পরিচ্ছেদঃ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ
২২৩০-[৮] নু’মান ইবনু বাশীর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দু’আই (মূল) ’ইবাদাত। অতঃপর তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কুরআনের এ আয়াত তিলাওয়াত করলেন, ’’এবং তোমাদের রব বলেছেন, তোমরা আমার নিকট দু’আ করো, আমি তোমাদের দু’আ কবূল করব।’’ (আহমদ, তিরমিযী, আবূ দাঊদ, নাসায়ী, ইবনু মাজাহ)[1]
اَلْفَصْلُ الثَّانِىْ
عَنِ النُّعْمَانِ بْنِ بَشِيرٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «الدُّعَاءُ هُوَ الْعِبَادَةُ» ثُمَّ قَرَأَ: (وَقَالَ رَبُّكُمُ ادْعُونِي أَسْتَجِبْ لَكم)
رَوَاهُ أَحْمَدُ وَالتِّرْمِذِيُّ وَأَبُو دَاوُدَ وَالنَّسَائِيُّ وَابْنُ مَاجَه
ব্যাখ্যা: (الدُّعَاءُ هُوَ الْعِبَادَةُ) হাদীসটির অর্থ হলো ‘ইবাদাতই দু‘আ, কেননা ‘ইবাদাতের যত শ্রেণী আছে তন্মধ্যে দু‘আ শ্রেষ্ঠ। যেহেতু পরবর্তীতে একটি হাদীস আসছে যেখানে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করা হয়েছে (الدُّعَاءُ هُوَ الْعِبَادَةُ) ‘ইবাদাতই হলো দু‘আ।
‘আল্লামা ত্বীবী (রহঃ) বলেন, হাদীসটির অর্থ হলো এখানে ‘ইবাদাতকে তার আভিধানিক দৃষ্টিকোণ থেকে বুঝানো হয়েছে, দু‘আর অর্থ হলোঃ
إظهار غاية التذلل والافتقار إلى الله والاستكانة له.
অর্থাৎ- আল্লাহর জন্য চূড়ান্তভাবে বিনয়ী ভাব প্রকাশ করা। আর শারী‘আতসিদ্ধ সকল ‘ইবাদাতেরই মূল বিষয় আল্লাহর জন্য বিনয়ী হওয়া। দলীল হিসেবে তিনি পবিত্র কুরআনের একটি আয়াত পেশ করেছেন যেখানে মহান আল্লাহ বলেছেন,
إِنَّ الَّذِيْنَ يَسْتَكْبِرُوْنَ عَنْ عِبَادَتِيْ سَيَدْخُلُوْنَ جَهَنَّمَ دَاخِرِيْنَ
অর্থাৎ- ‘‘নিশ্চয়ই যারা আমার ‘ইবাদাত থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে তারা নিন্দিত ও লাঞ্ছিত হয়ে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।’’ (সূরা আল মু’মিন/গাফির ৪০ : ৬)
অত্র আয়াতে বিনয়ীভাব ও নম্রতা না প্রদর্শন করাকে অহংকার বলা হয়েছে আর ‘ইবাদাত শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে দু‘আর স্থানে আর এই অহমিকার প্রতিদান হিসেবে বলা হয়েছে লাঞ্ছনা-গঞ্জনার কথা।
আর এ কথাও কোন কোন বিদ্বান বলেছেন, অত্র আয়াতে ‘ইবাদাতকে তার আভিধানিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার কোন সুযোগ নেই আর দেখলে তাতে কোন উপকারও নেই বরং দু‘আ হোক বা অন্য কোন কিছু হোক।
যাই হোক না কেন ‘ইবাদাত আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করা বা তার ক্রোধ দমন করা, অথবা দুনিয়াবী কোন নিয়ামত চাওয়া যেমনঃ রিযক্বের প্রশস্ততা কামনা করা, যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে অসুস্থতা থেকে আরোগ্য কামনা করা- এ থেকে মুক্ত নয়, আর এগুলোর প্রত্যেকটিকেই দু‘আ নামে অভিহিত করা যায়। কেননা, এগুলো হচ্ছে আন্তরিক দু‘আ। আমরা যদি শারী‘আতের অন্যান্য ‘ইবাদাতগুলো (দু‘আ ব্যতীত) পর্যালোচনা করে দেখি তাহলে দেখতে পাব সেখানে বান্দার আন্তরিক দিকটি প্রাধান্য দেয়া হয় আর অন্তরে যা আছে তাও ‘ইবাদাত এই ‘ইবাদাত যখন দু‘আ আকারে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দিয়ে বের হয় তখন এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায় দু‘আর মধ্যে ‘ইবাদাতের দু’টি দিকই সমভাবে বিরাজমান। সুতরাং দু‘আ সর্বোত্তম ‘ইবাদাত হতে আর কোন সমস্যা থাকার কথা নয়।
আর এক্ষেত্রে আরো জেনে থাকা দরকার (الدُّعَاءُ مُخُّ الْعِبَادَةِ) তথা অত্র হাদীসটি সানাদগত দুর্বল হলেও এ ব্যাপারে সহীহভাবে বর্ণিত আছে, (الدُّعَاءُ مُخُّ الْعِبَادَةِ) তথা দু‘আ হলো ‘ইবাদাতের মূল এ হাদীসটি (الدُّعَاءُ مُخُّ الْعِبَادَةِ) তথা দু‘আই ‘ইবাদাত এ হাদীসের সমর্থক।
এ ব্যাপারে একটি উদাহরণ পেশ করা যাক যেমনঃ রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, (الحج عرفة) তথা ‘আরাফার ময়দানে অবস্থানই হজ। এ কথার অর্থ এটা নয় যে, কোন ব্যক্তি হাজ্জের জন্য শুধুমাত্র ‘আরাফার ময়দানে অবস্থান করলে আর বাদবাকী রুকন আদায় না করলেও তার হজ হয়ে যাবে বরং এর অর্থ হলো হাজ্জের জন্য ‘আরাফার ময়দানে অবস্থান সর্বাধিক বড় রুকন বা এ জাতীয় কথা বলতে হবে। সুতরাং আমরা বলতে পারি সব ‘ইবাদাতই কোন না কোনভাবে দু‘আ।