পরিচ্ছেদঃ ১০২. মুসল্লী কিরূপ সু্তরাহ স্থাপন করবে
৬৮৫। ত্বালহা ইবনু ’উবাইদুল্লাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তুমি (খোলা ময়দানে সালাত আদায়কালে) তোমার সামনে উটের পিঠের হাওদার পিছন দিকের কাষ্ঠ খন্ড বা অনুরূপ কোন কিছু স্থাপন করলে তোমার সামনে দিয়ে কারো চলাচলে (সালাতের) কোন ক্ষতি হবে না।[1]
সহীহ : মুসলিম।
باب مَا يَسْتُرُ الْمُصَلِّي
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ كَثِيرٍ الْعَبْدِيُّ، حَدَّثَنَا إِسْرَائِيلُ، عَنْ سِمَاكٍ، عَنْ مُوسَى بْنِ طَلْحَةَ، عَنْ أَبِيهِ، طَلْحَةَ بْنِ عُبَيْدِ اللهِ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم " إِذَا جَعَلْتَ بَيْنَ يَدَيْكَ مِثْلَ مُؤَخَّرَةِ الرَّحْلِ فَلَا يَضُرُّكَ مَنْ مَرَّ بَيْنَ يَدَيْكَ " .
صحيح : م
-
সুতরাহ্ সম্পর্কে আলোচনাঃ
যে বস্তু দ্বারা কোনো কিছুকে আড়াল দেয়া হয় তাকে সুতরাহ বলে। ইসলামী পরিভাষায় সুতরাহ বলা হয় ঐ খুঁটি দেয়াল, কাঠ বা বস্তুকে যা সালাত আদায়কারীর সামনে রাখা হয়।
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেসব বস্তু দ্বারা সুতরাহ করেছেনঃ
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেসব বস্তু দ্বারা সুতরাহ গ্রহণ করেছেন বলে হাদীসে বর্ণিত হয়েছে তা নিম্নরূপঃ
১। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো দেয়ালকে সুতরাহ বানিয়ে তার নিকটবর্তী হয়ে সালাতে দাঁড়াতেন। তখন তাঁর ও দেয়ালের মধ্যে তিন হাতের ব্যবধা থাকতো। আরেক বর্ণনায় রয়েছেঃ তাঁর সিজদার স্থান ও দেয়ালের মধ্যে একটি বকরী অতিক্রম করার মতো ব্যবধান থাকতো। (সহীহুল বুখারী, সহীহ মুসলিম)।
২। তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো খাট (অথচ আয়িশাহ তাতে ঘুমিয়ে থাকতেন), কাঠ, গাছ কিংবা মসজিদের খুঁটিকে সামনে রেখে সালাত আদায় করেছেন। (সহীহুল বুখারী, সহীহ মুসলিম, আবূ ইয়ালা, নাসায়ী, আহমাদ)।
৩। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন যুদ্ধের সফরে থাকতেন, কিংবা খোলা ময়দানে সালাত আদায় করতেন, তখন সামনে (তীর, বর্শা এ ধরণের) হাতিয়ার গেড়ে সুতরাহ বানিয়ে সালাত আদায় করতেন। আর লোকেরা তাঁর পিছনে সালাত আদায় করতো। (সহীহুল বুখারী, সহীহ মুসলিম, ইবনু মাজাহ)।
৪। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো বাহন কিংবা সওয়ারীর আসনকে সামনে রেখে সুতরাহ বানিয়ে সালাত আদায় করতেন। (সহীহুল বুখারী, সহীহ মুসলিম, আহমাদ, সহীহ ইবনু খুযাইমাহ)।
সুতরাহ ভেতর দিয়ে কাউকে অতিক্রম করতে না দেয়াঃ
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর এবং সুতরাহর মধ্য দিয়ে কোনো কিছুকে অতিক্রমকরতে দিতেননা। সুতরাহর ভেতর দিয়ে অতিক্রম নিষেধ হওয়া সম্পর্কে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কয়েকটি হাদীস উল্লেখ করা হলোঃ
