২৭২৯

পরিচ্ছেদঃ ১৫. প্রথম অনুচ্ছেদ - মদীনার হারামকে আল্লাহ তা‘আলা কর্তৃক সংরক্ষণ প্রসঙ্গে

২৭২৯-[২] সা’দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমি মদীনার দু’ সীমানার মধ্যবর্তী জায়গাকে হারাম ঘোষণা করছি- এর বৃক্ষলতা কাটা যাবে না এবং এর শিকার করা যাবে না। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আরো বলেন, মদীনাহ্ ঐসব লোকের জন্য কল্যাণকর, যদি তারা বুঝতে পারে। যে ব্যক্তি অনাগ্রহী হয়ে মদীনাহ্ ত্যাগ করবে, তার বদলে আল্লাহ তা’আলা তার চেয়েও উত্তম ব্যক্তিকে সেখানে স্থান দেবেন। যে ব্যক্তি মদীনার অভাব-অনটন ও বিপদাপদে ধৈর্যধারণ করে অটুট থাকবে, কিয়ামতের দিন আমি তার জন্য সাক্ষী ও সুপারিশকারী হবো। (মুসলিম)[1]

بَابُ حَرَمِ الْمَدِيْنَةِ حَرَسَهَا اللّٰهُ تَعَالٰى

وَعَنْ سَعْدٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِنِّي أُحَرِّمُ مَا بَيْنَ لَابَتَيِ الْمَدِينَةِ: أَنْ يُقْطَعَ عِضَاهُهَا أَوْ يُقْتَلَ صَيْدُهَا وَقَالَ: «الْمَدِينَةُ خَيْرٌ لَهُمْ لَوْ كَانُوا يعلَمونَ لَا يَدَعُهَا أَحَدٌ رَغْبَةً عَنْهَا إِلَّا أَبْدَلَ اللَّهُ فِيهَا مَنْ هُوَ خَيْرٌ مِنْهُ وَلَا يَثْبُتُ أَحَدٌ عَلَى لَأْوَائِهَا وَجَهْدِهَا إِلَّا كُنْتُ لَهُ شَفِيعًا أَو شَهِيدا يَوْم الْقِيَامَة» . رَوَاهُ مُسلم

وعن سعد قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: اني احرم ما بين لابتي المدينة: ان يقطع عضاهها او يقتل صيدها وقال: «المدينة خير لهم لو كانوا يعلمون لا يدعها احد رغبة عنها الا ابدل الله فيها من هو خير منه ولا يثبت احد على لاواىها وجهدها الا كنت له شفيعا او شهيدا يوم القيامة» . رواه مسلم

ব্যাখ্যা: মদীনার মর্যাদা ও সম্মানের কিছু কথা পূর্বের হাদীসে অতিবাহিত হয়েছে। এখানকার বৃক্ষাদি কর্তন করা যাবে না এবং কোন শিকার হত্যা করা যাবে না। এ নিষিদ্ধ এলাকার সীমাও বর্ণিত হয়েছে। অত্র হাদীসে ঐগুলো ছাড়া আরো বর্ণিত হয়েছে- ‘‘মদীনাহ্ তাদের জন্য কল্যাণ যদি তারা জানত’’।

মুল্লা ‘আলী কারী (রহঃ) বলেন, এ ঘোষণা মদীনার মুসলিম অধিবাসীদের জন্য। আর এ কল্যাণ দুনিয়া এবং আখিরাত উভয় জগতের জন্যই। অথবা খায়রিয়্যাত বা কল্যাণ দ্বারা উদ্দেশ্য দুনিয়ার জীবন-জিন্দেগীতে অধিক বারাকাত লাভ করা।

এ হাদীসের ব্যাখ্যায় (মুসলিমের হাশিয়ায়) ‘আল্লামা সিনদী বলেন, এ হাদীস ঐ ব্যক্তিদের জন্য যারা মদীনাহ্ ত্যাগ করে সুখের আশায় অন্য শহরে চলে যায় তাদের জন্য সতর্কবাণী।

কেউ কেউ বলেছেন, মদীনার এ ফাযীলাতের ঘোষণা ‘আলিম ব্যক্তিদের জন্য। যেহেতু এটি একটি মর্যাদাসম্পন্ন শহর সুতরাং সেটার মর্যাদা কেবল মর্যাদাসম্পন্ন ব্যক্তিরাই অনুভব করতে পারে। আর তার চাহিদা অনুপাতে নিজ নিজ ‘ইলমের দ্বারা সেটার দাবী মোতাবেক ‘আমল করতে পারে। পক্ষান্তরে যাদের ‘ইলম নেই তারা ঐ শহরের যথাযথ মর্যাদাও দিতে পারে না এবং সেটার ফাযীলাত ও কল্যাণও লাভ করতে পারে না। এ শহরের প্রতি আগ্রহহীন হয়ে (এ শহরে) বসবাস ত্যাগ করলে আল্লাহ তা‘আলা তার চেয়ে উত্তম ব্যক্তিকে সেখানে আবাসন দান করবেন। তবে যদি কেউ এ শহরের প্রতি বিতশ্রদ্ধ হয়ে নয় বরং অনিবার্য কারণে বা কোন ফিতনাহ্ থেকে বাঁচার জন্য তা ত্যাগ করে সে এ হুকুমের অন্তর্ভুক্ত হবে না।

