পরিচ্ছেদঃ ৬৪. সৎ ও অসৎ লোকের ইমামতি
৫৯৪। আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে কোন মুসলিমের ইমামতিতে ফরয সালাত আদায় করা ওয়াজিব, চাই সে নেককার বা বদকার হোক না কেন, এমনকি কবীরাহ গুনাহের কাজে জড়িত থাকলেও।[1]
দুর্বল।
باب إِمَامَةِ الْبَرِّ وَالْفَاجِرِ
حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ صَالِحٍ، حَدَّثَنَا ابْنُ وَهْبٍ، حَدَّثَنِي مُعَاوِيَةُ بْنُ صَالِحٍ، عَنِ الْعَلَاءِ بْنِ الْحَارِثِ، عَنْ مَكْحُولٍ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم " الصَّلَاةُ الْمَكْتُوبَةُ وَاجِبَةٌ خَلْفَ كُلِّ مُسْلِمٍ بَرًّا كَانَ أَوْ فَاجِرًا وَإِنْ عَمِلَ الْكَبَائِرَ " .
- ضعيف : و له تتمة تأتي ٢٥٣٣
-
মাসআলাহঃ ফাসিক ও বিদ‘আতীর পিছনে সালাত আদায় জায়িয কি?
* এক গভর্ণর ওয়ালীদ ইবনু ‘উক্ববাহ ইবনু আবূ মুয়ীত মদ পান করতেন। তা সত্ত্বেও তার পিছনে ইবনু মাসঊদ (রাঃ) প্রমুখ বিখ্যাত সাহাবী সালাত আদায় করতেন। (শারহু ফিক্বহি আকবার, পৃষ্ঠা, ৯২)।
* ইবনু ‘উমার (রাঃ) হাজ্জাজ বিন ইউসুফ ও নাজদার পিছনে সালাত আদায় করতেন। তাদের একজন ছিলেন খারিজী এবং অন্যজন সর্বশ্রেষ্ঠ ফাসিক।
* শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রহঃ) বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবীগণ খারিজীদের পিছনেও সালাত আদায় করতেন। সাহাবী ‘আব্দুল্লাহ ইবনু উমার এবং অন্যান্য সাহাবীগণ নজদতুল হরূরী খারিজীর পিছনে সালাত আদায় করতেন। (মিনহাজুস সুন্নাহ)।
* ইমাম বুখারী তাঁর ‘তারীখ’ গ্রন্থে ‘আবদুল কারীম সূত্রে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এমন দশজন সাহাবীকে দেখেছি যারা অত্যাচারী শাসকের পিছনে সালাত আদায় করতেন।
* হাসান বাসরী (রহঃ) বলেন, মুনাফিক্বের পিছনে সালাত আদায়ে মু‘মিনের কোনো ক্ষতি নেই এবং মু‘মিনের পিছনে সালাত আদায়ে মুনাফিকের কোনো উপকার নেই।
* ইমাম আবূ হানিফা (রহঃ) বলেনঃ মু‘মিনগণ সৎ ও অসৎ সকলের পিছনেই সালাত আদায় জায়িয। (ফিক্বহুল আকবার)
* আল্লামা মুহাম্মাদ ইবনু ইসমাঈল ইয়ামানী লিখেছেনঃ শাফিঈ ও হানাফীগণ ফাসিক ইমামের পিছনে সালাত আদায় সহীহ বলে অভিমত দিয়েছেন। (বুলুগুল মারামের টিকা দ্রঃ)।
* ইমাম নাববী লিখেছেনঃ পূর্ব ও পরবর্তী বিদ্বানগণ সর্বদাই মু‘তাযিলা প্রভৃতির পিছনে সালাত আদায় করে আসতেছেন। (ফাতহুল মুগীস)।
* আল্লামা বাহরুল ‘উলুম লিখেছেনঃ মুশাব্বিহী প্রভৃতির পিছনে সালাত জায়িয নেই, এরূপ কথা পরবর্তী যুগের বিদ্বাগণের সংযোজিত মাত্র, এরূপ উক্তি পূর্ববর্তী মুজতাহিদ ইমামগণের সম্পূর্ণ বিপরীত কথা। এরূপ উক্তির সাহায্যে ফাতাওয়াহ দেয়া দূরে থাক, এর দিকে ঝুঁকাও উচিত নয়। (আরকানে আরবা‘আ)
* ইমাম ইবনু হাজম বলেন, আমি কোনো সাহাবী থেকে এ সংবাদ পাইনি যে, তিনি মুকতার, ওবায়দুল্লাহ ইবনু যিয়াদ ও হাজ্জাজের পিছনে সালাত আদায় করতে নিষেধ করেছেন। কারণ ওদের চেয়ে বড় ফাসিক আর কেউ নেই। (মুহাল্লা, ৪/২১৩-২১৪)।
