পরিচ্ছেদঃ ৭৯. রক্ত বের হলে অযু করা
১৯৮। জাবির (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে যাতুর রিক্বা’ যুদ্ধাভিযানে বের হলাম। তখন এক ব্যক্তি মুশরিকদের এক লোকের স্ত্রীকে হত্যা করে। ফলে ঐ মুশরিক এ মর্মে শপথ করে যে, যতক্ষণ পর্যন্ত মুহাম্মাদের সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কোন সাথীর রক্তপাত না করব, ততক্ষণ পর্যন্ত আমি ক্ষ্যান্ত হব না। অতএব সে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সন্ধানে বেরিয়ে পড়ল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক জায়গায় অবতরণ করে বললেনঃ এমন কে আছো, যে আমাদের পাহারা দিবে? তখন মুহাজিরদের থেকে একজন এবং আনসারদের থেকে একজন তৈরি হয়ে গেলেন। তিনি বললেনঃ তোমরা দু’জনে গিরিপথের চূড়ায় মোতায়েন থাক। উভয়ে গিরিমুখে পৌঁছলে মুহাজির লোকটি ঘুমিয়ে পড়েন। আর আনসারী লোকটি দাঁড়িয়ে সালাত আদায়ে মশগুল হন।
এমন সময় ঐ লোকটি এসে আনসারী লোকটিকে দেখেই চিনে ফেলল। সে বুঝতে পারল তিনি (প্রতিপক্ষের) নিরাপত্তা প্রহরী। অতএব সে তাঁর প্রতি একটি তীর নিক্ষেপ করল, যা তার দেহে বিঁধে গেল। তিনি তা বের করে নিলেন। সে একে একে তিনটি তীর নিক্ষেপ করল। তিনি রুকু’ সিজদা্ করে (যথারীতি সালাত শেষ করে) সাথীকে জাগালেন। সাহাবীগণ সর্তক হয়ে গিয়েছেন, এটা টের পেয়ে মুশরিক লোকটি পালিয়ে গেল। মুহাজির সাহাবী আনসার সাহাবীকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখতে পেয়ে বললেন, সুবহানাল্লাহ! প্রথম তীর নিক্ষেপের পরই আমাকে সর্তক করেননি কেন? তিনি বললেন, আমি (সালাতে) এমন একটি সূরাহ তিলাওয়াত করছিলাম যা ভঙ্গ করতে আমি পছন্দ করিনি। [1]
হাসান।
باب الْوُضُوءِ مِنَ الدَّمِ
حَدَّثَنَا أَبُو تَوْبَةَ الرَّبِيعُ بْنُ نَافِعٍ، حَدَّثَنَا ابْنُ الْمُبَارَكِ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ إِسْحَاقَ، حَدَّثَنِي صَدَقَةُ بْنُ يَسَارٍ، عَنْ عَقِيلِ بْنِ جَابِرٍ، عَنْ جَابِرٍ، قَالَ خَرَجْنَا مَعَ رَسُولِ اللهِ صلي الله عليه وسلم - يَعْنِي فِي غَزْوَةِ ذَاتِ الرِّقَاعِ - فَأَصَابَ رَجُلٌ امْرَأَةَ رَجُلٍ مِنَ الْمُشْرِكِينَ فَحَلَفَ أَنْ لَا أَنْتَهِي حَتَّى دَمًا فِي أَصْحَابِ مُحَمَّدٍ فَخَرَجَ يَتْبَعُ أَثَرَ النَّبِيِّ صلي الله عليه وسلم فَنَزَلَ النَّبِيُّ صلي الله عليه وسلم مَنْزِلاً فَقَالَ مَنْ رَجُلٌ يَكْلَؤُنَا فَانْتَدَبَ رَجُلٌ مِنَ الْمُهَاجِرِينَ وَرَجُلٌ مِنَ الأَنْصَارِ فَقَالَ " كُونَا بِفَمِ الشِّعْبِ " . قَالَ فَلَمَّا خَرَجَ الرَّجُلَانِ إِلَى فَمِ الشِّعْبِ اضْطَجَعَ الْمُهَاجِرِيُّ وَقَامَ الأَنْصَارِيُّ يُصَلِّي وَأَتَى الرَّجُلُ فَلَمَّا رَأَى شَخْصَهُ عَرَفَ أَنَّهُ رَبِيئَةٌ لِلْقَوْمِ فَرَمَاهُ بِسَهْمٍ فَوَضَعَهُ فِيهِ فَنَزَعَهُ حَتَّى رَمَاهُ بِثَلَاثَةِ أَسْهُمٍ ثُمَّ رَكَعَ وَسَجَدَ ثُمَّ انْتَبَهَ صَاحِبُهُ فَلَمَّا عَرَفَ أَنَّهُمْ قَدْ نَذِرُوا بِهِ هَرَبَ وَلَمَّا رَأَى الْمُهَاجِرِيُّ مَا بِالأَنْصَارِيِّ مِنَ الدَّمِ قَالَ سَبْحَانَ اللهِ أَلَا أَنْبَهْتَنِي أَوَّلَ مَا رَمَى قَالَ كُنْتُ فِي سُورَةٍ أَقْرَأُهَا فَلَمْ أُحِبَّ أَنْ أَقْطَعَهَا .