১। একবার নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত আদায় করছিলেন হঠাৎ একটি ছাগল তাঁর সম্মুখ দিয়ে দৌঁড়ে যাচ্ছিল। তিনি তার সাথে পাল্লা দিয়ে তাঁর পেটকে দেয়ালে লাগিয়ে দিলেন (ফলে ছাগলটি তাঁর পেছন দিয়ে অতিক্রম করে)। (সহীহ ইবনু খুযাইমাহ, ত্বাবারানী এবং হাকিম। ইমাম হাকিম ও ইমাম যাহাবী একে সহীহ বলেছেন)।
২। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তোমাদের কেউ সুতরাহর অভিমুখে সালাত আদায়ে দাঁড়ালে সে যেন তার নিকটবর্তী হয়। যাতে শায়ত্বান তার সালাত বিনষ্ট করতে না পারে। (আবূ দাঊদ, বাযযার, হাকিম, তিনি একে সহীহ বলেছেন এবং যাহাবী ও নাববী তার সমর্থন দিয়েছেন)।
৩। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেনঃ সালাত আদায়কারীর সম্মুখ দিয়ে অতিক্রমকারী যদি জানতো এতে কী পরিমাণ (গুনাহ) রয়েছে তবে চল্লিশ (দিন, বৎসর, মাস বা ওয়াক্ত) দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করা তার জন্য উত্তম (মনে) হতো। (সহীহুল বুখারী, সহীহ মুসলিম, সহীহ ইবনু খুযাইমাহ)।
৪। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেনঃ সুতরাহ ব্যতীত সালাত আদায় করবে না, আর তোমার সম্মুখ দিয়ে কাউকে অতিক্রম করতে দিবে না, যদি কেউ অগ্রাহ্য করে তবে তার সাথে লড়াই করবে, কেননা তার সাথে ক্বারীন (শায়ত্বান) রয়েছে। (সহীহ ইবনু খুযাইমাহ, সনদ উত্তম)।
৫। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেনঃ তোমাদের কেউ যখন এমন বস্তুর দিকে মুখ করে সালাত আদায় করে যা তাকে লোকজন থেকে আড়াল করে, এরপরও কেউ যদি তার সম্মুখ দিয়ে অক্রিম করতে চায় তবে যেন তার বক্ষ ধরে তাকে প্রতিহত করে (এবং সাধ্যমত তাকে বাধা দেয়)। অপর বর্ণনায় রয়েছেঃ তাকে যেন দু’বার বাধা দেয়, তাও যদি সে অমান্য করে তবে সে যেন তার সাথে লড়াই করে, কেননা সে হচ্ছে একটা শায়ত্বান।’’ (সহীহ সনদে আহমাদ, দারাকুতনী ও ত্বাবারানী। এ হাদীসের মর্ম সহীহুল বুখারী ও সহীহ মুসলিমসহ অন্যান্য কিতাবে একদল সাহাবা থেকে বর্ণিত হয়েছে)।
সুতরাহ সম্পর্কে কতিপয় বিশ্ববরেণ্য ‘আলিমের অভিমতঃ
১। হাফিয ইবনুল কাইয়্যিম (রহঃ) বলেনঃ ‘‘সুতরাহ বিহীন সালাত আদায়কালে মুসল্লীর সামনে দিয়ে বালেগা নারী, গাধা, কালো কুকুর অতিক্রম করলে সালাত ভঙ্গ হবে’’ সহীহ সূত্রে বর্ণিত এ হাদীস এবং আয়িশাহ (রাঃ)-এর বর্ণনাঃ ‘‘তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সিজদার জায়গায় আড়াআড়ি হয়ে শুয়ে থাকতেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সিজদা্ করার সময় তার পায়ে চিমটি কাটতেন তখন তিনি পা গুটিয়ে নিতেন। সিজদা থেকে উঠে দাঁড়ালে তিনি আবার পা ছড়িয়ে দিতেন।’’ এ উভয় হাদীসের মধ্যে পার্থক্য হলো, অতিক্রম করা আর অবস্থান করার। (দেখুন, যাদুল মা‘আদ) অর্থাৎ অতিক্রম করলে সালাত ভঙ্গ হবে কিন্তু মুসল্লীর বরাবর অবস্থানকারী স্বীয় স্থান থেকে সরে গেলে সালাত ভঙ্গ হবে না। আল্লাহই অধিক জ্ঞাত।
