পরিচ্ছেদঃ ৮. দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ - মাথার চুল মুণ্ডন করার প্রসঙ্গে
২৬৫৪-[৯] ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নারীদের জন্যে মাথা মুড়ানো নেই, তবে নারীদের জন্য রয়েছে মাথা ছাঁটানো। (আবূ দাঊদ ও দারিমী)[1]
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَيْسَ عَلَى النِّسَاءِ الْحَلْقُ إِنَّمَا عَلَى النِّسَاءِ التَّقْصِيرُ» . رَوَاهُ أَبُو دَاوُدَ وَالدَّارِمِيُّ
وَهَذَا الْبَابُ خَالٍ مِنَ الْفَصْلِ الثَّالِثِ
-
[বিঃ দ্রঃ এ অধ্যায়ে তৃতীয় অনুচ্ছেদ নেই (وَهٰذَا الْبَابُ خَالٍ مِنْ الْفَصْلِ الثَّالِثِ)]
ব্যাখ্যা: ‘আল্লামা মুল্লা ‘আলী কারী (রহঃ) বলেছেন, মহিলাদের সাধারণত এবং বিশেষ করে ইহরাম থেকে হালাল হওয়ার পর বিশেষ কারণে মাথা মুন্ডনে নিষেধ করা হয়েছে। কেননা তার মাথা হলক মুসলার সদৃশ এবং তা পুরুষের দাড়ি মুন্ডানো যেমন নাজায়িয অনুরূপ হুকুমের আওতাভুক্ত।
‘আল্লামা ‘উবায়দুল্লাহ মুবারকপূরী বলেন, হাদীসের বাহ্যিক দৃষ্টিতে বুঝা যায় মহিলাদেরকে সাধারণভাবেই যে কোন সময়ে মাথা হলক মুন্ডাতে নিষেধ করা হয়েছে। তবে জরুরী কোন প্রয়োজন থাকলে তা ভিন্ন ব্যাপার। যদি তার মাথা হলক করা বৈধ হত জরুরী প্রয়োজন ব্যতীত, তাহলে হজ্জের ক্ষেত্রে অন্তত তা জায়িয থাকতো যেহেতু হজ্জে গিয়ে মাথা হলক করাও একটি ‘ইবাদাত যা পুরুষেরা করে থাকেন।
‘আল্লামা হাফিয ইবনু হাজার আসকালানী (রহঃ) বলেছেন, কুরআনে কারীমে এবং হাদীসে রসূল বর্ণিত মাথার চুল খাটো করা বা মুণ্ডন করার ও খাটো করা মুণ্ডন অপেক্ষা উত্তমের বিষয়গুলো পুরুষের সাথে সম্পৃক্ত আর মহিলাদের ক্ষেত্রে সর্বসম্মতিক্রমে শারী‘আতসিদ্ধ হলো খাটো করা যা হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।
তিনি আরো বলেছেন, অধিকাংশ শাফি‘ঈ মতালম্বী ‘উলামার মত হলো মহিলারা যদি মাথার চুল হলক করে তাহলে তা বৈধ হবে তবে তা মাকরূহ হিসেবে পরিগণিত।
কাযী আবূ ত্বইয়্যিব ও কাযী হুসায়ন (রহঃ) বলেছেন, মহিলাদের মাথা মুন্ডানো বৈধ নয়।
ইবনু কুদামাহ্ (রহঃ) বলেছেন, মহিলাদের ক্ষেত্রে শারী‘আতসম্মত হলো মাথার চুল খাটো করা তারা মাথা হলক করতে পারবে না- এ বিষয়ে কোন মতবিরোধ নেই। ইবনুল মুনযীর (রহঃ) বলেন, ইবনু কুদামাহ্ (রহঃ)-এর যে মত আমারও তাই মত এবং সমস্ত আহলে ‘ইলমের মতও তাই। কারণ তাদের হলক করা মুসলার আওতাভুক্ত আর মুসলা অবৈধ। কেউ কেউ বলেছেন, মহিলারা এক আঙ্গুল পরিমাণ খাটো করবে।
ইমাম আবূ দাঊদ (রহঃ) বলেন, আমি শুনেছি ইমাম আহমাদ (রহঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছে যে, মহিলারা তাদের সমস্ত চুলই খাটো করবে? তিনি বলেছিলেন, হ্যাঁ তার চুলগুলোকে মাথার সম্মুখে নিয়ে আসবে তারপর চুলের অগ্রভাগকে এক আঙ্গুল পরিমাণ খাটো করবে।