- حسن
হাদীস থেকে শিক্ষাঃ প্রসাব-পায়খানার রাস্তা ব্যতীত দেহের অন্য কোনো স্থান থেকে রক্ত প্রবাহিত হলে উযু ভঙ্গ হবে কি না এ নিয়ে ফুক্বাহাদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। কেউ বলেছেন, এতে উযু ভঙ্গ হবে। আর কেউ বলেছেন, ভঙ্গ হবে না। তারা প্রত্যেকেই স্বপক্ষে দলীল পেশ করে থাকেন। কিন্তু সবচেয়ে মজবুত কথা হচ্ছে, দেহ থেকে রক্ত বের হলে উযু ভঙ্গ হবে না। এ ব্যাপারে সামনে আলোচনা আসছে। তবে প্রসাব পায়খানার রাস্তা দিয়ে রক্ত বের হলে উযু ভঙ্গ হবে। ইমাম আবূ হানিফা, ইমাম শাফিঈ ও ইমাম আহমাদ (রহঃ) প্রমুখের মতও তাই।
মাসআলাহঃ বমি করলে ও রক্ত বের হলে উযু ভঙ্গ না হওয়া প্রসঙ্গেঃ
এ অনুচ্ছেদে জাবিরের হাদীসটি স্পষ্টভাবে দু’টি বিষয় প্রমাণ করছেঃ
প্রথমতঃ পেশাব-পায়খানার রাস্তা ব্যতীত দেহের অন্য কোনো স্থান থেকে রক্ত বের হলে উযু নষ্ট হবে না। চাই রক্ত গড়িয়ে পড়ুক, সবেগে প্রবাহিত হোক বা না হোক। এটাই হচ্ছে অধিকাংশ ‘আলিমের অভিমত। আর এটাই সঠিক। ইমাম মালিক, ইমাম শাফিঈ ও ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বালও (রহঃ) এ মত পোষণ করেছেন। ইমাম বাগাভী বলেন, অধিকাংশ সাহাবায়ি কিরাম ও তাবেঈগণের অভিমত এটাই। হাফিয সিরাজুদ্দীন ইবনু মুলাক্কান ‘বাদরুল মুনীর’ গ্রন্থে বলেন, ইমাম বায়হাক্বী মু‘আয সূত্রে বর্ণনা করেনঃ ‘‘বমি করলে এবং রক্ত বের হলে উযু করতে হবে না।’’ সাঈদ ইবনুল মুসাইয়্যিব সূত্রে বর্ণিত আছেঃ ‘‘একবার তার নাক দিয়ে রক্ত বের হলে তিনি ‘নেকড়া দিয়ে স্বীয় নাক মুছে ফেলেন, অতঃপর সালাত আদায় করে।’’ ইবনু মাসঊদ, সালিম ইবনু ‘আব্দুল্লাহ, তাউস, হাসান এবং কাসিম সূত্রে বর্ণিত হয়েছেঃ ‘‘রক্ত বের হলে উযু করতে হবে না।’’ ইমাম নাববী তার শারাহ্ গ্রন্থে আরো কয়েকজনের নাম উল্লেখ করেন বলেন, ‘আত্বা, মাকহুল, রবী‘আহ, মালিক, সাওর এবং দাঊদ (রহঃ)ও তাই বলেছেন। ইবনু ‘আব্দুল বার আল-ইসতিজকার’ গ্রন্থে ইয়াহইয়া ইবনু সাঈদ আনসারীর নামও উল্লেখ করেছেন। হানাফী মুহাদ্দিস আল্লাম বদরুদ্দীন আইনী হিদায়ার শারাহ গ্রন্থে বলেনঃ এটাই হচ্ছে ইবনু ‘আব্বাস, জাবির, আবূ হুরাইরাহ ও ‘আয়িশাহ (রাঃ)-এর অভিমত।
ইবনু আবূ শায়বাহ ‘মুসান্নাফে’ (১/৯২) এবং বায়হাক্বী সহীহ সনদে বর্ণনা করেনঃ ‘‘ইবনু ‘উমার (রাঃ) তাঁর চেহারার ব্রণ (ছোট ফোড়া) টিপ দিলে কিছু রক্ত নির্গত হয়। তিনি তা তাঁর দু’ আঙ্গুলে ঘষে ফেলেন, অতঃপর উযু না করেই সালাত আদায়করেন।’’ আব্দুল্লাহ ইবনু আবূ আওফা (রাঃ) থেকে সহীহ বর্ণনায় এসেছে ‘‘তিনি তাঁর সালাতের মধ্যে রক্ত থুতু ফেলা সত্ত্বেও সালাত অব্যাহত রাখেন।’’ হাসান বাসরী (রহঃ) বলেনঃ ‘‘মুসলিমগণ যখম অবস্থায়ই সালাত আদায় করতেন।’’ ইবনু আবূ শায়বাহ সহীহ সনদে বর্ণনা করেনঃ ‘‘প্রসিদ্ধ তাবেঈ ত্বাউস রক্ত বের হলে উযু না করে রক্ত ধুয়ে ফেলাই যথেষ্ট মনে করতেন।’’ আ‘মাশ সূত্রে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ ‘‘আমি আবূ জা‘ফর বাক্বিরকে নাক দিয়ে রক্ত বের হওয়া সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, রক্তের নদী বয়ে গেলেও এর জন্য আমি পুনরায় উযু করবো না।’’ ইবনু ‘উমার ও হাসান বলেনঃ ‘‘কেউ সিঙ্গা লাগালে ক্ষতস্থানের রক্ত ধুয়ে ফেলাই তার জন্য যথেষ্ট।’’ (সহীহুল বুখারী ফাতহুল বারীসাহ, ও অন্যান্য)।
ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রহঃ) বলেন, নাক দিয়ে রক্ত বের হয়ে উযু করা উত্তম, কিন্তু ওয়াজিব নয়। যা ‘আলিমগণের বক্তব্যে অধিকতর স্পষ্ট। (মাজমু‘আহ ফাতওয়াহ)
আল্লামা নাসিরুদ্দীন আলবানী বলেন, অধিকাংশ মুহাক্কিক ‘আলিমের মতে, বমি করলেও উযু ভঙ্গ হয় না।
দ্বিতীয়তঃ আঘাতপ্রাপ্ত ব্যক্তির ক্ষতস্থান থেকে নির্গত রক্ত পাক ও মার্জনীয়। মালিকীদের অভিমতও তাই। আর এটাই সঠিক। মুতাওয়াতির সূত্রে বর্ণিত অসংখ্যা হাদীসে রয়েছে, আল্লাহর রাস্তায় জিহাদে মুজাহিদগণ ক্ষতবিক্ষত হতেন, তাঁদের কেউই তাঁদের ক্ষতস্থান থেকে নির্গত রক্ত বন্ধ করতে এবং নিজেদের কাপড় রক্তে ভিজা থেকে বিরত রাখতে সক্ষম হতেন না। তথাপি তাঁরা ঐরূপ অবস্থায়ই সালাত আদায় করতেন (যেমন জাবির বর্ণিত হাদীসটি)। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এমন কোনো হাদীস বর্ণিত হয়নি যে, তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁদেরকে সালাত আদায়কালে তাঁদের রক্তে রঞ্জিত কাপড় খুলে ফেলার নির্দেশ দিয়েছেন। সা‘দ (রাঃ) খন্দকের যুদ্ধে আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ায় তাঁর জন্য মসজিদে তাঁবু টাঙ্গানো হয়েছিল। তিনি মসজিদের ঐ তাঁবুতে এরূপ অবস্থায় অবস্থান করছিলেন যে, তাঁর ক্ষতস্থান থেকে নির্গত রক্ত মসজিদে প্রবাহিত হচ্ছিল। প্রচুর রক্ত ক্ষরণের ফরে অবশেষে তিনি মৃত্যু বরণ করেন। ক্ষতস্থান থেকে নির্গত রক্ত পাক হওয়ার আরেকটি দলীল হলো, ‘উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) তাঁর ক্ষতস্থান থেকে রক্ত ঝরা অবস্থায় ফাজরের সালাত আদায় করেছিলেন। হাফিয ইবনু হাজার আসকালানী ও আল্লামা নাসিরুদ্দীন আলবানী (রহঃ) এ বর্ণনাটিকে সহীহ বলেছেন। এটা তো জানা কথাই যে, ক্ষতস্থান থেকে রক্ত প্রবাহিত হলে তাতে নিশ্চিত কাপড় ভিজবে। আর এটা অসম্ভব যে, ‘উমার (রাঃ) এমন কাজ করবেন যা করা শারী‘আতে জায়িয নয়, অতঃপর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সমস্ত সাহাবায়ি কিরাম তার কোনো প্রতিবাদ ও অস্বীকৃতি না জানিয়ে চুপ থাকবেন? ক্ষতস্থানের প্রবাহিত রক্ত পাক বলেই এরূপ হয়নি কি?