* ফাতাওয়া আলমগীরিতে রয়েছেঃ যদি বিদ‘আত কুফর পর্যন্ত না গড়ায় অর্থাৎ তা আচরণকারীকে কাফিরে পরিণত না করে তাহলে তার পিছনে সালাত জায়িয।
* হানাফী ফিক্বাহ খুলাসায় রয়েছেঃ যে ব্যক্তি আমাদের আহলে ক্বিবলাহর অন্তর্ভুক্ত, সে যদি তার বিদ‘আতে এতটা বাড়াবাড়ি না করে, যার কারণে তার জন্য কুফরের হুকুম প্রয়োগ করতে হয়, তাহলে তার পিছনে সালাত আদায় জায়িয হবে।
* ইমাম ইবনুল হুমাম ও মোল্লা ‘আলী হানাফী (রহঃ) বলেনঃ হাদীস দ্বারা ফাসিক ও বিদ‘আতীর পিছনে সালাত আদায় জায়িয হওয়া প্রমাণিত হয়, যতক্ষণ না সে কুফরী কথা উচ্চারণ করে। (মিরআত ও হিদায়ার টিকা দ্রঃ)।
সউদী আরবের বিশ্ববিখ্যাত আলিম শায়খ শাহিল আল-উসাইমিন (রহঃ) বলেনঃ প্রত্যেক মুসলিম ব্যক্তি- যদিও সে কিছু গুনাহর কাজে লিপ্ত থাকে- তার পিছনে সালাত আদায় করা ওয়াজিব ও সালাত বিশুদ্ধ। এটাই বিশুদ্ধ মত। কিন্তু নিঃসন্দেহে পরহেজগার ও বাহ্যিকভাবে পরিশুদ্ধ লোকের পিছনে সালাত আদায় করা উত্তম। তবে এ গুনাহগারের পাপ যদি এমন পর্যায়ের হয় যা ইসলামভঙ্গকারী, তাহলে উক্ত পাপের কারণে সে ইসলামের বন্দী থেকে বের হয়ে (কাফির) হয়ে যাবে।, এমতাবস্থায় তার পিছনে সালাত আদায় বৈধ হবে না। (ফাতাওয়াহ আরকানুল ইসলাম)
মূলতঃ দু’টি কারণে ফাসিক ও বিদ‘আতীর পিছনে সালাত আদায় করা যায়। একঃ মুসলিম উম্মাহর ঐক্য ঠিক রাখা, মুসলিমরা যেন দলে দলে বিভক্ত হয়ে না যায়। দুইঃ জামা‘আতে সালাত আদায়ের ফাযীলাত লাভ করা, তবে ফাসিকী ও বিদ‘আত যদি কুফর ও বেশি বাড়াবাড়িতে পৌঁছে যায় তাহলে এমন লোকের পিছনে সালাত আদায় না করাই উত্তম।
এ সম্পর্কিত বিভিন্ন বর্ণনাঃ
(১) ইমাম বুখারী (রহঃ) সহীহুল বুখারীতে ফিৎনাহবাজ ও বিদ‘আতীর ইমামাত অনুচ্ছেদে বর্ণনা করেন যে, হাসান (রহঃ) বলেছেনঃ তার পিছনেও সালাত আদায় করো। তবে তার বিদ‘আতের গুনাহ তার উপরেই বর্তাবে। (বর্ণনাটি সহীহ, এটি ইবনু আবূ শায়বাহ মাওসুলভাবে বর্ণনা করেছেন, সহীহ সনদে ফাতহুল বারী)।
(২) আবূ আব্দুল্লাহ (ইমাম বুখারী) বলেন, আমাকে মুহাম্মাদ ইবনু ইউসুফ (রহঃ) উবায়দুল্লাহ ইবনু আদি ইবনু খিয়াব (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি উসমান ইবনু আফ্ফান (রাঃ) অবরুদ্ধ থাকার সময় তাঁর নিকট গিয়ে বললেন, আসলে আপনি জনগণের ইমাম। আর আপনার বিপদ কি তা নিজেই বুঝতে পারছেন। আর আমাদের ইমামাত করছেন বিদ্রোহীদের নেতা। ফলে আমরা গুনাগগার হওয়ার আশংকা করছি। তিনি বললেন, মানুষের আমলের মধ্যে সালাতই সর্বোত্তম। কাজেই লোকেরা যখন উত্তম কাজ করে, তখন তুমিও তাদের সাথে উত্তম কাজে অংশ নিবে। আর যখন মন্দ কাজে লিপ্ত হয়, তখন তাদের মন্দ কাজ থেকে বেঁচে থাকবে। (সহীহুল বুখারী)।
