পরিচ্ছেদঃ ১৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - মদীনার হারামকে আল্লাহ তা‘আলা কর্তৃক সংরক্ষণ প্রসঙ্গে
২৭৩১-[৪] উক্ত রাবী [আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, লোকেরা যখন গাছের প্রথম ফল দেখতো তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে হাযির করতো। যখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এ ফল গ্রহণ করতেন, তখন বলতেন, আল্লাহ! আমাদের ফলে (শস্য-ফসলে) বারাকাত দান কর এবং আমাদের এ শহরে বারাকাত দান কর। আমাদের সা’-তে বারাকাত দান কর, আমাদের মুদ-এ (মাপার যন্ত্র বা পাত্রে) বারাকাত দান কর। হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই ইব্রাহীম (আঃ) তোমার বান্দা, তোমার বন্ধু ও তোমার নবী। আর আমিও তোমার বান্দা ও নবী। তিনি মক্কার জন্য তোমার কাছে দু’আ করেছেন, আর আমিও মদীনার জন্য তোমার কাছে দু’আ করছি, যেভাবে তিনি মক্কার জন্য তোমার কাছে দু’আ করেছেন। বর্ণনাকারী [আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ)] বলেন, অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সবচেয়ে ছোট শিশু সন্তানকে ডাকতেন এবং তাকে ঐ ফল (খেতে) দিতেন। (মুসলিম)[1]
بَابُ حَرَمِ الْمَدِيْنَةِ حَرَسَهَا اللّٰهُ تَعَالٰى
وَعَنْهُ قَالَ: كَانَ النَّاسُ إِذَا رَأَوْا أَوَّلَ الثَّمَرَةِ جَاءُوا بِهِ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَإِذَا أَخَذَهُ قَالَ: «اللَّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِي ثَمَرِنَا وَبَارِكْ لَنَا فِي مَدِينَتِنَا وَبَارِكْ لَنَا فِي صَاعِنَا وَبَارِكْ لَنَا فِي مُدِّنَا اللَّهُمَّ إِنَّ إِبْرَاهِيمَ عَبْدُكَ وَخَلِيلُكَ وَنَبِيُّكَ وَإِنِّي عَبْدُكَ وَنَبِيُّكَ وَإِنَّهُ دَعَاكَ لِمَكَّةَ وَأَنَا أدعوكَ للمدينةِ بمثلِ مَا دعَاكَ لمكةَ ومِثْلِهِ مَعَهُ» . ثُمَّ قَالَ: يَدْعُو أَصْغَرَ وَلِيدٍ لَهُ فيعطيهِ ذَلِك الثَّمر. رَوَاهُ مُسلم
ব্যাখ্যা: যে সমস্ত লোকেরা তাদের গাছের নতুন ফল নিয়ে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে আসতেন তারা হলেন সহাবায়ে কিরাম। তারা তাদের নতুন ফল বা প্রথম ফল নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে হাদিয়্যাহ্ বা উপঢৌকন পেশ করতেন। ‘উলামায়ে কিরাম বলেছেন, তারা এ কাজ এজন্য করেছেন যেন আল্লাহর নাবীর দু‘আ লাভ করতে পারেন। কেননা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট কোন ফল হাদিয়্যাহ্ পেশ করলেই তিনি ফলের জন্য দু‘আ করতেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনাহ্ শহরের জন্য দু‘আ করতেন, মদীনার সা' এবং মুদ-এর জন্য দু‘আ করতেন।
[এ দু‘আর ফলে দু’ একজনের গাছে বছরে দু’বারও খেজুর ধরতে দেখা গেছে। -অনুবাদক]
কেউ কেউ বলেছেন, নিজেদের ওপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে প্রাধান্য দেয়ার এবং তার প্রতি মুহাববাতের খাতিরেই তারা এ কাজ করেছেন।