উল্লেখ্য কতিপয় ব্যক্তি জাবির বর্ণিত হাদীস সম্পর্কে আপত্তি করে বলেন, হাদীসটি দলীলযোগ্য নয়। কেননা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ ব্যক্তির সালাত অব্যাহত রাখার বিষয়টির বিরোধীতা করেছেন। কিন্তু এ কথাটি প্রমাণিত নয়। হানাফী মুহাদ্দিস আল্লামা ‘আইনী হিদায়ার শারাহ গ্রন্থে জাবিরের এ হাদীসটি দারাকুতনী ও বায়হাক্বী রিওয়ায়াতে উল্লেখ করে তাতে বৃদ্ধি করেনঃ ‘‘অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এ মর্মে সংবাদ পৌঁছলে তিনি তাঁদের দু’জনকে ডাকালে।’’ আল্লামা আইনী হানাফী বলেন, কিন্তু তিনি তাঁদেরকে পুনরায় উযু করার ও সালাত আদায়ের নির্দেশ করেননি। আল্লাহই অধিক জ্ঞাত। আল্লামা শাওকানী ‘সায়লুল জাররার’ গ্রন্থে বলেন, জ্ঞাতব্য যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত অব্যাহত রাখার বিষয়টি অবহিত হন, কিন্তু রক্ত বের হওয়ার পরও সালাত অব্যাহত রাখার ব্যাপারে কোনোরূপ অস্বীকৃতি জানাননি। যদি রক্ত বের হওয়া উযু ভঙ্গের কারণ হতো তাহলে তিনি অবশ্যই তাঁকে এবং তাঁর সাথে ঐ যুদ্ধে অংশ গ্রহণকারী অন্যান্য সাহাবায়ি কিরামকে তা জানিয়ে দিতেন...। এরূপ কোনো উদ্ধৃতিই বর্ণিত হয়নি যে, তিনি তাঁদের সালাত বাতিল বলে মন্তব্য করেছেন।
যদি বলা হয়, জাবির বর্ণিত হাদীসের সনদে ‘আকীল ইবনু জাবির রয়েছেন। যার সম্পর্কে ইমাম যাহাবীর মন্তব্য হচ্ছে, তার মাঝে জাহালাত আছে, তার থেকে কেবল সাদাকা ইবনু ইয়াসার বর্ণনা করেছেন। তাহলে এর দ্বারা দলীল গ্রহণ কিভাবে সহীহ হবে? এর জবাব হলোঃ হ্যাঁ, ‘আকীল ইবনু জাবির মাজহুল, কিন্তু মাজহুলুল ‘আইন মাজহুলুল ‘আদালাত নয়। কেননা তার সূত্রে কেবল একজন তথা সাদাকা ইবনু ইয়াসার বর্ণনা করেছেন। কোনো বর্ণনাকারীর এরূপ অবস্থা হলে তিনি হন মাজহুলুল আইন। আর মাজহুলুল আইনের বিশ্লেষণ হলো, হাদীসের দোষগুণ যাচাইকারী ইমামগণের কোনো একজন ইমাম যদি তাকে নির্ভরযোগ্য বলেন তাহলে তার জাহালাত দূর হয়ে যাবে। বর্ণনাকারী ‘আকীল ইবনু জাবিরকে তো ইবনু হিব্বান নির্ভরযোগ্য বলেছেন এবং তার হাদীসকে ইমাম ইবনু হিব্বান ইবনু খুযাইমাহ ও হাকিম সহীহ বলেছেন। সুতরাং তার জাহালাত দূরীভূত হলো এবং তার হাদীসটি দলীলের উপযুক্ত হয়ে গেলো। এ বিষয়ে আরো বিশদ আলোচনা আবূ দাঊদের শারাহ গ্রন্থ গায়াতুল মাক্বসূদে রয়েছে। কারো ইচ্ছে হলে সেখানে দেখে নিবেন। (দেখুন, ‘আওনুল মা‘বূদ ও অন্যান্য)
বমি করলে ও রক্ত বের হলে উযু করা সম্পর্কিত বর্ণনাঃ
(১) আবুদ দারদা (রাঃ) বলেনঃ ‘‘একদা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বমি করার পর উযু করেন। অতঃপর দামিষ্কের মসজিদে সাওবান (রাঃ)-এর সাথে আমার সাক্ষাৎ হওয়ার পর আমি তার সাথে এ বিষয়ে আলোচনা করলাম। তিনি বলেন, তিনি সত্য বলেছেন এবং আমি নিজে তার উযুর পানি ঢেলে দিয়েছিলাম।’’ (তিরমিযী) অন্য বর্ণনায় ‘উযু করার’ পরিবর্তে সাওম ভঙ্গের কথা এসেছে। আল্লামা নাসিরুদ্দীন আলবানী (রহঃ) বলেনঃ হাদীসটিকে বমি করলে উযু নষ্ট হওয়ার দলীল হিসেবে পেশ করা হয়। এতে কেউ এ শর্তও জুড়ে দিয়েছেন যে, বেশি পরিমাণ বমি করলে উযু ভঙ্গ হবে। কিন্তু হাদীসে এ শর্ত উল্লেখ নেই। হাদীসটি সাধারণ (মুত্বলাক্ব) ভাবে উযু ভঙ্গের দলীল দিচ্ছে না। কেননা তা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিজস্ব একক কর্ম বুঝাচ্ছে। আর মূল কথা হলো, কর্ম ওয়াজিব হওয়ার দলীল দেয় না। বড়জোর এ কথা বলা যায় যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে অনুসরণে এ ক্ষেত্রে উযু করা শারী‘আত সম্মত হওয়া বুঝাচ্ছে, কিন্তু ওয়াজিব হওয়া বুঝাচ্ছে না। আর ওয়াজিব হওয়ার জন্য নির্দিষ্ট (খাস) দলীল থাকা জরূরী। কিন্তু তা এখানে অনুপস্থিত। সেজন্য অধিকাংশ মুহাক্কিকগণের মত হচ্ছে, বমি করলে উযু ভঙ্গ হয় না। যাঁদের মধ্যে ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ এবং অন্যরাও রয়েছেন- (দেখুন, ইরওয়াউল গালীল)।
(২) আয়িম্মাদের কিতাবে আলী (রাঃ) সূত্রের বর্ণনা। যাতে রয়েছে, সাতটি কারণে উযু করা আল্লাহ আমাদের জন্য অবধারিত করেছেন। তার একটি হচ্ছে মুখভরে বমি হওয়া। কিন্তু এটি আয়িম্মাদের কিতাবসূহে বর্ণিত হাদীসেরই পরিপন্থি। কেননা সেখানে এও বর্ণিত আছে যে, সাওবান (রাঃ) বলেনঃ আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! বমি হলে উযু করা ওয়াজিব কি? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, যদি তা ওয়াজিব হতো তাহলে অবশ্যই তা আল্লাহর কিতাবে পেতে- (দেখুন, নায়লুল আওত্বার, ইনতিসার, বাহর ও অন্যান্য),
(৩) আয়িশাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিতঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘কারো বমি হলে বা নাক দিয়ে রক্ত বের হলে বা ক্বালাস হলে বা মযী নির্গত হলে সে যেন ফিরে গিয়ে উযু করে, অতঃপর তার সালাতের বিনা করে, এবং এর মাঝে কোনো কথা না বলে।’’ ইবনু মাজাহ, দারাকুতনী। একাধিক মুহাদ্দিস হাদীসটিকে দোষযুক্ত বলেছেন। কারণ এটি ইসমাঈল ইবনু আয়্যাশের ইবনু জুরাইজ সূত্রের বর্ণনা। তিনি হিজাজী। হিজাজীদের সূত্রে ইসমাঈলের বর্ণনা দুর্বল। তাছাড়া ইবনু জুরাইজের কতিপয় সাথী তার বিপরীত করেছেন। তারা এটি মুরসালভাবে বর্ণনা করেছেন। আবূ হাতিম বলেন, ইসমাঈলের বর্ণনাটি ভুল। ইবনু মাঈন বলেন, হাদীসটি দুর্বল। ইমাম আহমাদ বলেন, সঠিক হলো, ইবনু জুরাইজ তার পিতা থেকে মারফূভাবে বর্ণনা করেছেন। ইমাম দারাকুতনী ইসমাঈল ইবনু আয়্যাশের হাদীসটি ‘আত্বা ইবনু ‘আজলান ও ‘আব্বাদ ইবনু কাসীর সূত্রে ইবনু মুলায়কাহ থেকে বর্ণনা করার পর বলেন, সনদের ‘আত্বা ও ‘আব্বাদ উভয়েই দুর্বল। ইমাম বায়হাক্বী বলেন, সঠিক হচ্ছে মুরসাল হওয়া। হাদীসটি সুলায়মান ইবনু আরকাম থেকে মারফূভাবে বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু তিনি হাদীস বর্ণনায় মাতরূক (দেখুন, নায়লুল আওত্বার)
(৪) আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) সূত্রে বর্ণিতঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘সালাতরত অবস্থায় তোমাদের কারো বমি হলে বা নাকসীর হলে বা হাদাস হলে সে যেন ফিরে গিয়ে উযু করে নেয়। অতঃপর এসে ছুটে যাওয়া সালাতের বিনা করে। এটি বর্ণনা করেছেন দারাকুতনী। ইমাম দারাকুতনী বলেনঃ এর সনদে বাকর ইবনু দাহিরী রয়েছে। তিনি মাতরূকুল হাদীস (হাদীস বর্ণনায় পরিতাজ্যা)। তা,লীকু মুগনীর উপর তাখরীজ ও তা‘লীক্ব গ্রন্থে শায়খ মাজদী হাসান (রহঃ) বলেনঃ এর সানাদ খুবই দুর্বল। হাদীসটি