২৭১৮

পরিচ্ছেদঃ ১৪. প্রথম অনুচ্ছেদ - মক্কার হারামকে আল্লাহ তা‘আলা কর্তৃক সংরক্ষণ প্রসঙ্গে

২৭১৮-[৪] আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কা বিজয়ের দিন মক্কায় প্রবেশ করার সময় তাঁর মাথায় ছিল লোহার শিরস্ত্রাণ। যখন তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) শিরস্ত্রাণটি খুললেন জনৈক ব্যক্তি এসে বললো, ইবনু খাত্বাল কা’বার গেলাফের সাথে ঝুলে (আশ্রয় নিয়েছে) রয়েছে। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তাকে হত্যা করো। (বুখারী, মুসলিম)[1]

بَابُ حَرَمِ مَكَّةَ حَرَسَهَا اللهُ تَعَالٰى

وَعَنْ أَنَسٍ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ دَخَلَ مَكَّةَ يَوْمَ الْفَتْحِ وَعَلَى رَأْسِهِ الْمِغْفَرُ فَلَمَّا نَزَعَهُ جَاءَ رَجُلٌ وَقَالَ: إِنَّ ابْنَ خَطَلٍ مُتَعَلِّقٌ بِأَسْتَارِ الْكَعْبَةِ. فَقَالَ: «اقتله»

وعن انس ان النبي صلى الله عليه وسلم دخل مكة يوم الفتح وعلى راسه المغفر فلما نزعه جاء رجل وقال: ان ابن خطل متعلق باستار الكعبة. فقال: «اقتله»

ব্যাখ্যা: (وَعَلٰى رَأْسِهِ الْمِغْفَرُ) ‘‘তাঁর মাথায় ছিল লোহার টুপি (হেলমেট)।’’ জাবির (রাঃ) হতে বর্ণিত হাদীসে উল্লেখ আছে যে, ‘‘তাঁর মাথায় ছিল কালো রং-এর পাগড়ী’’- এ হাদীসদ্বয়ের মাঝে কোন বৈপরীত্য নেই। কেননা এ সম্ভাবনা রয়েছে যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পাগড়ীর উপর লোহার টুপি পরেছিলেন। অথবা টুপির উপর পাগড়ী পেঁচানো ছিল। অথবা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মক্কায় প্রবেশ করেন তখন তাঁর মাথায় লোহার টুপি ছিল। যুদ্ধ শেষে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) লোহার টুপি ফেলে দিয়ে পাগড়ী পরেছিলেন।

সহীহ মুসলিমে ‘আমর ইবনু হুরায়স থেকে বর্ণিত আছে যে, সেদিন নাবী ভাষণ দিয়েছিলেন সে সময় তাঁর মাথায় কালো রং-এর পাগড়ী ছিল। কেননা এ ভাষণ ছিল বিজয় সম্পন্ন হওয়ার পরে কাবা ঘরের দরজার নিকটে।

إِنَّ ابْنَ خَطَلٍ مُتَعَلِّقٌ بِأَسْتَارِ الْكَعْبَةِ. فَقَالَ: اُقْتُلْهُ

‘‘ইবনু খাত্বাল কাবা ঘরের চাদর ধরে লটকে আছে।’’ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ তাকে হত্যা করো।’’

ইসলাম গ্রহণের পূর্বে ইবনু খাত্বাল-এর নাম ছিল ‘আবদুল ‘উযযা। ইসলামে প্রবেশ করার পর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার নাম রাখেন ‘আব্দুল্লাহ। ইবনু ইসহাক মাগাযীতে উল্লেখ করেছেন যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইবনু খাত্বালকে হত্যা করার নির্দেশ দেয়ার কারণ এই যে, তিনি মুসলিম ছিলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে যাকাত আদায় করার জন্য প্রেরণ করেন। তার সাথে একজন আনসারী ব্যক্তি এবং একজন মুক্ত দাস প্রেরণ করেন। এ দাস তার সেবায় নিয়োজিত ছিল। এ খাদিমও মুসলিম ছিল। তিনি রাস্তায় একস্থানে বিশ্রামের জন্য অবতরণ করেন এবং খাদিমকে একটি পাঠা যাবাহ করে খাদ্য প্রস্ত্তত করার নির্দেশ দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। ঘুম জেগে দেখতে পান যে, খাদিম তার জন্য কিছুই করেননি। ফলে তার উপর চড়াও হয়ে তাকে হত্যা করে এবং পুনরায় মুশরিক হয়ে মক্কাতে চলে যায়। তার দু’জন গায়িকা ছিল যারা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নামে কুৎসা গাইত। তাই নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছিলেন।

ওয়াক্বিদী উল্লেখ করেন যে, ইবনু খাত্বাল-এর কাবা ঘরের চাদর ধরে লটকে থাকার কারণ এই ছিল যে, সে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য একটি ঘোড়া ও তীর ধনুক নিয়ে জানদামাহ্ নামক স্থানে গমন করে। যখন সে আল্লাহর রাহে যুদ্ধরত মুসলিম বাহিনী দেখতে পায় তখন তার মাঝে ভয় প্রবেশ করে এমনকি ভয়ে কম্পনের কারণে ঘোড়ার উপর স্থির থাকতেও অক্ষম হয়ে পড়ে। তাই সে ঘোড়া থেকে নেমে অস্ত্র ফেলে দিয়ে নিরাপত্তার জন্য কাবা ঘরের চাদর ধরে বাঁচার চেষ্টা করে। মুসলিম বাহিনীর এক ব্যক্তি তার ঘোড়া ও অস্ত্র স্বীয় অধিকারে নিয়ে ঘোড়ায় আরোহণ করে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট গিয়ে তাঁকে বিষয়টি অবহিত করেন। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে হত্যার নির্দেশ দেন। অতঃপর তাকে হত্যা করা হয়। তাকে কে হত্যা করেছিল তা নিয়ে মতভেদ রয়েছে। ওয়াক্বিদীর মতে তার হত্যাকারী ছিল আবূ বারযাহ্ আল্ আসলামী।

ইবনু খাত্বাল কাবা ঘরের চাদর ধরে আশ্রয় গ্রহণ করার পরও তাকে হত্যার বিষয়টিকে দলীল হিসেবে গ্রহণ করা হয় যে, যাকে হত্যা করা ওয়াজিব এমন অপরাধী কাবা ঘরে তথা হারামে গিয়ে আশ্রয় গ্রহণ করলেও তাকে আশ্রয় দেয়া হবে না। বরং এমন অপরাধীকে হারামেও হত্যা করা জায়িয। যারা বলেন, তা বৈধ নয় তারা বলেন তা ছিল ঐ সময় যখন হারামে হত্যা করা নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য বৈধ করা হয়েছিল। আর তা ছিল সাময়িক। এরপর হত্যা করা পূর্বের মতই হারাম

‘আল্লামা ত্বীবী বলেনঃ অত্র হাদীস প্রমাণ করে যে, হজ্জ/হজ বা ‘উমরা করতে ইচ্ছুক নয় এমন ব্যক্তির জন্য ইহরাম ব্যতীতই মক্কাতে প্রবেশ করা বৈধ।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১১: হজ্জ (كتاب المناسك)