‘আল্লামা যুরক্বানী (রহঃ) বলেন, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মহান স্বকীয় সত্তার মর্যাদা ও মহাব্বাতের কারণেও এ হাদিয়্যাহ্ হতে পারে, আবার তার দু‘আ থেকে বারাকাত লাভের জন্যও হতে পারে।
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে কোন ফল হাদিয়্যাহ্ পেশ করলেই দু‘আ করতেনঃ ‘‘হে আল্লাহ! তুমি আমাদের ফলে বারাকাত দান করো।’’ অর্থাৎ- এতে ফলন ও প্রবৃদ্ধি দান করো, এর স্থায়িত্ব দান করো। কাযী ‘ইয়াযও এমনটিই ব্যাখ্যা করেছেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ মুহূর্তে মদীনাহ্ শহরের জন্য দু‘আ করতেন, হে আল্লাহ! তুমি আমাদের মদীনাহ্ শহরকে বারাকাতমণ্ডিত করো। মদীনাহ্ শহরের বারাকাত হলো তার স্থানের, আবহাওয়ার এবং তার অধিবাসীদের সঠিক প্রশস্ততা। আল্লাহ তা‘আলা এ শহরের বাহ্যিক এবং আত্মিক উভয় বারাকাত দ্বারা সমৃদ্ধ করে রেখেছেন।
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনার পরিমাপের পাত্র বা মাধ্যম সা' এবং মুদ-এর জন্য দু‘আ করেছেন। ‘আল্লামা ইবনু ‘আবদিল বার (রহঃ) বলেন, এটা তার অলঙ্কারপূর্ণ বিজ্ঞচিত বাক্যবিশেষ, মূলত দু‘আ ছিল খাদ্যে বারাকাতের জন্য এবং পরিমাপ যন্ত্রে বা মাধ্যমে যা ধারণ করা হয় তার জন্যে, পরিমাপ যন্ত্রের জন্য দু‘আ নয়। তবে উভয়ের জন্যও হতে পারে যেমন- ‘আল্লামা নাবাবী (রহঃ) বলেছেন, ইব্রাহীম (আঃ) মক্কার জন্য দু‘আ করেছিলেন, আল্লাহ তা‘আলা তার দু‘আ কবূল করেছেন ফলে মক্কার মানুষ বিশ্বের নানা ফলমূল দ্বারা রিযক্বপ্রাপ্ত হতে আছে। আমাদের নাবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেটা উল্লেখ করে মদীনার জন্য দু‘আ করেছেন, ফলে আল্লাহ তা‘আলা মদীনাহ্ শহরকেও অনুরূপ বারাকাতপূর্ণ করেছেন। দূর-দূরান্ত থেকে এখানেও এসে মানুষ আল্লাহ তা‘আলার নি‘আমাত ও মসজিদে নাবাবীর ফাযীলাত হাসিলে ধৈন্য হয়। বরং নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কার চেয়ে দ্বিগুণ বারাকাত চেয়ে মদীনার জন্য দু‘আ করেছেন। এতদসংক্রান্ত বর্ণনা তৃতীয় পরিচ্ছেদে আসছে। উক্ত হাদীস দ্বারা কেউ কেউ মক্কার উপর মদীনার ফাযীলাত বর্ণনা করতে প্রয়াস পেয়েছেন।
‘আল্লামা বাজী (রহঃ) বলেন, ইব্রাহীম (আঃ) মক্কাবাসীদের জন্য দু‘আ করেছিলেন যা তা ছিল নিছক দুনিয়ার ফলমূল দ্বারা রিযক্ব দানের বিষয়ে, কিন্তু নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনাবাসীদের জন্য যে দু‘আ করেছিলেন তা দুনিয়া বিষয়ক এবং তার সাথে অনুরূপ আরো। সম্ভবত সেটি ছিল আখিরাতের বিষয় যেমন- মক্কায় পুণ্যার্জন বহুগুণে লাভ করা যায় অনুরূপ মদীনার পুণ্যও যেন বহুগুণে পাওয়া যায়।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট আগত নতুন ফল ছোট বাচ্চাদের ডেকে দিয়ে দিতেন। এটা ছিল তার শিশুদের প্রতি ভালবাসার সর্বোচ্চ নমুনা। শিশুদের আনন্দদান বড়দের আনন্দদানের চেয়ে অনেক বেশী ভাল। আবূ ‘উমার (রহঃ) বলেন, এটা উত্তম শিষ্টাচারের এবং সর্বোত্তম চরিত্রের নমুনা ঐ শিশু নিজ পরিবারের হোক অথবা পাড়া-প্রতিবেশীর হোক তাতে কোন ভেদাভেদ ছিল না।