ফাতহুল বারীতে রয়েছে.... ‘‘‘উসমান (রাঃ) এর অবরুদ্ধ হওয়ার দিন উসমানের অনুমতিক্রমে আবূ উমামাহ ইবনু সাহল ইবনু হুনাইফ আল-আনসারীও লোকদের সাথে সালাত আদায় করেছেন।’’ যা উমার ইবনু শাববাহ সহীহ সনদে বর্ণনা করেছেন এবং ইবনুল মাদীনী বর্ণনা করেছেন আবূ হুরাইরাহ সূত্রে। অনুরূপভাবে তাদের সাথে সালাত আদায় করেছেন আলী ইবনু আবূ তালিব (রাঃ)। যা বর্ণনা করেছেন ইসমাঈল আল খাত্বী ‘তারীখে বাগদাদ’ গ্রন্থে সালাবাহ ইবনু ইয়াযীদ আল-হিমানীর বর্ণনা থেকে, তিনি বলেনঃ ‘‘ঈদুল আযহার দিনে আলী (রাঃ) এলেন এবং লোকদের সাথে সালাত আদায় করলেন।’’ ইবনুল মুবারাক বলেনঃ তিনি তাদের সাথে কেবল ঐ দিনই সালাত আদায় করেছেন। কিন্তু অন্যান্যরা বলেনঃ তিনি তাদের সাথে কয়েকবার সালাত আদায় করেছেন এবং তাদের সাথে সাহল ইবনু হুনাইফও সালাত আদায় করেছেন যা উমার ইবনু শাববাহ মজবুত সনদে বর্ণনা করেছেন। বলা হয়, আবূ আইয়ূব আল-আনসারী এবং ত্বালহা ইবনু উবায়দুল্লাহও তাদের সাথে সালাত আদায় করেছেন। (দেখুন, ফাতহুল বারী শারহু সহীহুল বুখারী ২/২৪১)।
(৩) ইবনু উমার (রাঃ) হাজ্জাজের পিছনে সালাত আদায় করেছেন- (বর্ণনাটি সহীহ)। যায়িদ ইবনু আসলাম থেকে বর্ণিতঃ ফিত্বনাহর যুগে যে ইমামই আসতো তার পিছনে ইবনু উমার সালাত আদায় করতেন এবং স্বীয় সম্পদের যাকাত দিতেন- (এর সনদ সহীহ)। সাইফ আল-মাজীনী বলেন, ইবনু উমার (রাঃ) বলতেনঃ ‘‘আমি ফিত্বনাহর সময় যুদ্ধ করবো না। আর যিনি বিজয়ী হবেন তার পিছনে সালাত আদায় করবো।’’ (আবূ সাইফ পর্যন্ত এর সনদ সহীহ)। ইবনু আবূ হাতিম আবূ সাইফের কোনো দোষগুণ উল্লেখ করেননি)। (ইরওয়াউল গালীল, ৫২৫)।
(৪) জা‘ফার ইবনু মুহাম্মাদ তার পিতা সূত্রে বর্ণনা করেনঃ ‘‘হাসান এবং হুসাইন (রাঃ) উভয়েই মারওয়ানের পিছনে সালাত আদায় করতেন। তিনি বলেন, বলা হলোঃ তাঁরা কি তাঁদের অবস্থানে ফিরে গিয়ে ঐ সালাত পুনরায় আদায় করতেন না? তিনি বলেন, না, আল্লাহর শপথ! তাঁরা ইমামগণের সালাতের উপর অতিরিক্ত করতেন না।’’ (শাফিঈ, বায়হাক্বী, ইবনু আবূ শায়বাহ, ইরওয়া- ৫২৬)।
(৫) যুবাইদী (রহঃ) বর্ণনা করেন, যুহরী (রহঃ) বলেছেন. যারা ইচ্ছাকৃত হিজড়া সাজে, তাদের পিছনে বিশেষ জরূরী ছাড়া সালাত আদায় করা উচিত মনে করি না। (সহীহুল বুখারী, অনুঃ ফিতনাবাজ ও বিদ‘আতীর ইমামাত)।
(৬) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ‘‘ফারয সালাত প্রত্যেক মুসলিমের পিছনে আদায় করা ওয়াজিব। চাই সে সৎ হোক বা অসৎ পাপাচারী, এমন কি সে কবীরা গুনাহ করলেও।’’
হাদীসটি দুর্বলঃ এটি বর্ণনা করেছেন আবূ দাঊদ, এবং তার থেকে বায়হাক্বী, দারাকুতনী ও ইবনু আসাকির- মাকহুল থেকে আবূ হুরাইরাহ সূত্রে মারফূভাবে। ইমাম দারাকুতনী বলেন, ‘মাকহুল হাদীসটি আবূ হুরাইরাহ থেকে শুনেননি, এছাড়া সনদের সকল বর্ণনাকার নির্ভরযোগ্য বিশ্বস্ত।’
