাত’ গ্রন্থে রয়েছেঃ তিনি বড় মাপের শিয়া ইমাম ছিলেন। ইবনু ‘আদী বলেন, তার হাদীস লিখা হতো। হাফিয যাহাবী ‘আত-তাহযীব’ গ্রন্থে ইবনু মাঈন সূত্রে বলেনঃ তিনি হাদীস বর্ণনায় দুর্বল। তার হাদীস দ্বারা দলীল দেয়া যাবে না।
দুইঃ হাদীসে বর্ণিত ‘‘সুম্মা লা ইয়া‘উদ কথাটি অপ্রমাণিত। ‘‘সুম্মা লা ইয়া‘উদ’’ কথাটি বারাআ ইবনু ‘আযিবের নয়। বরং উক্ত হাদীসের এক বর্ণনাকারী ইয়াযীদ ইবনু আবূ যিয়াদের। তিনি হাদীসটি দুইভাবে বর্ণনা করেছেন। এক. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতের শুরুতে হাত উঠাতেন। অথবা দুই. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতের শুরুতে, রুকু‘র পূর্বে ও রুকু‘র পরে হাত উঠাতেন- (বায়হাক্বী ২/৭৭)।
* ইমাম শাওকানী (রহঃ) বলেনঃ এতে প্রতিয়মান হয়, ইয়াযীদ ইবনু আবূ যিয়াদ হাদীসটি কখনো সংক্ষেপে আবার কখনো বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেছেন। বেশ কিছুদিন তিনি উক্ত শব্দে সংক্ষিপ্তভাবে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। পরে যখন তিনি বৃদ্ধ হয়ে যান, স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয়ে যায়, তখন কুফাবাসীরা তাকে ‘‘সুম্মা লা ইয়া‘উদ’’ শব্দটি শিখিয়ে দেন। তখন তিনিও ‘‘সুম্মা লা ইয়া‘উদ’’ বলতে লাগলেন। (দেখুন, নায়লুল আওতার)।
* সুফয়ান ইবনু উয়াইনাহ (রহঃ) বলেনঃ ইয়াযীদ ইবনু আবূ যিয়াদ মক্কাহতে ‘আবদুর রাহমান ইবনু আবূ লায়লাহ থেকে বারাআ ইবনু আযিবের মাধ্যমে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতের শুরুতে, রুকু‘র সময় এবং রুকু‘ থেকে মাথা উঠানোর সময় রফ‘উল ইয়াদাইন করতেন। অতঃপর একদা আমি কুফায় গেলাম। তখন আমি ইয়াযীদকে ঐ হাদীস এভাবে বর্ণনা করতে শুনেছিঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতের শুরুতে হাত উঠাতেন এরপর আর উঠাতেন না। আমি বুঝতে পারলাম যে, কুফাবাসীরা তাকে শিখিয়ে দিয়েছে- (বায়হাক্বী)। সুফয়ান ইবনু উয়াইনাহ (রহঃ) আরো বলেনঃ যখন ইয়াযীদ বৃদ্ধ হয়ে গেলেন, তখন লোকেরা তাকে ‘‘সুম্মা লা ইয়া‘উদ’’ শিখিয়ে দিলো। তখন তিনিও ‘‘সুম্মা লা ইয়া‘উদ’’ বলতে শুরু করেন। (জুযউ রফ‘উল ইয়াদাইন)
* ইমাম বুখারী (রহঃ) ‘জুযউ রফ‘উল ইয়াদাইন’ গ্রন্থে বলেনঃ ‘সমস্ত হাফিযের হাদীসগণ যারা প্রথমে ইয়াযীদ থেকে এ হাদীস শুনেছে যথা- শারঈ, শু‘বাহ, যুহাইর তারা কেউই ‘‘সুম্মা লা ইয়া‘উদ’’ কথাটি বর্ণনা করেননি।’ ইমাম বুখারী (রহঃ) আরো বলেনঃ ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বাল (রহঃ) ইয়াহইয়া ইবনু আদাম সূত্রে বর্ণনা করেনঃ আমি আব্দুল্লাহ ইবনু ইদ্রিসের কিতাবে ‘আসিম ইবনু কুলাইবের হাদীসটি দেখেছি। কিন্তু তার মধ্যে ‘‘এর পর তিনি আর হাত উত্তোলন করেননি’’ কথাটি উল্লেখ নেই। আর এটাই হচ্ছে অধিক সহীহ কথা। কেননা জ্ঞানীদের কিতাব অধিক সংরক্ষিত। জ্ঞানী ব্যক্তি কখনো কোনো কথা বলে পুনরায় কিতাবের দিকে প্রত্যাবর্তন করেন। অতঃপর তিনি কিতাবের মতো হয়ে যান। (দেখুন, জুযউ রফ‘উল ইয়াদাইন)