২। সঊদী আরাবের প্রাক্তন গ্রান্ড মুফতি শায়খ ‘আব্দুল আযীয বিন বায (রহঃ) বলেনঃ সুতরাহর দিকে মুখ করে সালাত আদায় সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ। তবে ওয়াজিব নয়। কেননা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমাণিত আছে তিনি কখনো সুতরাহ ছাড়াও সালাত আদায় করেছেন। কেউ সুতরাহর জন্য কিছু না পেলে তার জন্য দাগ টানাই যথেষ্ট। দাগ টানা সম্পর্কিত হাদীসটি আহমাদ ও ইবনু মাজাহ বর্ণনা করেছেন হাসান সনদে এবং ইবনু হিব্বান একে সহীহ বলেছেন। হাফিয ইবনু হাজার বলেন, যারা একে মুয্তারিব বলেছেন তা সঠিক নয় বরং এটি হাসান।
সুতরাহর দূরত্ব হচ্ছে মুসল্লীর পা থেকে তিন হাত (যিরা) পরিমাণ জায়গা। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমাণিত আছেঃ তিনি কা‘বা শরীফে সালাত আদায়কালে তাঁর ও কা‘বা শরীফের পশ্চিম পার্শ্বের দেয়ালের মাঝে তিন যিরা দূরত্ব রেখে সালাত আদায় করেছেন। অতএব কেউ তিন যিরার অধিক দূরত্ব পথ দিয়ে অতিক্রম করলে তিনি মুসল্লীর জন্য অতিক্রমকারী হিসেবে গণ্য হবেন না। কিন্তু মুসল্লীর পা থেকে শুরু করে তিন যিরা পরিমাণ জায়গার ভেতর দিয়ে যদি বালেগা নারী, কালো কুকুর ও গাধা অতিক্রম করে তাহলে মুসল্লীর সালাত নষ্ট হবে। উল্লেখ্য হাদীসে বর্ণিত উক্ত তিনজন (বালেগা নারী, কালো কুকুর ও গাধা) ব্যতীত অন্যরা যদি তিন যিরার ভেতর দিয়ে অতিক্রম করে যেমন বালেগ পুরুষ, কালো কুকুর ব্যতীত ভিন্ন রঙের কুকুর, গাধা ব্যতীত অন্য প্রাণী এবং নাবালেগ মেয়ে অতিক্রম করে তাহলে সালাত কাটবে না, নষ্ট হবে না। কিন্তু মুসল্লীকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে সে যেন ঐ তিনজনসহ সাধারণভাবে সকলকেই তার সম্মুখ দিয়ে অতিক্রমে বাঁধা দেয়।
জ্ঞাতব্য, মাসজিদুল হারাম, মসজিদে নাবাবী ও অন্যান্য মসজিদে অধিক ভিড় হলে তাতে অন্যকে বাঁধা দেয়া অসম্ভব হয়ে ওঠে। এমতাবস্থায় সুতরাহ না রাখলে এবং মুসল্লীর সম্মুখ দিয়ে অতিক্রম করলে অসুবিধা নেই। কেননা ওজরের কারণে এখানে শারী‘আত শিথিল। আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ ‘‘তোমরা আমাকে সাধ্য মোতাবেক ভয় করো।’’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি তোমাদেরকে কোনো বিষয়ে নির্দেশ দিলে সেটা তোমরা তোমাদের সাধ্যনুযায়ী গ্রহণ করো।’’ (আহমাদ, বুখারী), ইবনু যুবায়র থেকে প্রমাণিত আছে, তিনি মাসজিদুল হারামে সুতরাহ ব্যতীত সালাত আদায় করছিলেন আর তার সম্মুখ দিয়ে লোকেরা তাওয়াফ করছিল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকেও অনুরূপ প্রমাণ আছে কিন্তু দুর্বল সনদে। (দেখুন, ফাতাওয়াহ শায়খ বিন বায- (রহঃ))।