‘আল্লামা শানক্বীতী (রহঃ) বলেন, জেনে রাখ, মাথা হলক করা চুল খাটো করার চেয়ে অপেক্ষাকৃত উত্তম এটা বলা হয়েছে বিশেষ করে পুরুষের ক্ষেত্রে আর মহিলাদের ওপর হলক নয় তাদের ক্ষেত্রে মাথার চুল এক আঙ্গুল পরিমাণ খাটো করলেই যথেষ্ট। কেননা মাথার চুল হল তার সৌন্দর্যের অন্তর্ভুক্ত। আবার বেশি পরিমাণে খাটো করাও নিষেধ।
তিনি আরো বলেন, নিম্নোক্ত পাঁচটি কারণে মহিলাদের মাথার চুল হলক করা নিষেধ।
১. তাদের মাথা হলক না করার ব্যাপারে সকল ‘আলিমদের ঐকমত্য পোষণ।
২. তাদের মাথা হলকের নিষেধাজ্ঞামূলক বর্ণিত হাদীসগুলো।
৩. আর এটা আমাদের ‘আমলের অন্তর্ভুক্ত না আর যারা আমাদের দীনের মধ্যে আমরা আদেশ দেইনি এমন কিছু করলো তারা আমাদের দলভুক্ত নয়।
৪. এটা পুরুষের সাথে সাদৃশ্য রাখার শামিল।
৫. এটা হচ্ছে অঙ্গ বিকৃতির অন্তর্গত আর অঙ্গ বিকৃতি সম্পূর্ণভাবে অবৈধ।
সুতরাং যদি প্রশ্ন করা হয় তাহলে বিভিন্ন হাদীস দ্বারা যে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্ত্রীদের হলকের প্রমাণ পাওয়া যায় তার হুকুম কি? এমনই একটি হাদীস এখন পেশ করছি যা মহিলাদের হলকের প্রমাণ বহন করে।
যেমন ইবনু হিব্বান (রহঃ) তাঁর ‘সহীহ ইবনু হিব্বান’ গ্রন্থে ওয়াহ্ব বিন জারীর থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমার পিতা আমাদেরকে হাদীস শুনিয়েছেন, তিনি বলেছেন, আমি আবূ ফাযারাহকে বলতে শুনেছি তিনি হাদীস বর্ণনা করেছেন ইয়াযীদ বিন আসম থেকে, তিনি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্ত্রী মায়মূনাহ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, মায়মূনাহ্ (রাঃ) বলেনঃ (زوجها حلالا وبنى بها) রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে হালাল অবস্থায় বিবাহ করেছেন ......। আর মায়মূনাহ্ (রাঃ) হজ্জে গিয়ে মাথা হলক করতেন এবং তার মাথায় শিঙ্গা লাগানো ছিল। অত্র হাদীস প্রমাণ করছে যে, মায়মূনাহ্ (রাঃ) মাথা হলক করতেন যদি অবৈধ হতো তাহলে তিনি করতেন না।
উত্তরঃ হাদীসে মায়মূনাহ্ (রাঃ)-এর উত্তর হল, হাদীসের ভিতর একটি কথা রয়েছে যে, তার মাথায় শিঙ্গা লাগানো ছিল এটাই প্রমাণ করে যে, মায়মূনাহ্ (রাঃ) মাথা চুল হলক করেছেন যাতে করে শিঙ্গা লাগানোর যন্ত্রণা একটু হলেও লাঘব হয়। সুতরাং তিনি প্রয়োজনে মাথা হলক করেছেন যেহেতু তিনি ছিলেন অসুস্থ। আর প্রয়োজনের কারণে এমন কাজ বৈধ হয়ে যায় যা অন্য সময় অবৈধ।
যেমন আল্লাহ বলেন, অর্থাৎ- ‘‘তোমাদের জন্য যে সমস্ত বিষয় আল্লাহ হারাম করেছেন তা বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন, হ্যাঁ তবে যদি তোমরা বাধ্য হও।’’ (সূরা আল আন্‘আম ৬ : ১১৯)