আবূ হুরাইরাহ থেকে মারফূভাবে এর আরেকটি সূত্র রয়েছে এ শব্দেঃ ‘‘অচিরেই আমার পরে তোমাদের এমন কিছু শাসক হবে যে, তখন নেককার তার ভালো কাজ নিয়ে এবং পাপীষ্ঠ তার পাপাচারীতা নিয়ে তোমাদের কাছে আসবে। ঐ সময় তোমরা তাদের কথা শুনতে ও আনুগত্য করবে যেগুলো হাক্বের অনুকূলে হবে। আর তাদের পিছনে সালাত আদায় করবে। তারা ভালো করলে সেটা তোমাদের ও তাদের জন্য হবে, আর মন্দ করলে তোমাদের ভালো তোমাদের জন্য কিন্তু তাদের মন্দ তাদের উপরই বর্তাবে।’’ এটি বর্ণনা করেছেন দারাকুতনী (১৮৪) এবং ইবনু হিব্বান ‘‘যুআফা’’ গ্রন্থে। এর সনদ খুবই দুর্বল। সনদে আব্দুল্লাহ ইবনু মুহাম্মাদ মাতরূক, যেমন হাফিয ‘আত-তালখীস’ গ্রন্থে বলেছে।
অন্য অনুচ্ছেদে হাদীসটি ইবনু উমার, আবূ দারদা, আলী ইবনু আবূ তালিব, আব্দূল্লাহ ইবনু মাসঊদ, ওয়াসীলাহ ইবনু আসক্বাহ, এবং আবূ উমামাহ (রাঃ)) সূত্রে বর্ণিত হয়েছে।
(ক) ইবনু উমার বর্ণিত হাদীসঃ তাঁর সূত্রে কয়েকটি সনদ রয়েছেঃ প্রথম সনদঃ ‘আত্বা ইবনু আবূ রিবাহ থেকে তাঁর সূত্রে মারফূভাবে এ শব্দেঃ ‘‘তার জন্য দু‘আ করো যে বলে আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই এবং তার পিছনে সালাত আদায় করো যে বলে আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই।’’
এটি বর্ণনা করেছেন দারাকুতনী (১৮৪, আবূ নু‘আইন ‘আখবারে আসবাহান’ (২/২১৭) ‘উসমান ইবনু আবদুর রাহমান থেকে...। এ সনদটি খুবই নিকৃষ্ট। সনদের উসমান ইবনু আব্দুর রাহমান মাতরূক। ইবনু মাঈন তাকে মিথ্যুক বলেছেন।
দ্বিতীয় সনদঃ মুজাহিদ থেকে তাঁর সূত্রে। যা বর্ণনা করেছেন দারাকুতনী, ইবনু শাজান, ‘ফাওয়ায়িদ’ ও অন্যরা মুহাম্মাদ ইবনু ফাজল ইবনু আতিয়্যিাহ থেকে...। হাকিম বলেন, এতে মুহাম্মাদ ইবনু ফাজল ইবনু আতিয়্যাহ একক হয়ে গেছেন।
আমি (আলবানী) বলছিঃ তিনি একজন মিথ্যুক, যেমন ফাল্লাস ও অন্যরা বলেছেন। তাছাড়া সালিম সূত্রে তিনি তাতে বৈপরিত্য করেছেন, যা সামনে আসছে।
তৃতীয় সনদঃ নাফি থেকে তার সূত্রে। এর কয়েকটি সূত্র আছে। সবগুলো সূত্রই নিকৃষ্ট। একটি সূত্র আবূ ওয়ালিদ মাখযুমী রয়েছে। ইবনু আদী বলেনঃ তিনি নির্ভরযোগ্যদের সূত্র দিয়ে হাদীস জাল করতেন। তার তাবে’ করেছেন ওহাব ইবনু ওহাব, তিনি মিথ্যুক। এর আরেকটি সূত্রে উসমানী মিথ্যুক, হাদীস জালকারী। ইবনু আদী বলেনঃ মালিক থেকে তার বর্ণনাটি বাতিল। আরেকটি সূত্রে নাসর ইবনুল হারিস দুর্বল। দারাকুতনী তাকে দুর্বল বলেছেন।
(খ) আবূ দারদা বর্ণিত হাদীসঃ তিনি বলেনঃ ‘‘আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে চারটি বৈশিষ্টের কথা শুনেছি, যা তোমাদের কাছে বর্ণনা করিনি। কিন্তু আজ তা আমি তোমাদের কাছে বর্ণনা করবো। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ কোনো পাপের কারণে আমার আহলে ক্বিবলাহর অন্তর্ভুক্ত কাউকে কাফির বলবে না যদিও সে কাবীরাহ গুনাহ করে। প্রত্যেক ইমামের পিছনে সালাত আদায় করবে। প্রত্যেক ইমামের নেতৃত্বে যুদ্ধ করবে। আর চতুর্থটি হচ্ছে, তোমরা আবূ বাকর, উমার, উসমান ও আলী সম্পর্কে ভালো ছাড়া কোনো মন্দ উক্তি করবে না, তোমরা বলোঃ ইতোপূর্বেও উম্মাত গত হয়েছে। তারা যা করেছে তার কর্মফল তাদের জন্য এবং তোমাদের কর্মফল তোমাদের জন্য।’’
