২৫৬৩

পরিচ্ছেদঃ ৩. প্রথম অনুচ্ছেদ - মক্কায় প্রবেশ করা ও তাওয়াফ প্রসঙ্গে

২৫৬৩-[৩] ’উরওয়াহ্ ইবনুয্ যুবায়র (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হজ্জ/হজ করলেন, (আমার খালা) ’আয়িশাহ্ (রাঃ) আমাকে বলেছেন যে, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মক্কায় প্রবেশ করে প্রথমে উযূ করলেন। অতঃপর বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করলেন। তবে তা ’উমরায় পরিণত করলেন না (অর্থাৎ- ইহরাম খুললেন না)। তারপর আবূ বকর (রাঃ) হজ্জ/হজ করেছেন, তিনিও প্রথমে যে কাজ করেছেন তা হলো বায়তুল্লাহর তাওয়াফ। তিনি এ তাওয়াফকে ’উমরায় পরিণত করেননি। অতঃপর ’উমার, তারপর ’উসমান (রাঃ) এই একইভাবে হজ্জ/হজ সম্পাদন করেছেন। (বুখারী ও মুসলিম)[1]

بَابُ دُخُوْلِ مَكَّةَ وَالطَّوَافِ

وَعَن عُروةَ بنِ الزُّبيرِ قَالَ: قَدْ حَجَّ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأَخْبَرَتْنِي عَائِشَةُ أَنَّ أَوَّلَ شَيْءٍ بَدَأَ بِهِ حِينَ قَدِمَ مَكَّةَ أَنَّهُ تَوَضَّأَ ثُمَّ طَافَ بِالْبَيْتِ ثُمَّ لَمْ تَكُنْ عُمْرَةً ثُمَّ حجَّ أَبُو بكرٍ فكانَ أوَّلَ شيءٍ بدَأَ بِهِ الطوَّافَ بالبيتِ ثمَّ لَمْ تَكُنْ عُمْرَةً ثُمَّ عُمَرُ ثُمَّ عُثْمَانُ مثلُ ذَلِك

وعن عروة بن الزبير قال: قد حج النبي صلى الله عليه وسلم فاخبرتني عاىشة ان اول شيء بدا به حين قدم مكة انه توضا ثم طاف بالبيت ثم لم تكن عمرة ثم حج ابو بكر فكان اول شيء بدا به الطواف بالبيت ثم لم تكن عمرة ثم عمر ثم عثمان مثل ذلك

ব্যাখ্যা: কোন ব্যক্তি যদি হাদী না চালিয়ে হজ্জের ইহরাম বাঁধে সে কি বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করলেই হালাল হতে পারবে? এ ব্যাপারে মতানৈক্য রয়েছে।

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, হাদী চালিয়ে হজ্জের ইহরাম ধারণকারী ব্যক্তি শুধু বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করেই হালাল হয়ে যাবে। আর যদি সে হজ্জের ইহরাম বাকী রাখতে চায় তাহলে তার উকুফে ‘আরাফার পর এসে বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করতে হবে। এর বিপরীতে জমহূর ‘উলামায়ে কিরাম বলেন, না- বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করলেই তার হালাল হতে হবে না। বরং হজ্জের যাবতীয় কাজ শেষ করে তারপর হাদী না চালানো ব্যক্তি হালাল হবে। ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ)-এর দলীল হলো, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সহাবায়ে কিরামদের মাঝে যারা হাদী আনেননি তাদেরকে তাওয়াফ করে হালাল হয়ে যাওয়ার আদেশ করেছিলেন।

জমহূর ‘উলামায়ে কিরাম তার জবাবে বলেন, এই হুকুম সহাবায়ে কিরামদের জন্য খাস ছিল। সকল ‘উলামায়ে কিরাম এ ব্যাপারে একমত যে, যে শুধু হজ্জের ইহরাম বেঁধেছে সে বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করতে পারে, কোন সমস্যা নেই। এ ব্যাপারে ‘উরওয়াহ্ (রহঃ) উল্লেখিত হাদীস দ্বারা দলীল পেশ করেছেন। তিনি বলেন, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হজ্জের ইহরাম বেঁধেছেন এবং বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করেছেন। কিন্তু তিনি হজ্জ/হজ থেকে হালাল হননি। আর সেটা ‘উমরাও ছিল না।

তাওয়াফের পূর্বে উযূ করাঃ

সকল ‘উলামায়ে কিরামের নিকট তাওয়াফের জন্য উযূ শর্ত। কতক কুফাবাসী ‘উলামায়ে কিরামের নিকট তাওয়াফের জন্য উযূ শর্ত নয়। ইমাম আবূ হানীফা-এর নিকট তাওয়াফের জন্য উযূ শর্ত নয়। তবে তাঁর সাথীবর্গ এ ব্যাপারে দ্বিমত পোষণ করেন। কিন্তু বিশুদ্ধ মত তাঁর মতেও তাওয়াফের জন্য উযূ শর্ত। যেমন ইবনু হুমাম শারহে হিদায়ার মধ্যে বলেছেন, হায়িযা মহিলার জন্য তাওয়াফ হারাম হওয়ার দু’টি কারণ। (ক) তার মসজিদে প্রবেশের কারণে। (খ) ওয়াজিব ছাড়ার কারণে আর সেটা হচ্ছে পবিত্রতা।

* বর্ণিত হাদীস তাওয়াফে কুদূম শারী‘আতসিদ্ধ হওয়ার উপর দালালাত করে।

* হাফিয ইবনু হাজার (রহঃ) বলেন, এই হাদীস দ্বারা বুঝা যায় মাসজিদুল হারামে আগমনকারী ব্যক্তির জন্য তাওয়াফের মাধ্যমে কাজ শুরু করা মুস্তাহাব।

হাদীস থেকে শিক্ষণীয় বিষয়ঃ

১. ‘উরওয়াহ্ (রহঃ)-এর এই বর্ণনা থেকে বুঝা যায়, সহাবায়ে কিরাম ও তাদের পরবর্তী তাবি‘ঈনগণ রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাদীসের সাথে সাথে খুলাফায়ে রাশিদীনদের ‘আমলকেও শারী‘আতের জন্য দলীল মনে করতেন। সুতরাং শুধু হাদীসের উপর সীমাবদ্ধ না থেকে হাদীসের ব্যাখ্যার জন্য সহাবায়ে কিরামের ‘আমলকেও আমাদের সামনে রাখতে হবে।

২. এ হাদীস দ্বারা আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামা‘আত-এর মাযহাব অনুসারে খুলায়ায়ে রাশিদীনের মধ্যে মর্যাদার যে স্থান সাব্যস্ত করা হয় তা হলো সর্বশ্রেষ্ঠ আবূ বাকর (রাঃ), তারপর ‘উমার (রাঃ), তারপর ‘উসমান (রাঃ) এবং তারপর ‘আলী (রাঃ) এ বিষয়টিও প্রমাণিত হয়।


হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
পুনঃনিরীক্ষণঃ
মিশকাতুল মাসাবীহ (মিশকাত)
পর্ব-১১: হজ্জ (كتاب المناسك)