৩। শায়খ সালিহ আল-উসাইমিন (রহঃ) বলেনঃ সুতরাহ গ্রহণ করা সুন্নাতে মুয়াক্কাদা। তবে জামা‘আতের সাথে সালাত আদায়কালে সুতরাহর প্রয়োজন নেই। ইমামের সুতরাহ মুক্তাদীর জন্য যথেষ্ট। এর সীমা সম্পর্কে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ ‘‘উটের উপর হেলান দিয়ে বসার জন্য তার পিঠে যে কাঠ রাখা হয় তার উচ্চতার বরাবর।’’ (সহীহ মুসলিম)। এটা হচ্ছে সর্বোচ্চ উচ্চতা। এর চেয়ে কমও বৈধ আছে। কেননা হাদীসে এসেছেঃ ‘‘তোমাদের মধ্যে কোনো ব্যক্তি যখন সালাত আদায় করে, সে যেন একটি তীর দিয়ে হলেও সুতরাহ করে নেয়।’’ (ইবনু খুযাইমাহ, আহমাদ)। হাসান সনদে আবূ দাঊদে বর্ণিত অন্য হাদীসে বলা হয়েছেঃ ‘‘কোনো কিছু না পেলে যেন একটি দাগ টেনে নেয়।’’ হাফিয ইবনু হাজার বুলুগুল মারাম গ্রন্থে বলেন, যারা হাদীসটি মুযতারাব বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন তারা সঠিক কথা বলেননি। সুতরাং হাদীসটি প্রত্যাখ্যান করার তেমন কারণ নেই।
আর মাসজিদুল হারাম বা অন্য কোনো স্থানে মুক্তাদী মুসল্লীর সম্মুখ দিয়ে অতিক্রম করতে কোনো অসুবিধা নেই। কেননা ইবনু আব্বাস (রাঃ) মিনায় আগমন করলেন। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকদের নিয়ে একটি দেয়াল সামনে রেখে সালাত আদায় করছিলেন। ইবনু আব্বাস কাতারের সম্মুখ দিয়ে একটি গাধার পিঠে চড়ে অতিক্রম করলেন। কেউ তার প্রতিবাদ করেননি। (সহীহুল বুখারী, সহীহ মুসলিম)।
কিন্তু মুসল্লী যদি ইমাম বা একাকী হয় তবে তার সম্মুখ দিয়ে যাওয়া জায়িয নেই। চাই তা মাসজিদুল হারাম হোক বা অন্য কোনো স্থানে। কেননা সাধারণভাবে হাদীসগুলো এ কথাই প্রমাণ করে। এমন কোনো দলীল পাওয়া যায় না যে, মক্কাহ বা মসজিদে হারামে বা মদীনাহর মসজিদে মুসল্লীর সামনে দিয়ে অতিক্রম করা যাবে কোনো গুনাহ হবে না। (দেখুন, ফাতাওয়াহ আরকানুল ইসলাম)।
৪। আল্লামা নাসিরুদ্দীন আলবানী (রহঃ) বলেনঃ কোনো মুসল্লীর জন্য জায়িয নয় সুতরাহ ছাড়া সালাত আদায় করা। বরং উচিত হলো এমন কিছু সামনে রেখে সালাত আদায় করা বা মানুষকে তার সম্মুখ দিয়ে অতিক্রমে বাধা সৃষ্টি করবে। ইমাম ও একাকী উভয়ের ক্ষেত্রেই সুতরাহ জরূরী। যদিও তা বিশাল মাসজিদ হয়। সুতরাহর বেলায় ছোট মাসজিদ আর বড় মসজিদের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। এটাই হাক্ব কথা। ইবনু হানী ইমাম আহমাদ সূত্রে স্বীয় মাসায়িল গ্রন্থে বলেনঃ ‘‘একদা আমাকে আবূ ‘আবদুল্লাহ ইমাম আহমাদ সুতরাহবিহীন সালাত আদায় করতে দেখেন। আমি তার সাথে জামে মসজিদে ছিলাম। তিনি আমাকে বললেনঃ কোনো কিছু দিয়ে আড়াল করো। আমি একটি লোক দ্বারা আড়াল করলাম।’’
শায়খ আলবানী (রহঃ) আরো বলেনঃ মক্কাহ ও মদীনাহর মসজিদে শারঈ ওজর ছাড়া মুসল্লীর সামনে দিয়ে যাওয়া কোনো সহীহ দলীল নেই। তাই যথাসম্ভব মসজিদে হারামে কোনো মুসল্লীর সামনে দিয়ে যাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ অন্যান্য মসজিদের চাইতে মসজিদে হারামের সম্মান বেশি। মসজিদে হারামে মুসল্লীর সামনে দিয়ে অতিক্রমের হাদীসটি দুর্বল, যা দলীলযোগ্য নয়। বরং এর বিপরীতে রয়েছে সাহাবীগণের বিশুদ্ধ আসার। ইয়াহইয়া ইবনু কাসীর বলেনঃ
رأيت انس ابن مالك دخل المسجد الحرام فركز شيأ يصلى اليه