এটি বর্ণনা করেছেন দারাকুতনী এবং তিনি বলেছেনঃ ‘এর সনদ প্রতিষ্ঠিত নয়, আবূ দারদা ব্যতীত সবাই দুর্বল।’ উকাইলী যু‘আফা গ্রন্থে উপরোক্ত সনদে এটি সংক্ষেপ এ শব্দে বর্ণনা করেছেনঃ ‘‘প্রত্যেক ইমামের পিছনে সালাত আদায় করো এবং প্রত্যেক আমিরের নেতৃত্বে যুদ্ধ করো। অতঃপর উকাইলী বলেনঃ এ ‘আব্দুল জাব্বারের সনদ মাজহুল, মাহফুয নয়। আর এ মাতানের প্রামাণ্য কোনো সনদ নেই।’ আবদুল জাব্বার সূত্রে বর্ণনাকারী ওয়ালীদ ইবনু ফাজল সম্পর্কে ইবনু হিব্বান বলেনঃ ‘সে মুনকার হাদীসাবলি বর্ণনা করে, যেগুলো বানোয়াট হওয়ার ব্যাপারে সন্দেহ নেই। তার দ্বারা দলীল গ্রহণ জায়িয নয়।’
(গ) আলী বর্ণিত মারফূ হাদীসঃ ‘‘প্রত্যেক সৎ ও অসৎ লোকের পিছনে সালাত আদায় করা, প্রত্যেক আমিরের নেতৃত্বে জিহাদ করা, এতে তোমার নেকী তোমার জন্যই থাকবে এবং আহলে কিবলাহর অন্তর্ভুক্ত মৃতের জন্য দু‘আ করা দ্বীনের অন্যতম ভিত্তি।’’
এটি বর্ণনা করেছেন দারাকুতনী। এর সনদে কয়েকটি দোষ আছে। সনদের হারিস আল-আ‘ওয়াল মিথ্যাবাদীতায় সন্দেহভাবান। মুহাম্মাদ ইবনু উলাওয়ান অজ্ঞাত। ফুরাদা ইবনু সুলাইমান হাদীস বর্ণনায় খুবই মুনকার এবং আবূ ইসহাক্ব অজ্ঞাত।
(ঘ) ইবনু মাস‘ঊদ বর্ণিত মারফূ হাদীসঃ ‘‘তিনটি জিনিস সুন্নাতের অন্তর্ভুক্তঃ ১। প্রত্যেক ইমামের পিছনে কাতারবদ্ধ হওয়া, তোমার সালাত তোমার জন্য এবং ইমামের পাপ ইমামের উপরই বর্তাবে, ২। প্রত্যেক আমিরের নেতৃত্বে জিহাদ করা, তোমার জিহাদ তোমার জন্য, এবং তার খারাবী তার উপরই বর্তাবে, ৩। তাওহীদপন্থি প্রত্যেক মৃতের জন্য দু‘আ করা, যদিও সে নিজেকে হত্যা করে।’’
এটি বর্ণনা করেছেন দারাকুতনী এবং তিনি বলেনঃ এর সনদে উমার ইবনু শাবহ মাতরূক। আর ইবনু হিব্বান বলেন, তিনি হাদীস জাল করতেন।
(ঙ) ওয়াবিসাহ বর্ণিত মারফূ হাদীসঃ ‘‘তোমাদের মিল্লাতে অন্তর্ভুক্ত কাউকে কাফির আখ্যায়িত করো না, যদিও সে কাবীরাহ গুনাহ করে, এবং প্রত্যেক ইমামের নেতৃত্বে সালাত আদায় করো, আর প্রত্যেক ইমামের নেৃতত্বে জিহাদ করো, এবং প্রত্যেক মৃতের জন্য দু‘আ করো।’’
এটি বর্ণনা করেছেন দারাকুতনী এবং ইবনু মাজাহ (১৫২৫) শেষের বাক্যটি। ইমাম দারাকুতনী বলেন, ‘এর সনদে আবূ সাঈদ অজ্ঞাত।’ বাহ্যিকভাবে তিনি হলেন মুহাম্মাদ ইবনু সাঈদ মাসলূব। তিনি একজন মিথ্যুক, হাদীস জালকারী। এছাড়া সনদে উতবাহ ইবনু ইয়াক্বযান সম্পর্কে ইমাম নাসায়ী বলেন, তিনি নির্ভরযোগ্য নন। আর সনদের হারিস ইবনু নুবহানকে ইমাম বুখারী মুনকারুল হাদীস বলেছেন।
(চ) আবূ উমামাহ বর্ণিত মারফূ হাদীসঃ ‘‘তোমরা আহলে ক্বিবলাহর অন্তর্ভুক্ত সালাত আদায়কারী ব্যক্তির সাথে সালাত আদায় করো এবং আহলে ক্বিবলাহর অন্তর্ভুক্ত মৃত ব্যক্তির জন্য দু‘আ করো।