* ইবনু হিববান (রহঃ) ‘কিতাবুস যুআফা’ গ্রন্থে বলেনঃ ইয়াযীদ ইবনু আবূ যিয়াদ সত্যবাদী ছিলেন। কিন্তু বৃদ্ধ বয়সে তার স্মৃতিশক্তি নষ্ট হয়ে যায়। ফলে কেউ তাকে যা শিখিয়ে দিতো তিনি তাই বলতেন। অতএব কুফা শহরে প্রবেশের পূর্বে তার থেকে যারা হাদীস শ্রবণ করেছেন তাদের শ্রবণ বিশুদ্ধ। পক্ষান্তরে কুফায় প্রবেশের পর তার থেকে যারা শ্রবণ করেছেন তাদের শ্রবণ সঠিক নয়। (দেখুন, নাসবুর রায়াহ)।
* ইমাম হুমাইদ (রহঃ) বলেনঃ ইয়াযীদ ‘সুম্মা লা ইয়া‘উদ’ কথাটি বৃদ্ধি করেছেন।
* ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বাল (রহঃ) বলেনঃ এ হাদীসটি সহীহ নয়। এ হাদীসটি নিকৃষ্ট, ভ্রান্ত। ইয়াযীদ এক সময় পর্যন্ত এ হাদীস বর্ণনা করেছেন কিন্তু তিনি ‘সুম্মা লা ইয়া‘উদ’ বর্ণনা করেননি। পরে যখন কুফাবাসীরা তাকে শিখিয়ে দিয়েছে তখন তিনি তা বর্ণনা করেন। (দেখুন, নায়লুল আওতার, নাসবুর রায়াহ)।
* ইমা হাকিম বলেনঃ ইয়াযীদ ইবনু আবূ যিয়াদ হিফযের মাধ্যমে (মুখস্তের দ্বারা) হাদীস বর্ণনা করতেন। বৃদ্ধ বয়সে তার হিফয (স্মরণশক্তি) নষ্ট হয়ে যায়। ফলে তিনি সনদসমূহ ওলটপালট করে ফেলতেন এবং হাদীসের মতনে বৃদ্ধি করতেন এবং তাতে কোনো পার্থক্য করতেন না। (বায়হাক্বীর ‘সুনানুল কুবরা’ ২/১১০, ১১১)।
* ইমাম বায়হাক্বী ‘আল-মা‘রিফাহ’ গ্রন্থে বলেনঃ এটাই প্রমাণিত যে, ‘‘সুম্মা লা ইয়া‘উদ’’ কথাটি ইয়াযীদকে শিখিয়ে দেয়া হয়েছে। কেননা প্রথম সময়কার বর্ণনাকারীগণ ইয়াযীদ থেকে ঐ অংশটি বর্ণনা করেননি। যেমন সুফয়ান সাওরী, শু‘বাহ, হুশাইম, যুহাইর ও অন্যান্যরা। বরং ঐ বর্ধিত অংশটি নিয়ে এসেছে ঐ লোকেরা যারা ইয়াযীদ থেকে তার শেষ বয়সে বর্ণনা করেছে। আর তখন তো ইয়াযীদের স্মরণশক্তি বিকৃত হয়ে গিয়েছিল এবং তিনি তখন সংমিশ্রণও করতেন। (দেখুন, নাসবুর রায়াহ)।
তিনঃ বর্ণনাকারী ইয়াযীদ নিজেই ‘‘সুম্মা লা ইয়া‘উদ’’ কথাটির সঠিকতা অস্বীকার করেছেন। একদা আলী ইবনু ‘আসিমের সামনে তিনি হাদীসটি বর্ণনা করেন। তখন তিনি ‘‘সুম্মা লা ইয়া‘উদ’’ বলেননি। ফলে ‘আলী ইবনু ‘আসি, বললেনঃ আপনি তো ‘‘সুম্মা লা ইয়া‘উদ’’ও বলেন। তখন তিনি বলেন, আমার মনে নেই। (দেখুন, দারাকুতনী)।
চারঃ হাদীসটি স্বয়ং বারাআ সূত্রে বর্ণিত অপর হাদীস বিরোধী। সুফয়ান থেকে... বারাআ ইবনু ‘আযিব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতের শুরুতে রুকু‘র সময় এবং রুকু‘ থেকে মাথা উঠানোর সময় রফ‘উল ইয়াদাইন করতেন। (বায়হাক্বী, হাকি, নাসবুর রায়াহ)।
পাঁচঃ ইযতিরাব ও ইদরাজ।
Narrated Al-Bara' ibn Azib:
When the Messenger of Allah (ﷺ) began prayer, he raised his hands up to his ears, then he did not repeat.