ইবনুল জাওযী তার ‘‘তাহক্বীক্ব’’ (১/১৮৯) ও ‘আল-‘ইলাল’ (১/৩৬৬) গ্রন্থে এবং ইবনু হিব্বান আল-মাজরুহীন’ (২/২১) গ্রন্থে আবূ বাকর দাহিরীর জাবনীতে উল্লেখ করেছেন। আর সনদের আবূ বাকর ইবনু দাহিরী সম্পর্কে ইমাম আহমাদ, ইবনু মাঈন ও অন্যরা বলেছেন, তিনি কিছুই না। ইমাম নাসায়ী এবং ইবনু মাঈন আরেকবার বলেছেন, তিনি নির্ভরযোগ্য নন। এছাড়া এর সনদে হাজ্জাজ রয়েছে। যদি তিনি ইবনু আরত্বাত হন, তাহলে তিনি দুর্বল, এবং তিনি যুহরী থেকেও কিছু শুনেননি। (দেখুন তালীকু মুগনী-শায়খ মাজদী হাসানের তা‘লীক ও তাখরীজসহ হা/৫৭৪, ২২৩ পৃষ্ঠার ২নং টিকা)। শাওকানী বলেন, এটি ‘আব্দুর রাজ্জাক স্বীয় মুসান্নাফে ‘আলীর মাওকুফ বর্ণনা হিসেবে উল্লেখ করেছেন যেটির সানাদ হাসান, যা হাফিয বলেছেন।
(৫) ইবনু আব্বাস (রাঃ) সূত্রে মারফূ বর্ণনায়, ‘‘তোমাদের কারো সালাতরত অবস্থায় নাক দিয়ে রক্ত বের হলে সে যেন ফিরে গিয়ে তার রক্ত ধুয়ে নিয়ে পুনরায় উযু করে তার সালাত আদায় করে।’’ এটি বর্ণনা করেছেন দারাকুতনী, ইবনু আদী ও তাবারানী। ইমাম দারাকুতনী বলেন, এর সনদে সুলায়মান ইবনু আরকাম মাতরূক। হাফিযও তাকে মাতরূক বলেছেন। তা‘লীকু মুগনীর তাখরীজে শায়খ মাজদী হাসান বলেন, মুহাদ্দিসগণ তাকে বর্জণ করেছেন। ইমাম আহমাদ বলেন, তা থেকে বর্ণনা করা হয় না। ইমাম আবূ দাঊদ বলেন, তিনি মাতরূক। ইবনু মাঈন সূত্রে ‘আব্বাস ও উসমান বলেন, তিনি কিছুই না। হাফিয আত-তাকরীব’ গ্রন্থে বলেন, দুর্বল। ইবনু আব্বাস সূত্রে দারাকুতনীতে এ বিষয়ে আরেকটি বর্ণনা রয়েছে। সেটি সনদে উমার ইবনু রায়য়াহ রয়েছে। দারাকুতনী তাকে মাতরূক বলেছেন। ইবনু আদী কামিল গ্রন্থে বলেন, ‘উমার ইবনু রায়াহ হচ্ছে তাউসের আযাদকৃত গোলাম। তিনি ইবনু তাউস সূত্রে বাতিল হাদীসগুলি বর্ণনা করেন। এতে কেউ তার অনুসরণ করেননি। ইমাম বুখারী তার সম্পর্কে বলেন, তিনি দাজ্জাল। ইবনু হিব্বান বলেন, তিনি নির্ভরযোগ্যদের সূত্রে বানোয়াট হাদীসাবলি বর্ণনা করেন। আশ্চর্য সৃষ্টির উদ্দেশ্য ছাড়া তার হাদীস লিখা হালাল নয়। শায়খ মাজদী হাসান বলেন, তিনি মাতরূক, কতিপয় মুহাদ্দিস থেকে মিথ্যাবাদী বলেছেন।
(৬) ইবনু উমার (রাঃ) থেকে মুয়াত্তা মালিকে বর্ণনাঃ ‘‘তার নাকসির হওয়ায় তিনি ফিরে গিয়ে উযু করে কোনো কথা না বলে এসে সালাতে বিনা করেন।’’ ইবনু উমারের উক্তি হিসেবে শাফিঈও অনুরূপ বর্ণনা এনেছেন।
(৭) দারাকুতনীতে আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) সূত্রে মারফূ বর্ণনাঃ ‘‘এক ফোঁটা ও দু’ ফোঁটা রক্ত বের হলে উযু করতে হবে না। যতক্ষণ না রক্ত গড়িয়ে পড়ে।’’ ইমাম দারাকুতনী বলেনঃ ‘এর সনদে মুহাম্মাদ ইবনু ফাজল ইবনু ‘আতিয়্যাহ দুর্বল, এবং সনদের সুফয়ান ইবনু যিয়াদ ও হাজ্জাজ ইবনু নাসর এরা দু’ জনেও দুর্বল। তা‘লীকু মুগনীর তাখরীজে মাজদি হাসান (রহঃ) বলেনঃ ‘এর সানাদ দুর্বল। সনদের মুহাম্মাদ ইবনু ফাজল ইবনু আতিয়্যাহকে হাদীস বিশারদগণ মিথ্যাবাদী বলেছেন।’’ আল্লামা শাওকানী নায়লুল আওতার গ্রন্থে বলেনঃ মুহাম্মাদ ইবনু ফাজল ইবনু ‘আতিয়্যাহ মাতরূক। আর হাফিয (রহঃ) বলেন, এর সানাদ খুবই দুর্বল।