এটি বর্ণনা করেছেন জুরজানী ‘তারীখে জুরজান।’ এর সনদ খুবই নিকৃষ্ট। সনদে রয়েছে ‘আব্দুল্লাহ ইবনু ইয়াযীদ। ইমাম আহমাদ বলেন, তার হাদীসসমূহ বানোয়াট। এছাড়া সনদে কুরকুসানী রয়েছে। তার নাম হলো মুহাম্মাদ ইবনু মুস‘আব। তার স্মরণশক্তি দুর্বল। (আরো বিস্তারিত দেখুন, ইরওয়াউল গালীল, ৫২৭)।
আল্লামা আমীর ইয়ামানী ‘‘সকল সৎ ও অসৎ ব্যক্তির ইকতিদা করো’’ দারাকুতনীর এ হাদীস সম্পর্কে লিখেছেনঃ এ ধরণের বহু হাদীস বিদ্যমান আছে যেগুলোর সাহায্যে সৎ ও অসৎ ইমামের পিছনে সালাত সহীহ হওয়া প্রমাণিত হয়। তবে সবগুলো হাদীসই দুর্বল। কিন্তু এর সক্ষমতায় যে হাদীস পেশ করা হয়, যেমনঃ ‘‘ধর্মে ত্রুটি সম্পন্ন কোনো ব্যক্তি যেন তোমাদের ইমামতি না করে।’’ প্রভৃতি হাদীসগুলিও দুর্বল। তাই বিদ্বানগণের সিদ্ধান্ত হচ্ছে, উভয় পক্ষেরই হাদীস যখন দুর্বল, তখন আমরা মূলনীতির অনুসরণ করবো আর তা হচ্ছে এই যে, যার সালাত সঠিক হবে তার ইমামতিও সহীহ হবে। সাহাবায়ি কিরামের আচরণ এ মূলনীতির সমর্থক।
হাফিয ইবনু হাজার আসকালানী (রহঃ) লিখেছেনঃ দারাকুতনী কর্তৃক বর্ণিত ‘‘সকল সৎ ও অসৎ ব্যক্তির ইকতিদা করো’’ হাদীসটি আবূ হুরাইরাহর উল্লখিতি হাদীসের সমর্থক। এটা মুরসাল হলেও সাহাবা ও তাবেঈ বিদ্বানগণের আচরণ দ্বারা শক্তিশালী হয়েছে। (দেখুন, আহলে ক্বিবলাহর পিছনে নামায, পৃষ্ঠা ১০, ১১)।
ফুরূ‘আৎ (শাখা ও অমৌলিক) মাসআলাহ্য় মতবিরোধীদের পরস্পরের পিছনে সালাত আদায়ঃ
(ক) আল্লামা ইবরাহীম হালবী (রহঃ) বলেনঃ যারা ফুরূ‘আৎ মাসআলাহয় পরস্পর বিরোধী, তাদের সালাত পরস্পরের পিছনে জায়িয। (হানাফী ফিক্বহ মুনিয়া গ্রন্থে টিকা দ্রঃ)
(খ) মোল্লা আলীকারী হানাফী (রহঃ) বলেনঃ ইমাম আবূ হানিফা, মালিক, শাফিঈ, আহমাদ এবং সমুদয় মুজতাহিদ বিদ্বানগণের যুগে ফুরূ‘আৎ মাসাআলাহ্য় বিরোধীগণের সালাত পরস্পরের পিছনে বৈধ হওয়ার রীতি প্রবর্তিত ছিলো। তাদের যুগে কোনো একজন বিদ্বান থেকে ফুরূ‘আৎ মাসআলাহ্য় বিরোধী কারো পিছনে সালাত নিষেধ হওয়ার কথা বর্ণিত হয়নি।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অথবা তাঁর সাহাবীগণের কোনো একজন থেকেও বাচনিক, এমন কি অনুসরণীয় ইমামগণের মধ্যকার কোনো একজন থেকেও এরূপ কোনো উক্তি বর্ণিত হয়নি যে, ফুরূ‘আতে বিরোধী কোনো ব্যক্তির পিছনে সালাত আদায় জায়িয নয় কিংবা মাকরূহ। পক্ষান্তরে হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, তোমরা পরহেযগার ও ফাসিক সকলের পিছনেই সালাত আদায় করো।
(গ) শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রহঃ) বলেনঃ যদি মুক্বতাদির অজানা থাকে যে, তার ইমাম এমন কাজ করেছেন যদ্বারা সালাত বাতিল হয়, তাহলে উক্ত ইমামের পিছনে তার সালাত আদায় সাহাবায়ি কিরাম, ইমাম চতুষ্টয় এবং সকল বিদ্বানের সম্মিলিত মতে অপছন্দনীয়তার সাথে জায়িয হবে। এ বিষয়ে পূর্ববর্তী বিদ্বানগণের কেউ মতভেদ করেননি। পরবর্তী কালে কতিপয গোড়া কাঠমোল্লাই এ বিষয়ে বিরোধ সৃষ্টি করেছে। এরূপ অসঙ্গতি উক্তি যে উচ্চারণ করে