আল্লামা বাজী (রহঃ) বলেন, আমি মনে করি যারা মদীনার আদীবাসী বা স্থায়ী বাসিন্দা তাদের জন্য এ হুকুম। কিন্তু যারা অন্য স্থানের বাসিন্দা পরবর্তীতে তারা মদীনায় ‘ইলম শিক্ষার জন্য অথবা মদীনার ফাযীলাত লাভের জন্য এসে বসবাস করছেন অথবা অত্যাবশ্যক প্রয়োজনেই এ শহর ত্যাগ করছেন তাদের জন্য এ হুকুম নয়।

এরপর প্রশ্ন হলো- ফাযীলাতের এ বিধান কতদিন পর্যন্ত? ইবনু ‘আবদিল বার এবং ‘আল্লামা যুরক্বানী সহ বহু মনীষী বলেন, এ ফাযীলাত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জীবদ্দশাকাল পর্যন্ত সীমাবদ্ধ।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ইন্তিকালের পর হাজার হাজার সাহাবী মদীনাহ্ শহর ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন এবং অন্যত্র বসতি স্থাপন করেছেন। যেমন- আবূ মূসা আল আশ্‘আরী, ইবনু মাস্‘ঊদ, মু‘আয, আবূ ‘উবায়দাহ্, ‘আলী, তলহা, যুবায়র, ‘আম্মার, হুযায়ফাহ্, ‘উবাদাহ্ ইবনুস্ সামিত, বিলাল, আবুদ্ দারদা, আবূ যার প্রমুখ সহাবা (রাঃ) স্ববিশেষ উল্লেখযোগ্য এ সকল মহান ব্যক্তিত্বসম্পন্ন সহাবা (রাঃ) মদীনাহ্ ছেড়ে অন্যত্র বসবাস করেছেন এবং সেখানেই তারা ইন্তিকাল করেছেন।

সুতরাং বুঝা যায় মদীনার এ ফাযীলাত তার জীবিত থাকাকাল পর্যন্ত সীমাবদ্ধ।

অন্য আরেকদলের মতে মদীনার ঐ ফাযীলাত সর্বকাল ব্যপ্ত। এখনও সেটাতে বসবাসে ঐ ফাযীলাত মিলবে। উপরে বর্ণিত সাহাবীগণ যারা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ইন্তিকালের পর মদীনাহ্ ত্যাগ করে অন্য শহরে গিয়ে বসবাস করেছেন, তারা মদীনায় আর ফিরে আসেন নেই, বরং সেখানেই ইন্তিকাল করেছেন। তারা কেউ মদীনার প্রতি অনাসক্ত বা বিতশ্রদ্ধ হয়ে মদীনাহ্ ত্যাগ করেননি, বরং তারা দীনের যে কোন কল্যাণে যেমন- ‘ইলম কিংবা জিহাদের জন্য অথবা অন্য কোন অতীব প্রয়োজনীয় উম্মাতে মুসলিমার বৃহত্তর কল্যাণে মদীনাহ্ ত্যাগ করেছেন।

মদীনার অভাব-অনটন এবং দুঃখ-কষ্টে যে ধৈর্য ধারণ করে থাকবে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ক্বিয়ামাতের দিন তার জন্য সাক্ষ্যদানকারী শাফা‘আতকারী হবেন। এ দুঃখ-কষ্ট হলো- অভাব-অনটন বা ক্ষুধা, মদীনার প্রচন্ড ক্ষরা, এখানে বিদ্‘আতী অধিবাসীদের পক্ষ থেকে আগত অত্যাচার বা দুঃখ-কষ্ট ইত্যাদি।

‘আল্লামা জাওহারী দুঃখ-কষ্টের মূলে اللاواء শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে যার অর্থ الشدة কষ্ট-কাঠিন্যতা, কিন্তু এখানে উদ্দেশ্য হলো জীবন-জিন্দেগীর সংকীর্ণতা এবং দুর্ভিক্ষ।

মানুষের অবস্থাভেদে কারো জন্য নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাক্ষী হবেন কারো জন্য সুপারিশকারী হবেন।

অত্র হাদীসে এদিকে ইশারা রয়েছে যে, জীবনের অবসান যেন সুন্দরভাবে হয়, অর্থাৎ- ঈমানের উপর হয়। আর মু’মিনের উচিত ধৈর্য ধারণ করা, বরং মদীনায় অবস্থানের সুযোগ পেয়ে আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞ হওয়া। অন্য শহরের চাকচিক্যময় সুখণ্ডসামগ্রীর প্রতি দৃষ্টিনিবদ্ধ করা উচিত নয়। কেননা আখিরাতের নি‘আমাতই হলো প্রকৃত নি‘আমাত বা সুখ-সামগ্রী।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১১: হজ্জ (كتاب المناسك)