(৮) ‘‘রক্ত এক দিরহাম হলে তা ধুয়ে নিতে হবে এবং তার কারণে সালাত পুনরায় পড়তে হবে।’’ এটি বর্ণনা করেছেন খাতীব তারীখু বাগদাদ, ৯/৩৩০ এবং তার থেকে ইবনুল জাওযী (২/৭৫) নূহ ইবনু আবূ মারইয়াম সূত্রে..। এর সানাদ জাল, সনদে নূহ ইবনু মারইয়াম মিথ্যার দোষে দোষী। ইবনুল জাওযী বলেন, নূহ মিথ্যুক। ইমাম যায়লাঈ হানাফী ‘নাসবুর রায়াহ’ গ্রন্থে এবং সুয়ুতী ‘আল-লায়াসী’ গ্রন্থে একে সমর্থন করেছেন- (দেখুন, যঈফাহ ১৪৯)।
(৯) ‘‘(কাপড়) এক দিরহাম পরিমাণ রক্তের কারণে সালাত পুনরায় পড়তে হবে।’’ অন্য শব্দে রয়েছেঃ ‘‘যদি কাপড়ে এক দিরহাম পরিমাণ রক্ত থাকে, তাহলে কাপড়টি ধুয়ে নিতে হবে এবং সালাত পুনরায় আদায় করতে হবে।’’ ইবনু হিববান ‘আল-যুআফা (১/২৯৮), দারাকুতনী এবং বায়হাক্বী (২/৪০৪) উকাইলী ‘আয-যুআফা’ এবং ইবনুল জাওযী ‘মাওযুআত’ (২/৭৬)- রাওহ ইবনু গুতাঈফ থেকে...। ইবনু হিব্বান বলেন, হাদীসটি বানোয়াট তাতে কোনো সন্দেহ নেই। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এটি বলেননি। কুফাবাসীরা এটি তৈরী করেছেন। রাওহ নির্ভরশীলদের উদ্ধৃতিতে জাল হাদীস বর্ণনা করতেন। ইমাম যায়লাঈ হানাফী ‘নাসবুর রায়াহ’ গ্রন্থে এবং ইবনুল মুলাক্কান ‘আল-খুলাসা’ গ্রন্থে ইবনু হিববানের বক্তব্যকে সমর্থন করেছেন। ইমাম দারাকুতনী বলেন, যুহরী থেকে রাওহ ইবনু গুতাইফ ছাড়া কেউ এটি বর্ণনা করেননি। তিনি মাতরূকুল হাদীস। ইমাম বুখারী বলেন, তার অনুসরণ করা যায় না। উক্বাইলী আদাম সূত্রে বলেন, ইমাম বুখারী বলেছেন, এ হাদীসটি বাতিল এবং রাওহ মুনকারুল হাদীস (যঈফাহ, হা/১৪৮)।
(১০) ‘‘নাক দিয়ে সবেগে রক্ত প্রবাহিত হলে পুনরায় উযু করতে হবে।’’ হাদীসটি বানোয়াট। এটি বর্ণনা করেছেন ইবনু ‘আদী ‘কামিল’ গ্রন্থে ইয়াগনুস ইবনু সালিম থেকে আনাস ইবনু মালিক সূত্রে মারফূভাবে। ইবনু ‘আদী বলেন, ইয়াগনুস আনাস সূত্রে মুনকার হাদীসাবলী বর্ণনা করে, তার সার্বিক হাদীস অসংরক্ষিত। ইবনু হিব্বান বলেন, তিনি আনাস সূত্রে বানোয়াট হাদীস বর্ণনা করেন। ইবনু ইউনূস বলেন, আনাস সূত্রে তার বর্ণনা মিথ্যা। ‘আব্দুল হাক্ব ইশাবিলী ‘আহকাম’ গ্রন্থে বলেন, ইয়াগনুস হাদীস বর্ণনায় মুনকার, দুর্বল (যঈফাহ, হা/১০৭১)।
(১১) ‘‘প্রত্যেক রক্তেই উযু করতে হবে।’’ দারাকুতনী (১৫৭ পৃঃ) বাক্বিয়্যাহ থেকে ইয়াযীদ ইবনু খালিদ থেকে, তিনি ইয়াযীদ ইবনু মুহাম্মাদ থেকে, তিনি উমার ইবনু ‘আব্দুল আযীয থেকে, এবং তিনি তামীদুদ দারী থেকে বর্ণনা করেছেন। ইমাম দারাকুতনী এর দোষ বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, ‘উমার ইবনু ‘আব্দুল আযীয তামীদুদ দারী থেকে শুনেননি এবং তিনি তাকে দেখেনওনি। আর সনদে দু’ ইয়াযীদ অজ্ঞাত। ইমাম যায়লাঈ হানাফী নাসবুর রায়াহ গ্রহ্ণে তার এ বক্তব্যকে সমর্থন করেছেন। আলবানী বলেনঃ বাক্বিয়্যাহ একজন মুদাল্লিস, তিনি আন্ আন্ শব্দে বর্ণনা করেছেন। এটি আরেকটি দোষ। ‘আব্দুল হাক্ব আহকাম গ্রন্থে বলেন, এটির সানাদ মুনকাতি। হাদীসটি ইবনু ‘আদী আহমাদ ইবনু ফারাজের জীবনীতে বাক্বিয়্যাহ থেকে... বর্ণনা করেছেন। ইমাম যায়লাঈ হানাফী বলেনঃ ইবনু আদী বলেছেন, আহমাদ ছাড়া হাদীসটি অন্য কারো মাধ্যমে চিনি না। তিনি সেই দলের অন্তর্ভুক্ত যাদের হাদীস দ্বারা দলীল গ্রহণ করা যায় না, কিন্তু লিখা যায়। কারণ লোকদের নিকট সে দুর্বল হলেও তার হাদীস হাদীস হিসেবে গণ্য হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ইবনু আবূ হাতিম ‘আল-ইলাল’ গ্রন্থে বলেনঃ আহমাদ ইবনু ফারাজ থেকে আমরা লিখেছি, আমাদের নিকট তার অবস্থান সত্যবাদী হিসেবে। আলবানী বলেনঃ আহমাদ ইবনু ফারাজ হচ্ছে হিমসী। হিজাজী হচ্ছে তারা উপাধী। তাকে মুহাম্মাদ ইবনু ‘আওফ নিতান্তই দুর্বল বলে আখ্যা দিয়েছেন। তিনিও হিমসী, অতএব তিনি তার সম্পর্কে অন্যদের চেয়ে বেশি জানেন। তিনি তার সম্পর্কে বলেনঃ ‘‘তিনি মিথ্যুক, তার নিকট বাক্বিয়্যাহর হাদীসের কোনো ভিত্তি নেই এবং তাতে তিনি আল্লাহর সকল সৃষ্টির মধ্যে বেশি মিথ্যুক...। অতঃপর তিনি তাকে তার ভাষায় মদ পান করার দোষে দোষী করেছেন। যা খাতীব বাগদাদী বর্ণনা করেছেন এবং শেষে বলেছেনঃ ‘আমি আল্লাহর নাম নিয়ে সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তিনি মিথ্যুক। অনুরূপভাবে তার সম্পর্কে যারা জানেন তারাও তাকে মিথ্যুক বলেছেন। অতএব কিভাবে তার দ্বারা দলীল গ্রহণ করা যায়? ইবনু ‘আদী ‘কামিল’ গ্রন্থে বলেনঃ এ হাদীসটি বাক্বিয়্যাহ সূত্রে শু‘বাহ থেকে বাতিল। (যঈফ ও জাল হাদীস সিরিজঃ ৪৭০, পৃঃ ৪১৩-৪১৪)।
আল্লামা নাসিরুদ্দীন আলবানী (রহঃ) বলেনঃ হাক্ব কথা এই যে, রক্ত বের হলে উযু ওয়াজিব হয় এ মর্মে বর্ণিত হাদীসগুলো সহীহ নয়। বাস্তবতা হলো, যা বর্ণিত হয়নি তা থেকে বেঁচে চলা ও মুক্ত থাকা। যেমনভাবে সিদ্ধান্ত দিয়েছেঝন আল্লামা শাওকানী ও অন্যরা। রক্ত বের হলে উযু নষ্ট হয় না এটিই হিজাজীদের এবং মদীনাহর সাত ফাক্বীহদের এবং তাঁদের পূর্ববর্তীদেরও মতামত।
Narrated Jabir ibn Abdullah:
We proceeded in the company of the Messenger of Allah (ﷺ) for the battle of Dhat ar-Riqa. One of the Muslims killed the wife of one of the unbelievers. He (the husband of the woman killed) took an oath saying: I shall not rest until I kill one of the companions of Muhammad.
He went out following the footsteps of the Prophet (ﷺ). The Prophet (ﷺ) encamped at a certain place. He said: Who will keep a watch on us? A person from the Muhajirun (Emigrants) and another from the Ansar (Helpers) responded. He said: Go to the mouth of the mountain-pass. When they went to the mouth of the mountain-pass the man from the Muhajirun lay down while the man from the Ansar stood praying.
The man (enemy) came to them. When he saw the person he realised that he was the watchman of the Muslims. He shot him with an arrow and hit the target. But he (took the arrow out and) threw it away. He (the enemy) then shot three arrows. Then he (the Muslim) bowed and prostrated and awoke his companion. When he (the enemy) perceived that they (the Muslims) had become aware of his presence, he ran away.
When the man from the Muhajirun saw the (man from the Ansar) bleeding, he asked him: Glory be to Allah! Why did you not wake me up the first time when he shot at you.
He replied: I was busy reciting a chapter of the Qur'an. I did not like to leave it.