বিদ‘আতির মতো তাকেও তওবা করা উচিত, যতক্ষণ না সে তার এ অসঙ্গতি উক্তি পরিহার করে। কারণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তাঁর খালীফাগণের যুগ থেকে মুসলিমগণ চিরাচরিতভাবে পরস্পরের পিছনে সালাত আদায় করে আসছেন। ইমামগণের অধিকাংশই সুন্নাত ও ফারযের মধ্যে তারতম্য করতেন না। তারা শুধু শারী‘আতের সালাত আদায় করে যেতেন মাত্র। এ সকল খুটিনাটি বিষয় জানা যদি ওয়াজিব হতো, তাহলে অধিকাংশ মুসলিমের সালাত বাতিল হয়ে যেতো।
আর মুক্তাদীর যতি এরূপ বিশ্বাস থাকে যে, তার ইমাম এমন কাজ করেছে যা উক্ত মুক্তাদীর মাযহাবে অবৈধ। যেমন ইমাম স্বীয় লজ্জাস্থান স্পর্শ করলো বা কোনো নারীকে কামভাবে স্পর্শ করলো, বা রক্তমোক্ষণ করলো, অতঃপর সে উযু না করে সালাতে দাঁড়িয়ে গেলো- এরূপ অবস্থায় উক্ত ইমামের ইকতিদা করার বিষয়ে বিদ্বানগণ মতভেদ করেছেন কিন্তু সঠিক কথা হচ্ছে, এরূপ অবস্থায়ও উক্ত ইমামের পিছনে সালাত সহীহ হবে। সাহাবায়ে কিরাম ও তাবেঈ বিদ্বানগণের অধিকাংশই এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। এটাই ইমাম মালিক (রহঃ)-এর মাযহাব। আর এটাই ইমাম শাফিঈ এবং ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বাল (রহঃ)-এর অন্যতম উক্তি। বরং ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) ও এ কথাই বলেছেন। ইমাম আহমাদের অধিকাংশই ফাতাওয়া ও উক্তির উপরই প্রতিষ্ঠিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্পষ্টই বলেছেনঃ ইমামের ত্রুটি মুক্তাদীর সালাতকে প্রভাবিত করে না। (ফাতাওয়াহ ইবনু তাইমিয়্যাহ।)
(ঘ) ইমাম শাফিঈ (রহঃ) লিখেছেনঃ হানাফি ইমাম যদি তার লজ্জাস্থান স্পর্শ করার পর উযু না করেই সালাত আদায় করে বা রুকু ও সিজদা থেকে খুব তাড়াতাড়ি করে কিংবা সূরা ফাতিহা ছাড়া অন্য কোনো আয়াত কির‘আত করে তবুতও তার পিছনে শাফিঈ মুক্তাদী সালাত আদায় সহীহ হবে। ইমাম কাফ্ফালও এ কথাই বলেছেন, আর জায়িয হওয়ার উক্তি ইমাম দারিমী সূত্রেও উল্লেখ আছে। কাওলুস সাদীদ, ইবনু মোল্লা মাররুখ হানাফি)
এটাই সঠিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে, সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ), তৃতীয় খলীফা উসমান (রাঃ)-এর পিছনে মিনায় যুহর ও আসর সালাত কসরের পরিবর্তে পুরো চার রাক‘আত সালাত আদায় করেছেন। অথচ ইবনু মাসঊদের অভিমত হচ্ছে কসর করা ওয়াজিব। তাকে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেনঃ মতভেদ সর্বাপেক্ষা জঘন্য ফিতনাহ। যদি প্রথমে তিনি ও অন্যান্যরা এর প্রতিবাদ করেছিলেন এজন্য যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রবাসে দু’রাক‘আতের অধিক সালাত আদায় করেননি।
ফাতাওয়াহ ইবনু তাইমিয়্যাহ, হুজাজাতুল্লাহিল বালিগাহ এবং ইনসাফ প্রভৃতি গ্রন্থে লিখিত আছেঃ