‘‘আমি দেখলাম আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) মাসজিদুল হারামে প্রবেশ করলেন, অতঃপর (সুতরাহ স্বরূপ) কিছু একটা তৈরী করে সেদিকে ফিরে সালাত আদায় করলেন।’’ (সহীহ সনদে ইবনু আসাকির, ৮/১৮)।
সালিহ ইবনু কায়সান সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ رأيت ابن عمر يصلى فى الكعبة و لا يدع أحد يمر بين يدي
‘‘আমি ইবনু উমার (রাঃ)-কে কা‘বা শরীফে সালাত আদায় করতে দেখেছি। তিনি তাঁর সম্মুখ দিয়ে কাউকে অতিক্রম করতে দেননি।’’ (সহীহ সনদে আবূ যুর‘আহ রাযী ‘তারীখে দামিস্ক ৯১/১, অনুরূপ ইবনু আসাকির ‘তারীখে দামিস্ক’ ৮/১০৬/২)
মুসল্লীর সামনে দিয়ে অতিক্রমের ব্যাপারে নিষেধ ও ধমকিমূলক হাদীসগুলো ব্যাপক অর্থবোধক। যা কোনো মাসজিদকে বাদ দিয়ে কোনো মাসজিদকে কিংবা কোনো স্থানকে বাদ দিয়ে কোনো স্থানকে নির্দিষ্ট করেনি। বরং ঐ হাদীসগুলো মাসজিদুল হারাম ও মদীনাহর মাসজিদকে সর্বাগ্রে অন্তর্ভুক্ত করে। কেননা এ সমস্ত হাদীস নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর মসজিদেই বলেছেন। তাই এর দ্বারা মূলত তাঁর মাসজিদ উদ্দেশ্য, এবং তার অনুসরণে অন্যান্য মাসজিদ এর অন্তর্ভুক্ত। আর উল্লিখিত আসার দু’টি স্পষ্টভাবে প্রমাণ করছে যে, মাসজিদুল হারামও ঐ হাদীসগুলোর বিধানে ঢুকে গেছে। কতিপয় লোকে বলে যে, অতিক্রমের নিষেধাজ্ঞা থেকে মক্কাহ ও মদীনাহর মাসজিদ পৃথক। কিন্তু তাদের এ কথার কোনো মৌলিক্ব সুন্নাতে নেই এবং কোনো একজন সাহাবীর সূত্রেও নেই।
ইতিপূর্বে বলা হয়েছে মক্কাহর মসজিদে অতিক্রমের ব্যাপারে একটি মাত্র যে বর্ণনা রয়েছে তার সনদ সহীহ নয় এবং তাতে তাদের দাবীর কোনো দলীলও নেই। এ সত্ত্বেও বর্ণনাটিতে এ কথা স্পষ্ট নেই যে, তারা তাঁর ও তাঁর সিজদার স্থানের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করেছে। বর্ণনাটি হচ্ছেঃ মুত্তালিব ইবনু আবূ ওয়াদাহ থেকে বর্ণিত। তিনি দেখলেন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও কা‘বার মাঝে সুতরাহ ছিলো। আর লোকেরা তার সম্মুখ দিয়ে যাচ্ছিল।’’ সুতরাহ কতিপয় আহলি ইলম অতিক্রমের কথা বললেও সন্দেহ নেই যে, এরূপ কথা সুন্নাত বিরোধী। কারণ অতিক্রমে নিষেধাজ্ঞা ও বাধাদান মূলক হাদীসগুলো ব্যাপক, যা কোনোটিকে পৃথক না করে যে কোনো মাসজিদকে শামিল করে। আর সাহাবীদের বিশুদ্ধ আসার দ্বারাও মক্কাহর মাসজিদ এর অন্তর্ভুক্ত হওয়া স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে। (দেখুন, শায়খ আলবানী প্রণীত হাজ্জাতুন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, সিফাতু সালাতিন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, ও অন্যান্য)।
Talhah b. 'Ubaid Allah reported the Messenger of Allah (ﷺ) as saying:
When you place in front of you something such as the back of a saddle, then there is no harm if someone passes in front of you (i.e. the other side of it).