২৬৬০

পরিচ্ছেদঃ ১০. প্রথম অনুচ্ছেদ - কুরবানীর দিনের ভাষণ, আইয়্যামে তাশরীক্বে পাথর মারা ও বিদায়ী তাওয়াফ করা

২৬৬০-[২] ওয়াবারাহ্ (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি ’আবদুল্লাহ ইবনু ’উমার (রাঃ) কে জিজ্ঞেস করলাম, আমি কোন্ দিন পাথর মারবো? তিনি বললেন, তোমার ইমাম যেদিন মারবে তুমিও সেদিন পাথর মারবে। আবার আমি তাঁকে এ মাসআলাটি জিজ্ঞেস করলাম। তখন তিনি বললেন, আমরা সময়ের অপেক্ষায় থাকতাম, যখন সূর্যাস্ত হলো তখন আমরা পাথর মারতাম। (বুখারী)[1]

بَابٌ خُطْبَةُ يَوْمِ النَّحْرِ وَرَمْىِ أَيَّامِ التَّشْرِيْقِ وَالتَّوْدِيْعِ

وَعَن وَبرةَ قَالَ: سَأَلْتُ ابْنَ عُمَرَ: مَتَى أَرْمِي الْجِمَارَ؟ قَالَ: إِذَا رَمَى إِمَامُكَ فَارْمِهِ فَأَعَدْتُ عَلَيْهِ الْمَسْأَلَةَ. فَقَالَ: كُنَّا نَتَحَيَّنُ فَإِذَا زَالَتِ الشَّمْسُ رمينَا. رَوَاهُ البُخَارِيّ

وعن وبرة قال: سالت ابن عمر: متى ارمي الجمار؟ قال: اذا رمى امامك فارمه فاعدت عليه المسالة. فقال: كنا نتحين فاذا زالت الشمس رمينا. رواه البخاري

ব্যাখ্যা: (وَعَنْ وَبَرَةَ) তার প্রকৃত নাম হলো ওয়াবারাহ্ বিন ‘আব্দুর রহমান আল মাসলামী তার কুন্ইয়্যাত হলো আবূ খুযায়মাহ্ অথবা আবুল ‘আব্বাস আল কূফী তিনি সিক্বাহ রাবী। তিনি একজন তাবি‘ঈ ১১৬ হিজরীতে খালিদ বিন ‘আবদুল্লাহ আল কাসরীর শাসনামলে কূফায় মৃত্যুবরণ করেন।

‘আল্লামা হাফিয ইবনু হাজার আসকালানী (রহঃ) বলেন, اذا رمى امامك فارمه হাদীসের এ অংশে বলা হয়েছে ইমাম কংকর নিক্ষেপ করলে কংকর নিক্ষেপ করার কথা, আর এখানে ইমাম দ্বারা হজ্জের ইমাম উদ্দেশ্য। ইবনু ‘উমার  যেন ভয় করছিলেন যে, প্রশ্নকারী হয়তো ইমামের বিপরীত কর্ম সম্পাদনের মাধ্যমে কোন ক্ষতির সম্মুখীন হবেন, তাই তাকে এ ধরনের নির্দেশ প্রদান করেছেন। কিন্তু প্রশ্নকারী যখন প্রশ্নটি পুনঃরায় করলেন তখন ইবনু ‘উমার (রাঃ) আর ‘ইলম গোপন রাখলেন না, বরং নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জামানায় তারা যেভাবে কংকর নিক্ষেপ করতেন তা ব্যাখ্যা করে বললেন।

এ সম্পর্কিত আরো একটি বর্ণনা রয়েছে সুফিয়ান ইবনু ‘উয়াইনাহ্ মিস্‘আর থেকে আর মিস্‘আর ওয়াবারার সূত্রে ওয়াবারাহ্ ইবনু ‘উমার (রাঃ) এর সূত্রে সেখানে রয়েছে। প্রশ্নকারী লোকটি ইবনু ‘উমার (রাঃ)-কে বললেন, আমার ইমাম যদি কংকর নিক্ষেপ করতে দেরী করেন তাহলে সে ক্ষেত্রে আপনার মতামত কি? পরবর্তীতে ইবনু ‘উমার (রাঃ) তার উত্তরে বিস্তারিত বললেন। হাদীসটি ইবনু আবী ‘উমার তার মুসনাদে বর্ণনা করেছেন।

(فَأَعَدْتُ عَلَيْهِ الْمَسْأَلَةَ) অর্থাৎ- এখানে প্রশ্নকারী কংকর নিক্ষেপ করার সময়টিকে নিশ্চিতভাবে জানতে চেয়েছিলেন।

(كُنَّا نَتَحَيَّنُ) এ শব্দটি حين থেকে باب مفاعلة থেকে নির্গত আর حين অর্থ সময়। সুতরাং نتحين অর্থ হবে আমরা কংকর নিক্ষেপ করার জন্য সূর্য ঢলে যাওয়ার সময় পর্যবেক্ষণে রাখতাম। ‘আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেন, আমরা কংকর নিক্ষেপ করার সময়ের অপেক্ষায় থাকতাম।

‘আল্লামা তাবারী (রহঃ) বলেন, এর অর্থ হলো, كنا نطلب حينها والحين الوقت অর্থাৎ- আমরা কংকর নিক্ষেপ করার সময়ের অনুসন্ধান করতাম। এর থেকেই অন্য বর্ণনায় শব্দ এসেছে, كانوا يتحينون وقت الصلاة তারা (সহাবায়ে কিরাম) সালাতের প্রহর গুণতেন।

আর অত্র হাদীসটিই ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) (كنا نتحين زوال الشمس) শব্দে বর্ণনা করেছেন।

(فَإِذَا زَالَتِ الشَّمْسُ رَمَيْنَا) আমরা যুহরের সালাতের পূর্বেই কংকর নিক্ষেপ করতাম। অবশ্যই ইমাম ইবনু মাজাহ হাকাম-এর সনদে মিকসাম থেকে, তিনি ‘আবদুল্লাহ বিন ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, নিশ্চয়ই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূর্য ঢলে যাওয়ার পর জামারায়ে ‘আক্বাবাতে কংকর নিক্ষেপ করতেন এবং কংকর নিক্ষেপ হলেই যুহরের সালাত (সালাত/নামাজ/নামায) আদায় করতেন।

‘আল্লামা সিনদী (রহঃ) বলেন, অত্র হাদীসটি প্রমাণ করছে যে, নিশ্চয়ই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূর্য ঢলে যাওয়ার পর প্রথমেই কংকর নিক্ষেপ করতেন, তারপর যুহরের সালাত আদায় করতেন।

অত্র হাদীস থেকে আরো বুঝা যায় ঈদুল আযহার ব্যতীত অন্যান্য দিনে কংকর নিক্ষেপ করার সময় হলো সূর্য ঢলার পর আর কেউ যদি সূর্য ঢলার পূর্বেই কংকর নিক্ষেপ করে তাহলে তা যথেষ্ট হবে না। আর এমনটাই অধিকাংশ ‘আলিমের মতামত। তবে ‘আত্বা, ত্বাউস (রহঃ) সহ অনেকেই এ মতের বিপরীত বলেছেন। কিন্তু এদের কথা ঠিক নয়, কারণ হাদীস তাদের বিপরীতে অবস্থান করছে।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১১: হজ্জ (كتاب المناسك)