সাহাবায়ি কিরাম, তাবেঈ এবং পরবর্তী বিদ্বানগণের একদল সালাতে ‘বিসমিল্লাহর রহমানির রহীহ’ পাঠ করতেন আরেকদল পাঠ করতেন না, একদল তা জোরে পড়তেন আর এক দল পড়তেন আস্তে। একদল ফাজরের সালাতে কুনূত পড়তেন আর এক দল পড়তেন না। একদল রক্তমোক্ষণের পর বা নাকশিড় অথবা বমি হলে উযু করতেন আর এক দল এসব কারণে উযু করতেন না। তাদের একদল নারীকে কামভাবে স্পর্শ করলে বা লজ্জাস্থান স্পর্শ করলে উযু করতেন, আবার তাদের এক দল এসব কারণে উযু করতেন না। তাদের একদল সালাতে অট্টহাসলে উযু করতেন আর এক দল উযু করতেন না। তাদের এক দল আগুনে পাকানো খাবার খেলে উযু করতেন আর এক দল করতেন না। তাদের এক দল উটের গোশত খেলে উযু করতেন আর এক দল উযু করতেন না। কিন্তু এতদূর মতানৈক্য সত্ত্বেও তারা সকলেই পরস্পরের পিছনে সালাত আদায় করতেন।
আহলে হাদীসের পিছনে হানাফিগণের এবং হানাফিগণের পিছনে আহলে হাদীসগণের সালাত আদায়ঃ
আহলে হাদীস ও হানাফি উভয় পক্ষই আল্লাহর অনুগ্রহে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের অন্তর্ভুক্ত। তাই এদের পরস্পরের পিছনে সালাত আদায় জায়িয।
হানাফি ফিক্বাহ গ্রন্থে রয়েছেঃ আহলে হাদীসগণ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত এবং হাক্বের উপর আছেন। তাদের পিছনে হানাফিদের সালাত জায়িয। এ ব্যাপারে ইজমা (ঐক্যমত্য) আছে। (দেখুন, হিদায়া, উরদু অনুবাদ, আইনুল হিদায়া, ৫২৫ পৃঃ)।
মাওলানা রশীদ আহমাদ গাংগোহী (রহঃ) বলেনঃ আহলে হাদীসের সাথে আহলে সুন্নাতের আক্বীদাহগত ব্যাপারে কোনো মতভেদ নেই। তাই এরা আহলে সুন্নাত। আর এদের পিছনে (সালাতে) ইকতিদা করা সিদ্ধ। (ফাতাওয়াহ রশীদিয়া ২/৮৬)।
মাওলানা আশরাফ আলী থানভী (রহঃ) বলেনঃ এটা প্রকাশিত হয়েছে যে, আহলে হাদীসের পিছনে আক্বীদাহয় একমত হলে, যদিও খুটিনাটি মাসআলায় মতভেদ থাকে- ইকতিদা করা জায়িয। (ফাতাওয়াহ ইমদাদিয়া ১/৯৩)।
দেওবন্দের মুফতী মাওলানা আযীযুর রহমান উসমানী বলেনঃ গায়র মুকাল্লিদের পিছনে মুকাল্লিদের এবং মুকাল্লিদের পিছনে গায়র মুকাল্লিদের সালাত সিদ্ধ। (মুহাজির পত্রিকা, ২৯শে জুন ১৯২৮ সংখ্যা, আইনি তুহফা সালাতে মুস্তফা)।
উল্লেখ্য মুসলিম ঐক্য প্রতিষ্ঠা ও জামা‘আতে সালাত আদায়ের ফাযীলাত লাভের উদ্দেশ্যে মুসলিমরা একে অন্যের পিছনে সালাত আদায়ের পাশাপাশি অবশ্যই অনাচার, বিদ‘আত এবং দুর্বল ও ভিত্তিহীন বর্ণনার উপর কৃত ‘আমলকে কুরআন ও সহীহ হাদীসের আলোকে সংশোধন ও দূরী করণের চেষ্টা করবে। যেন বিশুদ্ধ ‘আক্বীদাহ্ ও সহীহ আমলের উপর চমৎকার মুসলিম ঐক্য প্রতিষ্ঠা লাভ করে। আল্লাহ তা‘আলা যেন প্রত্যেক মুসলিমকে দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ লাভের উদ্দেশ্যে এ ব্যাপারে গোড়ামী পরিহার করে উদার ও একনিষ্ঠ মনের অধিকারী হওয়ার তাওফিক দান করেন- আমীন!
Abu Hurairah reported the Messenger of Allah(ﷺ) as saying:
The obligatory prayer is essential behind every Muslim, pious or impious, even if he has committed a sins.